Ajker Patrika

গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বনাম গ্রহণযোগ্য উন্নয়ন

আপডেট : ০৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০৯: ৩৩
গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বনাম গ্রহণযোগ্য উন্নয়ন

নির্বাচনের পক্ষে-বিপক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোর মাতামাতি লক্ষ করা গেলেও সাধারণ মানুষের মধ্যে একধরনের নির্লিপ্ততার বিষয়টি অস্বীকার করা যাবে না। নির্বাচন হওয়া বা না হওয়ার ব্যাপারে ব্যাপকসংখ্যক মানুষেরই যেন দর্শকের মনোভাব। তবে দল সমর্থক জনগোষ্ঠীর কথা ভিন্ন। অথচ একসময় মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে উৎসবের মনোভাব দেখা যেত। এখন বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে দুটি প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। একটি হচ্ছে ‘নির্বাচনকে’ নিয়ে মাথা না ঘামানো। আরেকটি হচ্ছে হতাশা ও ক্ষোভ ব্যক্ত করা। এর পেছনের কারণগুলো বোধগম্য। বেশির ভাগ মানুষ ভাবছেন এটি আসলে একটি নির্বাচন নয়। কারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই, আছে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ভান। আর যেহেতু ফলাফল হচ্ছে বর্তমান শাসক দল কর্তৃক পূর্বনির্ধারিত, অর্থাৎ নিশ্চিতভাবে বর্তমান সরকারের বিজয় এবং ধারাবাহিকতা রক্ষা, সেহেতু এটা কোনো ‘ইলেকশন’ নয়, ‘সিলেকশন’ মাত্র।

তাঁরা হয়তো বেশির ভাগ দীর্ঘদিন তৃণমূলে রাজনীতি করেননি। তাঁরা কষ্ট করে, সাধনা করে ভোটারের মন জয় করার যে দীর্ঘ রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থাকে তার ভেতর দিয়ে উঠে আসেননি। কোনো ক্রিকেট প্লেয়ার, কোনো অভিনেত্রী, কোনো অর্থবিত্তের মালিক, কোনো আমলা, কোনো সাবেক দলীয় বা জোট নেতা বা মন্ত্রী—এসবই হয়ে উঠেছে আগামী পার্লামেন্টে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর প্রধান বিবেচ্য যোগ্যতা। আবার তাঁরাও প্রায় সবাই ভাবছেন শাসক দলের মনোনয়ন টিকিটটি পেলেই বিজয় নিশ্চিত।

কিন্তু সবাই যদি একটি দলেরই প্রার্থী হতে চান তাহলে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে কীভাবে? তাহলে বিরোধী দলের কার্যত অনুপস্থিতিতে যে নির্বাচন হবে তাকে আসলে গণতান্ত্রিক নির্বাচন বলা যাবে কি? সে জন্য কেউ কেউ বর্তমান নির্বাচনকে নামকরণ করেছেন ‘অভিনয়ের নির্বাচন’ বা ‘তামাশার নির্বাচন’।

কিন্তু এই নির্বাচনে আরেকটি বিপরীত প্রবণতাও সৃষ্টি হয়েছে। সেটি কী? এটা হচ্ছে স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিচিত্র সমাহার। দেখা যাচ্ছে খোদ শাসক দলের মধ্যেই অনেকে ‘বিরোধী দলের’ বিকল্প হতে চাইছেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, তাঁদের আবার শাসক দল শুধু উৎসাহিত করছে তা-ই নয়, কোথাও কোথাও শোনা যায় নিজের দলীয় মনোনীত প্রার্থীকে পরাজিত করে স্বতন্ত্ররা যাতে জয়ী হন, সে জন্য গোপনে তাঁদের নানাভাবে সাহায্য ও আশীর্বাদ করছে। আর এটাও আমরা দেখছি, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা অনেকেই দাবি করছেন যে তাঁরাও নৌকার রাজনীতিতে বিশ্বাসী, নৌকার মূল মাঝির আশীর্বাদ নাকি গোপনে তাঁর প্রতিই আছে (!) যদিও অফিশিয়ালি তাঁরা নৌকা প্রতীক থেকে বঞ্চিত হয়েছেন এবং অন্য প্রতীক নিয়েই নির্বাচন করছেন। সুতরাং এই নির্বাচনে দ্বিতীয় প্রবণতা হচ্ছে শাসক দলের অভ্যন্তরে সৃষ্ট ব্যাপক অনৈক্য, পারস্পরিক বিবাদ এবং বিশৃঙ্খলা। প্রশ্ন হচ্ছে, আগামী নির্বাচনে সব রকম ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া শেষে কোন নিট প্রবণতাটি প্রধান নির্ধারক প্রবণতায় পরিণত হবে?

বলা হয় জনগণই ইতিহাসের স্রষ্টা। দেখা যাক সেখানে কী প্রবণতা বিরাজ করছে? জনগণের মধ্যে বর্তমান নির্বাচন বানচাল করে দেওয়া বা ঠেকিয়ে দেওয়ার মতো তীব্র কোনো সংগ্রাম বা ‘গণ-অভ্যুত্থান’ ঘটিয়ে এরপর ১৯৭০-এর নির্বাচনের মতো কোনো গণতান্ত্রিক বিজয়গাথা রচনার প্রবণতা আমরা মোটেও দেখছি না। আমরা বলে থাকি, আমাদের রাজনীতির বা প্রজাতন্ত্রের মূল শক্তি হচ্ছে এর জনগণ। কিন্তু কেন জনগণ রাজনীতির বিষয়ে এতটা অনুৎসাহিত বা এত উদাসীন হয়ে আছেন এখনো—সেটা কি কেউ গভীরভাবে ভেবে দেখেছেন? যদিও শাসক দল আশা ও চেষ্টা করছে যাতে জনগণ খুবই উৎসাহিত হয়ে দলে দলে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হবেন ও ভোট দিয়ে এই বিদ্যমান আলংকারিক প্রতিযোগিতার ভেতর থেকেই নিজেদের পছন্দমতো অলংকারটি বেছে নেবেন। হয়তো কোনো কোনো নির্বাচনী এলাকায় যে তীব্র মারামারি, অর্থব্যয়, প্রচার, পক্ষে-বিপক্ষে বাদ্য-বাজনা-গান ইত্যাদি দেখা যাচ্ছে, তাতে তাঁরা ভাবছেন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরাই নিজ উদ্যোগে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনার ব্যবস্থা করবেন এবং তাঁদের এসব সক্রিয়তা অবশেষে ভোটারদের বর্তমান নিস্পৃহতা কাটিয়ে তাঁদের সক্রিয় করে তুলবেন। একটি অর্থবহ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতেও পারে! নানা ঐতিহাসিক কারণে বাংলাদেশের জনগণ দুটি দলে (প্রায় গোত্রের মতো) বিভক্ত এবং দুই শিবিরের প্রতি দুই দলের সুস্থির আনুগত্য রয়েছে। এই দুই শিবিরকে সাংস্কৃতিকভাবেও বর্তমানে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। একটি শিবিরকে বলা হয় ‘জয় বাংলার শিবির’, অপরটিকে বলা হয় ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’-এর শিবির। টাকার ক্ষমতা বা অর্থের দিক থেকে বা দলীয় শ্রেণিচরিত্রের দিক থেকে বা শাসনক্ষমতায় থাকাকালে নানাভাবে ধনিক শ্রেণির স্বার্থ রক্ষার গোপন বা প্রকাশ্য অঙ্গীকারের ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে কোনো তফাত নেই, কিন্তু মনোভঙ্গি বা সংস্কৃতিগতভাবে আমাদের বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছে যে মুক্তিযুদ্ধ, তার প্রতি এই দুই শিবিরের দৃষ্টিভঙ্গিতে অনেক পার্থক্য বিদ্যমান। এবারও তাই এদের মধ্যে যেকোনো একটি শিবিরের সমর্থকেরাও যদি এবারের নির্বাচনে যোগ দেন, তাহলেও কিন্তু ভোটের অনুপাত ন্যূনতম ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ হয়ে যেতে পারে।

যে নির্বাচনটি শেষ পর্যন্ত হচ্ছে তাতে শেষ ফলাফল কি শুভ হবে? আওয়ামী সমর্থকেরা বলতেই পারেন, আমরা কী করব, কেউ যদি নির্বাচনে না আসেন, তাহলে কী করার আছে আমাদের। আমরা সংবিধান মেনে নির্বাচন দিয়েছি, এ ছাড়া আমাদের অন্য কোনো পথ ছিল না। কিন্তু তাতে কী কাজ হবে?

পাল্টা প্রশ্নটি হচ্ছে—অন্য কোনো পথ কি ছিল না? আওয়ামী লীগ কি আসলেই চেয়েছিল প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীরা নির্বাচনে সুষ্ঠু প্রতিদ্বন্দ্বিতাসহ অংশগ্রহণ করুক? ২০১৪ ও ২০১৮তে সংবিধান মেনেই আওয়ামী সরকারকে ক্ষমতায় রেখেই নির্বাচন হয়েছিল। ২০১৪ সালের নির্বাচনে কিন্তু বিএনপি আসেনি এবং পরে স্বীকার করেছিল যে না এসে তারা ভুল করেছিল। তাই ২০১৮তে যখন তারা ভুল সংশোধন করে পুনরায় নির্বাচনে যোগ দেয়, তখন রাতের আঁধারে ভোট বাক্স ভরে ফেলায়, সেই সময় বিএনপি তার প্রত্যাশিত ফলাফল থেকে বঞ্চিত হয়েছিল। বিএনপির কয়েকজন এমপি ২০১৮-এর সংসদে যোগ দিয়েছিলেন, আন্তর্জাতিক মহলও সেই সংসদকে ও সরকারকে অবশেষে মেনেও নেয়। ফলে বিরাট কোনো গোলযোগ সেবার সৃষ্টি হয়নি। কিন্তু এবার আর বিএনপি নির্বাচনেই যায়নি, ২০১৮-এর পুনরাবৃত্তির আশঙ্কায়। সুতরাং এবার একতরফা নির্বাচনে যে সংসদটি তৈরি হতে যাচ্ছে, সেটিও কি আবার সবাই অবশেষে মেনে নেবে? সেখানে কি যথার্থই কোনো বিরোধী দল থাকবে? আন্তর্জাতিক মহলও কি এই নির্বাচনকে অবশেষে বৈধতা দেবে? বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবারের নির্বাচনের আগে থেকেই যেসব সতর্ক বার্তা দিয়ে চলেছে, তাতে এবার 
তাদের স্বীকৃতি সংগ্রহ ততটা সহজ ও নিশ্চিত নয় বলেই মনে হয়।

বর্তমানে আমরা বাতাসে একটি ‘উন্নয়নের’ তত্ত্ব শুনতে পাই। এই তত্ত্বের মূল কথা হচ্ছে, ‘গণতন্ত্র’ উন্নয়নের অপরিহার্য শর্ত নয়। একদলীয় কর্তৃত্বমূলক গণতন্ত্রের অধীনেও উন্নয়ন সম্ভব। উদাহরণ হিসেবে একগুচ্ছ রাষ্ট্রের উন্নয়নের দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হয়, যেমন চীন, ভিয়েতনাম, কিউবা, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর ইত্যাদি।

‘পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থায়’ বা ‘বাজারমুখী সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায়’ বর্তমান বিশ্বে একদলীয় কর্তৃত্বমূলক রাজনৈতিক শাসনের অধীনেও প্রবৃদ্ধি এবং কিছুটা সুষম বণ্টনসহই জনগণের উন্নয়ন হচ্ছে বা হতে পারে। এসব দেশে জনগণ সংকুচিত বাক্‌স্বাধীনতা, নিয়ন্ত্রিত রাজনীতি বা ব্যক্তিস্বাধীনতা নিয়ে এতটা উৎকণ্ঠিত নন। এসব ছাড়াও দিব্যি তাঁরা শান্তিতে, স্বস্তিতে জীবনযাপন অব্যাহত রেখেছেন। বলা হয় সেই তুলনায় অবাধ বাজার এবং অবাধ ব্যক্তিস্বাধীনতাসহ যে উন্নত সমাজ (আমেরিকার দৃষ্টান্ত) রয়েছে, সেখানেও অনেক অন্যায়, অনেক বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে দেখা যায়। গণতন্ত্র ও উন্নয়ন একসঙ্গে হলে খুব ভালো, কিন্তু না হলেই যে মহা সর্বনাশ হবে, সেটি আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতায় অনিবার্য সত্য নয়।

১৯৭১ সালে আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্যই প্রথমে কিন্তু গণতন্ত্রের সংগ্রামেই নেমেছিলাম। তখন উগ্র বামপন্থীরা ভোট বর্জন করে বলেছিল যে ভোটের আগে ভাতের অধিকার অর্জন করতে হবে। ভাসানী সাহেব তখন নির্বাচন বর্জন করেছিলেন। কিন্তু সেটা ছিল তখন ভুল। কিন্তু এখন আমরা কী বলব?

এখন যদি ইস্যুটা এমন হতো যে ‘আওয়ামী লীগের’ শাসক গোষ্ঠীর চরিত্র ও ধরনটি এমন যে তারা একদলীয় শাসনের অধীনেই প্রয়োজনীয় উন্নয়ন ও সুষম বণ্টন সম্পন্ন করতে সক্ষম হচ্ছে, তাহলে হয়তো আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র তা আমাদের জনগণ মেনে নিতেন। কিন্তু জনগণ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, কোটিপতির সংখ্যা বৃদ্ধি, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি বা এককথায় স্বজনতোষণমূলক পুঁজিবাদী এই ব্যবস্থা দেখে এত বীতশ্রদ্ধ যে ‘আওয়ামী উন্নয়ন’ দাবির প্রতি তাঁরা কোনো নিখাদ আস্থা রাখতে পারছেন না। কিন্তু সত্যিকার উন্নততর বিকল্প কোনো বিরোধী নেতৃত্বও তাঁরা এখন পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছেন না। ফলে তাঁদের অভিজ্ঞতা হচ্ছে গণতান্ত্রিক বা অগণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা যেটাই থাকুক না কেন, লঙ্কায় যিনি থাকবেন বা যাবেন, তিনি দ্রুতই রাবণে পরিণত হবেন। বর্তমানে তাই জনগণ এখানে হতাশ ও উদ্যোগহীন শক্তিতে পরিণত হয়েছেন; বরং ‘চাচা আপন প্রাণ বাঁচা’—এটাই হচ্ছে জনগণের বিদ্যমান প্রধান মনোভঙ্গি। বিদ্যমান রাষ্ট্রব্যবস্থা ভাঙার জন্য জনগণ এখনো জান বাজি রেখে রাস্তায় নামতে প্রস্তুত নন।

এই মনোভঙ্গির পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য উন্নয়ন ও গ্রহণযোগ্য গণতন্ত্র উভয়ই ঝুলতে থাকবে।

লেখক: এম এম আকাশ, অধ্যাপক, অর্থনীতিবিদ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত