Ajker Patrika

সুদখোরের চাপে আত্মহত্যা

সম্পাদকীয়
সুদখোরের চাপে আত্মহত্যা

একসময় আমাদের দেশে মহাজনি প্রথা চালু ছিল। ফসল ফলানোর আগে মহাজনদের কাছ থেকে বর্গাচাষিরা চড়া সুদে টাকা ধার নিতেন। ফসল ওঠার পর সেই টাকা পরিশোধ করতে না পারলে চরম অত্যাচার নেমে আসত। মহাজনিব্যবস্থা না থাকলেও এর রেশ আমাদের সমাজব্যবস্থায় অন্য রূপে বহাল আছে। এখন এনজিও, গ্রামের কিছু লোভী ব্যক্তি এবং কিছু সমিতির মাধ্যমে সুদ ব্যবসার কারবার চলছে।

সাম্প্রতিক সময়ে ঋণের চাপে বেশ কয়েকটি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। গত তিন মাসে গণমাধ্যমের সংবাদ পর্যবেক্ষণ করে জানা গেছে, ঋণের চাপে ২৮টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হলিধানী এলাকার ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম আত্মহত্যা করেছেন। তাঁর লাশ থেকে পাওয়া যায় একটি চিরকুট, যেখানে লেখা, ‘সুদখোরদের অত্যাচারে বাঁচতে পারলাম না। আমার জায়গা-জমি-বাড়ি সব বিক্রি করে দিয়েছি।

একেকজনের কাছ থেকে যে টাকা নেওয়া, তার সাত-আট-দশ গুণ পরিমাণ টাকা দিয়েও রেহাই দিল না তারা। কেউ কেস করেছে, কেউ কেউ অপমান-অপদস্থ করেছে। আমি আর সহ্য করতে পারছি না। তাই বিদায় নিলাম। আমার জানাজা হবে কি না, জানি না। যদি হয়, তখন সব সুদখোররা টাকা চাইতে এলে আমার শরীরটাকে কেটে ওদেরকে দিয়ে দিবেন।’

কথাগুলো বাকরুদ্ধ করার মতোই। তিনি তাঁর দুই ছেলেকে বিদেশে পাঠানোর জন্য নিজের জমি বিক্রি করার পরও বাকি টাকার জন্য কয়েকজনের কাছ থেকে সুদে টাকা ধার নেন। এরপর আসল টাকার সুদ কয়েক গুণ পরিশোধ করার পরও সিরাজুল মানসিক যন্ত্রণায় আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন। শুধু এ ঘটনাই নয়, এ রকম প্রতিটি ঘটনার পেছনেই আছে উচ্চ সুদের ঋণ।

সুদের হার যে মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো, তার প্রমাণ পাওয়া যাবে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের ফয়সাল আহমদ সৌরভের ভাষ্যে। গত ২৮ আগস্ট আত্মহত্যা করার আগে তিনি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জানিয়েছিলেন, ১ লাখ টাকা ঋণ নেওয়ার পর ৩ লাখ টাকা শোধ করেছেন। কিন্তু সুদখোর এখনো সাড়ে তিন লাখ টাকা পান বলে দাবি করছেন। এ থেকে বোঝা অসম্ভব নয় যে চড়া সুদ বলতে কী বোঝায়। আমাদের প্রশ্ন হলো, এ রকম একটি জঘন্য পরিস্থিতি কী করে একটি দেশে বিরাজ করতে পারে?

প্রচলিত ব্যাংকের সুদহার কম হলেও সেখান থেকে ঋণ পাওয়া সহজ নয়। ফলে উচ্চ সুদহারে অপ্রচলিত, ব্যক্তি খাত এবং এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে সুদ 
আর কিস্তি পরিশোধ করতে না পেরে অপমানে আত্মহত্যা করছে মানুষ। পরিহাস হলো, ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা লোপাট করেও দিব্যি স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে ডাকাতের দল।

আর দরিদ্র মানুষ সামান্য কটা টাকা শোধ করতে না পেরে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছেন। এটা চলতে দেওয়ার অর্থ, আমরা আসলে এখনো মার্জিত, রুচিশীল সমাজ গড়ে তুলতে পারিনি। এই অবস্থার অবসান দরকার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত