ইমরান খান

জলবায়ু পরিবর্তন ও এর বিরূপ প্রভাব নিরসনে বিশ্ব নেতাদের এক মঞ্চে আনতে জাতিসংঘের উদ্যোগ ‘কনফারেন্স অব দ্য পার্টিজ (কপ)’। ১৯৯৫ সালের ২৮ মার্চ থেকে ৭ এপ্রিল জার্মানির বার্লিনে প্রথম কপ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই থেকে প্রতি বছর সম্মেলন হচ্ছে। তবে এবার করোনার কারণে ২০২০ সালে সম্মেলন স্থগিত হয়। চলতি বছর স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত হলো কপ-২৬ সম্মেলন।
নিয়মিত কপ সম্মেলন বিশ্বব্যাপী পরিবেশ আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। যদিও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে প্রধান দায়ী দেশগুলোর গড়িমসি ভুক্তভোগী দেশগুলোকে বারবার হতাশ করেছে।
২০১৫ সালে ফ্রান্সের প্যারিসে কপ-২১ সম্মেলনে বৈশ্বিক উষ্ণতা মোকাবিলা এবং গ্রিনহাউজ গ্যাসের নির্গমন কমাতে ‘প্যারিস চুক্তি’ করে বিশ্বের দেশগুলো। এই চুক্তিতে জলবায়ু বিপর্যয় এড়াতে বৈশ্বিক উষ্ণতা প্রাক-শিল্পায়ন যুগের চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বাড়তে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এই লক্ষ্য অর্জনে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন অর্ধেকে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে শূন্যে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা হয়। তবে এখন পর্যন্ত এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়নি।
২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত কপ-২৬ সম্মেলনে ১২০টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান-সরকারপ্রধান, দুই শতাধিক দেশের প্রতিনিধি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ অংশ নেন। সম্মেলনে সব মিলে ৪০ হাজারের বেশি লোক অংশ নেন বলে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। তবে প্রভাবশালী চীন, রাশিয়া, জাপান, ব্রাজিলসহ কয়েকটি দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান এ সম্মেলনে অংশ নেননি।

বর্তমান জলবায়ু পরিস্থিতি
কপ-২৬ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হলো এক ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। করোনার ধাক্কা কিছুটা সামলে বিশ্বনেতারা সরাসরি কোনো সম্মেলনে যোগ দেন। করোনাকালে কল-কারখানা বন্ধ, মানুষের অত্যন্ত সীমিত থাকায় বিশ্বের পরিবেশ কিছুটা স্বস্তি পেলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোর পরিবেশ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। পরিবেশ পরিস্থিতি নির্ধারক কিছু উপাদানের দিকে তাকালে এ দৃশ্যটি স্পষ্ট হবে। তাছাড়া টানা এক বছরের বেশি সময় উৎপাদনে চরম ভাটা পড়ায় অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে উঠেপড়ে লেগেছে শিল্পপ্রধান দেশগুলো। ফলে এখন কার্বন নিঃসরণ আরও গতি পাবে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের ২০১৯ সালে ‘ইউকে নেট জিরো স্ট্র্যাটেজি প্রতিবেদন বলছে, বর্তমান বিশ্বে প্রতিবছর ৫৯ গিগা টন কার্বন ডাই-অক্সাইড সমতুল্য গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হচ্ছে। এর মধ্যে যানবাহন খাত থেকে নিঃসরণের পরিমাণ ছয় গিগা টন। জ্বালানি খাতে বছরে ২১ গিগা টন, কৃষি খাতে সাত গিগা টন এবং বিভিন্ন শিল্প-কারখানা থেকে আট গিগা টন গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হয়।

কার্বন নিঃসরণের ক্ষেত্রে চীন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর ভারতের অবস্থান। ২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী, ভারতে বার্ষিক মাথাপিছু কার্বন নিঃসরণ ১ দশমিক ৯ টন, যুক্তরাজ্যের ৫ দশমিক ৫ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ১৬ টন।
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার বিষয়ে নেচার জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই লক্ষ্য বাস্তবে পরিণত করতে হলে বিশ্বের ৮৯ শতাংশ কয়লা, ৫৮ শতাংশ তেল এবং ৫৯ শতাংশ মিথেন গ্যাস প্রকৃতিতে যেভাবে আছে সেভাবেই রেখে দিতে হবে। যদিও বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, বিশ্বের বৃহৎ ব্যাংকগুলো জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে ট্রিলিয়ন-ট্রিলিয়ন ডলার অর্থায়ন করছে।
নেচার সাময়িকী গত অক্টোবরে ৯২ জন বিজ্ঞানীর সাক্ষাৎকার নিয়ে একটি জলবায়ু প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এতে বলা হয়েছে, সাক্ষাৎকারদাতাদের ৬০ শতাংশ মনে করেন—২১০০ সাল নাগাদ পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে। যা প্যারিস চুক্তিতে নির্ধারিত ১ দশমিক ৫ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের তুলনায় অনেক বেশি। ৮৮ শতাংশ বিজ্ঞানীর বিশ্বাস, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে হলোকাস্টের মতো বিপর্যয় আসবে। এই বিজ্ঞানীদের মধ্যে অর্ধেকই বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এসেছে।
আফ্রিকান ইনস্টিটিউট ফর ম্যাথমেটিক্যাল সায়েন্সের বিজ্ঞানী মোহামাদু বাম্বা সিলা বলেন, ধনী ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর সরকারগুলো কেবল গ্রিন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। জলবায়ু পরিবর্তন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে পৃথিবীতে কোনো কাজ হচ্ছে বলেও তিনি মনে করেন না। এসব কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশকে অসময়ে বৃষ্টি, হঠাৎ ওজোন স্তরে ফাটল, সুনামি, উচ্চ তাপমাত্রা, বন্যা, খরার মতো দুর্যোগের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

সম্মেলনে কারা এলেন, কী বললেন
কপ-২৬ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমান্যুয়েল মাখোঁ, বিদায়ী জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেল, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ, নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদু বুহারি ও ঘানার নানা আকুফো আদোসহ বিশ্বের বড় নেতারা অংশ নেন। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা; পরিবেশ আন্দোলন ‘ফ্রাইডে ফর ফিউচার’-এর প্রবক্তা জলবায়ু সেলিব্রিটি গ্রেটা থুনবার্গ। স্বাগতিক দেশ হিসেবে অতিথিদের অভ্যর্থনা জানান যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।
সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি অনুসারে যুক্তরাষ্ট্র কাজ করতে পারেনি। কার্বন ফুটপ্রিন্ট, উষ্ণায়ণ নিয়ন্ত্রণের মতো বিষয়গুলো মেনে চললে শিল্পোন্নয়ন করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন। এ জন্য ক্ষমাও চান বাইডেন। ক্ষমতায় এসেই যুক্তরাষ্ট্রকে প্যারিস চুক্তিতে ফিরিয়ে আনেন বাইডেন। সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমার ক্ষমা চাওয়ার কারণ নেই। তবু আমি ক্ষমা চাইছি। কারণ, আমেরিকার সাবেক প্রশাসন প্যারিস চুক্তি থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছিল।’
একে হঠকারী সিদ্ধান্ত বলে উল্লেখ করেন বাইডেন। বলেন, ‘আমেরিকা ওই চুক্তিতে শুধু ফিরে আসছে এমনই নয়, জলবায়ু সংক্রান্ত বিষয়ে নিজেদের দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছে; সবাইকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে।’ জলবায়ু সংক্রান্ত বিষয়ে সবাইকে অবশ্যই একমত হওয়া উচিত বলেও উল্লেখ করেন বাইডেন।
জার্মানির সাবেক চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেল কোপ-২৬ সম্মেলনে বলেন, ‘২০১৫ সালের প্যারিস সম্মেলনে আমরা একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু বাস্তবে এসব ঘটনার অধিকাংশই খাতা-কলমে পড়ে আছে; কার্যকর হয়নি। এবার আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।’ পুরো পৃথিবী এই সম্মেলনের দিকে তাকিয়ে আছে উল্লেখ করে মের্কেল বলেন, ‘এই সম্মেলনের শুরুর দিকে সমস্যাগুলো স্পষ্ট হয়েছে। এবার কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার।’ তাঁর প্রস্তাব, কার্বন নিঃসরণের ওপর ফি ধরা হোক। প্রতি ইউনিট কার্বন নিঃসরণের জন্য নির্দিষ্ট ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এতে কার্বন নিঃসরণের বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়বে।

উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে এখন গ্রিন হাউস গ্যাস উদগীরণকারী প্রধান দেশ হলো চীন। এরপরই যুক্তরাষ্ট্র এবং তারপর ভারতের অবস্থান। কোপ-২৬ সম্মেলনে কিন্তু চীন এবং ভারত কার্বন নিঃসরণ কমাতে রাজি হয়নি কমাতে।
অবশ্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০৭০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যতে নামিয়ে আনাসহ পাঁচটি অঙ্গীকার করেছেন। এর মধ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য খাত থেকে ৫০ শতাংশ জ্বালানি উৎপাদন এবং কার্বন নিঃসরণ ১০০ কোটি টন কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি অন্যতম। অবশ্য চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউয়ের পর বিশ্বের চতুর্থ শীর্ষ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণকারী দেশ ভারতের এ ঘোষণার আগে চীন ২০৬০ সালের মধ্যে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো ২০৫০ সালের মধ্যে শূন্য কার্বন নিঃসরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী জনসন তাঁর বক্তব্য শুরু করেন নাটকীয়ভাবে। বলেন, ‘১২টা বাজতে মাত্র এক মিনিট বাকি। আমাদের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। এই সম্মেলনে কয়লা, গাড়ি, অর্থ আর গাছ নিয়ে পরিবেশের জন্য ইতিবাচক বাস্তবমুখী কিছু করতে না পারলে পৃথিবীর ক্রোধ ও ধৈর্যচ্যুতি কোনোভাবেই থামানো যাবে না। এই সময়টাকে কাজে লাগাতে না পারলে অনাগত শিশুরা ভবিষ্যতে আমাদের ক্ষমা করবে না। যে তিক্ততা ও তীব্র অসন্তোষ বর্তমান জলবায়ু আন্দোলনকর্মীদের গ্রাস করেছে, সেই একই অনুভূতি নিয়ে আগামী প্রজন্ম আমাদের বিবেচনা করবে, তা চাই না। এমন উদ্যোগ নিতে হবে যাতে তাঁরা জানে, গ্লাসগো ছিল ঐতিহাসিক বাঁক বদলের মুহূর্ত।’
তবে বিশ্বনেতারা প্রতিশ্রুতির ঢালা সাজিয়ে আনলেও এই সম্মেলন নিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি, জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েসে ভেলেসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে গরিব দেশের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলতে দেখা গেছে। বলা হয়েছে, গ্লাসগোর জলবায়ু সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন প্রভাবশালী বিশ্ব নেতারা।

এর মাঝে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হয়ে ওঠেন দুর্গতদের কণ্ঠস্বর। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখা, কয়লার ব্যবহার থেকে সরে আসা এবং ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য ক্ষতিপূরণ ও অর্থায়নের দাবি তোলেন তিনি। ধনী দেশের দূষণের ফলে দরিদ্র দেশগুলো বিশেষত, পৃথিবীর নিচের অর্ধের আফ্রিকা মহাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। বিশ্বের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণসহ চার দফা দাবি পেশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দাবিগুলো হচ্ছে—১. প্রধান কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোকে অবশ্যই উচ্চাভিলাষী জাতীয় পরিকল্পনা (এনডিসি) গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। ২. উন্নত দেশগুলোকে অভিযোজন এবং প্রশমনে বছরে ৫০ করে মোট ১০০ বিলিয়ন ডলার অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে হবে। ৩. উন্নত দেশগুলোকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশে অল্প খরচে নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি সরবরাহ করতে হবে। ৪. সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ও লবণাক্ততা বৃদ্ধি; নদীভাঙন, বন্যা ও খরার মতো দুর্যোগের কারণে ঘরবাড়ি হারানো 'জলবায়ু অভিবাসী'-দের দায়িত্ব নিতে হবে। একই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে ক্ষতি ও ধ্বংস মোকাবিলা করতে হবে।
বাংলাদেশ কয়লাভিত্তিক কয়েকটি প্রকল্প থেকে সরে এসেছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কপ-২৬ সম্মেলন নিয়ে হতাশার কথাই বলেছেন সুইডেনের জলবায়ু আন্দোলন কর্মী গ্রেটা থুনবার্গ। তাঁর মনে হচ্ছে না এ সম্মেলন থেকে বড় কোনো পরিবর্তন আসবে।
কারণ বরাবরের মতো বেশির ভাগ নেতার বক্তব্যে উঠে এসেছে ‘করতে হবে’। আগের সম্মেলনগুলোর প্রস্তাব বাস্তবায়ন না হওয়ার আক্ষেপও উঠে এসেছে এ সম্মেলনের বক্তাদের মুখে।

গ্লাসগো থেকে কী পাওয়া গেল
কপ-২৬ সম্মেলনের দিকে তাকিয়ে ছিল পুরো বিশ্ব। কী নির্দেশনা আসে, কী কৌশল নির্ধারিত হয় তা দেখতে উন্মুখ ছিলেন তাবৎ দুনিয়ার পরিবেশ বিষয়ে সচেতনরা। শিল্প বিপ্লবের আগের সময়ের চেয়ে তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি বৃদ্ধি না হওয়া নিশ্চিত করতে শীর্ষ গ্যাস নিঃসরণকারী দেশগুলোর কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি আশা করা হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত যে প্রতিশ্রুতি মিলেছে তাতে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি; তবে পুরোপুরি যে হতাশ করেছে তাও নয়।
এই সম্মেলনে ৫০ ধরনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে কার্বনডাই অক্সাইড নির্গমন এবং অর্থায়নের বিষয়টি বড় করে সামনে এসেছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কপ-২৬ সম্মেলনে যোগ দেওয়া বাংলাদেশি পরিবেশ বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত বলেন, উন্নত দেশগুলো কার্বন নিঃসরণ কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। প্রতিটি দেশ তাদের টার্গেট পূরণের চেষ্টা করতে রাজি হয়েছে। কিন্তু, যে টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী দেশ যথাক্রমে চীন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত হলেও চীন এবং ভারত নিঃসরণ কমাতে রাজি হয়নি। তবে তারা প্রতিবছর রাষ্ট্রপ্রধান পর্যায়ে বৈঠক করে পর্যালোচনা করার কথা বলেছে।
পরিবেশ দূষণের জন্য ধনী দেশগুলো বেশি দায়ী হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মূলত দরিদ্র দেশগুলো। এদের জন্য প্যারিস চুক্তিতে ২০২০ সাল থেকে প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলারের একটি তহবিল নিশ্চিত করার কথা বলা হলেও এখনো প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। এবারের সম্মেলন থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলারের তহবিলের নিশ্চিত করতে ২০২৩ সালের সময়সীমা দেওয়া হয়েছে। যেখানে এখন পর্যন্ত জোগাড় হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ বিলিয়ন ডলারের মতো।

ভারত ও চীনের বিদ্যুতের একটি বড় অংশ আসে কয়লা থেকে। কয়লার ব্যবহার কমানোর বিষয়ে তারা কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি। ভারত ২০৫০ সালের মধ্যে কয়লার ব্যবহার থেকে সরে আসবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করলেও ২০৭০ সাল পর্যন্ত সময় লাগবে বলে জানানো হয়েছে। জাতিসংঘের বিবেচনায় এ সময়সীমা যথেষ্ট বিলম্বিত।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবিলা এবং অভিযোজনের লক্ষ্য ঠিক করার এখনই সময়। অভিযোজন বিষয়ক আলোচনা এবারই প্রথম কপ সম্মেলনে আলোচিত হলো। এটি আশাবাদী হওয়ার মতোই একটি বিষয়। এ লক্ষ্যে আগামী দুই বছরের মধ্যে আটটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে। এ সম্মেলনে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, খরা সহিষ্ণু অঞ্চলে ফসল উৎপাদনে সেচের জন্য বৃষ্টির পানি ধরে রাখার বিষয়েও প্রতিশ্রুতি এসেছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যেসব দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভেনেজুয়েলার মতো অস্থিতিশীল তাদের অবস্থা আরও খারাপ হবে। খাদ্য ও আবাসন সংকটের পাশাপাশি কোনো না কোনো রোগ ছড়াবে। দেশ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানোর প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। তবে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের অগ্রগতি দেখে এই প্রশ্ন উঠতেই পারে, তাদের সদিচ্ছা কতোখানি।
সার্বিক বিবেচনায় কপ-২৬ সম্মেলনে আশাব্যাঞ্জক কিছু প্রস্তাব প্রতিশ্রুতি এসেছে। তবে সম্মেলন কতটা সফল হলো তা নির্ভর করবে সেগুলো বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর।

জলবায়ু পরিবর্তন ও এর বিরূপ প্রভাব নিরসনে বিশ্ব নেতাদের এক মঞ্চে আনতে জাতিসংঘের উদ্যোগ ‘কনফারেন্স অব দ্য পার্টিজ (কপ)’। ১৯৯৫ সালের ২৮ মার্চ থেকে ৭ এপ্রিল জার্মানির বার্লিনে প্রথম কপ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই থেকে প্রতি বছর সম্মেলন হচ্ছে। তবে এবার করোনার কারণে ২০২০ সালে সম্মেলন স্থগিত হয়। চলতি বছর স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত হলো কপ-২৬ সম্মেলন।
নিয়মিত কপ সম্মেলন বিশ্বব্যাপী পরিবেশ আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। যদিও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে প্রধান দায়ী দেশগুলোর গড়িমসি ভুক্তভোগী দেশগুলোকে বারবার হতাশ করেছে।
২০১৫ সালে ফ্রান্সের প্যারিসে কপ-২১ সম্মেলনে বৈশ্বিক উষ্ণতা মোকাবিলা এবং গ্রিনহাউজ গ্যাসের নির্গমন কমাতে ‘প্যারিস চুক্তি’ করে বিশ্বের দেশগুলো। এই চুক্তিতে জলবায়ু বিপর্যয় এড়াতে বৈশ্বিক উষ্ণতা প্রাক-শিল্পায়ন যুগের চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বাড়তে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এই লক্ষ্য অর্জনে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন অর্ধেকে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে শূন্যে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা হয়। তবে এখন পর্যন্ত এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়নি।
২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত কপ-২৬ সম্মেলনে ১২০টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান-সরকারপ্রধান, দুই শতাধিক দেশের প্রতিনিধি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ অংশ নেন। সম্মেলনে সব মিলে ৪০ হাজারের বেশি লোক অংশ নেন বলে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। তবে প্রভাবশালী চীন, রাশিয়া, জাপান, ব্রাজিলসহ কয়েকটি দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান এ সম্মেলনে অংশ নেননি।

বর্তমান জলবায়ু পরিস্থিতি
কপ-২৬ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হলো এক ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। করোনার ধাক্কা কিছুটা সামলে বিশ্বনেতারা সরাসরি কোনো সম্মেলনে যোগ দেন। করোনাকালে কল-কারখানা বন্ধ, মানুষের অত্যন্ত সীমিত থাকায় বিশ্বের পরিবেশ কিছুটা স্বস্তি পেলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোর পরিবেশ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। পরিবেশ পরিস্থিতি নির্ধারক কিছু উপাদানের দিকে তাকালে এ দৃশ্যটি স্পষ্ট হবে। তাছাড়া টানা এক বছরের বেশি সময় উৎপাদনে চরম ভাটা পড়ায় অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে উঠেপড়ে লেগেছে শিল্পপ্রধান দেশগুলো। ফলে এখন কার্বন নিঃসরণ আরও গতি পাবে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের ২০১৯ সালে ‘ইউকে নেট জিরো স্ট্র্যাটেজি প্রতিবেদন বলছে, বর্তমান বিশ্বে প্রতিবছর ৫৯ গিগা টন কার্বন ডাই-অক্সাইড সমতুল্য গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হচ্ছে। এর মধ্যে যানবাহন খাত থেকে নিঃসরণের পরিমাণ ছয় গিগা টন। জ্বালানি খাতে বছরে ২১ গিগা টন, কৃষি খাতে সাত গিগা টন এবং বিভিন্ন শিল্প-কারখানা থেকে আট গিগা টন গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হয়।

কার্বন নিঃসরণের ক্ষেত্রে চীন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর ভারতের অবস্থান। ২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী, ভারতে বার্ষিক মাথাপিছু কার্বন নিঃসরণ ১ দশমিক ৯ টন, যুক্তরাজ্যের ৫ দশমিক ৫ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ১৬ টন।
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার বিষয়ে নেচার জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই লক্ষ্য বাস্তবে পরিণত করতে হলে বিশ্বের ৮৯ শতাংশ কয়লা, ৫৮ শতাংশ তেল এবং ৫৯ শতাংশ মিথেন গ্যাস প্রকৃতিতে যেভাবে আছে সেভাবেই রেখে দিতে হবে। যদিও বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, বিশ্বের বৃহৎ ব্যাংকগুলো জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে ট্রিলিয়ন-ট্রিলিয়ন ডলার অর্থায়ন করছে।
নেচার সাময়িকী গত অক্টোবরে ৯২ জন বিজ্ঞানীর সাক্ষাৎকার নিয়ে একটি জলবায়ু প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এতে বলা হয়েছে, সাক্ষাৎকারদাতাদের ৬০ শতাংশ মনে করেন—২১০০ সাল নাগাদ পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে। যা প্যারিস চুক্তিতে নির্ধারিত ১ দশমিক ৫ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের তুলনায় অনেক বেশি। ৮৮ শতাংশ বিজ্ঞানীর বিশ্বাস, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে হলোকাস্টের মতো বিপর্যয় আসবে। এই বিজ্ঞানীদের মধ্যে অর্ধেকই বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এসেছে।
আফ্রিকান ইনস্টিটিউট ফর ম্যাথমেটিক্যাল সায়েন্সের বিজ্ঞানী মোহামাদু বাম্বা সিলা বলেন, ধনী ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর সরকারগুলো কেবল গ্রিন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। জলবায়ু পরিবর্তন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে পৃথিবীতে কোনো কাজ হচ্ছে বলেও তিনি মনে করেন না। এসব কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশকে অসময়ে বৃষ্টি, হঠাৎ ওজোন স্তরে ফাটল, সুনামি, উচ্চ তাপমাত্রা, বন্যা, খরার মতো দুর্যোগের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

সম্মেলনে কারা এলেন, কী বললেন
কপ-২৬ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমান্যুয়েল মাখোঁ, বিদায়ী জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেল, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ, নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদু বুহারি ও ঘানার নানা আকুফো আদোসহ বিশ্বের বড় নেতারা অংশ নেন। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা; পরিবেশ আন্দোলন ‘ফ্রাইডে ফর ফিউচার’-এর প্রবক্তা জলবায়ু সেলিব্রিটি গ্রেটা থুনবার্গ। স্বাগতিক দেশ হিসেবে অতিথিদের অভ্যর্থনা জানান যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।
সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি অনুসারে যুক্তরাষ্ট্র কাজ করতে পারেনি। কার্বন ফুটপ্রিন্ট, উষ্ণায়ণ নিয়ন্ত্রণের মতো বিষয়গুলো মেনে চললে শিল্পোন্নয়ন করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন। এ জন্য ক্ষমাও চান বাইডেন। ক্ষমতায় এসেই যুক্তরাষ্ট্রকে প্যারিস চুক্তিতে ফিরিয়ে আনেন বাইডেন। সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমার ক্ষমা চাওয়ার কারণ নেই। তবু আমি ক্ষমা চাইছি। কারণ, আমেরিকার সাবেক প্রশাসন প্যারিস চুক্তি থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছিল।’
একে হঠকারী সিদ্ধান্ত বলে উল্লেখ করেন বাইডেন। বলেন, ‘আমেরিকা ওই চুক্তিতে শুধু ফিরে আসছে এমনই নয়, জলবায়ু সংক্রান্ত বিষয়ে নিজেদের দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছে; সবাইকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে।’ জলবায়ু সংক্রান্ত বিষয়ে সবাইকে অবশ্যই একমত হওয়া উচিত বলেও উল্লেখ করেন বাইডেন।
জার্মানির সাবেক চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেল কোপ-২৬ সম্মেলনে বলেন, ‘২০১৫ সালের প্যারিস সম্মেলনে আমরা একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু বাস্তবে এসব ঘটনার অধিকাংশই খাতা-কলমে পড়ে আছে; কার্যকর হয়নি। এবার আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।’ পুরো পৃথিবী এই সম্মেলনের দিকে তাকিয়ে আছে উল্লেখ করে মের্কেল বলেন, ‘এই সম্মেলনের শুরুর দিকে সমস্যাগুলো স্পষ্ট হয়েছে। এবার কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার।’ তাঁর প্রস্তাব, কার্বন নিঃসরণের ওপর ফি ধরা হোক। প্রতি ইউনিট কার্বন নিঃসরণের জন্য নির্দিষ্ট ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এতে কার্বন নিঃসরণের বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়বে।

উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে এখন গ্রিন হাউস গ্যাস উদগীরণকারী প্রধান দেশ হলো চীন। এরপরই যুক্তরাষ্ট্র এবং তারপর ভারতের অবস্থান। কোপ-২৬ সম্মেলনে কিন্তু চীন এবং ভারত কার্বন নিঃসরণ কমাতে রাজি হয়নি কমাতে।
অবশ্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০৭০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যতে নামিয়ে আনাসহ পাঁচটি অঙ্গীকার করেছেন। এর মধ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য খাত থেকে ৫০ শতাংশ জ্বালানি উৎপাদন এবং কার্বন নিঃসরণ ১০০ কোটি টন কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি অন্যতম। অবশ্য চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউয়ের পর বিশ্বের চতুর্থ শীর্ষ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণকারী দেশ ভারতের এ ঘোষণার আগে চীন ২০৬০ সালের মধ্যে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো ২০৫০ সালের মধ্যে শূন্য কার্বন নিঃসরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী জনসন তাঁর বক্তব্য শুরু করেন নাটকীয়ভাবে। বলেন, ‘১২টা বাজতে মাত্র এক মিনিট বাকি। আমাদের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। এই সম্মেলনে কয়লা, গাড়ি, অর্থ আর গাছ নিয়ে পরিবেশের জন্য ইতিবাচক বাস্তবমুখী কিছু করতে না পারলে পৃথিবীর ক্রোধ ও ধৈর্যচ্যুতি কোনোভাবেই থামানো যাবে না। এই সময়টাকে কাজে লাগাতে না পারলে অনাগত শিশুরা ভবিষ্যতে আমাদের ক্ষমা করবে না। যে তিক্ততা ও তীব্র অসন্তোষ বর্তমান জলবায়ু আন্দোলনকর্মীদের গ্রাস করেছে, সেই একই অনুভূতি নিয়ে আগামী প্রজন্ম আমাদের বিবেচনা করবে, তা চাই না। এমন উদ্যোগ নিতে হবে যাতে তাঁরা জানে, গ্লাসগো ছিল ঐতিহাসিক বাঁক বদলের মুহূর্ত।’
তবে বিশ্বনেতারা প্রতিশ্রুতির ঢালা সাজিয়ে আনলেও এই সম্মেলন নিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি, জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েসে ভেলেসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে গরিব দেশের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলতে দেখা গেছে। বলা হয়েছে, গ্লাসগোর জলবায়ু সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন প্রভাবশালী বিশ্ব নেতারা।

এর মাঝে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হয়ে ওঠেন দুর্গতদের কণ্ঠস্বর। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখা, কয়লার ব্যবহার থেকে সরে আসা এবং ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য ক্ষতিপূরণ ও অর্থায়নের দাবি তোলেন তিনি। ধনী দেশের দূষণের ফলে দরিদ্র দেশগুলো বিশেষত, পৃথিবীর নিচের অর্ধের আফ্রিকা মহাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। বিশ্বের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণসহ চার দফা দাবি পেশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দাবিগুলো হচ্ছে—১. প্রধান কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোকে অবশ্যই উচ্চাভিলাষী জাতীয় পরিকল্পনা (এনডিসি) গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। ২. উন্নত দেশগুলোকে অভিযোজন এবং প্রশমনে বছরে ৫০ করে মোট ১০০ বিলিয়ন ডলার অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে হবে। ৩. উন্নত দেশগুলোকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশে অল্প খরচে নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি সরবরাহ করতে হবে। ৪. সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ও লবণাক্ততা বৃদ্ধি; নদীভাঙন, বন্যা ও খরার মতো দুর্যোগের কারণে ঘরবাড়ি হারানো 'জলবায়ু অভিবাসী'-দের দায়িত্ব নিতে হবে। একই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে ক্ষতি ও ধ্বংস মোকাবিলা করতে হবে।
বাংলাদেশ কয়লাভিত্তিক কয়েকটি প্রকল্প থেকে সরে এসেছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কপ-২৬ সম্মেলন নিয়ে হতাশার কথাই বলেছেন সুইডেনের জলবায়ু আন্দোলন কর্মী গ্রেটা থুনবার্গ। তাঁর মনে হচ্ছে না এ সম্মেলন থেকে বড় কোনো পরিবর্তন আসবে।
কারণ বরাবরের মতো বেশির ভাগ নেতার বক্তব্যে উঠে এসেছে ‘করতে হবে’। আগের সম্মেলনগুলোর প্রস্তাব বাস্তবায়ন না হওয়ার আক্ষেপও উঠে এসেছে এ সম্মেলনের বক্তাদের মুখে।

গ্লাসগো থেকে কী পাওয়া গেল
কপ-২৬ সম্মেলনের দিকে তাকিয়ে ছিল পুরো বিশ্ব। কী নির্দেশনা আসে, কী কৌশল নির্ধারিত হয় তা দেখতে উন্মুখ ছিলেন তাবৎ দুনিয়ার পরিবেশ বিষয়ে সচেতনরা। শিল্প বিপ্লবের আগের সময়ের চেয়ে তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি বৃদ্ধি না হওয়া নিশ্চিত করতে শীর্ষ গ্যাস নিঃসরণকারী দেশগুলোর কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি আশা করা হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত যে প্রতিশ্রুতি মিলেছে তাতে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি; তবে পুরোপুরি যে হতাশ করেছে তাও নয়।
এই সম্মেলনে ৫০ ধরনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে কার্বনডাই অক্সাইড নির্গমন এবং অর্থায়নের বিষয়টি বড় করে সামনে এসেছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কপ-২৬ সম্মেলনে যোগ দেওয়া বাংলাদেশি পরিবেশ বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত বলেন, উন্নত দেশগুলো কার্বন নিঃসরণ কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। প্রতিটি দেশ তাদের টার্গেট পূরণের চেষ্টা করতে রাজি হয়েছে। কিন্তু, যে টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী দেশ যথাক্রমে চীন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত হলেও চীন এবং ভারত নিঃসরণ কমাতে রাজি হয়নি। তবে তারা প্রতিবছর রাষ্ট্রপ্রধান পর্যায়ে বৈঠক করে পর্যালোচনা করার কথা বলেছে।
পরিবেশ দূষণের জন্য ধনী দেশগুলো বেশি দায়ী হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মূলত দরিদ্র দেশগুলো। এদের জন্য প্যারিস চুক্তিতে ২০২০ সাল থেকে প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলারের একটি তহবিল নিশ্চিত করার কথা বলা হলেও এখনো প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। এবারের সম্মেলন থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলারের তহবিলের নিশ্চিত করতে ২০২৩ সালের সময়সীমা দেওয়া হয়েছে। যেখানে এখন পর্যন্ত জোগাড় হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ বিলিয়ন ডলারের মতো।

ভারত ও চীনের বিদ্যুতের একটি বড় অংশ আসে কয়লা থেকে। কয়লার ব্যবহার কমানোর বিষয়ে তারা কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি। ভারত ২০৫০ সালের মধ্যে কয়লার ব্যবহার থেকে সরে আসবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করলেও ২০৭০ সাল পর্যন্ত সময় লাগবে বলে জানানো হয়েছে। জাতিসংঘের বিবেচনায় এ সময়সীমা যথেষ্ট বিলম্বিত।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবিলা এবং অভিযোজনের লক্ষ্য ঠিক করার এখনই সময়। অভিযোজন বিষয়ক আলোচনা এবারই প্রথম কপ সম্মেলনে আলোচিত হলো। এটি আশাবাদী হওয়ার মতোই একটি বিষয়। এ লক্ষ্যে আগামী দুই বছরের মধ্যে আটটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে। এ সম্মেলনে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, খরা সহিষ্ণু অঞ্চলে ফসল উৎপাদনে সেচের জন্য বৃষ্টির পানি ধরে রাখার বিষয়েও প্রতিশ্রুতি এসেছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যেসব দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভেনেজুয়েলার মতো অস্থিতিশীল তাদের অবস্থা আরও খারাপ হবে। খাদ্য ও আবাসন সংকটের পাশাপাশি কোনো না কোনো রোগ ছড়াবে। দেশ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানোর প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। তবে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের অগ্রগতি দেখে এই প্রশ্ন উঠতেই পারে, তাদের সদিচ্ছা কতোখানি।
সার্বিক বিবেচনায় কপ-২৬ সম্মেলনে আশাব্যাঞ্জক কিছু প্রস্তাব প্রতিশ্রুতি এসেছে। তবে সম্মেলন কতটা সফল হলো তা নির্ভর করবে সেগুলো বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর।
ইমরান খান

জলবায়ু পরিবর্তন ও এর বিরূপ প্রভাব নিরসনে বিশ্ব নেতাদের এক মঞ্চে আনতে জাতিসংঘের উদ্যোগ ‘কনফারেন্স অব দ্য পার্টিজ (কপ)’। ১৯৯৫ সালের ২৮ মার্চ থেকে ৭ এপ্রিল জার্মানির বার্লিনে প্রথম কপ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই থেকে প্রতি বছর সম্মেলন হচ্ছে। তবে এবার করোনার কারণে ২০২০ সালে সম্মেলন স্থগিত হয়। চলতি বছর স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত হলো কপ-২৬ সম্মেলন।
নিয়মিত কপ সম্মেলন বিশ্বব্যাপী পরিবেশ আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। যদিও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে প্রধান দায়ী দেশগুলোর গড়িমসি ভুক্তভোগী দেশগুলোকে বারবার হতাশ করেছে।
২০১৫ সালে ফ্রান্সের প্যারিসে কপ-২১ সম্মেলনে বৈশ্বিক উষ্ণতা মোকাবিলা এবং গ্রিনহাউজ গ্যাসের নির্গমন কমাতে ‘প্যারিস চুক্তি’ করে বিশ্বের দেশগুলো। এই চুক্তিতে জলবায়ু বিপর্যয় এড়াতে বৈশ্বিক উষ্ণতা প্রাক-শিল্পায়ন যুগের চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বাড়তে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এই লক্ষ্য অর্জনে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন অর্ধেকে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে শূন্যে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা হয়। তবে এখন পর্যন্ত এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়নি।
২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত কপ-২৬ সম্মেলনে ১২০টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান-সরকারপ্রধান, দুই শতাধিক দেশের প্রতিনিধি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ অংশ নেন। সম্মেলনে সব মিলে ৪০ হাজারের বেশি লোক অংশ নেন বলে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। তবে প্রভাবশালী চীন, রাশিয়া, জাপান, ব্রাজিলসহ কয়েকটি দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান এ সম্মেলনে অংশ নেননি।

বর্তমান জলবায়ু পরিস্থিতি
কপ-২৬ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হলো এক ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। করোনার ধাক্কা কিছুটা সামলে বিশ্বনেতারা সরাসরি কোনো সম্মেলনে যোগ দেন। করোনাকালে কল-কারখানা বন্ধ, মানুষের অত্যন্ত সীমিত থাকায় বিশ্বের পরিবেশ কিছুটা স্বস্তি পেলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোর পরিবেশ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। পরিবেশ পরিস্থিতি নির্ধারক কিছু উপাদানের দিকে তাকালে এ দৃশ্যটি স্পষ্ট হবে। তাছাড়া টানা এক বছরের বেশি সময় উৎপাদনে চরম ভাটা পড়ায় অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে উঠেপড়ে লেগেছে শিল্পপ্রধান দেশগুলো। ফলে এখন কার্বন নিঃসরণ আরও গতি পাবে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের ২০১৯ সালে ‘ইউকে নেট জিরো স্ট্র্যাটেজি প্রতিবেদন বলছে, বর্তমান বিশ্বে প্রতিবছর ৫৯ গিগা টন কার্বন ডাই-অক্সাইড সমতুল্য গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হচ্ছে। এর মধ্যে যানবাহন খাত থেকে নিঃসরণের পরিমাণ ছয় গিগা টন। জ্বালানি খাতে বছরে ২১ গিগা টন, কৃষি খাতে সাত গিগা টন এবং বিভিন্ন শিল্প-কারখানা থেকে আট গিগা টন গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হয়।

কার্বন নিঃসরণের ক্ষেত্রে চীন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর ভারতের অবস্থান। ২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী, ভারতে বার্ষিক মাথাপিছু কার্বন নিঃসরণ ১ দশমিক ৯ টন, যুক্তরাজ্যের ৫ দশমিক ৫ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ১৬ টন।
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার বিষয়ে নেচার জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই লক্ষ্য বাস্তবে পরিণত করতে হলে বিশ্বের ৮৯ শতাংশ কয়লা, ৫৮ শতাংশ তেল এবং ৫৯ শতাংশ মিথেন গ্যাস প্রকৃতিতে যেভাবে আছে সেভাবেই রেখে দিতে হবে। যদিও বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, বিশ্বের বৃহৎ ব্যাংকগুলো জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে ট্রিলিয়ন-ট্রিলিয়ন ডলার অর্থায়ন করছে।
নেচার সাময়িকী গত অক্টোবরে ৯২ জন বিজ্ঞানীর সাক্ষাৎকার নিয়ে একটি জলবায়ু প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এতে বলা হয়েছে, সাক্ষাৎকারদাতাদের ৬০ শতাংশ মনে করেন—২১০০ সাল নাগাদ পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে। যা প্যারিস চুক্তিতে নির্ধারিত ১ দশমিক ৫ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের তুলনায় অনেক বেশি। ৮৮ শতাংশ বিজ্ঞানীর বিশ্বাস, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে হলোকাস্টের মতো বিপর্যয় আসবে। এই বিজ্ঞানীদের মধ্যে অর্ধেকই বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এসেছে।
আফ্রিকান ইনস্টিটিউট ফর ম্যাথমেটিক্যাল সায়েন্সের বিজ্ঞানী মোহামাদু বাম্বা সিলা বলেন, ধনী ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর সরকারগুলো কেবল গ্রিন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। জলবায়ু পরিবর্তন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে পৃথিবীতে কোনো কাজ হচ্ছে বলেও তিনি মনে করেন না। এসব কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশকে অসময়ে বৃষ্টি, হঠাৎ ওজোন স্তরে ফাটল, সুনামি, উচ্চ তাপমাত্রা, বন্যা, খরার মতো দুর্যোগের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

সম্মেলনে কারা এলেন, কী বললেন
কপ-২৬ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমান্যুয়েল মাখোঁ, বিদায়ী জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেল, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ, নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদু বুহারি ও ঘানার নানা আকুফো আদোসহ বিশ্বের বড় নেতারা অংশ নেন। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা; পরিবেশ আন্দোলন ‘ফ্রাইডে ফর ফিউচার’-এর প্রবক্তা জলবায়ু সেলিব্রিটি গ্রেটা থুনবার্গ। স্বাগতিক দেশ হিসেবে অতিথিদের অভ্যর্থনা জানান যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।
সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি অনুসারে যুক্তরাষ্ট্র কাজ করতে পারেনি। কার্বন ফুটপ্রিন্ট, উষ্ণায়ণ নিয়ন্ত্রণের মতো বিষয়গুলো মেনে চললে শিল্পোন্নয়ন করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন। এ জন্য ক্ষমাও চান বাইডেন। ক্ষমতায় এসেই যুক্তরাষ্ট্রকে প্যারিস চুক্তিতে ফিরিয়ে আনেন বাইডেন। সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমার ক্ষমা চাওয়ার কারণ নেই। তবু আমি ক্ষমা চাইছি। কারণ, আমেরিকার সাবেক প্রশাসন প্যারিস চুক্তি থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছিল।’
একে হঠকারী সিদ্ধান্ত বলে উল্লেখ করেন বাইডেন। বলেন, ‘আমেরিকা ওই চুক্তিতে শুধু ফিরে আসছে এমনই নয়, জলবায়ু সংক্রান্ত বিষয়ে নিজেদের দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছে; সবাইকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে।’ জলবায়ু সংক্রান্ত বিষয়ে সবাইকে অবশ্যই একমত হওয়া উচিত বলেও উল্লেখ করেন বাইডেন।
জার্মানির সাবেক চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেল কোপ-২৬ সম্মেলনে বলেন, ‘২০১৫ সালের প্যারিস সম্মেলনে আমরা একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু বাস্তবে এসব ঘটনার অধিকাংশই খাতা-কলমে পড়ে আছে; কার্যকর হয়নি। এবার আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।’ পুরো পৃথিবী এই সম্মেলনের দিকে তাকিয়ে আছে উল্লেখ করে মের্কেল বলেন, ‘এই সম্মেলনের শুরুর দিকে সমস্যাগুলো স্পষ্ট হয়েছে। এবার কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার।’ তাঁর প্রস্তাব, কার্বন নিঃসরণের ওপর ফি ধরা হোক। প্রতি ইউনিট কার্বন নিঃসরণের জন্য নির্দিষ্ট ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এতে কার্বন নিঃসরণের বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়বে।

উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে এখন গ্রিন হাউস গ্যাস উদগীরণকারী প্রধান দেশ হলো চীন। এরপরই যুক্তরাষ্ট্র এবং তারপর ভারতের অবস্থান। কোপ-২৬ সম্মেলনে কিন্তু চীন এবং ভারত কার্বন নিঃসরণ কমাতে রাজি হয়নি কমাতে।
অবশ্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০৭০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যতে নামিয়ে আনাসহ পাঁচটি অঙ্গীকার করেছেন। এর মধ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য খাত থেকে ৫০ শতাংশ জ্বালানি উৎপাদন এবং কার্বন নিঃসরণ ১০০ কোটি টন কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি অন্যতম। অবশ্য চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউয়ের পর বিশ্বের চতুর্থ শীর্ষ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণকারী দেশ ভারতের এ ঘোষণার আগে চীন ২০৬০ সালের মধ্যে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো ২০৫০ সালের মধ্যে শূন্য কার্বন নিঃসরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী জনসন তাঁর বক্তব্য শুরু করেন নাটকীয়ভাবে। বলেন, ‘১২টা বাজতে মাত্র এক মিনিট বাকি। আমাদের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। এই সম্মেলনে কয়লা, গাড়ি, অর্থ আর গাছ নিয়ে পরিবেশের জন্য ইতিবাচক বাস্তবমুখী কিছু করতে না পারলে পৃথিবীর ক্রোধ ও ধৈর্যচ্যুতি কোনোভাবেই থামানো যাবে না। এই সময়টাকে কাজে লাগাতে না পারলে অনাগত শিশুরা ভবিষ্যতে আমাদের ক্ষমা করবে না। যে তিক্ততা ও তীব্র অসন্তোষ বর্তমান জলবায়ু আন্দোলনকর্মীদের গ্রাস করেছে, সেই একই অনুভূতি নিয়ে আগামী প্রজন্ম আমাদের বিবেচনা করবে, তা চাই না। এমন উদ্যোগ নিতে হবে যাতে তাঁরা জানে, গ্লাসগো ছিল ঐতিহাসিক বাঁক বদলের মুহূর্ত।’
তবে বিশ্বনেতারা প্রতিশ্রুতির ঢালা সাজিয়ে আনলেও এই সম্মেলন নিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি, জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েসে ভেলেসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে গরিব দেশের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলতে দেখা গেছে। বলা হয়েছে, গ্লাসগোর জলবায়ু সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন প্রভাবশালী বিশ্ব নেতারা।

এর মাঝে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হয়ে ওঠেন দুর্গতদের কণ্ঠস্বর। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখা, কয়লার ব্যবহার থেকে সরে আসা এবং ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য ক্ষতিপূরণ ও অর্থায়নের দাবি তোলেন তিনি। ধনী দেশের দূষণের ফলে দরিদ্র দেশগুলো বিশেষত, পৃথিবীর নিচের অর্ধের আফ্রিকা মহাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। বিশ্বের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণসহ চার দফা দাবি পেশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দাবিগুলো হচ্ছে—১. প্রধান কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোকে অবশ্যই উচ্চাভিলাষী জাতীয় পরিকল্পনা (এনডিসি) গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। ২. উন্নত দেশগুলোকে অভিযোজন এবং প্রশমনে বছরে ৫০ করে মোট ১০০ বিলিয়ন ডলার অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে হবে। ৩. উন্নত দেশগুলোকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশে অল্প খরচে নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি সরবরাহ করতে হবে। ৪. সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ও লবণাক্ততা বৃদ্ধি; নদীভাঙন, বন্যা ও খরার মতো দুর্যোগের কারণে ঘরবাড়ি হারানো 'জলবায়ু অভিবাসী'-দের দায়িত্ব নিতে হবে। একই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে ক্ষতি ও ধ্বংস মোকাবিলা করতে হবে।
বাংলাদেশ কয়লাভিত্তিক কয়েকটি প্রকল্প থেকে সরে এসেছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কপ-২৬ সম্মেলন নিয়ে হতাশার কথাই বলেছেন সুইডেনের জলবায়ু আন্দোলন কর্মী গ্রেটা থুনবার্গ। তাঁর মনে হচ্ছে না এ সম্মেলন থেকে বড় কোনো পরিবর্তন আসবে।
কারণ বরাবরের মতো বেশির ভাগ নেতার বক্তব্যে উঠে এসেছে ‘করতে হবে’। আগের সম্মেলনগুলোর প্রস্তাব বাস্তবায়ন না হওয়ার আক্ষেপও উঠে এসেছে এ সম্মেলনের বক্তাদের মুখে।

গ্লাসগো থেকে কী পাওয়া গেল
কপ-২৬ সম্মেলনের দিকে তাকিয়ে ছিল পুরো বিশ্ব। কী নির্দেশনা আসে, কী কৌশল নির্ধারিত হয় তা দেখতে উন্মুখ ছিলেন তাবৎ দুনিয়ার পরিবেশ বিষয়ে সচেতনরা। শিল্প বিপ্লবের আগের সময়ের চেয়ে তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি বৃদ্ধি না হওয়া নিশ্চিত করতে শীর্ষ গ্যাস নিঃসরণকারী দেশগুলোর কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি আশা করা হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত যে প্রতিশ্রুতি মিলেছে তাতে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি; তবে পুরোপুরি যে হতাশ করেছে তাও নয়।
এই সম্মেলনে ৫০ ধরনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে কার্বনডাই অক্সাইড নির্গমন এবং অর্থায়নের বিষয়টি বড় করে সামনে এসেছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কপ-২৬ সম্মেলনে যোগ দেওয়া বাংলাদেশি পরিবেশ বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত বলেন, উন্নত দেশগুলো কার্বন নিঃসরণ কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। প্রতিটি দেশ তাদের টার্গেট পূরণের চেষ্টা করতে রাজি হয়েছে। কিন্তু, যে টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী দেশ যথাক্রমে চীন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত হলেও চীন এবং ভারত নিঃসরণ কমাতে রাজি হয়নি। তবে তারা প্রতিবছর রাষ্ট্রপ্রধান পর্যায়ে বৈঠক করে পর্যালোচনা করার কথা বলেছে।
পরিবেশ দূষণের জন্য ধনী দেশগুলো বেশি দায়ী হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মূলত দরিদ্র দেশগুলো। এদের জন্য প্যারিস চুক্তিতে ২০২০ সাল থেকে প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলারের একটি তহবিল নিশ্চিত করার কথা বলা হলেও এখনো প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। এবারের সম্মেলন থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলারের তহবিলের নিশ্চিত করতে ২০২৩ সালের সময়সীমা দেওয়া হয়েছে। যেখানে এখন পর্যন্ত জোগাড় হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ বিলিয়ন ডলারের মতো।

ভারত ও চীনের বিদ্যুতের একটি বড় অংশ আসে কয়লা থেকে। কয়লার ব্যবহার কমানোর বিষয়ে তারা কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি। ভারত ২০৫০ সালের মধ্যে কয়লার ব্যবহার থেকে সরে আসবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করলেও ২০৭০ সাল পর্যন্ত সময় লাগবে বলে জানানো হয়েছে। জাতিসংঘের বিবেচনায় এ সময়সীমা যথেষ্ট বিলম্বিত।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবিলা এবং অভিযোজনের লক্ষ্য ঠিক করার এখনই সময়। অভিযোজন বিষয়ক আলোচনা এবারই প্রথম কপ সম্মেলনে আলোচিত হলো। এটি আশাবাদী হওয়ার মতোই একটি বিষয়। এ লক্ষ্যে আগামী দুই বছরের মধ্যে আটটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে। এ সম্মেলনে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, খরা সহিষ্ণু অঞ্চলে ফসল উৎপাদনে সেচের জন্য বৃষ্টির পানি ধরে রাখার বিষয়েও প্রতিশ্রুতি এসেছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যেসব দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভেনেজুয়েলার মতো অস্থিতিশীল তাদের অবস্থা আরও খারাপ হবে। খাদ্য ও আবাসন সংকটের পাশাপাশি কোনো না কোনো রোগ ছড়াবে। দেশ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানোর প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। তবে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের অগ্রগতি দেখে এই প্রশ্ন উঠতেই পারে, তাদের সদিচ্ছা কতোখানি।
সার্বিক বিবেচনায় কপ-২৬ সম্মেলনে আশাব্যাঞ্জক কিছু প্রস্তাব প্রতিশ্রুতি এসেছে। তবে সম্মেলন কতটা সফল হলো তা নির্ভর করবে সেগুলো বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর।

জলবায়ু পরিবর্তন ও এর বিরূপ প্রভাব নিরসনে বিশ্ব নেতাদের এক মঞ্চে আনতে জাতিসংঘের উদ্যোগ ‘কনফারেন্স অব দ্য পার্টিজ (কপ)’। ১৯৯৫ সালের ২৮ মার্চ থেকে ৭ এপ্রিল জার্মানির বার্লিনে প্রথম কপ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই থেকে প্রতি বছর সম্মেলন হচ্ছে। তবে এবার করোনার কারণে ২০২০ সালে সম্মেলন স্থগিত হয়। চলতি বছর স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত হলো কপ-২৬ সম্মেলন।
নিয়মিত কপ সম্মেলন বিশ্বব্যাপী পরিবেশ আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। যদিও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে প্রধান দায়ী দেশগুলোর গড়িমসি ভুক্তভোগী দেশগুলোকে বারবার হতাশ করেছে।
২০১৫ সালে ফ্রান্সের প্যারিসে কপ-২১ সম্মেলনে বৈশ্বিক উষ্ণতা মোকাবিলা এবং গ্রিনহাউজ গ্যাসের নির্গমন কমাতে ‘প্যারিস চুক্তি’ করে বিশ্বের দেশগুলো। এই চুক্তিতে জলবায়ু বিপর্যয় এড়াতে বৈশ্বিক উষ্ণতা প্রাক-শিল্পায়ন যুগের চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বাড়তে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এই লক্ষ্য অর্জনে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন অর্ধেকে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে শূন্যে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা হয়। তবে এখন পর্যন্ত এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়নি।
২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত কপ-২৬ সম্মেলনে ১২০টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান-সরকারপ্রধান, দুই শতাধিক দেশের প্রতিনিধি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ অংশ নেন। সম্মেলনে সব মিলে ৪০ হাজারের বেশি লোক অংশ নেন বলে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। তবে প্রভাবশালী চীন, রাশিয়া, জাপান, ব্রাজিলসহ কয়েকটি দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান এ সম্মেলনে অংশ নেননি।

বর্তমান জলবায়ু পরিস্থিতি
কপ-২৬ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হলো এক ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। করোনার ধাক্কা কিছুটা সামলে বিশ্বনেতারা সরাসরি কোনো সম্মেলনে যোগ দেন। করোনাকালে কল-কারখানা বন্ধ, মানুষের অত্যন্ত সীমিত থাকায় বিশ্বের পরিবেশ কিছুটা স্বস্তি পেলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোর পরিবেশ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। পরিবেশ পরিস্থিতি নির্ধারক কিছু উপাদানের দিকে তাকালে এ দৃশ্যটি স্পষ্ট হবে। তাছাড়া টানা এক বছরের বেশি সময় উৎপাদনে চরম ভাটা পড়ায় অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে উঠেপড়ে লেগেছে শিল্পপ্রধান দেশগুলো। ফলে এখন কার্বন নিঃসরণ আরও গতি পাবে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের ২০১৯ সালে ‘ইউকে নেট জিরো স্ট্র্যাটেজি প্রতিবেদন বলছে, বর্তমান বিশ্বে প্রতিবছর ৫৯ গিগা টন কার্বন ডাই-অক্সাইড সমতুল্য গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হচ্ছে। এর মধ্যে যানবাহন খাত থেকে নিঃসরণের পরিমাণ ছয় গিগা টন। জ্বালানি খাতে বছরে ২১ গিগা টন, কৃষি খাতে সাত গিগা টন এবং বিভিন্ন শিল্প-কারখানা থেকে আট গিগা টন গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হয়।

কার্বন নিঃসরণের ক্ষেত্রে চীন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর ভারতের অবস্থান। ২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী, ভারতে বার্ষিক মাথাপিছু কার্বন নিঃসরণ ১ দশমিক ৯ টন, যুক্তরাজ্যের ৫ দশমিক ৫ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ১৬ টন।
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার বিষয়ে নেচার জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই লক্ষ্য বাস্তবে পরিণত করতে হলে বিশ্বের ৮৯ শতাংশ কয়লা, ৫৮ শতাংশ তেল এবং ৫৯ শতাংশ মিথেন গ্যাস প্রকৃতিতে যেভাবে আছে সেভাবেই রেখে দিতে হবে। যদিও বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, বিশ্বের বৃহৎ ব্যাংকগুলো জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে ট্রিলিয়ন-ট্রিলিয়ন ডলার অর্থায়ন করছে।
নেচার সাময়িকী গত অক্টোবরে ৯২ জন বিজ্ঞানীর সাক্ষাৎকার নিয়ে একটি জলবায়ু প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এতে বলা হয়েছে, সাক্ষাৎকারদাতাদের ৬০ শতাংশ মনে করেন—২১০০ সাল নাগাদ পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে। যা প্যারিস চুক্তিতে নির্ধারিত ১ দশমিক ৫ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের তুলনায় অনেক বেশি। ৮৮ শতাংশ বিজ্ঞানীর বিশ্বাস, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে হলোকাস্টের মতো বিপর্যয় আসবে। এই বিজ্ঞানীদের মধ্যে অর্ধেকই বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এসেছে।
আফ্রিকান ইনস্টিটিউট ফর ম্যাথমেটিক্যাল সায়েন্সের বিজ্ঞানী মোহামাদু বাম্বা সিলা বলেন, ধনী ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর সরকারগুলো কেবল গ্রিন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। জলবায়ু পরিবর্তন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে পৃথিবীতে কোনো কাজ হচ্ছে বলেও তিনি মনে করেন না। এসব কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশকে অসময়ে বৃষ্টি, হঠাৎ ওজোন স্তরে ফাটল, সুনামি, উচ্চ তাপমাত্রা, বন্যা, খরার মতো দুর্যোগের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

সম্মেলনে কারা এলেন, কী বললেন
কপ-২৬ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমান্যুয়েল মাখোঁ, বিদায়ী জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেল, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ, নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদু বুহারি ও ঘানার নানা আকুফো আদোসহ বিশ্বের বড় নেতারা অংশ নেন। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা; পরিবেশ আন্দোলন ‘ফ্রাইডে ফর ফিউচার’-এর প্রবক্তা জলবায়ু সেলিব্রিটি গ্রেটা থুনবার্গ। স্বাগতিক দেশ হিসেবে অতিথিদের অভ্যর্থনা জানান যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।
সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি অনুসারে যুক্তরাষ্ট্র কাজ করতে পারেনি। কার্বন ফুটপ্রিন্ট, উষ্ণায়ণ নিয়ন্ত্রণের মতো বিষয়গুলো মেনে চললে শিল্পোন্নয়ন করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন। এ জন্য ক্ষমাও চান বাইডেন। ক্ষমতায় এসেই যুক্তরাষ্ট্রকে প্যারিস চুক্তিতে ফিরিয়ে আনেন বাইডেন। সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমার ক্ষমা চাওয়ার কারণ নেই। তবু আমি ক্ষমা চাইছি। কারণ, আমেরিকার সাবেক প্রশাসন প্যারিস চুক্তি থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছিল।’
একে হঠকারী সিদ্ধান্ত বলে উল্লেখ করেন বাইডেন। বলেন, ‘আমেরিকা ওই চুক্তিতে শুধু ফিরে আসছে এমনই নয়, জলবায়ু সংক্রান্ত বিষয়ে নিজেদের দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছে; সবাইকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে।’ জলবায়ু সংক্রান্ত বিষয়ে সবাইকে অবশ্যই একমত হওয়া উচিত বলেও উল্লেখ করেন বাইডেন।
জার্মানির সাবেক চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেল কোপ-২৬ সম্মেলনে বলেন, ‘২০১৫ সালের প্যারিস সম্মেলনে আমরা একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু বাস্তবে এসব ঘটনার অধিকাংশই খাতা-কলমে পড়ে আছে; কার্যকর হয়নি। এবার আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।’ পুরো পৃথিবী এই সম্মেলনের দিকে তাকিয়ে আছে উল্লেখ করে মের্কেল বলেন, ‘এই সম্মেলনের শুরুর দিকে সমস্যাগুলো স্পষ্ট হয়েছে। এবার কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার।’ তাঁর প্রস্তাব, কার্বন নিঃসরণের ওপর ফি ধরা হোক। প্রতি ইউনিট কার্বন নিঃসরণের জন্য নির্দিষ্ট ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এতে কার্বন নিঃসরণের বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়বে।

উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে এখন গ্রিন হাউস গ্যাস উদগীরণকারী প্রধান দেশ হলো চীন। এরপরই যুক্তরাষ্ট্র এবং তারপর ভারতের অবস্থান। কোপ-২৬ সম্মেলনে কিন্তু চীন এবং ভারত কার্বন নিঃসরণ কমাতে রাজি হয়নি কমাতে।
অবশ্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০৭০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যতে নামিয়ে আনাসহ পাঁচটি অঙ্গীকার করেছেন। এর মধ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য খাত থেকে ৫০ শতাংশ জ্বালানি উৎপাদন এবং কার্বন নিঃসরণ ১০০ কোটি টন কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি অন্যতম। অবশ্য চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউয়ের পর বিশ্বের চতুর্থ শীর্ষ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণকারী দেশ ভারতের এ ঘোষণার আগে চীন ২০৬০ সালের মধ্যে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো ২০৫০ সালের মধ্যে শূন্য কার্বন নিঃসরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী জনসন তাঁর বক্তব্য শুরু করেন নাটকীয়ভাবে। বলেন, ‘১২টা বাজতে মাত্র এক মিনিট বাকি। আমাদের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। এই সম্মেলনে কয়লা, গাড়ি, অর্থ আর গাছ নিয়ে পরিবেশের জন্য ইতিবাচক বাস্তবমুখী কিছু করতে না পারলে পৃথিবীর ক্রোধ ও ধৈর্যচ্যুতি কোনোভাবেই থামানো যাবে না। এই সময়টাকে কাজে লাগাতে না পারলে অনাগত শিশুরা ভবিষ্যতে আমাদের ক্ষমা করবে না। যে তিক্ততা ও তীব্র অসন্তোষ বর্তমান জলবায়ু আন্দোলনকর্মীদের গ্রাস করেছে, সেই একই অনুভূতি নিয়ে আগামী প্রজন্ম আমাদের বিবেচনা করবে, তা চাই না। এমন উদ্যোগ নিতে হবে যাতে তাঁরা জানে, গ্লাসগো ছিল ঐতিহাসিক বাঁক বদলের মুহূর্ত।’
তবে বিশ্বনেতারা প্রতিশ্রুতির ঢালা সাজিয়ে আনলেও এই সম্মেলন নিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি, জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েসে ভেলেসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে গরিব দেশের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলতে দেখা গেছে। বলা হয়েছে, গ্লাসগোর জলবায়ু সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন প্রভাবশালী বিশ্ব নেতারা।

এর মাঝে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হয়ে ওঠেন দুর্গতদের কণ্ঠস্বর। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখা, কয়লার ব্যবহার থেকে সরে আসা এবং ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য ক্ষতিপূরণ ও অর্থায়নের দাবি তোলেন তিনি। ধনী দেশের দূষণের ফলে দরিদ্র দেশগুলো বিশেষত, পৃথিবীর নিচের অর্ধের আফ্রিকা মহাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। বিশ্বের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণসহ চার দফা দাবি পেশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দাবিগুলো হচ্ছে—১. প্রধান কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোকে অবশ্যই উচ্চাভিলাষী জাতীয় পরিকল্পনা (এনডিসি) গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। ২. উন্নত দেশগুলোকে অভিযোজন এবং প্রশমনে বছরে ৫০ করে মোট ১০০ বিলিয়ন ডলার অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে হবে। ৩. উন্নত দেশগুলোকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশে অল্প খরচে নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি সরবরাহ করতে হবে। ৪. সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ও লবণাক্ততা বৃদ্ধি; নদীভাঙন, বন্যা ও খরার মতো দুর্যোগের কারণে ঘরবাড়ি হারানো 'জলবায়ু অভিবাসী'-দের দায়িত্ব নিতে হবে। একই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে ক্ষতি ও ধ্বংস মোকাবিলা করতে হবে।
বাংলাদেশ কয়লাভিত্তিক কয়েকটি প্রকল্প থেকে সরে এসেছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কপ-২৬ সম্মেলন নিয়ে হতাশার কথাই বলেছেন সুইডেনের জলবায়ু আন্দোলন কর্মী গ্রেটা থুনবার্গ। তাঁর মনে হচ্ছে না এ সম্মেলন থেকে বড় কোনো পরিবর্তন আসবে।
কারণ বরাবরের মতো বেশির ভাগ নেতার বক্তব্যে উঠে এসেছে ‘করতে হবে’। আগের সম্মেলনগুলোর প্রস্তাব বাস্তবায়ন না হওয়ার আক্ষেপও উঠে এসেছে এ সম্মেলনের বক্তাদের মুখে।

গ্লাসগো থেকে কী পাওয়া গেল
কপ-২৬ সম্মেলনের দিকে তাকিয়ে ছিল পুরো বিশ্ব। কী নির্দেশনা আসে, কী কৌশল নির্ধারিত হয় তা দেখতে উন্মুখ ছিলেন তাবৎ দুনিয়ার পরিবেশ বিষয়ে সচেতনরা। শিল্প বিপ্লবের আগের সময়ের চেয়ে তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি বৃদ্ধি না হওয়া নিশ্চিত করতে শীর্ষ গ্যাস নিঃসরণকারী দেশগুলোর কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি আশা করা হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত যে প্রতিশ্রুতি মিলেছে তাতে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি; তবে পুরোপুরি যে হতাশ করেছে তাও নয়।
এই সম্মেলনে ৫০ ধরনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে কার্বনডাই অক্সাইড নির্গমন এবং অর্থায়নের বিষয়টি বড় করে সামনে এসেছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কপ-২৬ সম্মেলনে যোগ দেওয়া বাংলাদেশি পরিবেশ বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত বলেন, উন্নত দেশগুলো কার্বন নিঃসরণ কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। প্রতিটি দেশ তাদের টার্গেট পূরণের চেষ্টা করতে রাজি হয়েছে। কিন্তু, যে টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী দেশ যথাক্রমে চীন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত হলেও চীন এবং ভারত নিঃসরণ কমাতে রাজি হয়নি। তবে তারা প্রতিবছর রাষ্ট্রপ্রধান পর্যায়ে বৈঠক করে পর্যালোচনা করার কথা বলেছে।
পরিবেশ দূষণের জন্য ধনী দেশগুলো বেশি দায়ী হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মূলত দরিদ্র দেশগুলো। এদের জন্য প্যারিস চুক্তিতে ২০২০ সাল থেকে প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলারের একটি তহবিল নিশ্চিত করার কথা বলা হলেও এখনো প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। এবারের সম্মেলন থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলারের তহবিলের নিশ্চিত করতে ২০২৩ সালের সময়সীমা দেওয়া হয়েছে। যেখানে এখন পর্যন্ত জোগাড় হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ বিলিয়ন ডলারের মতো।

ভারত ও চীনের বিদ্যুতের একটি বড় অংশ আসে কয়লা থেকে। কয়লার ব্যবহার কমানোর বিষয়ে তারা কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি। ভারত ২০৫০ সালের মধ্যে কয়লার ব্যবহার থেকে সরে আসবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করলেও ২০৭০ সাল পর্যন্ত সময় লাগবে বলে জানানো হয়েছে। জাতিসংঘের বিবেচনায় এ সময়সীমা যথেষ্ট বিলম্বিত।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবিলা এবং অভিযোজনের লক্ষ্য ঠিক করার এখনই সময়। অভিযোজন বিষয়ক আলোচনা এবারই প্রথম কপ সম্মেলনে আলোচিত হলো। এটি আশাবাদী হওয়ার মতোই একটি বিষয়। এ লক্ষ্যে আগামী দুই বছরের মধ্যে আটটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে। এ সম্মেলনে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, খরা সহিষ্ণু অঞ্চলে ফসল উৎপাদনে সেচের জন্য বৃষ্টির পানি ধরে রাখার বিষয়েও প্রতিশ্রুতি এসেছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যেসব দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভেনেজুয়েলার মতো অস্থিতিশীল তাদের অবস্থা আরও খারাপ হবে। খাদ্য ও আবাসন সংকটের পাশাপাশি কোনো না কোনো রোগ ছড়াবে। দেশ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানোর প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। তবে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের অগ্রগতি দেখে এই প্রশ্ন উঠতেই পারে, তাদের সদিচ্ছা কতোখানি।
সার্বিক বিবেচনায় কপ-২৬ সম্মেলনে আশাব্যাঞ্জক কিছু প্রস্তাব প্রতিশ্রুতি এসেছে। তবে সম্মেলন কতটা সফল হলো তা নির্ভর করবে সেগুলো বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর।

রাজধানী ঢাকায়ও গতকাল মঙ্গলবারের তুলনায় আজ তাপমাত্রা কমেছে। গতকাল ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২১ দশমিক ৪, আজ সেটি কমে হয়েছে ২০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
১৬ ঘণ্টা আগে
বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলন কপ-৩০-এর সঙ্গে সংগতি রেখে আজ মঙ্গলবার নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) অনুষ্ঠিত হয় ‘ইয়ুথ কল ফর ফেয়ার অ্যান্ড সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স’ শীর্ষক ক্যাম্পেইন।
১ দিন আগে
দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় দশের মধ্যে অবস্থান করছে ভারত উপমহাদেশের তিন প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধান শহরগুলো। এর মধ্যে আজ মঙ্গলবার তালিকার প্রথম তিন স্থান দখল করে আছে দিল্লি, লাহোর ও ঢাকা।
২ দিন আগে
রাজধানী ঢাকায়ও গতকাল সোমবারের তুলনায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা প্রায় ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমেছে। গতকাল সকাল ৬টায় ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আজ একই সময় এটি ২১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে।
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

সারা দেশে শীতের আমেজ বেড়েই চলেছে। এর মধ্যে দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা কয়েক দিন ধরেই দ্রুত কমছে। আজ বুধবার সকাল ৬টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়, ১২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
শুধু পঞ্চগড় নয়, পুরো রংপুর বিভাগেই শীত জেঁকে বসতে শুরু করেছে। আজ সকাল ৬টায় দিনাজপুরে তাপমাত্রা ছিল ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পাশের জেলা রংপুরে তাপমাত্রা ছিল ১৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রাজধানী ঢাকায়ও গতকাল মঙ্গলবারের তুলনায় আজ তাপমাত্রা কমেছে। গতকাল ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২১ দশমিক ৪, আজ সেটি কমে হয়েছে ২০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আজও রাজধানী ঢাকার আবহাওয়া অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আজ আবহাওয়া অধিদপ্তর সকাল ৭টা থেকে পরবর্তী ছয় ঘণ্টার জন্য ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পূর্বাভাসে জানিয়েছে, আজ দিনের প্রথমার্ধে ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আকাশ পরিষ্কার থাকবে। এ সময় উত্তর বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে দিনের তাপমাত্রাও প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে।
পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়, আজ সকালে বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯০ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় কোনো বৃষ্টি হয়নি। আজ সূর্যাস্ত হবে সন্ধ্যা ৫টা ১৩ মিনিটে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সূর্যোদয় ভোর ৬টা ১২ মিনিটে।

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর আরও জানায়, আজ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। সেই সঙ্গে সারা দেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

আবহাওয়াবিদ ড. ওমর ফারুক আজ সকালে আজকের পত্রিকাকে বলেন, সারা দেশে কয়েক দিন ধরে তাপমাত্রা বেশ কমেছে। এর মধ্যে রংপুর বিভাগে প্রতিদিনই ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো কমেছে। ঢাকায়ও হালকা শীত পড়েছে। তবে আগামীকাল থেকে তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে।

সারা দেশে শীতের আমেজ বেড়েই চলেছে। এর মধ্যে দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা কয়েক দিন ধরেই দ্রুত কমছে। আজ বুধবার সকাল ৬টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়, ১২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
শুধু পঞ্চগড় নয়, পুরো রংপুর বিভাগেই শীত জেঁকে বসতে শুরু করেছে। আজ সকাল ৬টায় দিনাজপুরে তাপমাত্রা ছিল ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পাশের জেলা রংপুরে তাপমাত্রা ছিল ১৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রাজধানী ঢাকায়ও গতকাল মঙ্গলবারের তুলনায় আজ তাপমাত্রা কমেছে। গতকাল ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২১ দশমিক ৪, আজ সেটি কমে হয়েছে ২০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আজও রাজধানী ঢাকার আবহাওয়া অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আজ আবহাওয়া অধিদপ্তর সকাল ৭টা থেকে পরবর্তী ছয় ঘণ্টার জন্য ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পূর্বাভাসে জানিয়েছে, আজ দিনের প্রথমার্ধে ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আকাশ পরিষ্কার থাকবে। এ সময় উত্তর বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে দিনের তাপমাত্রাও প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে।
পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়, আজ সকালে বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯০ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় কোনো বৃষ্টি হয়নি। আজ সূর্যাস্ত হবে সন্ধ্যা ৫টা ১৩ মিনিটে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সূর্যোদয় ভোর ৬টা ১২ মিনিটে।

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর আরও জানায়, আজ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। সেই সঙ্গে সারা দেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

আবহাওয়াবিদ ড. ওমর ফারুক আজ সকালে আজকের পত্রিকাকে বলেন, সারা দেশে কয়েক দিন ধরে তাপমাত্রা বেশ কমেছে। এর মধ্যে রংপুর বিভাগে প্রতিদিনই ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো কমেছে। ঢাকায়ও হালকা শীত পড়েছে। তবে আগামীকাল থেকে তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে।

ধনী ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর সরকারগুলো কেবল গ্রিন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। জলবায়ু পরিবর্তন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে পৃথিবীতে কোনো কাজ হচ্ছে বলেও তিনি মনে করেন না। এসব কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশকে অসময়ে বৃষ্টি, হঠাৎ ওজোন স্তরে ফাটল, সুনামি, উচ্চ তাপমাত্রা, বন্যা, খরার মতো দুর্যোগের মুখোমু
২৮ ডিসেম্বর ২০২১
বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলন কপ-৩০-এর সঙ্গে সংগতি রেখে আজ মঙ্গলবার নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) অনুষ্ঠিত হয় ‘ইয়ুথ কল ফর ফেয়ার অ্যান্ড সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স’ শীর্ষক ক্যাম্পেইন।
১ দিন আগে
দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় দশের মধ্যে অবস্থান করছে ভারত উপমহাদেশের তিন প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধান শহরগুলো। এর মধ্যে আজ মঙ্গলবার তালিকার প্রথম তিন স্থান দখল করে আছে দিল্লি, লাহোর ও ঢাকা।
২ দিন আগে
রাজধানী ঢাকায়ও গতকাল সোমবারের তুলনায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা প্রায় ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমেছে। গতকাল সকাল ৬টায় ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আজ একই সময় এটি ২১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে।
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলন কপ-৩০-এর সঙ্গে সংগতি রেখে আজ মঙ্গলবার নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) অনুষ্ঠিত হয় ‘ইয়ুথ কল ফর ফেয়ার অ্যান্ড সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স’ শীর্ষক ক্যাম্পেইন। এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের জন্য ন্যায্য, স্বচ্ছ ও টেকসই জলবায়ু অর্থায়নের জোর দাবি জানান।
জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম হলেও, অভিযোজন কার্যক্রম বাস্তবায়নে যে পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন, তার তুলনায় প্রাপ্ত অর্থ অত্যন্ত সীমিত। প্রতি বছর বাংলাদেশের প্রায় ১২ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রয়োজন হলেও বর্তমানে পাচ্ছে এর ১১ শতাংশেরও কম। এই ন্যায্য অর্থায়ন কাঠামোর অভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি ও দায়ভার সবচেয়ে বেশি পড়ছে প্রান্তিক ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর ওপর।
আন্তর্জাতিক অর্থায়নের ঘাটতির পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ টেকসই অর্থায়ন ক্ষেত্রেও অগ্রগতি হতাশাজনক। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের ১৫ শতাংশ টেকসই অর্থায়নে বরাদ্দের কথা থাকলেও, অধিকাংশ ব্যাংক এই নির্দেশনা যথাযথভাবে কার্যকর করছে না।
কোস্টাল এনভায়রনমেন্ট নেটওয়ার্কের সভাপতি মুরাদ হোসেন রাজু বলেন, 'ধনী দেশগুলোর শিল্পায়নের কারণে সৃষ্ট জলবায়ু সংকটের ভয়াবহ প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের দেশের মানুষ, বিশেষ করে উপকূলীয় জনগোষ্ঠী। অথচ তারা ন্যায্য অর্থায়ন ও ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত। কপ-৩০-এ আমাদের দাবি স্পষ্ট—ন্যায্য জলবায়ু অর্থায়ন নিশ্চিত করতে হবে।'
পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাকশন নেটওয়ার্কের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর উম্মে সালমা পপি এই প্রসঙ্গে বলেন, 'যে সংকট বাংলাদেশের সৃষ্টি নয়, তার আর্থিক দায়ভার এই দেশের জনগণের উপর বর্তানো অন্যায়। একইভাবে টেকসই অর্থায়নের ক্ষেত্রে আমাদের নিজেদেরই ঘাটতি রয়েছে। ২০২৪ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো টেকসই ও সবুজ শিল্পে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে—যা হতাশাজনক।'
ক্যাম্পেইনে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি পথনাটিকা পরিবেশিত হয়।
'অভিযোজন ফান্ডের টাকা নিয়া তালবাহানা চলবে না'—এই স্লোগানকে সামনে রেখে পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাকশন নেটওয়ার্ক – প্রান, ফেয়ার ফাইন্যান্স বাংলাদেশ কোয়ালিশন, অক্সফাম ইন বাংলাদেশ এবং কোস্টাল এনভায়রনমেন্ট নেটওয়ার্ক (কোয়েন) যৌথভাবে এই ক্যাম্পেইনটি আয়োজন করে।

বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলন কপ-৩০-এর সঙ্গে সংগতি রেখে আজ মঙ্গলবার নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) অনুষ্ঠিত হয় ‘ইয়ুথ কল ফর ফেয়ার অ্যান্ড সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স’ শীর্ষক ক্যাম্পেইন। এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের জন্য ন্যায্য, স্বচ্ছ ও টেকসই জলবায়ু অর্থায়নের জোর দাবি জানান।
জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম হলেও, অভিযোজন কার্যক্রম বাস্তবায়নে যে পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন, তার তুলনায় প্রাপ্ত অর্থ অত্যন্ত সীমিত। প্রতি বছর বাংলাদেশের প্রায় ১২ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রয়োজন হলেও বর্তমানে পাচ্ছে এর ১১ শতাংশেরও কম। এই ন্যায্য অর্থায়ন কাঠামোর অভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি ও দায়ভার সবচেয়ে বেশি পড়ছে প্রান্তিক ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর ওপর।
আন্তর্জাতিক অর্থায়নের ঘাটতির পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ টেকসই অর্থায়ন ক্ষেত্রেও অগ্রগতি হতাশাজনক। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের ১৫ শতাংশ টেকসই অর্থায়নে বরাদ্দের কথা থাকলেও, অধিকাংশ ব্যাংক এই নির্দেশনা যথাযথভাবে কার্যকর করছে না।
কোস্টাল এনভায়রনমেন্ট নেটওয়ার্কের সভাপতি মুরাদ হোসেন রাজু বলেন, 'ধনী দেশগুলোর শিল্পায়নের কারণে সৃষ্ট জলবায়ু সংকটের ভয়াবহ প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের দেশের মানুষ, বিশেষ করে উপকূলীয় জনগোষ্ঠী। অথচ তারা ন্যায্য অর্থায়ন ও ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত। কপ-৩০-এ আমাদের দাবি স্পষ্ট—ন্যায্য জলবায়ু অর্থায়ন নিশ্চিত করতে হবে।'
পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাকশন নেটওয়ার্কের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর উম্মে সালমা পপি এই প্রসঙ্গে বলেন, 'যে সংকট বাংলাদেশের সৃষ্টি নয়, তার আর্থিক দায়ভার এই দেশের জনগণের উপর বর্তানো অন্যায়। একইভাবে টেকসই অর্থায়নের ক্ষেত্রে আমাদের নিজেদেরই ঘাটতি রয়েছে। ২০২৪ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো টেকসই ও সবুজ শিল্পে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে—যা হতাশাজনক।'
ক্যাম্পেইনে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি পথনাটিকা পরিবেশিত হয়।
'অভিযোজন ফান্ডের টাকা নিয়া তালবাহানা চলবে না'—এই স্লোগানকে সামনে রেখে পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাকশন নেটওয়ার্ক – প্রান, ফেয়ার ফাইন্যান্স বাংলাদেশ কোয়ালিশন, অক্সফাম ইন বাংলাদেশ এবং কোস্টাল এনভায়রনমেন্ট নেটওয়ার্ক (কোয়েন) যৌথভাবে এই ক্যাম্পেইনটি আয়োজন করে।

ধনী ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর সরকারগুলো কেবল গ্রিন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। জলবায়ু পরিবর্তন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে পৃথিবীতে কোনো কাজ হচ্ছে বলেও তিনি মনে করেন না। এসব কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশকে অসময়ে বৃষ্টি, হঠাৎ ওজোন স্তরে ফাটল, সুনামি, উচ্চ তাপমাত্রা, বন্যা, খরার মতো দুর্যোগের মুখোমু
২৮ ডিসেম্বর ২০২১
রাজধানী ঢাকায়ও গতকাল মঙ্গলবারের তুলনায় আজ তাপমাত্রা কমেছে। গতকাল ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২১ দশমিক ৪, আজ সেটি কমে হয়েছে ২০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
১৬ ঘণ্টা আগে
দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় দশের মধ্যে অবস্থান করছে ভারত উপমহাদেশের তিন প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধান শহরগুলো। এর মধ্যে আজ মঙ্গলবার তালিকার প্রথম তিন স্থান দখল করে আছে দিল্লি, লাহোর ও ঢাকা।
২ দিন আগে
রাজধানী ঢাকায়ও গতকাল সোমবারের তুলনায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা প্রায় ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমেছে। গতকাল সকাল ৬টায় ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আজ একই সময় এটি ২১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে।
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় দশের মধ্যে অবস্থান করছে ভারত উপমহাদেশের তিন প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধান শহরগুলো। এর মধ্যে আজ মঙ্গলবার তালিকার প্রথম তিন স্থান দখল করে আছে দিল্লি, লাহোর ও ঢাকা।
রাজধানী শহর ঢাকা দীর্ঘদিন ধরে বায়ুদূষণের সংকটে ভুগছে। গতকালের মতো আজও বায়ুদূষণে বিশ্বের তৃতীয় দূষিত শহর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। শহরটির বাতাসের গুণগত মান (একিউআই) নিয়মিতভাবে ‘অস্বাস্থ্যকর’ থেকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ শ্রেণিতে থাকছে।
আইকিউএয়ারসহ বৈশ্বিক বায়ু পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, শহরের এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) প্রায়ই ১৮০ (যা ‘অস্বাস্থ্যকর’ মাত্রা নির্দেশ করে) বা তার চেয়ে বেশি রেকর্ড করা হচ্ছে। দৈনিক গড় মান প্রায়ই ১৫০-এর ওপরে থাকছে, যা ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে চিহ্নিত। এই উদ্বেগজনক সংখ্যাগুলো বাসিন্দাদের জন্য একটি তাৎক্ষণিক এবং গুরুতর জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি তুলে ধরেছে।
বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের আজ সকাল ৯টার রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার গড় বায়ুমান ২২১। যা খুব অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক।
বায়ুদূষণের শীর্ষে থাকা ভারতের দিল্লির বায়ুমান আজ ৭৩৬, যা দুর্যোগপূর্ণ বাতাসের নির্দেশক। শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো পাকিস্তানের লাহোর (৪৩৬), উজবেকিস্তানের তাসখন্দ (২০৮) ও ভারতের কলকাতা (১৯২)।
ঢাকার নিম্নমানের বাতাসের প্রধান কারণ হলো পিএম ২.৫ বা সূক্ষ্ম কণা। এই অতিক্ষুদ্র কণাগুলো, যাদের ব্যাস ২.৫ মাইক্রোমিটারের চেয়েও কম, ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করে রক্তপ্রবাহে মিশে যেতে পারে। এর ফলে হাঁপানি (অ্যাজমা) বৃদ্ধি, ব্রঙ্কাইটিস এবং হৃদ্রোগের মতো শ্বাসযন্ত্র ও হৃদ্যন্ত্রের গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।
শীতকালীন আবহাওয়ার ধরন, যানবাহন ও শিল্প থেকে অনিয়ন্ত্রিত নির্গমন, চলমান নির্মাণকাজ থেকে সৃষ্ট ধুলো এবং আশপাশের ইটভাটাগুলো এই দূষণ সংকটের জন্য দায়ী।
বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১ থেকে ১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১ থেকে ১৫০-এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১ থেকে ২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।
বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতিবছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।
দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।
পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।
বাতাসের এই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে করণীয়
অত্যন্ত সংবেদনশীল গোষ্ঠী: শিশু, বয়স্ক, হৃদ্রোগ বা শ্বাসকষ্টের রোগীরা সব ধরনের ঘরের বাইরে না যাওয়াই ভালো।
সাধারণ সুস্থ ব্যক্তি: তাদের উচিত বাইরে কাটানো সময় সীমিত করা এবং শারীরিক পরিশ্রমের কাজ এড়িয়ে চলা।
যদি বাইরে বের হতে হয়, তবে অবশ্যই দূষণ রোধে কার্যকর মাস্ক ব্যবহার করুন।
ঘরের ভেতরের বাতাস পরিষ্কার রাখতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন এবং দূষিত বাতাস প্রবেশ ঠেকাতে জানালা ও দরজা বন্ধ রাখুন।

দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় দশের মধ্যে অবস্থান করছে ভারত উপমহাদেশের তিন প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধান শহরগুলো। এর মধ্যে আজ মঙ্গলবার তালিকার প্রথম তিন স্থান দখল করে আছে দিল্লি, লাহোর ও ঢাকা।
রাজধানী শহর ঢাকা দীর্ঘদিন ধরে বায়ুদূষণের সংকটে ভুগছে। গতকালের মতো আজও বায়ুদূষণে বিশ্বের তৃতীয় দূষিত শহর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। শহরটির বাতাসের গুণগত মান (একিউআই) নিয়মিতভাবে ‘অস্বাস্থ্যকর’ থেকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ শ্রেণিতে থাকছে।
আইকিউএয়ারসহ বৈশ্বিক বায়ু পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, শহরের এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) প্রায়ই ১৮০ (যা ‘অস্বাস্থ্যকর’ মাত্রা নির্দেশ করে) বা তার চেয়ে বেশি রেকর্ড করা হচ্ছে। দৈনিক গড় মান প্রায়ই ১৫০-এর ওপরে থাকছে, যা ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে চিহ্নিত। এই উদ্বেগজনক সংখ্যাগুলো বাসিন্দাদের জন্য একটি তাৎক্ষণিক এবং গুরুতর জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি তুলে ধরেছে।
বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের আজ সকাল ৯টার রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার গড় বায়ুমান ২২১। যা খুব অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক।
বায়ুদূষণের শীর্ষে থাকা ভারতের দিল্লির বায়ুমান আজ ৭৩৬, যা দুর্যোগপূর্ণ বাতাসের নির্দেশক। শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো পাকিস্তানের লাহোর (৪৩৬), উজবেকিস্তানের তাসখন্দ (২০৮) ও ভারতের কলকাতা (১৯২)।
ঢাকার নিম্নমানের বাতাসের প্রধান কারণ হলো পিএম ২.৫ বা সূক্ষ্ম কণা। এই অতিক্ষুদ্র কণাগুলো, যাদের ব্যাস ২.৫ মাইক্রোমিটারের চেয়েও কম, ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করে রক্তপ্রবাহে মিশে যেতে পারে। এর ফলে হাঁপানি (অ্যাজমা) বৃদ্ধি, ব্রঙ্কাইটিস এবং হৃদ্রোগের মতো শ্বাসযন্ত্র ও হৃদ্যন্ত্রের গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।
শীতকালীন আবহাওয়ার ধরন, যানবাহন ও শিল্প থেকে অনিয়ন্ত্রিত নির্গমন, চলমান নির্মাণকাজ থেকে সৃষ্ট ধুলো এবং আশপাশের ইটভাটাগুলো এই দূষণ সংকটের জন্য দায়ী।
বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১ থেকে ১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১ থেকে ১৫০-এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১ থেকে ২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।
বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতিবছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।
দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।
পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।
বাতাসের এই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে করণীয়
অত্যন্ত সংবেদনশীল গোষ্ঠী: শিশু, বয়স্ক, হৃদ্রোগ বা শ্বাসকষ্টের রোগীরা সব ধরনের ঘরের বাইরে না যাওয়াই ভালো।
সাধারণ সুস্থ ব্যক্তি: তাদের উচিত বাইরে কাটানো সময় সীমিত করা এবং শারীরিক পরিশ্রমের কাজ এড়িয়ে চলা।
যদি বাইরে বের হতে হয়, তবে অবশ্যই দূষণ রোধে কার্যকর মাস্ক ব্যবহার করুন।
ঘরের ভেতরের বাতাস পরিষ্কার রাখতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন এবং দূষিত বাতাস প্রবেশ ঠেকাতে জানালা ও দরজা বন্ধ রাখুন।

ধনী ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর সরকারগুলো কেবল গ্রিন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। জলবায়ু পরিবর্তন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে পৃথিবীতে কোনো কাজ হচ্ছে বলেও তিনি মনে করেন না। এসব কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশকে অসময়ে বৃষ্টি, হঠাৎ ওজোন স্তরে ফাটল, সুনামি, উচ্চ তাপমাত্রা, বন্যা, খরার মতো দুর্যোগের মুখোমু
২৮ ডিসেম্বর ২০২১
রাজধানী ঢাকায়ও গতকাল মঙ্গলবারের তুলনায় আজ তাপমাত্রা কমেছে। গতকাল ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২১ দশমিক ৪, আজ সেটি কমে হয়েছে ২০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
১৬ ঘণ্টা আগে
বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলন কপ-৩০-এর সঙ্গে সংগতি রেখে আজ মঙ্গলবার নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) অনুষ্ঠিত হয় ‘ইয়ুথ কল ফর ফেয়ার অ্যান্ড সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স’ শীর্ষক ক্যাম্পেইন।
১ দিন আগে
রাজধানী ঢাকায়ও গতকাল সোমবারের তুলনায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা প্রায় ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমেছে। গতকাল সকাল ৬টায় ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আজ একই সময় এটি ২১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে।
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

শীতের কাঁপন লেগেছে দেশের উত্তরাঞ্চলে। কার্তিক মাসের বিদায় বেলায় সারা দেশেই তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। আজ মঙ্গলবার সকাল ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ১৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রাজধানী ঢাকায়ও গতকাল সোমবারের তুলনায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা প্রায় ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমেছে। গতকাল সকাল ৬টায় ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আজ একই সময় এটি ২১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে।
সামনের দিনগুলোতে তাপমাত্রা কমতে থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির আজ সকালে আজকের পত্রিকাকে বলেন, সূর্যের তাপ কমে এসেছে। দিনের ব্যাপ্তিও কমছে। উত্তর দিক থেকে হিমেল হাওয়া বইছে। স্বাভাবিকভাবেই এ সময় শীত পড়তে শুরু করেছে।
সারা দেশে আজকের আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। একই সঙ্গে সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে। দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার সকাল ৭টা থেকে পরবর্তী ৬ ঘণ্টার জন্য ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা থাকতে পারে। তবে আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে। এ সময় উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর আরও জানায়, আজ সকাল ৬টায় বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৬৭ শতাংশ। আজ সূর্যাস্ত হবে সন্ধ্যা ৫টা ১৪ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ভোর ৬টা ১২ মিনিটে।

শীতের কাঁপন লেগেছে দেশের উত্তরাঞ্চলে। কার্তিক মাসের বিদায় বেলায় সারা দেশেই তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। আজ মঙ্গলবার সকাল ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ১৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রাজধানী ঢাকায়ও গতকাল সোমবারের তুলনায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা প্রায় ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমেছে। গতকাল সকাল ৬টায় ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আজ একই সময় এটি ২১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে।
সামনের দিনগুলোতে তাপমাত্রা কমতে থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির আজ সকালে আজকের পত্রিকাকে বলেন, সূর্যের তাপ কমে এসেছে। দিনের ব্যাপ্তিও কমছে। উত্তর দিক থেকে হিমেল হাওয়া বইছে। স্বাভাবিকভাবেই এ সময় শীত পড়তে শুরু করেছে।
সারা দেশে আজকের আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। একই সঙ্গে সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে। দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার সকাল ৭টা থেকে পরবর্তী ৬ ঘণ্টার জন্য ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা থাকতে পারে। তবে আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে। এ সময় উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর আরও জানায়, আজ সকাল ৬টায় বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৬৭ শতাংশ। আজ সূর্যাস্ত হবে সন্ধ্যা ৫টা ১৪ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ভোর ৬টা ১২ মিনিটে।

ধনী ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর সরকারগুলো কেবল গ্রিন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। জলবায়ু পরিবর্তন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে পৃথিবীতে কোনো কাজ হচ্ছে বলেও তিনি মনে করেন না। এসব কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশকে অসময়ে বৃষ্টি, হঠাৎ ওজোন স্তরে ফাটল, সুনামি, উচ্চ তাপমাত্রা, বন্যা, খরার মতো দুর্যোগের মুখোমু
২৮ ডিসেম্বর ২০২১
রাজধানী ঢাকায়ও গতকাল মঙ্গলবারের তুলনায় আজ তাপমাত্রা কমেছে। গতকাল ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২১ দশমিক ৪, আজ সেটি কমে হয়েছে ২০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
১৬ ঘণ্টা আগে
বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলন কপ-৩০-এর সঙ্গে সংগতি রেখে আজ মঙ্গলবার নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) অনুষ্ঠিত হয় ‘ইয়ুথ কল ফর ফেয়ার অ্যান্ড সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স’ শীর্ষক ক্যাম্পেইন।
১ দিন আগে
দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় দশের মধ্যে অবস্থান করছে ভারত উপমহাদেশের তিন প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধান শহরগুলো। এর মধ্যে আজ মঙ্গলবার তালিকার প্রথম তিন স্থান দখল করে আছে দিল্লি, লাহোর ও ঢাকা।
২ দিন আগে