Ajker Patrika

সব চোখ ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী
আপডেট : ০৫ জানুয়ারি ২০২৪, ১২: ৫২
সব চোখ ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে

নির্বাচন কমিশন এবার জটিল এই পরিস্থিতির মধ্যেও বেশ স্বাধীনভাবে নিজেদের সিদ্ধান্ত নেওয়াসহ নির্বাচন অনুষ্ঠানের যাবতীয় ব্যবস্থা গুছিয়ে এনেছে। আচরণবিধি ভঙ্গ করার দায়ে অনেক প্রার্থীকেই কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে, বেশ কয়েকজন শাস্তিও পেয়েছেন।

আজ শুক্রবার সকাল ৮টার পর থেকে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শেষ। রোববারেই বহুল আলোচিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। গত ১৮ ডিসেম্বর থেকে প্রার্থীরা এবং তাদের সমর্থকেরা প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। অবশ্য যতজন প্রার্থী নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছিলেন, তাঁদের সবাইকে ভোটাররা সমানভাবে দেখেছেন— এমনটি নয়। কোনো কোনো দলের প্রার্থীর নামধাম কিছুই নির্বাচনী আসনের ভোটাররা জানতেও পারেননি। বোঝাই গেছে, ওই সব দলের প্রার্থীরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কিংবা জয়লাভ করার কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে অংশ নেননি। তবে তাঁরা কেন ব্যালট পেপারে নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর কোনো প্রচার-প্রচারণায় অংশ নেননি, তা বোঝা গেল না। আবার কোনো কোনো দলের প্রার্থীরা শেষের দিকে এসে দলের সিদ্ধান্ত ছাড়াই নিজেদের প্রার্থিতা নিজেরাই প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা দিচ্ছেন।

যে সময় তাঁরা নাম প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন, সেই সময় ব্যালট পেপার থেকে নাম মুছে ফেলা নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু এখন বলছেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে তাঁরা সরে যাচ্ছেন। বিশেষ করে জাতীয় পার্টির ডজনখানেক প্রার্থী নিজেদের নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান তাঁর পূর্বসূরি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মতোই এবারের নির্বাচনে নানা ধরনের ভূমিকায় নিজেকে অবতীর্ণ করেছেন। জি এম কাদেরকে অনেকে আগে বেশ সিরিয়াস মানুষ হিসেবেই মনে করতেন, কিন্তু দলের সভাপতি হওয়ার পর থেকে তিনি বোধ হয় তাঁর ভাইকেও অনেক ক্ষেত্রে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। তবে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার খবরাখবর গণমাধ্যমে যেভাবে গত কয়েক দিন প্রচারিত হয়েছে, তাতে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের মধ্যে বেশির ভাগেরই জয়ের সম্ভাবনা নিয়ে নানা রকম সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। সে কারণেই হয়তো অনেকে তাঁদের নাম প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে পরাজয়ের গ্লানি থেকে নিজেকে রক্ষা করার মতো একটি উত্তর হাতে রেখেছেন। 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে শুরু থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেক নাটকীয়তা সবাইকে দেখতে হয়েছে। বিএনপি এবং যুগপৎ আন্দোলনকারী দলগুলো আগে থেকেই এক দফার আন্দোলন করে আসছিল। তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। সরকার সংবিধানসম্মতভাবেই দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের অবস্থানে অনড় ছিল। যুগপৎ আন্দোলনকারীরা সরকারপতনে দেশে গণ-আন্দোলন সৃষ্টি করতে পারেনি। ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি পূরণ করার কোনো বাস্তব অবস্থা তৈরি হয়নি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিএনপির হিসাব-নিকাশ ছিল নানা ধরনের। বিএনপির ধারণা ছিল, বিদেশিদের সমর্থনে সরকারকে ২৮ অক্টোবরের পর ক্ষমতাচ্যুত করতে তারা সক্ষম হবে। বিএনপি ও যুগপৎ আন্দোলনকারী নেতৃবৃন্দ সরকারকে সে ধরনের হুঁশিয়ারিও দিয়ে আসছিলেন। সরকার পতনের ডেডলাইনও দেওয়া ছিল।

কিন্তু এর কোনোটাই বাস্তবে না ঘটার পর হরতাল, অবরোধ ও সহিংস কর্মসূচি দেওয়ার পরও জনসমর্থন খুব একটা আন্দোলনের পক্ষে বাড়ার লক্ষণ দেখা যায়নি। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করে। বিএনপি এবং যুগপৎ আন্দোলনকারীরা নির্বাচন বর্জন এবং হরতাল ও অবরোধের কর্মসূচি চালিয়ে যেতে থাকে। সেই অবস্থায় বিএনপি ও যুগপৎ আন্দোলনকারীদের অনুপস্থিতিতে নির্বাচন যেভাবে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠার সম্ভাবনা ছিল, সেটি না ঘটারই বাস্তবতা তৈরি হলো। নির্বাচনকে গুরুত্বহীন করার জন্যই বিএনপি ও যুগপৎ আন্দোলনকারীরা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়। তাদের ধারণা ছিল, এর ফলে আওয়ামী লীগ এবারও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করার পথে হাঁটবে কিংবা হাঁটতে বাধ্য হবে। তেমনটি ঘটলে দেশে-বিদেশে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংস করার অভিযোগটি প্রমাণ করা তাদের পক্ষে সহজ হবে।

বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এক পক্ষে আওয়ামী লীগ, বিপরীতে বিএনপি অবতীর্ণ হলেই কেবল নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হতে পারে। এক পক্ষ অংশ না নিলে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয় না, তা একটি শিশুও বলে দিতে পারে। বিএনপির হাতে যেসব অপশন ছিল, তার মধ্যে সর্বশেষ অপশন হলো নির্বাচন বর্জন করা। হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নতুবা নির্বাচন বর্জন। বিএনপি শেষটি হাতে রেখেছিল এবং তফসিল ঘোষণার পর সেটিই তারা প্রয়োগ করল। সেই অবস্থায় আওয়ামী লীগ নির্বাচনটিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করার জন্য দলীয় মনোনীত প্রার্থী ছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দিয়েছে। এটি আওয়ামী লীগের মতো এত বড় রাজনৈতিক দলের পক্ষে উন্মুক্ত করার বিষয়টি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।

সব জেনেশুনেই আওয়ামী লীগকে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করার জন্য দলীয় নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার পথ খোলা রেখে দিতে হলো। এর ফলে নির্বাচন ঝুলে না পড়ে বরং বেশ উত্তপ্ত এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সারা দেশেই অন্তত দুই শতাধিক আসনে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা বেশ জমে উঠেছে। অনেক আসনেই প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষ ঘটেছে। আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের অনেকেই নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় এবার বেশ হিমশিম খাওয়ার অবস্থায় পড়েছেন। নির্বাচনী ফলাফলে অনেক চমকপ্রদ ঘটনা দেখা যেতে পারে। স্বতন্ত্রদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বিজয়ী হতে পারে।

প্রার্থীদের সবার মধ্যেই এখন টান টান উত্তেজনা এবং নাভিশ্বাস ওঠার মতো হাবভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। অনেক আসনেই নির্বাচন ত্রিমুখী, চতুর্মুখী লড়াইয়ে পরিণত হতে যাচ্ছে। কার গলায় বিজয়ের মালা উঠবে, তা আগে থেকে বলা মুশকিল। তবে অবিশ্বাস্য অনেক কিছুই যে ঘটবে, সে ব্যাপারে পর্যবেক্ষক মহল নিশ্চিত। সেরকম কিছু ঘটলে সরকার গঠন এবং বিরোধী দলের অবস্থান কী হবে, তা বোধ হয় সোমবার থেকে অনেকেরই চিন্তার বিষয়ে পরিণত হতে পারে। 
অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন এবার জটিল এই পরিস্থিতির মধ্যেও বেশ স্বাধীনভাবে নিজেদের সিদ্ধান্ত নেওয়াসহ নির্বাচন অনুষ্ঠানের যাবতীয় ব্যবস্থা গুছিয়ে এনেছে। আচরণবিধি ভঙ্গ করার দায়ে অনেক প্রার্থীকেই কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে, বেশ কয়েকজন শাস্তিও পেয়েছেন।

৯১-ই অনুচ্ছেদের বিধানে একজনের প্রার্থিতা বাতিল করেছে, আর্থিক জরিমানাও কয়েকজনকে করা হয়েছে। নির্বাচনী মাঠ তীব্র উত্তেজনাপূর্ণ হওয়ায় অনেক প্রার্থী এবং তাঁদের সমর্থকেরা আচরণবিধি লঙ্ঘনে জড়িয়ে পড়েন। ফলে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এবারই সবচেয়ে বেশিসংখ্যক প্রার্থী নির্বাচন কমিশনের দেওয়া শাস্তির আওতায় পড়েছেন। নির্বাচন কমিশন আরও কঠোরতা প্রদর্শন করলে শাস্তির আওতা এবং কঠোরতায় আরও অনেককেই পড়তে হতো, কিন্তু কমিশন মডারেট পন্থা অনুসরণ করেছে। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করার জন্য দেশের গোটা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সামরিক বাহিনীর সদস্যদের এরই মধ্যে মাঠে নামিয়েছে।

কমিশন থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত সবাইকেই নিয়ম ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দ্বিধা না করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। একইভাবে অংশগ্রহণকারী সব দল ও নির্দলীয় প্রার্থীদের নির্বাচনী আচরণবিধি যথাযথভাবে পালনের জন্য কমিশন থেকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, বেশির ভাগ আসনেই ভোটার উপস্থিতি সন্তোষজনক হবে। একটি পক্ষ অংশ না নেওয়ায় ভোটার উপস্থিতি নিয়ে যে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল, আশা করা যাচ্ছে সেটি অনেকটাই কেটে যাবে। যেসব আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তেমন তীব্র হবে না বলে বোঝা যাচ্ছে, সেই সব আসনে হয়তো ভোটারের উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে কম হতে পারে। রোববার সকালে সবাই দেখতে পাবে ভোটারের উপস্থিতি বাস্তবে কতটা ঘটবে। অন্যদিকে বিএনপিসহ যুগপৎ আন্দোলনকারীরা ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত না হওয়ার জন্য লিফলেট বিতরণ করছে।

তাদের প্রচেষ্টা কতটা সফল হবে তা-ও রোববারেই দেখা যাবে। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যেহেতু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, রাশিয়া গভীর মনোযোগের সঙ্গে অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছে, তাই তাদেরও চোখ রোববারের নির্বাচনের দিকে। নির্বাচনটি শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হলে কারও কিছু বলার থাকবে না। বিশেষত ব্যালট পেপারে কেউ অনিয়ম ঘটাতে চাইলে সেটির বিরুদ্ধে কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে বিষয়টি সবারই সমর্থন লাভ করবে। এর ব্যতিক্রম দু-একটি কেন্দ্রে ঘটলেও তা নিয়ে নির্বাচনবিরোধী এবং বিদেশি পর্যবেক্ষকেরাও হইচই কিংবা সমালোচনার সুযোগ পাবেন। সে কারণে সব অংশগ্রহণকারী দল ও প্রার্থীর উচিত হবে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে তাদের সক্রিয় সমর্থন যেন শতভাগ থাকে, কোনো ধরনের আইন ও নিয়ম ভাঙার চেষ্টা প্রার্থী, সমর্থক ও ভোটারদের কেউ যেন করতে না পারে, সে ব্যাপারে শতভাগ সচেষ্ট থাকা।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে অযথাই অনেক কিছু করা হয়েছে। নদী-সাগরের মতো অথই পানিও যেন ঘোলা করতে কোনো কোনো মহল যারপরনাই চেষ্টা করেছে, এখনো করছে। একটি জাতীয় নির্বাচনকে এভাবে দলীয় কিংবা ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করার প্রবণতা রাষ্ট্রের জন্য কতটা লজ্জা এবং ক্ষতিকর, তা অনেকেই যেন বুঝতে চাইছে না। সে কারণেই ৭ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে এত শ্লেষ, অপবাদ ও অর্থহীন করার অপচেষ্টা ধারাবাহিকভাবে করতে দেখা গেছে। গণতন্ত্র যদি সত্যিকার অর্থেই আমাদের রাষ্ট্রে ধারণ করার রাজনীতি ক্রিয়াশীল থাকত, তাহলে প্রতিবারই জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে এমন টানাহেঁচড়া এবং বিবাদ-বিসংবাদ আমাদের দেখতে হতো না। কিন্তু মুখে গণতন্ত্র, বগলের তলে ইট-পাথর রেখে যারা গণতন্ত্রের কথা শোনাতে চায়, তারা আসলেই গণতন্ত্র থেকে বহু দূরে অবস্থান করছে। ৭ তারিখের নির্বাচন যেন সত্যিকার অর্থেই শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়, সেটিই দেশপ্রেমিক সব মানুষের কাম্য।

লেখক: মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী, অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ ও কলামিস্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত