Ajker Patrika

খেজুরগাছ কাটতে ব্যস্ত গাছি

আবু হোসাইন সুমন, রামপাল (বাগেরহাট)
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২১, ১৬: ৫৬
খেজুরগাছ কাটতে ব্যস্ত গাছি

হেমন্তেই শুরু হয়ে গেছে শীতের আমেজ। হালকা শীতের পাশাপাশি পড়ছে কুয়াশাও। প্রকৃতিতে শীত ও কুয়াশা জানান দেওয়ায় গ্রামের গাছিরাও সরব হয়ে উঠেছেন। শীতে রস ও পায়েসের কদরই আলাদা। পায়েসের প্রধান উপকরণ খেজুরের রস। তাই রস সংগ্রহে রামপালে নেমে পড়েছেন গাছিরা।

রামপালের বিভিন্ন এলাকায় মৌসুমি গাছিরা খেজুর গাছ কাটতে কিংবা তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। গত শনিবার বিকেলে উপজেলার হুড়কা ইউনিয়নের বাবুরবাড়ী এলাকায় দেখা গেছে রস সংগ্রহে খেজুর গাছ কাটছেন। গাছের অগ্রভাগের পাতা পরিষ্কার করে রেখেছেন। কাঁচি দিয়ে কাটা গাছ কয়েক দিন রোদে শুকানোর পর নল/পাইপ বসাবেন। এরপর কেটে রস সংগ্রহ করবেন।

গাছ তোলার চিত্র দেখা গেছে রামপালের ফুলপুকুর পাড় গ্রামেও। তবে লবণাক্ততা ও নদীর ড্রেজিংয়ের বালু ফেলায় উপকূলীয় এ এলাকার খেজুর গাছের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। আগের মতো এখন আর খেজুরগাছ নেই, তাই আশানুরূপ রসও মেলে না। গাছ কমে যাওয়ায় রস চড়া দামে বিক্রি হয়। এক ঠিলা (মাটির পাত্র) রস বিক্রি হয় ১৫০ টাকায়। দাম বেশি হলেও চাহিদা অনেক। তাই টাকা থাকলেও সবার ভাগ্যে জোটে না রস।

তবে দাম বেশি হওয়ায় গরিবের খাবার তালিকার বাইরে চলে গেছে রসের পায়েস ও পিঠা। যাঁরা রস না পান তাঁরা ভিন্ন ভিন্ন গুড় দিয়েই পায়েস-পিঠা তৈরি করে অনেকটা দুধের সাধ ঘোলে মেটান।

বাবুরবাড়ী এলাকার গাছি মজিবর রহমান বলেন, এখন থেকেই রস সংগ্রহের জন্য কাজ শুরু করেছেন। খেজুর গাছের পাতা কাটা ও চাছার কাজ করছেন। এরপর রস পাবেন।

ফুলপুকুরপাড়ের গাছি রাসেল ইজারদার বলেন, এর আগে এ পেশার ওপর অনেক পরিবার নির্ভরশীল ছিল। তখন গাছও বেশি ছিল, রসও বেশি হতো। এখন গাছ কমে গেছে, আর রসও খুব কম হয়। যে রস হয় তাতে খরচ ওঠানো কঠিন হয়ে পড়ে।

পেড়িখালীর ইউপি সদস্য মোস্তফা আহমেদ রুবেল বলেন, নানা কারণে খেজুর গাছের সংখ্যা দিন দিন কমে যাওয়ায় বর্তমানে রস সংগ্রহকারী গাছির সংখ্যাও কমে গেছে। অনেকে বাড়ির গাছ কাটাতে গাছি পাচ্ছেন না। তবে এখনো কিছু লোক মৌসুম ভিত্তিক খেজুরের রসের ওপর নির্ভরশীল। মূলত তাঁরাই এখন গাছ কাটায় ব্যস্ত।

জিগিরমোল্লা গ্রামের গাছি গোলাম মোস্তফা বলেন, খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে হলে প্রথমে খেজুর গাছের উপরিভাগের মাথার অংশকে ভালো করে পরিষ্কার করতে হয়। তারপর প্রতিদিন বিকেলে নরম ও সাদা অংশ থেকে বিশেষ কায়দায় মাটির বা প্লাস্টিকের পাত্রে রস সংগ্রহ করা হয়। সকালে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন তাঁরা। রসের মান ভালো পাওয়ার জন্য প্রতি সপ্তাহে এক থেকে দুই দিন রস সংগ্রহে বিরতি দেন। ফলে রসের স্বাদ বেশি ও মিষ্টি হয় বলে জানিয়েছেন এ গাছি। অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে কোমরে মোটা দড়ি বেঁধে গাছে ঝুলে খেজুর গাছের পরিচর্যা ও রস সংগ্রহ করতে হয়।

রস সংগ্রহকারীরা এলাকার বিভিন্ন স্থানে ও হাট-বাজারে খাওয়ার জন্য কাঁচা রস বিক্রয় করেন। আবার কেউ কেউ রস দিয়ে গুড় তৈরি করেও বিক্রয় করেন। গ্রামে এ রস থেকে তৈরি গুড় দিয়ে মুখরোচক খাবার, পায়েসসহ হরেক রকমের লোভনীয় পিঠা তৈরির ধুম পড়ে। বলতে গেলে বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্যের একটি অংশ এই রস। খেজুর রসের ঐতিহ্য ধরে রাখতে খেজুর গাছ রক্ষাসহ নতুনভাবে রোপণের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন রামপালের গাছিরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নিজের প্রস্রাব পান করে ‘আশিকি’ অভিনেত্রী অনু আগারওয়াল বললেন, ‘আহা অমৃত’

মে. জে. ফজলুরের সেভেন সিস্টার্স দখলের মন্তব্য সমর্থন করে না সরকার: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে স্টারলিংকের প্রস্তাবিত কার্যক্রমের বিস্তারিত চায় ভারত

গায়ে কেরোসিন ঢেলে কলেজছাত্রীর আত্মহনন, পলাতক ইমাম গ্রেপ্তার

সরকারি মাধ্যমিকের সহকারী শিক্ষকেরা পাচ্ছেন গেজেটেড মর্যাদা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত