Ajker Patrika

নদীর বুকে হাসপাতাল, সেতু

জাহিদ হাসান, যশোর
নদীর বুকে হাসপাতাল, সেতু

যশোর শহরের পুলেরহাট এলাকায় মুক্তেশ্বরী নদীর আধা কিলোমিটার অংশ দখল করে একটি বেসরকারি হাসপাতাল নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। এমনকি ওই প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের জন্য নদীর ওপর কংক্রিটের পদচারী-সেতুও (ফুটওভারব্রিজ) নির্মাণ করা হয়। এ জন্য সেতুর দুই পাশে মাটি দিয়ে ভরাট করে সরু করা হয় নদী। শুধু তা-ই নয়, সেই সরু নদীর মাঝখানে আবার কংক্রিটের খুঁটি স্থাপন করা হয় অনেকটা জায়গাজুড়ে। ফলে পুলেরহাটে এসে মুক্তেশ্বরী নালায় পরিণত হয়। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পানিপ্রবাহ।

নদী ও নদীর পাড় দখল করে নির্মিত বেসরকারি হাসপাতালটির নাম আদ্-দ্বীন মেডিকেল কলেজ ৫০০ শয্যা হাসপাতাল; যা ১১ মার্চ সাধারণ মানুষের চিকিৎসার জন্য উদ্বোধন করা হয়। আর নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি আদ্-দ্বীন ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের অধীনে পরিচালিত সখিনা মেডিকেল কলেজ ভবনে যাতায়াতের জন্য। হাসপাতালটি নির্মাণের জন্য এই অংশজুড়ে এমনভাবে নদীকে দখল আর শাসন করা হয়েছে যে একসময়ের প্রবহমান নদী এখন অস্তিত্বের সংকটে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের প্রাথমিক দৃষ্টিতে মুক্তেশ্বরী নদী দখলের তালিকায় আদ্-দ্বীন হাসপাতালও রয়েছে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আদ্-দ্বীন মেডিকেল কলেজের নির্বাহী পরিচালক ডা. শেখ মহিউদ্দিন। তাঁর ভাই যশোরের একজন সংসদ সদস্য। ভাইয়ের প্রভাব খাটিয়ে ওই অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছেন মহিউদ্দিন। এমনকি হাসপাতাল নির্মাণের শুরু থেকে যশোর জেলা ও সদর উপজেলা প্রশাসন কয়েক দফা নির্মাণাধীন অবৈধ অবকাঠামো অপসারণের নোটিশ দিলেও তিনি বিষয়টি আমলে নেননি।

অভিযোগের বিষয়ে আদ্-দ্বীন ওয়েলফেয়ারের পরিচালক ফজলুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা নদী দখল করে ভবন নির্মাণ করিনি। ম্যাপে নদীর সীমানা নিরাপদ দূরত্বে রেখেই হাসপাতাল নির্মাণ করেছি। নদীর সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই।’

পাড় দখল করে গাছ, শোভাবর্ধন এবং নদীর ওপরে সেতু নির্মাণ প্রসঙ্গে ফজলুল হক বলেন, ‘ওইগুলো অস্থায়ী। যাতায়াত করার জন্য সেতুটি নির্মাণ করা হয়। সমস্যা হলে উঠিয়ে দেওয়া যাবে। আমরা নদী ধ্বংস নয়; বাঁচিয়ে রাখতে ব্যক্তি উদ্যোগে হাসপাতাল-সংলগ্ন অংশ প্রায় আধা কিলোমিটার খনন করেছি। একই সঙ্গে পাড় শোভাবর্ধনের কাজও করেছি।’

তবে নদী দখল করে হাসপাতাল নির্মাণের অভিযোগের বিষয়ে সম্প্রতি আদ্-দ্বীনের নির্বাহী পরিচালক ডা. শেখ মহিউদ্দিনকে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘আমাদের প্রাথমিক দৃষ্টিতে মুক্তেশ্বরী নদী দখলের তালিকায় আদ্-দ্বীন হাসপাতালও রয়েছে। তারপরও জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সার্ভেয়ার দিয়ে কতটুকু দখল হয়েছে বা হয়নি, সেটির পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত করার কাজ চলমান। জরিপকাজ শেষ হলেই জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে অভিযান চালানো হবে।’

নদীর পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে পদচারী-সেতু নির্মাণ ও নদীতট দখল করে শোভাবর্ধনে গাছ লাগানোর বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের কাছ থেকে তাঁরা কোনো অনুমতি নেননি। দ্রুতই খোঁজখবর নেওয়া হবে।’

যশোর জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, ‘নদী দখল করে হাসপাতাল নির্মাণের বিষয়টি শুনেছি। বিষয়টি আরও যাচাই-বাছাই করে উচ্ছেদ অভিযানের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পাকিস্তানে কীভাবে হামলা চালাতে পারে ভারত, ইতিহাস যা বলছে

জনবল-সরঞ্জাম বেশি হলেও সমরশক্তিতে ভারত কি পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে

প্রবাসীর রেমিট্যান্সের অর্থ আত্মসাৎ, নারী ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে

ইতিহাস গড়ে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদে আইএসআইপ্রধান

ভারতের সঙ্গে সংঘাতে পাকিস্তানের ভাগ্যনিয়ন্তা সেনাপ্রধান জেনারেল মুনির

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত