Ajker Patrika

‘পথ ভাবে আমি দেব, রথ ভাবে আমি...’

মোজাম্মেল হোসেন
‘পথ ভাবে আমি দেব, রথ ভাবে আমি...’

সংবাদমাধ্যমে যখন প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনা, ধর্ষণ, সংঘর্ষে মানুষ হতাহত হওয়ার খবর থাকে, তখন কিছু লোকের হামলায় এক ব্যক্তির আহত-লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্রতিক্রিয়া হয়েছে আন্তর্জাতিক মহলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে। জাতিসংঘ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের পর্যায়ে। বিস্ময়কর বৈকি! এই ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ আশরাফুল হোসেন আলম।

‘হিরো আলম’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছেন তিনি। প্রচলিত গানের সঙ্গে মডেল হয়ে ও অন্য মডেল নিয়ে অতি সাধারণ মানুষের জন্য বিনোদনমূলক ডিডিও বানিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বিশেষ পরিচিতি পেয়েছেন। তবে দেশের ভদ্র সমাজ তথা শিক্ষিত মধ্যবিত্তদের অগ্রসর, সম্ভ্রান্ত ও সংস্কৃতিমান বিবেচিত মানুষের একটি বড় অংশ তাঁকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য ও উপহাস করে, যা সামাজিক যোগাযোগের ভাষায় ট্রল বা মিম। এহেন ২৮ বছরের যুবক হিরো আলম গত কয়েক মাসে জাতীয় সংসদের বগুড়ায় দুটি ও ঢাকার একটি আসনে উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তুলনামূলক ভালো ভোট পেয়ে এখন রীতিমতো পাদপ্রদীপের আলোয়।

গুলশান-বনানী-ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় জাতীয় সংসদের ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে একতারা প্রতীক নিয়ে দাঁড়ানো স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমকে ভোটের দিন ১৭ জুলাই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের ব্যাজধারী কর্মীরা ভোটকেন্দ্রের কাছে ন্যক্কারজনকভাবে রাস্তায় ফেলে কিল-ঘুষি-লাথি মেরে আহত করেন। স্বভাবতই দেশে এ ঘটনার নিন্দা হয়েছে। তবে ত্বরিত আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া লক্ষণীয়।

ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস উদ্বেগ প্রকাশসহ এই মর্মে দাপ্তরিক টুইট বার্তা দেন যে, ‘সহিংসতামুক্ত থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রত্যেকের যে মৌলিক মানবাধিকার, তা নিশ্চিত ও সুরক্ষিত করতে হবে।’

হিরো আলমের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ঢাকার ১২টি দেশের দূতাবাস ও হাইকমিশন। ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রাত্যহিক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘গণতান্ত্রিক নির্বাচনে এ ধরনের সহিংসতার কোনো স্থান নেই।’ তিনি মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় উৎসাহ দেওয়ার কথা জানান।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগ ইতিমধ্যে ছবি দেখে শনাক্ত করে হামলায় জড়িত সাতজনকে আটক করে তদন্ত শুরু করেছে।

মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মঙ্গলবার একই ধরনের প্রতিক্রিয়ায় হামলাটি আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের আগে ‘একটি আতঙ্কের বার্তা দিচ্ছে’ বলে উল্লেখ করেছে।

বুঝতে কোনো অসুবিধা নেই যে আমাদের সমাজের দৃষ্টিতে হিরো আলম একজন অতি সাধারণ ব্যক্তি, তাঁর হেনস্তায় এত বড় আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার কারণ দুটি শব্দে ব্যাখ্যা করা যায়। তা হচ্ছে মানবাধিকার ও গণতন্ত্র। এ দুটি বিষয় মানবসভ্যতার বর্তমান স্তরে অনেক উচ্চ ভাবাদর্শ, ইতিহাস, অনুশীলন এবং সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার আইনি পরিকাঠামো নির্দেশ করে। আমরা তা উপেক্ষা করতে পারি না। আর বিগত দুটি সংসদ নির্বাচন ও আসন্ন নির্বাচনের পটভূমিতে এ দুটি বিষয়ে বাংলাদেশের ওপরে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি এখন প্রখর।

২. একটু পেছনে যাওয়া যাক। গত মে মাসে বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে দেশে সরকারি ও প্রধান বিরোধীদের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পেতে থাকে। তখন রবীন্দ্রনাথের গভীর ভাবসমৃদ্ধ ছোট্ট একটি কবিতা মনে পড়ে যায়। ‘কণিকা’ কাব্যগ্রন্থের ‘ভক্তিভাজন’: ‘রথযাত্রা, লোকারণ্য, মহা ধুমধাম,/ ভক্তেরা লুটায়ে পথে করিছে প্রণাম।/ পথ ভাবে আমি দেব, রথ ভাবে আমি,/ মূর্তি ভাবে আমি দেব—হাসে অন্তর্যামী।’

ভিসা নীতির মূল বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে যারা গণতান্ত্রিক ও সুষ্ঠু নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করবে, সেই সব ব্যক্তিকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ভিসা দেওয়া হবে না। বিএনপির নেতারা বলতে থাকেন, এই নীতি শেখ হাসিনার সরকারকে লক্ষ্য করে।কারণ তারা ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে মহা কারচুপি করেছে এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও মতপ্রকাশে বাধা সৃষ্টি করছে।

সরকারি নেতারা বলতে থাকেন, এই ভিসা নীতি বিএনপিকে লক্ষ্য করে। কারণ তারা নির্বাচন বর্জন ও ভন্ডুল করার সহিংস তৎপরতা চালায়। সে রকম আন্দোলন তারা আর করতে পারবে না।

আমেরিকার একাধিক কর্মকর্তা মুচকি হেসে জানান, কোনো দল বা পক্ষ তাদের চিন্তায় নেই। যুক্তরাষ্ট্র এই নীতি নিয়েছে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার বাস্তবায়নকে সাহায্য করার জন্য।

বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গণতন্ত্রের পিছিয়ে পড়া রোধ করতে আমেরিকার সরকার সক্রিয় ভূমিকা নিতে শুরু করেছিল তারও আগে। ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর ওই দেশের রাজস্ব বিভাগ ও পররাষ্ট্র দপ্তর আমাদের র‍্যাব এবং এর সাবেক ও বর্তমান সাতজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নিষেধাজ্ঞার অর্থ হলো, ওয়াশিংটন কর্তৃপক্ষ ওই ব্যক্তিদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ বন্ধ করতে এবং বিদেশে থাকা সম্পত্তি, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করতে পারবে। এই নিষেধাজ্ঞা ছিল গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে। বাংলাদেশ সরকার অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে আসছে।

এর দেড় বছর পরে এল মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার নীতি। র‍্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটার পরে জড়িত থাকার সন্দেহের অধীন সুনির্দিষ্ট কতিপয় ব্যক্তির ক্ষেত্রে। ভিসা নীতি তার চেয়ে ব্যাপক। সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে বাধা সৃষ্টি ও কারচুপির ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনার জন্য নয়, বরং নজিরবিহীনভাবে আগাম সতর্কীকরণ। যিনি ঘটাবেন, তাঁর ওপরই প্রযোজ্য।

অত্যন্ত স্পষ্ট যে, বাংলাদেশে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের প্রশ্নে আমেরিকার সরকার ধারাবাহিকভাবে তথ্য সংগ্রহ ও পর্যবেক্ষণের পরে দুটি সক্রিয় পদক্ষেপ নিয়েছে। গত দুই বছরে ওয়াশিংটন ও ঢাকায় দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও একাধিক কর্মকর্তা পর্যায়ে অনেক আলোচনা হয়েছে।

এরই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়ার নেতৃত্বে চার সদস্যের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল ১১-১৪ জুলাই ঢাকা সফর করে গেলেন। নির্বাচনের ছয় মাস আগে এটি গুরুত্বপূর্ণ সফর, যার প্রতি সংবাদমাধ্যম ও পর্যবেক্ষকদের নিবিড় নজর ছিল। দলটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী, সচিব, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সুশীল সমাজ ও মানবাধিকার সংগঠনের নেতাদের সঙ্গেও একাধিক পৃথক ও যৌথ বৈঠক করেছে।

সংবাদমাধ্যম সক্রিয় থাকায় অনেক খবর বেরিয়েছে, উভয় পক্ষের মন্ত্রী ও কর্মকর্তারা অনেক কথাই বলেছেন, যা খবর পড়ার মাধ্যমে সবাই জানেন। আজরা জেয়া সংবাদ ব্রিফিংয়ে, টুইটারে, সাক্ষাৎকারে যা কিছু বলেছেন, তার সারকথা হলো—বাংলাদেশের রাজনীতিতে সহিংসতা পরিহার করে সুষ্ঠু, অবাধ, অন্তর্ভুক্তিমূলক, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। তবে তত্ত্বাবধায়ক বা নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার ইত্যাদি অভ্যন্তরীণ বিরোধীয় বিষয়ে তাদের কোনো বক্তব্য নেই। এটা বাংলাদেশি দলগুলো সংলাপে বসে ফয়সালা করবে বলে তারা আশা করে। তিনি বলেছেন, ‘আসুন, আমরা বাংলাদেশের জনগণকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ করে দিই।’

এ রকম স্পষ্ট বক্তব্যের পরেও এ ধরনের উচ্চপর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়ে যাওয়ার পরে নানা ধরনের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ জল্পনা-কল্পনা চলতে থাকে। এটা স্বাভাবিক। তবে আমরা আবার দেখতে পাচ্ছি সেই ‘পথ ভাবে আমি দেব, রথ ভাবে আমি’র মতো প্রতিক্রিয়া। সরকারি নেতারা বলছেন, সরকার অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনেরই ব্যবস্থা করছে, যা আমেরিকা চায়। তাই কোনো সমস্যা নেই। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান জানিয়েছেন, কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল, এখন ব্যবধান দূর হয়েছে।

আর বিএনপির নেতারা বলছেন, এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সরকারের ওপর আমেরিকানদেরও বিশ্বাস নেই বলেই তাঁরা এখানে এসেছেন। এ কথা বলেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

আজরা জেয়ার টিম বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করেনি। বিএনপি রাস্তার আন্দোলনে থাকলেও তাদের রাষ্ট্রীয় কোনো অবস্থান নেই। কী বুঝে গেলেন আজরা জেয়া? প্রকাশ্য কথাবার্তার বাইরে বাংলাদেশের মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে কূটনৈতিকভাবে বিশেষ কোনো বার্তা তিনি যদি দিয়ে থাকেন, তা আমাদের জানার উপায় নেই, ভবিষ্যতে পরিষ্কার হবে। বিদেশিদের সব আকাঙ্ক্ষা, চাপ, কারও কারও ভাষায় হস্তক্ষেপ বা নাক গলানোর ক্ষেত্রে একমাত্র প্রতিকার ও আমাদের জবাব হলো অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বাস্তবায়ন করা।

লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত