Ajker Patrika

৯ মাসে বন্ধ হয়েছে ৮০৯টি বাল্যবিবাহ

অর্চি হক, ঢাকা
আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১০: ০৫
৯ মাসে বন্ধ হয়েছে ৮০৯টি বাল্যবিবাহ

নওগাঁ জেলার শাপাহারের কিশোরী শায়লা আক্তার (ছদ্মনাম)। বয়স তার ১৬ পেরোয়নি। পড়াশোনা শেষ করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন মেয়েটির; কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণের পথে বাধার দেয়াল হয়ে দাঁড়ায় বাল্যবিবাহ।

গত ১ আগস্ট শায়লার বিয়ের দিন ধার্য করেন তার মা-বাবা। বেলা সাড়ে ৩টায় হওয়ার কথা ছিল বিয়ে; কিন্তু ওই দিন দুপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে ন্যাশনাল হেল্পলাইন সেন্টারের ১০৯ নম্বরে ফোন করে এই বিয়ের বিষয়টি জানান শায়লার এক প্রতিবেশী। হেল্পলাইন সেন্টার থেকে তাৎক্ষণিকভাবে শাপাহার উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা এবং শাপাহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। উপজেলা ও থানার কর্মকর্তারা নির্ধারিত সময়ের আগেই শায়লার বাসায় উপস্থিত হয়ে বন্ধ করে দেন বিয়ের আয়োজন। মেয়েটির পরিবার অঙ্গীকার করে, প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত মেয়েকে বিয়ে দেবেন না। শায়লার পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দেন পরিবারের সদস্যরা। বেঁচে যায় শায়লার স্বপ্ন।

তবে সবার ক্ষেত্রে শায়লার মতো ঘটনা ঘটে না। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ইউনিসেফের তথ্য বলছে, বাংলাদেশে প্রতি দুটি কন্যাশিশুর মধ্যে একজন বাল্যবিবাহের শিকার হয়। আইসিডিডিআরবি এবং প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, বাল্যবিবাহের কারণে মেয়েদের শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ার হার ৭৭ শতাংশ। এমন প্রেক্ষাপটে ৩০ সেপ্টেম্বর সারা দেশে পালিত হবে জাতীয় কন্যাশিশু দিবস। কন্যাশিশুদের সুরক্ষা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় ২০০৩ সাল থেকে দেশে এই দিবসটি পালন করা হচ্ছে।

বাল্যবিবাহ বন্ধে জাতীয় হেল্পলাইন ১০৯। শায়লার মতো শত শত কন্যাশিশুকে বাল্যবিবাহের কবল থেকে রক্ষা করছে এই হেল্পলাইনটি। মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য বলছে, এ বছর ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১০৯ হেল্পলাইন নম্বরে বাল্যবিবাহসংক্রান্ত কল আসে ৯৭৩টি। এর মধ্যে ৮০৯টি বিয়ে বন্ধ করা গেছে। এই হেল্পলাইন সেন্টারের প্রোগ্রাম অফিসার রাইসুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এখানে বাল্যবিবাহসংক্রান্ত ফোন আসার সঙ্গে সঙ্গে আমরা সেটা বন্ধে কাজ শুরু করি। ফোন এলে ভুক্তভোগীর ঠিকানা ও পরিচয় লিখে রাখা হয়। এরপর স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঘটনাস্থলে তাঁদের যেতে বলা হয়। এরপর খোঁজ রাখা হয় যে বাল্যবিবাহটা বন্ধ করা গেল কি না।’

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘বাল্যবিবাহ আমাদের সমাজে একটি ব্যাধির মতো। তাই বাল্যবিবাহ বন্ধে যেকোনো উদ্যোগই প্রশংসার দাবি রাখে। ১০৯ হেল্পলাইনও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে শুধু এ রকম হেল্পলাইন দিয়ে বাল্যবিবাহ নির্মূল করা যাবে না। মেয়েদের শিক্ষা, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে বাল্যবিবাহ এমনিতেই কমে যাবে আর তা হলেই কন্যাশিশুরা স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার সুযোগ পাবে। তাদের সাফল্য দেশকেও এগিয়ে নিয়ে যাবে।’

বাল্যবিবাহ বন্ধে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর থেকে পরিচালনা করা হয় ১০৯ হেল্পলাইন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশ না করার প্রস্তাব

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: বিমানবাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

‘ঘুষের জন্য’ ৯১টি ফাইল আটকে রাখেন মাউশির ডিডি: দুদক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত