Ajker Patrika

পিতা-পুত্র: আহা, রাজনীতি!

সম্পাদকীয়
পিতা-পুত্র: আহা, রাজনীতি!

ছেলে ছাত্রলীগ করেন বলে বাবা তাঁকে ত্যাজ্য ঘোষণা করেছেন। বাবা নিজে বিএনপি ঘরানার রাজনীতি করতেন। এখন নাকি তিনি আর রাজনীতি করেন না। দলছুট ছেলে কেন ছাত্রলীগ করবেন, এটাই হয়তো বাবার আক্ষেপ। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় এ রকম একটি ঘটনা ঘটেছে।

ছেলেকে কোনো বাবা ত্যাজ্য ঘোষণা করবেন কি না, সেটা সেই পরিবারের একান্ত নিজেদের ব্যাপার। বাবা-ছেলে সম্পর্ক বাইরে থেকে কেউ এসে ঠিক করে দেবে না, সেটা তাঁদের নিজেদেরই ঠিক করে নিতে হবে। এখানে আমরা যে কথাটুকু বলতে পারি তা হলো, পূর্ণবয়স্ক একজন মানুষ কীভাবে তাঁর জীবন গড়ে নেবেন, কোন মত ও পথ অবলম্বন করবেন, সেটা তাঁর নিজস্ব ব্যাপার। সেই সঙ্গে পারিবারিক শিক্ষা তাতে যৌক্তিক পথ বেছে নিতে সাহায্য করে। আদর্শবাদী রাজনীতি আজকাল আর হালে পানি পায় না, সে কথা বলে বোঝাতে হয় না। রাজনৈতিক দল বা ছাত্রসংগঠনের পদ লাভের পাশাপাশি নিজস্ব লাভালাভের প্রশ্ন এখন অনেকটাই অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত হয়ে গেছে।

ফলে, একসময় রাজনৈতিক নেতা বলতে যে ত্যাগী মানুষটির অবয়ব ভেসে উঠত মানসপটে, এখন সেটা আর হয় না; বরং রাজনৈতিক নেতার মনে কোনো মতলব আছে কি না, সেই সন্দেহটা জেগে ওঠে সবার আগে। এই পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনা করলে প্রথমেই বলতে হয়, ভালো মানুষেরা রাজনীতিতে এসে দৃষ্টান্ত গড়ছেন না বলেই দুষ্টবুদ্ধির মানুষ সেই শূন্যস্থান পূরণ করে নিচ্ছেন। তাই রাজনীতির মাঠে সততার যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা হঠাৎ করেই উবে যাবে না। 

রাজনীতিতে ভারসাম্য রক্ষা করার ঘটনাও আমরা কম দেখিনি। ব্রিটিশ ভারতে ফরিদপুরের দুই ভাই ইউসুফ আলী চৌধুরী বা মোহন মিয়া ও চৌধুরী আবদুল্লাহ জহীরউদ্দিন বা লাল মিয়ার দুই দলে বিভক্ত হয়ে রাজনীতি করার কথা নিশ্চয়ই অনেকের স্মরণে আছে। কখনো কংগ্রেস, কখনো শেরেবাংলার কৃষক প্রজা পার্টি, কখনো মুসলিম লীগের রাজনীতি করেছেন তাঁরা। আবার একই পরিবারের সদস্য রাশেদ খান মেনন ও সেলিমা রহমান। তাঁদের রাজনৈতিক বিশ্বাস আলাদা। একজন ওয়ার্কার্স পার্টি করেন, অন্যজন বিএনপির ডাকসাইটে নেতা। একই পরিবারে থেকে ভিন্ন আদর্শের রাজনীতি করার নজির অনেক আছে। কখনো নিজের ইচ্ছায়, কখনো ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য পরিবারের সদস্যরাই নানা দল বেছে নেন। তাই পরিবারের কেউ একজন ছাত্রলীগ করায় তাঁর বিএনপির সমর্থক বাবা তাঁকে ত্যাজ্য করে দেবেন, এটা একটু বাড়াবাড়ি বলে মনে হয়।

বাংলাদেশই সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র দেশ, যেখানে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি পোক্ত হয়ে রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছে এখনো। স্বাধীনতার পক্ষ শক্তি বলে যাঁরা নিজেদের পরিচয় দেন, তাঁরাও বিভিন্ন সময় এই অপশক্তির পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন এবং এখনো করে থাকেন। ফলে আদর্শিক রাজনীতি বলে যে কথাটি রয়েছে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে তার বাস্তব ভিত্তি খুঁজে পাওয়া কঠিন। এ রকম অবস্থায় ‘ছাত্রলীগ’ করার কারণে ছেলেকে ত্যাজ্য করার ঘটনা আরও অনেক দিক থেকে বিবেচনার দাবি রাখে। আমাদের হচ্ছেটা কী—সে প্রশ্নই আসে সর্বাগ্রে। তারই সমাধান দরকার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পাইপলাইনে জ্বালানি পরিবহন: ৩৪ হাজার লিটার ঘাটতি যমুনার প্রথম পার্সেলে

১টা বাজলেই আর স্কুলে থাকে না শিক্ষার্থীরা, ফটকে তালা দিয়েও ঠেকানো গেল না

চিকিৎসক হওয়ার আগেই শীর্ষ সবার শীর্ষে

আসামে ‘দেখামাত্র গুলির নির্দেশ’ বহাল থাকবে দুর্গাপূজা পর্যন্ত

ভিকারুননিসায় হিজাব বিতর্ক: বরখাস্ত শিক্ষককে পুনর্বহালের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত