Ajker Patrika

পদ্মা সেতু দিয়ে পাড়ি মন চাইলেই বাড়ি

শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ৩০ জুলাই ২০২২, ১২: ১১
পদ্মা সেতু দিয়ে পাড়ি মন চাইলেই বাড়ি

পদ্মা সেতুর কারণে মাদারীপুরের শিবচরবাসীর কাছে রাজধানী ঢাকা এখন হাতের মুঠোয়। এতে বড় সুবিধা হয়েছে রাজধানীতে কর্মরতদের। এখন তাঁরা প্রতি সপ্তাহে বাড়ি ফেরেন। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটিয়ে আবার ফিরে যান কর্মস্থলে।

অথচ পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগে প্রতি সপ্তাহে বাড়ি ফেরার বিষয়টি কল্পনাও করতে পারতেন না তাঁরা। নৌপথের ভোগান্তি আর ৪-৫ ঘণ্টা সময় ব্যয়ের বিষয়টি ছিল বাড়ি ফেরার পথে বড় বাধা। যাঁদের নিজস্ব গাড়ি রয়েছে, তাঁরা ফেরিঘাটের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে দীর্ঘদিন পর বাড়ি আসতেন। অথচ সেতু চালুর পর যখন-তখন বাড়ি আসতে পারছেন তাঁরা। এতে করে গ্রামের সঙ্গে শহরে বসবাসরতদের আত্মিক টানও বাড়ছে।

গতকাল শুক্রবার সামনে রেখে বাড়িতে আসা বেশ কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করে তাঁদের অভিব্যক্তি জানা গেছে। ঢাকার একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন আজিজুল হক ওয়াসিম নামের শিবচরের এক যুবক। প্রায় প্রতি সপ্তাহে বাড়িতে আসা নিয়ে তিনি বলেন, ‘শিবচর থেকে ঢাকার দূরত্ব ৬০-৬৫ কিলোমিটার। বিরতিহীনভাবে গেলে মাত্র ১ ঘণ্টাতেই পৌঁছানো যায়। সেতু চালুর আগে রাজধানীর সঙ্গে আমাদের যোগাযোগের বড় বাধা ছিল পদ্মা নদী। তখন ঢাকা থেকে বাসে করে পদ্মার পাড়ে নামতে হতো। নদী পার হতে লঞ্চ, ফেরিতে দেড়-দুই ঘণ্টা সময় লাগত। তখন রাতে নদী পার হয়ে চলাচল ছিল অনেকটা অকল্পনীয় বিষয়। ইচ্ছা হলেও বাড়ি ফেরা হতো না, বিশেষ করে দুই ঈদেই বাড়ি ফিরতাম।’

আবু সাঈদ চৌধুরী সিফাত নামের উপজেলার উৎরাইল গ্রামের এক চাকরিজীবী বলেন, ‘আগে বাড়ি ফিরতে নানা হিসাব-নিকাশ করতে হতো। এখন কোনো ব্যাপারই না বাড়ি ফেরা। গভীর রাতেও বাড়িতে আসা যায়। পদ্মা সেতু আমাদের জন্য আশীর্বাদ।’

বদরুল আলম চৌধুরী নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘গ্রামের সঙ্গে টান বাড়ছে। আমরা এখন মন চাইলেই গ্রামে চলে আসতে পারছি। দু-এক দিন কাটিয়ে আবার ঢাকা যাচ্ছি। সব মিলিয়ে অন্য রকম এক প্রশান্তি। পদ্মা সেতু যে কত বড় পরিবর্তন নিয়ে এসেছে, তা বলে শেষ করা যাবে না।’

সরেজমিন গতকাল সকালে এক্সপ্রেসওয়ে ঘুরে দেখা গেছে, মহাসড়কে যানবাহনের বাড়তি চাপ রয়েছে। ভোর থেকেই দূরপাল্লার পরিবহনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত অসংখ্য গাড়ি গন্তব্যে যাচ্ছে। মহাসড়কের পাঁচ্চর, সূর্য্যনগর, পুলিয়া, মালিগ্রাম, ভাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে যাত্রীদের ভিড় অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশি রয়েছে। ঢাকা থেকে এসে এসব স্ট্যান্ডে নামছেন যাত্রীরা।

একাধিক বাসচালক জানান, প্রতি শুক্রবারই যাত্রীদের চাপ থাকে। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শুক্রবার পর্যন্ত বাড়ি ফেরা যাত্রীদের সংখ্যা বেড়ে যায় অন্যান্য দিনের তুলনায় কয়েক গুণ। মূলত পদ্মা সেতুর ফলে বাড়ি ফিরতে কোনো ঝামেলা না থাকায় প্রতি সপ্তাহে শিবচরসহ আশপাশের এলাকার মানুষ বাড়ি ফিরছে।

শিবচর হাইওয়ে থানা সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতু চালুর পর মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশের তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। একাধিক টিম এক্সপ্রেসওয়ের ভাঙ্গা থেকে পদ্মা সেতুর জাজিরা টোল প্লাজা পর্যন্ত টহল অব্যাহত রেখেছে। এ ছাড়া মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের চেকপোস্ট রয়েছে।

শিবচর হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, পদ্মা সেতুর ফলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের যাত্রাপথের ভোগান্তি দূর হয়েছে। এখন দক্ষিণাঞ্চল বিশেষ করে শিবচরের মানুষ প্রতি সপ্তাহে বাড়ি আসতে পারছেন। শুক্রবার ঘরমুখী মানুষের চাপও থাকে মহাসড়কে। দূরপাল্লার পরিবহনে আসার পাশাপাশি ব্যক্তিগত যানবাহনের চাপ শুক্রবার বেশি থাকে। হাইওয়ে পুলিশের টিম রাত-দিন মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...