Ajker Patrika

অতিরিক্ত মোটা হয়ে যাচ্ছে আমাজনের সব গাছ, কারণ কী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাজন রেইন ফরেস্ট বা চিরহরিৎ বনের সব ধরনের গাছ আগের চেয়ে মোটা হয়ে উঠছে বলে জানা গেছে এক নতুন গবেষণায়। গবেষকেরা বলছেন, বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইডের (CO2) পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় আমাজনের গাছপালা বেশি পুষ্টিকর পরিবেশ পাচ্ছে। এর ফলে ১৯৭০-এর দশক থেকে শুরু করে প্রতি দশকে গাছের গোড়া ৩ দশমিক ৩ শতাংশ হারে বেড়েছে।

এক বিবৃতিতে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব লিডসের ট্রপিক্যাল ইকোলজি ও কনজারভেশন বিভাগের অধ্যাপক এবং গবেষণার সহলেখক টিম বেকার বলেন, ‘আমরা আগে থেকেই জানতাম, অক্ষত আমাজন বনের গাছগুলোতে মোট কার্বনের পরিমাণ বাড়ছে। তবে এই নতুন গবেষণা দেখায়, সব আকারের গাছই বড় হয়েছে। অর্থাৎ, গোটা বনেই পরিবর্তন এসেছে।’

এই মোটা হওয়া ‘ভালো খবর’ বলেই মনে করছেন গবেষণার আরেক সহলেখক এবং ব্রাজিলের মাতো গ্রোসো স্টেট ইউনিভার্সিটির গ্রীষ্মমণ্ডলীয় উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক বিয়াত্রিজ মারিমন। তিনি বলেন, ‘এই গবেষণা দেখায়, আমাজনের গাছপালা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়ায় অনেক বেশি সহনশীল, যেমনটা আগে ভাবা হতো না।’

তবে আগের গবেষণাগুলো বলছে, ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা এবং কার্বন ডাই-অক্সাইডের উপস্থিতি আমাজনকে এমন এক চূড়ান্ত সীমার (টিপিং পয়েন্ট) দিকে ঠেলে দিচ্ছে, যেখানে আগামী ১০০ বছরের মধ্যে বনভূমি বদলে যেতে পারে সাভানায়। তবে এর আগেই বর্তমান জলবায়ুর সুবিধা নিয়ে গাছগুলো প্রচুর পরিমাণে কার্বন সংরক্ষণ করছে এবং বড় হচ্ছে আকারে।

গবেষণার জন্য আমাজন রেইন ফরেস্ট-জুড়ে ১৮৮টি প্লট থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছেন বিজ্ঞানীরা। এখানে গাছের ‘বেসেল এরিয়া’ পরিমাপ করা হয়—অর্থাৎ, গাছের গোড়ার ব্যাসার্ধে বনভূমির কতটুকু জায়গা দখল করছে, তা পর্যবেক্ষণ করা হয়। এই পর্যবেক্ষণ শুরু হয় ১৯৭১ সালে এবং চলে ২০১৫ পর্যন্ত। তবে বিভিন্ন প্লটে পর্যবেক্ষণের সময় ছিল ভিন্ন, সর্বোচ্চ একটি প্লটে টানা ৩০ বছর তথ্য নেওয়া হয়।

প্রায় ১০০ জন গ্রীষ্মমণ্ডলীয় উদ্ভিদবিজ্ঞানী নিয়ে গঠিত গবেষক দলটি কয়েকটি সম্ভাব্য ফলাফল মাথায় রেখে গবেষণা পরিচালনা করেন।

এর মধ্যে একটি সম্ভাব্য ফলাফল ছিল ‘উইনারস-টেক-অল’ (বিজয়ীই সব সুবিধা নেবে) অর্থাৎ, শুধু বড় গাছগুলো কার্বন ডাই-অক্সাইড বৃদ্ধির সুবিধা পাবে। বড় গাছ সূর্যের আলো ও পুষ্টি বেশি পায়, ফলে তারা পরিবর্তিত পরিবেশে টিকে থাকতে পারবে সহজেই।

আরেকটি সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া ছিল ‘কার্বন-লিমিটেড বেনিফিট’। অর্থাৎ, ছোট গাছগুলো বেশি উপকৃত হবে। কারণ তারা পুষ্টিহীন পরিবেশে থাকে। তাই সামান্য উন্নত পরিবেশেই তাদের ওপর বড় প্রভাব পড়ে।

তবে তৃতীয় সম্ভাব্য ধারণাটিই বাস্তবে প্রমাণিত হয়েছে। সেটি হলো—‘বেনিফিটস শেয়ার্ড’। অর্থাৎ, কার্বন ডাই-অক্সাইড বৃদ্ধির সুফল সব আকারের গাছই ভাগ করে নিয়েছে।

গবেষণা নিবন্ধটি গত বৃহস্পতিবার ‘নেচার প্ল্যান্টস’ জার্নালে প্রকাশিত হয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, এমনকি সবচেয়ে বড় গাছগুলোও ভালোভাবে বেড়ে উঠছে। তবে তারা খরার মতো জলবায়ু সম্পর্কিত দুর্যোগে সাধারণত বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। অক্ষত বনাঞ্চলে এরা ভালোই টিকে আছে।

গবেষকেরা সতর্ক করে বলেন, ভবিষ্যতে হয়তো বড় গাছগুলোই বেশি বাড়বে, আর ছোট গাছগুলো হয়তো হারিয়ে যেতে থাকবে। ফলে ইকোসিস্টেম বা বাস্তুতন্ত্রে বড় গাছের একচেটিয়া রাজত্ব চলতে পারে।

গবেষণায় দেখা গেছে, এখনো পর্যন্ত কোনো প্লটে গাছের গোড়ার ব্যাসার্ধ কমেনি, অর্থাৎ কার্বন ডাই-অক্সাইডে বৃদ্ধির সুফল জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাবকে ছাপিয়ে গেছে। তবে গবেষকেরা সতর্ক করেছেন, ভবিষ্যতে তাপমাত্রা ও পানির ঘাটতি এবং দাবানল ও ঝড়ের মতো প্রতিকূলতা বাড়ায় গাছের বৃদ্ধি কমে যেতে পারে এবং মৃত্যুহার বেড়ে যেতে পারে।

তাঁদের মতে, কার্বন নিঃসারণ কমানো এবং বনভূমিকে অক্ষত রাখা—এ দুটোই আমাজনকে রক্ষা করার সবচেয়ে কার্যকর উপায়।

সহলেখক এসকুইভেল মুলবার্ট বলেন, ‘এই ফলাফল দেখায়, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে রেইন ফরেস্ট কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।’

তথ্যসূত্র: লাইভ সায়েন্স

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জাতিসংঘে নেতানিয়াহুর ভাষণের সময় ওয়াকআউট করল কোন কোন দেশ, বাংলাদেশও কি ছিল

ভারতীয় সাংবাদিকের প্রশ্নে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর জবাব ভাইরাল

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডির সঙ্গে ড. ইউনূস, পাশে মেয়ে দীনা

জুনেও যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলাম, এবার বাধা দেওয়ায় বিস্মিত হয়েছি: সোহেল তাজ

ইসরায়েলকে তুলোধুনোর পর ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট, ভিসা বাতিলের ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত