এ কে এম শহীদুল হক

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি প্রায় দেড় বছর। এরই মধ্যে দেশে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজ ও বিদেশি কূটনীতিকেরা কথা বলছেন; মতামত ব্যক্ত করছেন। সবারই দাবি—সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং তাদের সহযোগী জামায়াতে ইসলামী, অন্যান্য শরিক দল এবং কিছু বাম ঘরানার ছোট ছোট দল আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া এবং নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি সামনে এনেছে। তাদের দাবি পূরণ না হলে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত একাধিক অনুষ্ঠানে বলেছেন, আমেরিকা বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চায়। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দাবি, তাঁরা গণতন্ত্রকে পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে গণ্য করেন।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজপথ উত্তপ্ত হতে থাকবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আদায়ের লক্ষ্যে হরতাল, ঘেরাও, অবরোধ, মানববন্ধন ইত্যাদি কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। বিরোধী দলগুলো সহিংস পথেও আন্দোলন চালাতে পারে। অপরপক্ষে সরকারি দলও রাজপথ ছাড়বে না। তারা একের পর এক পাল্টা কর্মসূচি দেবে।
সরকারি দল আওয়ামী লীগ সংবিধান পরিপন্থী কোনো দাবি মানবে না। তাদের মতে, সব গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়। বাংলাদেশেও সেভাবে সংবিধান মোতাবেক নির্বাচন হবে। বাংলাদেশে কেয়ারটেকার পদ্ধতি ছিল। কেয়ারটেকার সরকারের তিক্ত অভিজ্ঞতা জনগণ পেয়েছে। দেশের উচ্চ আদালত কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি বাতিল করেছেন। সেই কেয়ারটেকার সরকার সংবিধানে পুনর্বহাল কোনোক্রমেই সম্ভব নয়।এ রকম বিপরীতমুখী অবস্থানের কারণে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘাত ও সংঘর্ষের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
২০০৯ সাল থেকে জামায়াতে ইসলামী সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় আছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হওয়ায় দলটির কয়েকজন শীর্ষ নেতার ফাঁসি হয়েছে। দলটি ও তাদের অনুসারীরা এই বিচারকে প্রহসন বলে দাবি করে আসছে। তারা ফাঁসিতে মৃত্যু হওয়া যুদ্ধাপরাধীদের ‘শহীদ’ আখ্যা দিচ্ছে। জামায়াতের অনুসারীরা রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনী গঠন করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হয়ে মুক্তিযোদ্ধাসহ এ দেশের মুক্তিকামী জনতার ওপর বর্বরোচিত নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করেছিল। রাজনৈতিকভাবে জামায়াতে ইসলামী যে ভুল করেছিল, তা তারা কখনো স্বীকার করেনি। এ জন্য তারা অনুতপ্ত না হয়ে, জাতির কাছে ক্ষমা না চেয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র ও মিথ্যাচার করে যাচ্ছে।
নাজুক অবস্থায় থাকলেও জামায়াত গোপনে ও সতর্কভাবে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড জিইয়ে রেখেছে। নির্বাচনের আগে তারা সর্বশক্তি নিয়ে রাজপথে থাকার চেষ্টা করবে। তারা সরকারের বিরুদ্ধে মাঠে নেমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে যেতে পারে, তাদের টার্গেট করে আক্রমণও করতে পারে। আন্দোলনের নামে হরতাল, অবরোধ, সমাবেশ করে তারা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ঘটাতে পারে। সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে জামায়াত ও তাদের অঙ্গসংগঠনের কর্মীরা নানা মিথ্যাচার করে, জনগণকে বিভ্রান্ত করে সরকারের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলতে চেষ্টা করে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে ফায়দা লোটার চেষ্টা করতে পারে।
বিরোধী দলগুলো যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সমর্থন আদায়ের জন্য লবিস্ট নিয়োগ দিয়ে তাদের পক্ষে বক্তব্য, বিবৃতি আদায়ের চেষ্টা করবে। বিদেশিদের গণতন্ত্রের বুলি বিরোধী দলগুলোকে অনুপ্রেরণা দিয়ে আন্দোলনে শক্তি জোগাতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়ে সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে, বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মনোবল ভেঙে দেওয়ার জন্য তাদের বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা আদায়ের চেষ্টা চলতে পারে।
ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধুকে অজনপ্রিয় করে তাঁর পতনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে তাঁকে নির্মম ও বর্বরোচিতভাবে সপরিবারে হত্যা করেছে। এর আগে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে পাটের গুদামে অগ্নিসংযোগ, চাল কিনে তা পানিতে ডুবিয়ে ধ্বংস করে খাদ্যাভাব সৃষ্টিসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা তারা করেনি। তারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে, জননিরাপত্তা ও খাদ্যনিরাপত্তা বিঘ্নিত করে এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে বঙ্গবন্ধু সরকার ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে মিথ্যাচার করে, গুজব ছড়িয়ে অরাজকতা সৃষ্টি করে, বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। সেই একই কায়দায় এবারও তারা ষড়যন্ত্র করে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের জন্য দেশি-বিদেশি মহলবিশেষের সহায়তা নিয়ে দেশের মধ্যে অরাজকতা সৃষ্টি করে এর সুযোগ নেওয়ার অপচেষ্টা চালানো হতে পারে।
২০১৫ সালে নাগরিক ঐক্যের এক ‘অতিবিপ্লবী’ নেতা গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তাঁর ফোনালাপের একটি অডিও টেপ ফাঁস হয়েছিল। ফোনালাপে ওই নেতাকে বলতে শোনা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারলে পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। তাঁর কথোপকথনে কোনো কোনো সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে কিছু করার ইঙ্গিত ছিল। সেই নেতা এখনো সরকারের বিরুদ্ধে সত্য-মিথ্যা মিশিয়ে যেসব কথা বলেন, তাতে বোঝা যায় তিনি যেকোনো কঠিন পদক্ষেপ নিতে পারেন। তিনি যে দলের নেতা, সেই দলের জনসমর্থন কতটুকু আছে, তার মূল্যায়ন জনগণই করবে। তবে তাঁরা যে কথার মাধ্যমে মানুষকে বিভ্রান্ত করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে পারেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
বর্তমান ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগও রাজপথ ছাড়বে না। তারা পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে রাজনীতির মাঠে থাকতে চেষ্টা করবে। ফলে সংঘর্ষের আশঙ্কা থাকবে, যাতে দুই পক্ষের তো বটেই, সাধারণ জনগণ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরও হতাহত হওয়ার ঝুঁকির আশঙ্কা রয়েছে।
ইসলামি দলগুলোর অধিকাংশই আওয়ামী লীগবিরোধী। তারা বুঝে হোক, বা না বুঝে হোক আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করে। হেফাজতে ইসলাম ২০১৩ সালের মে মাসে যে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালিয়েছিল, তা মানুষ ভোলেনি। ৫ মের পরও হেফাজতিরা কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের অন্যান্য জায়গায় অরাজকতা সৃষ্টি করেছে। এসব কারণে হেফাজতের কিছু উচ্ছৃঙ্খল ও নীতিবর্জিত নেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে; কয়েকজন গ্রেপ্তারও হয়েছে। তাই হেফাজত ও সরকারবিরোধী মহল আওয়ামী লীগ আলেম-ওলামাবিরোধী বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আসলে সরকার তো আলেম-ওলামার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। আলেম-ওলামা তো আইনের ঊর্ধ্বে নন। আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আলেম-ওলামাদের উসকে দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা সামনেও হতে পারে।
বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান হয়েছিল বেশ জোরেশোরেই। জঙ্গিরা বোমা বা আইইডি ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় এমনকি মসজিদ, ঈদগাহ, ধর্মীয় উপাসনালয়ে নাশকতা ও হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ২০১৬ সালের ১ জুলাই ঢাকার গুলশানে হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় দেশি-বিদেশি ২২ জনকে হত্যা করে। বাংলাদেশ পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান চলমান থাকায় জঙ্গিরা আর কোনো নাশকতা বা হত্যাকাণ্ড ঘটানোর সুযোগ পায়নি। জঙ্গিদের সাংগঠনিক শক্তি ভেঙে দেওয়া হলেও তাদের আদর্শে বিশ্বাসী ও সমর্থক এখনো সমাজে আছে। সাধারণ জঙ্গিরা ঘাপটি মেরে বসে আছে। সুযোগ পেলে আবার চাঙা হবে। নির্বাচনের আগে বা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চলা নানা কর্মকাণ্ডের সৃষ্ট পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যস্ত হয়ে পড়লে জঙ্গিরা আবার সংগঠিত হয়ে নাশকতার পরিকল্পনা করতে পারে। বিরোধী দলগুলোর কেউ কেউ পরোক্ষভাবে বা নেপথ্যে থেকে তাদের ইন্ধনও দিতে পারে বা তাদের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য তাদের ব্যবহারও করতে পারে। তবে বিরোধী দলগুলো নির্বাচন বানচাল করতে পারবে না।
বিএনপি নির্বাচনে না এসে নির্বাচন প্রতিহতের কর্মসূচি দিলে ২০১৪ সালের মতো সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। ভোটকেন্দ্র তথা স্কুল, কলেজ বা মাদ্রাসা ভবনে হামলা চালাতে পারে, যেখানে সাধারণ মানুষ হতাহত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকবে।
ষড়যন্ত্রকারীরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটিয়ে সরকারের ওপর দোষ চাপিয়ে বিশ্ববাসীর সহানুভূতি পাওয়ার প্রয়াসও চালাতে পারে। উগ্র বিরোধী দলগুলো তাদের মাদক পাচার, নাশকতা ও জঙ্গি কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করতে পারে।
রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে, বিশেষ করে পুলিশ বাহিনী সে পরিস্থিতির উন্নয়নে ব্যতিব্যস্ত থাকে। এই সুযোগে মাদক ব্যবসায়ীরা মাদক পাচারে সক্রিয় হয়। জঙ্গিরাও সংগঠিত হওয়ার সুযোগ পায়। এ সময়টিতেই তারা যুবকদের দলে ভেড়ায়। এই বিপথগামী যুবকেরা যেকোনো অপরাধ করতে দ্বিধাবোধ করে না। তাদের ভাড়া করে কুচক্রী মহল যেকোনো অঘটন ঘটাতে পারে।
বিশ্বের প্রায় সব দেশই কোভিড-১৯ মহামারির ধকল কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করছে। এরই মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বড় আঘাত করেছে। খাদ্যশস্যসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি-রপ্তানি ও পরিবহনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করায় নিত্যপণ্যসহ প্রায় সব পণ্যের দাম বিশ্বব্যাপী বেড়েছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফার জন্য কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়িয়ে দিতে পারেন। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিকে পুঁজি করে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন কলকারখানায়, বিশেষ করে পোশাক খাত ও ইউটিলিটি সেবাদাতা সংস্থার শ্রমিক-কর্মচারীরা বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন শুরু করতে পারেন। তারা এ খাতগুলোকে অশান্ত করে উৎপাদন ব্যাহতের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে।
সামনের দিনগুলো খুবই ঘটনাবহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের অতিসতর্ক অবস্থানে থাকতে হবে। গতানুগতিক পুলিশিং না করে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের প্রতি অধিক জোর দিতে হবে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকেও কেবল গতানুগতিক কর্মধারার মধ্যে আটকে না থেকে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে গোয়েন্দা নজরদারি করতে হবে। এ জন্য সুন্দর সমন্বয় অত্যাবশ্যক।
সরকারি দলকেও প্রো-অ্যাকটিভ দায়িত্ব পালন করতে হবে। জনগণকে নিয়ে মাঠে থাকতে হবে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করতে হবে। অতীতের মতো তারা যেন ঘরের মধ্যে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে না যায়। নিজেরা যেন বিরোধী দলের সঙ্গে সংঘর্ষে না জড়ায়। তাদের অবশ্যই সব সময় বিরোধী দলের সঙ্গে রাজপথে মুখোমুখি অবস্থানকে এড়িয়ে চলতে হবে। দেশপ্রেমিক নাগরিক সমাজের প্রতিও চোখ-কান খোলা রেখে নিজেদের দায়িত্বে ও কৌশলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী
বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাকে সহায়তার আহ্বান থাকবে।
এ কে এম শহীদুল হক, সাবেক ইন্সপেক্টর জেনারেল, বাংলাদেশ পুলিশ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি প্রায় দেড় বছর। এরই মধ্যে দেশে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজ ও বিদেশি কূটনীতিকেরা কথা বলছেন; মতামত ব্যক্ত করছেন। সবারই দাবি—সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং তাদের সহযোগী জামায়াতে ইসলামী, অন্যান্য শরিক দল এবং কিছু বাম ঘরানার ছোট ছোট দল আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া এবং নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি সামনে এনেছে। তাদের দাবি পূরণ না হলে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত একাধিক অনুষ্ঠানে বলেছেন, আমেরিকা বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চায়। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দাবি, তাঁরা গণতন্ত্রকে পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে গণ্য করেন।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজপথ উত্তপ্ত হতে থাকবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আদায়ের লক্ষ্যে হরতাল, ঘেরাও, অবরোধ, মানববন্ধন ইত্যাদি কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। বিরোধী দলগুলো সহিংস পথেও আন্দোলন চালাতে পারে। অপরপক্ষে সরকারি দলও রাজপথ ছাড়বে না। তারা একের পর এক পাল্টা কর্মসূচি দেবে।
সরকারি দল আওয়ামী লীগ সংবিধান পরিপন্থী কোনো দাবি মানবে না। তাদের মতে, সব গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়। বাংলাদেশেও সেভাবে সংবিধান মোতাবেক নির্বাচন হবে। বাংলাদেশে কেয়ারটেকার পদ্ধতি ছিল। কেয়ারটেকার সরকারের তিক্ত অভিজ্ঞতা জনগণ পেয়েছে। দেশের উচ্চ আদালত কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি বাতিল করেছেন। সেই কেয়ারটেকার সরকার সংবিধানে পুনর্বহাল কোনোক্রমেই সম্ভব নয়।এ রকম বিপরীতমুখী অবস্থানের কারণে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘাত ও সংঘর্ষের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
২০০৯ সাল থেকে জামায়াতে ইসলামী সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় আছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হওয়ায় দলটির কয়েকজন শীর্ষ নেতার ফাঁসি হয়েছে। দলটি ও তাদের অনুসারীরা এই বিচারকে প্রহসন বলে দাবি করে আসছে। তারা ফাঁসিতে মৃত্যু হওয়া যুদ্ধাপরাধীদের ‘শহীদ’ আখ্যা দিচ্ছে। জামায়াতের অনুসারীরা রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনী গঠন করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হয়ে মুক্তিযোদ্ধাসহ এ দেশের মুক্তিকামী জনতার ওপর বর্বরোচিত নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করেছিল। রাজনৈতিকভাবে জামায়াতে ইসলামী যে ভুল করেছিল, তা তারা কখনো স্বীকার করেনি। এ জন্য তারা অনুতপ্ত না হয়ে, জাতির কাছে ক্ষমা না চেয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র ও মিথ্যাচার করে যাচ্ছে।
নাজুক অবস্থায় থাকলেও জামায়াত গোপনে ও সতর্কভাবে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড জিইয়ে রেখেছে। নির্বাচনের আগে তারা সর্বশক্তি নিয়ে রাজপথে থাকার চেষ্টা করবে। তারা সরকারের বিরুদ্ধে মাঠে নেমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে যেতে পারে, তাদের টার্গেট করে আক্রমণও করতে পারে। আন্দোলনের নামে হরতাল, অবরোধ, সমাবেশ করে তারা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ঘটাতে পারে। সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে জামায়াত ও তাদের অঙ্গসংগঠনের কর্মীরা নানা মিথ্যাচার করে, জনগণকে বিভ্রান্ত করে সরকারের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলতে চেষ্টা করে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে ফায়দা লোটার চেষ্টা করতে পারে।
বিরোধী দলগুলো যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সমর্থন আদায়ের জন্য লবিস্ট নিয়োগ দিয়ে তাদের পক্ষে বক্তব্য, বিবৃতি আদায়ের চেষ্টা করবে। বিদেশিদের গণতন্ত্রের বুলি বিরোধী দলগুলোকে অনুপ্রেরণা দিয়ে আন্দোলনে শক্তি জোগাতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়ে সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে, বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মনোবল ভেঙে দেওয়ার জন্য তাদের বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা আদায়ের চেষ্টা চলতে পারে।
ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধুকে অজনপ্রিয় করে তাঁর পতনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে তাঁকে নির্মম ও বর্বরোচিতভাবে সপরিবারে হত্যা করেছে। এর আগে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে পাটের গুদামে অগ্নিসংযোগ, চাল কিনে তা পানিতে ডুবিয়ে ধ্বংস করে খাদ্যাভাব সৃষ্টিসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা তারা করেনি। তারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে, জননিরাপত্তা ও খাদ্যনিরাপত্তা বিঘ্নিত করে এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে বঙ্গবন্ধু সরকার ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে মিথ্যাচার করে, গুজব ছড়িয়ে অরাজকতা সৃষ্টি করে, বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। সেই একই কায়দায় এবারও তারা ষড়যন্ত্র করে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের জন্য দেশি-বিদেশি মহলবিশেষের সহায়তা নিয়ে দেশের মধ্যে অরাজকতা সৃষ্টি করে এর সুযোগ নেওয়ার অপচেষ্টা চালানো হতে পারে।
২০১৫ সালে নাগরিক ঐক্যের এক ‘অতিবিপ্লবী’ নেতা গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তাঁর ফোনালাপের একটি অডিও টেপ ফাঁস হয়েছিল। ফোনালাপে ওই নেতাকে বলতে শোনা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারলে পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। তাঁর কথোপকথনে কোনো কোনো সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে কিছু করার ইঙ্গিত ছিল। সেই নেতা এখনো সরকারের বিরুদ্ধে সত্য-মিথ্যা মিশিয়ে যেসব কথা বলেন, তাতে বোঝা যায় তিনি যেকোনো কঠিন পদক্ষেপ নিতে পারেন। তিনি যে দলের নেতা, সেই দলের জনসমর্থন কতটুকু আছে, তার মূল্যায়ন জনগণই করবে। তবে তাঁরা যে কথার মাধ্যমে মানুষকে বিভ্রান্ত করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে পারেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
বর্তমান ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগও রাজপথ ছাড়বে না। তারা পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে রাজনীতির মাঠে থাকতে চেষ্টা করবে। ফলে সংঘর্ষের আশঙ্কা থাকবে, যাতে দুই পক্ষের তো বটেই, সাধারণ জনগণ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরও হতাহত হওয়ার ঝুঁকির আশঙ্কা রয়েছে।
ইসলামি দলগুলোর অধিকাংশই আওয়ামী লীগবিরোধী। তারা বুঝে হোক, বা না বুঝে হোক আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করে। হেফাজতে ইসলাম ২০১৩ সালের মে মাসে যে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালিয়েছিল, তা মানুষ ভোলেনি। ৫ মের পরও হেফাজতিরা কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের অন্যান্য জায়গায় অরাজকতা সৃষ্টি করেছে। এসব কারণে হেফাজতের কিছু উচ্ছৃঙ্খল ও নীতিবর্জিত নেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে; কয়েকজন গ্রেপ্তারও হয়েছে। তাই হেফাজত ও সরকারবিরোধী মহল আওয়ামী লীগ আলেম-ওলামাবিরোধী বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আসলে সরকার তো আলেম-ওলামার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। আলেম-ওলামা তো আইনের ঊর্ধ্বে নন। আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আলেম-ওলামাদের উসকে দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা সামনেও হতে পারে।
বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান হয়েছিল বেশ জোরেশোরেই। জঙ্গিরা বোমা বা আইইডি ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় এমনকি মসজিদ, ঈদগাহ, ধর্মীয় উপাসনালয়ে নাশকতা ও হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ২০১৬ সালের ১ জুলাই ঢাকার গুলশানে হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় দেশি-বিদেশি ২২ জনকে হত্যা করে। বাংলাদেশ পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান চলমান থাকায় জঙ্গিরা আর কোনো নাশকতা বা হত্যাকাণ্ড ঘটানোর সুযোগ পায়নি। জঙ্গিদের সাংগঠনিক শক্তি ভেঙে দেওয়া হলেও তাদের আদর্শে বিশ্বাসী ও সমর্থক এখনো সমাজে আছে। সাধারণ জঙ্গিরা ঘাপটি মেরে বসে আছে। সুযোগ পেলে আবার চাঙা হবে। নির্বাচনের আগে বা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চলা নানা কর্মকাণ্ডের সৃষ্ট পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যস্ত হয়ে পড়লে জঙ্গিরা আবার সংগঠিত হয়ে নাশকতার পরিকল্পনা করতে পারে। বিরোধী দলগুলোর কেউ কেউ পরোক্ষভাবে বা নেপথ্যে থেকে তাদের ইন্ধনও দিতে পারে বা তাদের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য তাদের ব্যবহারও করতে পারে। তবে বিরোধী দলগুলো নির্বাচন বানচাল করতে পারবে না।
বিএনপি নির্বাচনে না এসে নির্বাচন প্রতিহতের কর্মসূচি দিলে ২০১৪ সালের মতো সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। ভোটকেন্দ্র তথা স্কুল, কলেজ বা মাদ্রাসা ভবনে হামলা চালাতে পারে, যেখানে সাধারণ মানুষ হতাহত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকবে।
ষড়যন্ত্রকারীরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটিয়ে সরকারের ওপর দোষ চাপিয়ে বিশ্ববাসীর সহানুভূতি পাওয়ার প্রয়াসও চালাতে পারে। উগ্র বিরোধী দলগুলো তাদের মাদক পাচার, নাশকতা ও জঙ্গি কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করতে পারে।
রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে, বিশেষ করে পুলিশ বাহিনী সে পরিস্থিতির উন্নয়নে ব্যতিব্যস্ত থাকে। এই সুযোগে মাদক ব্যবসায়ীরা মাদক পাচারে সক্রিয় হয়। জঙ্গিরাও সংগঠিত হওয়ার সুযোগ পায়। এ সময়টিতেই তারা যুবকদের দলে ভেড়ায়। এই বিপথগামী যুবকেরা যেকোনো অপরাধ করতে দ্বিধাবোধ করে না। তাদের ভাড়া করে কুচক্রী মহল যেকোনো অঘটন ঘটাতে পারে।
বিশ্বের প্রায় সব দেশই কোভিড-১৯ মহামারির ধকল কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করছে। এরই মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বড় আঘাত করেছে। খাদ্যশস্যসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি-রপ্তানি ও পরিবহনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করায় নিত্যপণ্যসহ প্রায় সব পণ্যের দাম বিশ্বব্যাপী বেড়েছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফার জন্য কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়িয়ে দিতে পারেন। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিকে পুঁজি করে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন কলকারখানায়, বিশেষ করে পোশাক খাত ও ইউটিলিটি সেবাদাতা সংস্থার শ্রমিক-কর্মচারীরা বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন শুরু করতে পারেন। তারা এ খাতগুলোকে অশান্ত করে উৎপাদন ব্যাহতের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে।
সামনের দিনগুলো খুবই ঘটনাবহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের অতিসতর্ক অবস্থানে থাকতে হবে। গতানুগতিক পুলিশিং না করে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের প্রতি অধিক জোর দিতে হবে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকেও কেবল গতানুগতিক কর্মধারার মধ্যে আটকে না থেকে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে গোয়েন্দা নজরদারি করতে হবে। এ জন্য সুন্দর সমন্বয় অত্যাবশ্যক।
সরকারি দলকেও প্রো-অ্যাকটিভ দায়িত্ব পালন করতে হবে। জনগণকে নিয়ে মাঠে থাকতে হবে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করতে হবে। অতীতের মতো তারা যেন ঘরের মধ্যে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে না যায়। নিজেরা যেন বিরোধী দলের সঙ্গে সংঘর্ষে না জড়ায়। তাদের অবশ্যই সব সময় বিরোধী দলের সঙ্গে রাজপথে মুখোমুখি অবস্থানকে এড়িয়ে চলতে হবে। দেশপ্রেমিক নাগরিক সমাজের প্রতিও চোখ-কান খোলা রেখে নিজেদের দায়িত্বে ও কৌশলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী
বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাকে সহায়তার আহ্বান থাকবে।
এ কে এম শহীদুল হক, সাবেক ইন্সপেক্টর জেনারেল, বাংলাদেশ পুলিশ
এ কে এম শহীদুল হক

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি প্রায় দেড় বছর। এরই মধ্যে দেশে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজ ও বিদেশি কূটনীতিকেরা কথা বলছেন; মতামত ব্যক্ত করছেন। সবারই দাবি—সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং তাদের সহযোগী জামায়াতে ইসলামী, অন্যান্য শরিক দল এবং কিছু বাম ঘরানার ছোট ছোট দল আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া এবং নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি সামনে এনেছে। তাদের দাবি পূরণ না হলে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত একাধিক অনুষ্ঠানে বলেছেন, আমেরিকা বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চায়। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দাবি, তাঁরা গণতন্ত্রকে পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে গণ্য করেন।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজপথ উত্তপ্ত হতে থাকবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আদায়ের লক্ষ্যে হরতাল, ঘেরাও, অবরোধ, মানববন্ধন ইত্যাদি কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। বিরোধী দলগুলো সহিংস পথেও আন্দোলন চালাতে পারে। অপরপক্ষে সরকারি দলও রাজপথ ছাড়বে না। তারা একের পর এক পাল্টা কর্মসূচি দেবে।
সরকারি দল আওয়ামী লীগ সংবিধান পরিপন্থী কোনো দাবি মানবে না। তাদের মতে, সব গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়। বাংলাদেশেও সেভাবে সংবিধান মোতাবেক নির্বাচন হবে। বাংলাদেশে কেয়ারটেকার পদ্ধতি ছিল। কেয়ারটেকার সরকারের তিক্ত অভিজ্ঞতা জনগণ পেয়েছে। দেশের উচ্চ আদালত কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি বাতিল করেছেন। সেই কেয়ারটেকার সরকার সংবিধানে পুনর্বহাল কোনোক্রমেই সম্ভব নয়।এ রকম বিপরীতমুখী অবস্থানের কারণে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘাত ও সংঘর্ষের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
২০০৯ সাল থেকে জামায়াতে ইসলামী সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় আছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হওয়ায় দলটির কয়েকজন শীর্ষ নেতার ফাঁসি হয়েছে। দলটি ও তাদের অনুসারীরা এই বিচারকে প্রহসন বলে দাবি করে আসছে। তারা ফাঁসিতে মৃত্যু হওয়া যুদ্ধাপরাধীদের ‘শহীদ’ আখ্যা দিচ্ছে। জামায়াতের অনুসারীরা রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনী গঠন করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হয়ে মুক্তিযোদ্ধাসহ এ দেশের মুক্তিকামী জনতার ওপর বর্বরোচিত নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করেছিল। রাজনৈতিকভাবে জামায়াতে ইসলামী যে ভুল করেছিল, তা তারা কখনো স্বীকার করেনি। এ জন্য তারা অনুতপ্ত না হয়ে, জাতির কাছে ক্ষমা না চেয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র ও মিথ্যাচার করে যাচ্ছে।
নাজুক অবস্থায় থাকলেও জামায়াত গোপনে ও সতর্কভাবে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড জিইয়ে রেখেছে। নির্বাচনের আগে তারা সর্বশক্তি নিয়ে রাজপথে থাকার চেষ্টা করবে। তারা সরকারের বিরুদ্ধে মাঠে নেমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে যেতে পারে, তাদের টার্গেট করে আক্রমণও করতে পারে। আন্দোলনের নামে হরতাল, অবরোধ, সমাবেশ করে তারা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ঘটাতে পারে। সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে জামায়াত ও তাদের অঙ্গসংগঠনের কর্মীরা নানা মিথ্যাচার করে, জনগণকে বিভ্রান্ত করে সরকারের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলতে চেষ্টা করে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে ফায়দা লোটার চেষ্টা করতে পারে।
বিরোধী দলগুলো যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সমর্থন আদায়ের জন্য লবিস্ট নিয়োগ দিয়ে তাদের পক্ষে বক্তব্য, বিবৃতি আদায়ের চেষ্টা করবে। বিদেশিদের গণতন্ত্রের বুলি বিরোধী দলগুলোকে অনুপ্রেরণা দিয়ে আন্দোলনে শক্তি জোগাতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়ে সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে, বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মনোবল ভেঙে দেওয়ার জন্য তাদের বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা আদায়ের চেষ্টা চলতে পারে।
ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধুকে অজনপ্রিয় করে তাঁর পতনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে তাঁকে নির্মম ও বর্বরোচিতভাবে সপরিবারে হত্যা করেছে। এর আগে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে পাটের গুদামে অগ্নিসংযোগ, চাল কিনে তা পানিতে ডুবিয়ে ধ্বংস করে খাদ্যাভাব সৃষ্টিসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা তারা করেনি। তারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে, জননিরাপত্তা ও খাদ্যনিরাপত্তা বিঘ্নিত করে এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে বঙ্গবন্ধু সরকার ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে মিথ্যাচার করে, গুজব ছড়িয়ে অরাজকতা সৃষ্টি করে, বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। সেই একই কায়দায় এবারও তারা ষড়যন্ত্র করে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের জন্য দেশি-বিদেশি মহলবিশেষের সহায়তা নিয়ে দেশের মধ্যে অরাজকতা সৃষ্টি করে এর সুযোগ নেওয়ার অপচেষ্টা চালানো হতে পারে।
২০১৫ সালে নাগরিক ঐক্যের এক ‘অতিবিপ্লবী’ নেতা গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তাঁর ফোনালাপের একটি অডিও টেপ ফাঁস হয়েছিল। ফোনালাপে ওই নেতাকে বলতে শোনা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারলে পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। তাঁর কথোপকথনে কোনো কোনো সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে কিছু করার ইঙ্গিত ছিল। সেই নেতা এখনো সরকারের বিরুদ্ধে সত্য-মিথ্যা মিশিয়ে যেসব কথা বলেন, তাতে বোঝা যায় তিনি যেকোনো কঠিন পদক্ষেপ নিতে পারেন। তিনি যে দলের নেতা, সেই দলের জনসমর্থন কতটুকু আছে, তার মূল্যায়ন জনগণই করবে। তবে তাঁরা যে কথার মাধ্যমে মানুষকে বিভ্রান্ত করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে পারেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
বর্তমান ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগও রাজপথ ছাড়বে না। তারা পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে রাজনীতির মাঠে থাকতে চেষ্টা করবে। ফলে সংঘর্ষের আশঙ্কা থাকবে, যাতে দুই পক্ষের তো বটেই, সাধারণ জনগণ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরও হতাহত হওয়ার ঝুঁকির আশঙ্কা রয়েছে।
ইসলামি দলগুলোর অধিকাংশই আওয়ামী লীগবিরোধী। তারা বুঝে হোক, বা না বুঝে হোক আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করে। হেফাজতে ইসলাম ২০১৩ সালের মে মাসে যে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালিয়েছিল, তা মানুষ ভোলেনি। ৫ মের পরও হেফাজতিরা কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের অন্যান্য জায়গায় অরাজকতা সৃষ্টি করেছে। এসব কারণে হেফাজতের কিছু উচ্ছৃঙ্খল ও নীতিবর্জিত নেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে; কয়েকজন গ্রেপ্তারও হয়েছে। তাই হেফাজত ও সরকারবিরোধী মহল আওয়ামী লীগ আলেম-ওলামাবিরোধী বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আসলে সরকার তো আলেম-ওলামার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। আলেম-ওলামা তো আইনের ঊর্ধ্বে নন। আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আলেম-ওলামাদের উসকে দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা সামনেও হতে পারে।
বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান হয়েছিল বেশ জোরেশোরেই। জঙ্গিরা বোমা বা আইইডি ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় এমনকি মসজিদ, ঈদগাহ, ধর্মীয় উপাসনালয়ে নাশকতা ও হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ২০১৬ সালের ১ জুলাই ঢাকার গুলশানে হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় দেশি-বিদেশি ২২ জনকে হত্যা করে। বাংলাদেশ পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান চলমান থাকায় জঙ্গিরা আর কোনো নাশকতা বা হত্যাকাণ্ড ঘটানোর সুযোগ পায়নি। জঙ্গিদের সাংগঠনিক শক্তি ভেঙে দেওয়া হলেও তাদের আদর্শে বিশ্বাসী ও সমর্থক এখনো সমাজে আছে। সাধারণ জঙ্গিরা ঘাপটি মেরে বসে আছে। সুযোগ পেলে আবার চাঙা হবে। নির্বাচনের আগে বা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চলা নানা কর্মকাণ্ডের সৃষ্ট পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যস্ত হয়ে পড়লে জঙ্গিরা আবার সংগঠিত হয়ে নাশকতার পরিকল্পনা করতে পারে। বিরোধী দলগুলোর কেউ কেউ পরোক্ষভাবে বা নেপথ্যে থেকে তাদের ইন্ধনও দিতে পারে বা তাদের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য তাদের ব্যবহারও করতে পারে। তবে বিরোধী দলগুলো নির্বাচন বানচাল করতে পারবে না।
বিএনপি নির্বাচনে না এসে নির্বাচন প্রতিহতের কর্মসূচি দিলে ২০১৪ সালের মতো সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। ভোটকেন্দ্র তথা স্কুল, কলেজ বা মাদ্রাসা ভবনে হামলা চালাতে পারে, যেখানে সাধারণ মানুষ হতাহত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকবে।
ষড়যন্ত্রকারীরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটিয়ে সরকারের ওপর দোষ চাপিয়ে বিশ্ববাসীর সহানুভূতি পাওয়ার প্রয়াসও চালাতে পারে। উগ্র বিরোধী দলগুলো তাদের মাদক পাচার, নাশকতা ও জঙ্গি কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করতে পারে।
রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে, বিশেষ করে পুলিশ বাহিনী সে পরিস্থিতির উন্নয়নে ব্যতিব্যস্ত থাকে। এই সুযোগে মাদক ব্যবসায়ীরা মাদক পাচারে সক্রিয় হয়। জঙ্গিরাও সংগঠিত হওয়ার সুযোগ পায়। এ সময়টিতেই তারা যুবকদের দলে ভেড়ায়। এই বিপথগামী যুবকেরা যেকোনো অপরাধ করতে দ্বিধাবোধ করে না। তাদের ভাড়া করে কুচক্রী মহল যেকোনো অঘটন ঘটাতে পারে।
বিশ্বের প্রায় সব দেশই কোভিড-১৯ মহামারির ধকল কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করছে। এরই মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বড় আঘাত করেছে। খাদ্যশস্যসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি-রপ্তানি ও পরিবহনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করায় নিত্যপণ্যসহ প্রায় সব পণ্যের দাম বিশ্বব্যাপী বেড়েছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফার জন্য কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়িয়ে দিতে পারেন। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিকে পুঁজি করে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন কলকারখানায়, বিশেষ করে পোশাক খাত ও ইউটিলিটি সেবাদাতা সংস্থার শ্রমিক-কর্মচারীরা বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন শুরু করতে পারেন। তারা এ খাতগুলোকে অশান্ত করে উৎপাদন ব্যাহতের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে।
সামনের দিনগুলো খুবই ঘটনাবহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের অতিসতর্ক অবস্থানে থাকতে হবে। গতানুগতিক পুলিশিং না করে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের প্রতি অধিক জোর দিতে হবে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকেও কেবল গতানুগতিক কর্মধারার মধ্যে আটকে না থেকে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে গোয়েন্দা নজরদারি করতে হবে। এ জন্য সুন্দর সমন্বয় অত্যাবশ্যক।
সরকারি দলকেও প্রো-অ্যাকটিভ দায়িত্ব পালন করতে হবে। জনগণকে নিয়ে মাঠে থাকতে হবে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করতে হবে। অতীতের মতো তারা যেন ঘরের মধ্যে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে না যায়। নিজেরা যেন বিরোধী দলের সঙ্গে সংঘর্ষে না জড়ায়। তাদের অবশ্যই সব সময় বিরোধী দলের সঙ্গে রাজপথে মুখোমুখি অবস্থানকে এড়িয়ে চলতে হবে। দেশপ্রেমিক নাগরিক সমাজের প্রতিও চোখ-কান খোলা রেখে নিজেদের দায়িত্বে ও কৌশলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী
বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাকে সহায়তার আহ্বান থাকবে।
এ কে এম শহীদুল হক, সাবেক ইন্সপেক্টর জেনারেল, বাংলাদেশ পুলিশ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি প্রায় দেড় বছর। এরই মধ্যে দেশে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজ ও বিদেশি কূটনীতিকেরা কথা বলছেন; মতামত ব্যক্ত করছেন। সবারই দাবি—সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং তাদের সহযোগী জামায়াতে ইসলামী, অন্যান্য শরিক দল এবং কিছু বাম ঘরানার ছোট ছোট দল আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া এবং নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি সামনে এনেছে। তাদের দাবি পূরণ না হলে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত একাধিক অনুষ্ঠানে বলেছেন, আমেরিকা বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চায়। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দাবি, তাঁরা গণতন্ত্রকে পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে গণ্য করেন।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজপথ উত্তপ্ত হতে থাকবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আদায়ের লক্ষ্যে হরতাল, ঘেরাও, অবরোধ, মানববন্ধন ইত্যাদি কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। বিরোধী দলগুলো সহিংস পথেও আন্দোলন চালাতে পারে। অপরপক্ষে সরকারি দলও রাজপথ ছাড়বে না। তারা একের পর এক পাল্টা কর্মসূচি দেবে।
সরকারি দল আওয়ামী লীগ সংবিধান পরিপন্থী কোনো দাবি মানবে না। তাদের মতে, সব গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়। বাংলাদেশেও সেভাবে সংবিধান মোতাবেক নির্বাচন হবে। বাংলাদেশে কেয়ারটেকার পদ্ধতি ছিল। কেয়ারটেকার সরকারের তিক্ত অভিজ্ঞতা জনগণ পেয়েছে। দেশের উচ্চ আদালত কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি বাতিল করেছেন। সেই কেয়ারটেকার সরকার সংবিধানে পুনর্বহাল কোনোক্রমেই সম্ভব নয়।এ রকম বিপরীতমুখী অবস্থানের কারণে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘাত ও সংঘর্ষের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
২০০৯ সাল থেকে জামায়াতে ইসলামী সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় আছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হওয়ায় দলটির কয়েকজন শীর্ষ নেতার ফাঁসি হয়েছে। দলটি ও তাদের অনুসারীরা এই বিচারকে প্রহসন বলে দাবি করে আসছে। তারা ফাঁসিতে মৃত্যু হওয়া যুদ্ধাপরাধীদের ‘শহীদ’ আখ্যা দিচ্ছে। জামায়াতের অনুসারীরা রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনী গঠন করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হয়ে মুক্তিযোদ্ধাসহ এ দেশের মুক্তিকামী জনতার ওপর বর্বরোচিত নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করেছিল। রাজনৈতিকভাবে জামায়াতে ইসলামী যে ভুল করেছিল, তা তারা কখনো স্বীকার করেনি। এ জন্য তারা অনুতপ্ত না হয়ে, জাতির কাছে ক্ষমা না চেয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র ও মিথ্যাচার করে যাচ্ছে।
নাজুক অবস্থায় থাকলেও জামায়াত গোপনে ও সতর্কভাবে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড জিইয়ে রেখেছে। নির্বাচনের আগে তারা সর্বশক্তি নিয়ে রাজপথে থাকার চেষ্টা করবে। তারা সরকারের বিরুদ্ধে মাঠে নেমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে যেতে পারে, তাদের টার্গেট করে আক্রমণও করতে পারে। আন্দোলনের নামে হরতাল, অবরোধ, সমাবেশ করে তারা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ঘটাতে পারে। সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে জামায়াত ও তাদের অঙ্গসংগঠনের কর্মীরা নানা মিথ্যাচার করে, জনগণকে বিভ্রান্ত করে সরকারের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলতে চেষ্টা করে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে ফায়দা লোটার চেষ্টা করতে পারে।
বিরোধী দলগুলো যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সমর্থন আদায়ের জন্য লবিস্ট নিয়োগ দিয়ে তাদের পক্ষে বক্তব্য, বিবৃতি আদায়ের চেষ্টা করবে। বিদেশিদের গণতন্ত্রের বুলি বিরোধী দলগুলোকে অনুপ্রেরণা দিয়ে আন্দোলনে শক্তি জোগাতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়ে সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে, বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মনোবল ভেঙে দেওয়ার জন্য তাদের বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা আদায়ের চেষ্টা চলতে পারে।
ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধুকে অজনপ্রিয় করে তাঁর পতনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে তাঁকে নির্মম ও বর্বরোচিতভাবে সপরিবারে হত্যা করেছে। এর আগে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে পাটের গুদামে অগ্নিসংযোগ, চাল কিনে তা পানিতে ডুবিয়ে ধ্বংস করে খাদ্যাভাব সৃষ্টিসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা তারা করেনি। তারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে, জননিরাপত্তা ও খাদ্যনিরাপত্তা বিঘ্নিত করে এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে বঙ্গবন্ধু সরকার ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে মিথ্যাচার করে, গুজব ছড়িয়ে অরাজকতা সৃষ্টি করে, বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। সেই একই কায়দায় এবারও তারা ষড়যন্ত্র করে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের জন্য দেশি-বিদেশি মহলবিশেষের সহায়তা নিয়ে দেশের মধ্যে অরাজকতা সৃষ্টি করে এর সুযোগ নেওয়ার অপচেষ্টা চালানো হতে পারে।
২০১৫ সালে নাগরিক ঐক্যের এক ‘অতিবিপ্লবী’ নেতা গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তাঁর ফোনালাপের একটি অডিও টেপ ফাঁস হয়েছিল। ফোনালাপে ওই নেতাকে বলতে শোনা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারলে পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। তাঁর কথোপকথনে কোনো কোনো সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে কিছু করার ইঙ্গিত ছিল। সেই নেতা এখনো সরকারের বিরুদ্ধে সত্য-মিথ্যা মিশিয়ে যেসব কথা বলেন, তাতে বোঝা যায় তিনি যেকোনো কঠিন পদক্ষেপ নিতে পারেন। তিনি যে দলের নেতা, সেই দলের জনসমর্থন কতটুকু আছে, তার মূল্যায়ন জনগণই করবে। তবে তাঁরা যে কথার মাধ্যমে মানুষকে বিভ্রান্ত করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে পারেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
বর্তমান ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগও রাজপথ ছাড়বে না। তারা পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে রাজনীতির মাঠে থাকতে চেষ্টা করবে। ফলে সংঘর্ষের আশঙ্কা থাকবে, যাতে দুই পক্ষের তো বটেই, সাধারণ জনগণ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরও হতাহত হওয়ার ঝুঁকির আশঙ্কা রয়েছে।
ইসলামি দলগুলোর অধিকাংশই আওয়ামী লীগবিরোধী। তারা বুঝে হোক, বা না বুঝে হোক আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করে। হেফাজতে ইসলাম ২০১৩ সালের মে মাসে যে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালিয়েছিল, তা মানুষ ভোলেনি। ৫ মের পরও হেফাজতিরা কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের অন্যান্য জায়গায় অরাজকতা সৃষ্টি করেছে। এসব কারণে হেফাজতের কিছু উচ্ছৃঙ্খল ও নীতিবর্জিত নেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে; কয়েকজন গ্রেপ্তারও হয়েছে। তাই হেফাজত ও সরকারবিরোধী মহল আওয়ামী লীগ আলেম-ওলামাবিরোধী বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আসলে সরকার তো আলেম-ওলামার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। আলেম-ওলামা তো আইনের ঊর্ধ্বে নন। আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আলেম-ওলামাদের উসকে দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা সামনেও হতে পারে।
বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান হয়েছিল বেশ জোরেশোরেই। জঙ্গিরা বোমা বা আইইডি ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় এমনকি মসজিদ, ঈদগাহ, ধর্মীয় উপাসনালয়ে নাশকতা ও হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ২০১৬ সালের ১ জুলাই ঢাকার গুলশানে হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় দেশি-বিদেশি ২২ জনকে হত্যা করে। বাংলাদেশ পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান চলমান থাকায় জঙ্গিরা আর কোনো নাশকতা বা হত্যাকাণ্ড ঘটানোর সুযোগ পায়নি। জঙ্গিদের সাংগঠনিক শক্তি ভেঙে দেওয়া হলেও তাদের আদর্শে বিশ্বাসী ও সমর্থক এখনো সমাজে আছে। সাধারণ জঙ্গিরা ঘাপটি মেরে বসে আছে। সুযোগ পেলে আবার চাঙা হবে। নির্বাচনের আগে বা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চলা নানা কর্মকাণ্ডের সৃষ্ট পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যস্ত হয়ে পড়লে জঙ্গিরা আবার সংগঠিত হয়ে নাশকতার পরিকল্পনা করতে পারে। বিরোধী দলগুলোর কেউ কেউ পরোক্ষভাবে বা নেপথ্যে থেকে তাদের ইন্ধনও দিতে পারে বা তাদের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য তাদের ব্যবহারও করতে পারে। তবে বিরোধী দলগুলো নির্বাচন বানচাল করতে পারবে না।
বিএনপি নির্বাচনে না এসে নির্বাচন প্রতিহতের কর্মসূচি দিলে ২০১৪ সালের মতো সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। ভোটকেন্দ্র তথা স্কুল, কলেজ বা মাদ্রাসা ভবনে হামলা চালাতে পারে, যেখানে সাধারণ মানুষ হতাহত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকবে।
ষড়যন্ত্রকারীরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটিয়ে সরকারের ওপর দোষ চাপিয়ে বিশ্ববাসীর সহানুভূতি পাওয়ার প্রয়াসও চালাতে পারে। উগ্র বিরোধী দলগুলো তাদের মাদক পাচার, নাশকতা ও জঙ্গি কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করতে পারে।
রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে, বিশেষ করে পুলিশ বাহিনী সে পরিস্থিতির উন্নয়নে ব্যতিব্যস্ত থাকে। এই সুযোগে মাদক ব্যবসায়ীরা মাদক পাচারে সক্রিয় হয়। জঙ্গিরাও সংগঠিত হওয়ার সুযোগ পায়। এ সময়টিতেই তারা যুবকদের দলে ভেড়ায়। এই বিপথগামী যুবকেরা যেকোনো অপরাধ করতে দ্বিধাবোধ করে না। তাদের ভাড়া করে কুচক্রী মহল যেকোনো অঘটন ঘটাতে পারে।
বিশ্বের প্রায় সব দেশই কোভিড-১৯ মহামারির ধকল কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করছে। এরই মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বড় আঘাত করেছে। খাদ্যশস্যসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি-রপ্তানি ও পরিবহনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করায় নিত্যপণ্যসহ প্রায় সব পণ্যের দাম বিশ্বব্যাপী বেড়েছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফার জন্য কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়িয়ে দিতে পারেন। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিকে পুঁজি করে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন কলকারখানায়, বিশেষ করে পোশাক খাত ও ইউটিলিটি সেবাদাতা সংস্থার শ্রমিক-কর্মচারীরা বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন শুরু করতে পারেন। তারা এ খাতগুলোকে অশান্ত করে উৎপাদন ব্যাহতের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে।
সামনের দিনগুলো খুবই ঘটনাবহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের অতিসতর্ক অবস্থানে থাকতে হবে। গতানুগতিক পুলিশিং না করে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের প্রতি অধিক জোর দিতে হবে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকেও কেবল গতানুগতিক কর্মধারার মধ্যে আটকে না থেকে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে গোয়েন্দা নজরদারি করতে হবে। এ জন্য সুন্দর সমন্বয় অত্যাবশ্যক।
সরকারি দলকেও প্রো-অ্যাকটিভ দায়িত্ব পালন করতে হবে। জনগণকে নিয়ে মাঠে থাকতে হবে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করতে হবে। অতীতের মতো তারা যেন ঘরের মধ্যে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে না যায়। নিজেরা যেন বিরোধী দলের সঙ্গে সংঘর্ষে না জড়ায়। তাদের অবশ্যই সব সময় বিরোধী দলের সঙ্গে রাজপথে মুখোমুখি অবস্থানকে এড়িয়ে চলতে হবে। দেশপ্রেমিক নাগরিক সমাজের প্রতিও চোখ-কান খোলা রেখে নিজেদের দায়িত্বে ও কৌশলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী
বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাকে সহায়তার আহ্বান থাকবে।
এ কে এম শহীদুল হক, সাবেক ইন্সপেক্টর জেনারেল, বাংলাদেশ পুলিশ

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি প্রায় দেড় বছর। এরই মধ্যে দেশে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজ ও বিদেশি কূটনীতিকেরা কথা বলছেন; মতামত ব্যক্ত করছেন।
৩০ জুন ২০২২
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি প্রায় দেড় বছর। এরই মধ্যে দেশে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজ ও বিদেশি কূটনীতিকেরা কথা বলছেন; মতামত ব্যক্ত করছেন।
৩০ জুন ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি প্রায় দেড় বছর। এরই মধ্যে দেশে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজ ও বিদেশি কূটনীতিকেরা কথা বলছেন; মতামত ব্যক্ত করছেন।
৩০ জুন ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি প্রায় দেড় বছর। এরই মধ্যে দেশে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজ ও বিদেশি কূটনীতিকেরা কথা বলছেন; মতামত ব্যক্ত করছেন।
৩০ জুন ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫