ইশতিয়াক হাসান

একটা সময় বাংলাদেশের অনেক অরণ্য-পাহাড়েই দেখা মিলত বুনো হাতিদের। এমনকি পার্বত্য চট্টগ্রাম, গারো পাহাড়ের মতো জায়গাগুলোতে খেদার মাধ্যমে বুনো হাতি ধরে পোষ মানানো হতো। এখন অল্প কিছু জঙ্গলেই আর এরা টিকে আছে। তাও থাকার জায়গার সংকট, খাবারের অভাব আর মানুষের সঙ্গে সংঘাত মিলিয়ে বিশাল আকারের এই প্রাণীরা আছে বড় বিপদে। আজ ১২ আগস্ট বিশ্ব হাতি দিবসে আমাদের দেশে বুনো হাতির অবস্থা, মানুষের সঙ্গে দ্বন্দ্ব, হাতির মুখোমুখি হওয়ার রোমাঞ্চকর গল্প ছাড়াও থাকছে হাতি নিয়ে অনেক কিছু।
হাতির খোঁজে
শুরুটা করছি ঠিক এক যুগ আগের একটি ঘটনা দিয়ে। সালটা ২০১১। হাতি দেখতে দুই বন্ধু মিশুক-মেহেদীসহ গিয়েছিলাম রাঙামাটির পাবলাখালীর অরণ্যে। এর আগে যে জায়গায় হাতি দেখতে গিয়েছি সেখানেই হাতিরা ফাঁকি দিয়েছে। রাঙামাটির কাপ্তাই মুখ খাল কিংবা বান্দরবানের দুধপুকুরিয়ার জঙ্গলে গিয়ে হাতির উপস্থিতির তাজা চিহ্ন পেয়েও এদের দেখা পাইনি। পাবলাখালী গিয়েও শুনলাম হাতি আছে রাঙ্গীপাড়ার বনে। সেখানে পৌঁছাতে হলে প্রথমে যেতে হবে মাইনি।
চটজলদি একটা ট্রলার ভাড়া করলাম। কাসালং নদী দিয়ে মাইনি যাওয়ার পথে পড়ল বন বিভাগের মাহিল্লা বিট অফিস। এটা এবং দুপারের ছড়ানো-ছিটানো গাছপালা দেখে অদ্ভুত একটা মন খারাপ করা অনুভূতি হয়। এনায়েত মাওলা ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বইয়ে মাইনি আর মাহিল্লায় বাঘ ও চিতা বাঘ শিকারের কাহিনি বর্ণনা করেছেন। অবশ্য সেটা গত শতকের মাঝামাঝি কিংবা তার কিছু পরের ঘটনা। তখন কাপ্তাই বাঁধ তৈরির কাজ চলছে। এদিকটায় পাগলা হাতি শিকারের বর্ণনাও দিয়েছেন এনায়েত মাওলা। নদীর দুই ধারে ছিল দিনেও আঁধার নামিয়ে দেওয়া অরণ্য।
বন বিভাগের মাইনি বাংলোতে বাক্স-পেটরা রেখে আবার ছুটলাম। নৌকায় করে মাইনি নদীর অন্য পাড়ে গিয়ে মোটরসাইকেল ভাড়া করলাম। মিনিট বিশেকের মধ্যে পৌঁছে গেলাম বন বিভাগের রাঙ্গীপাড়া বিট অফিসে। বিট কর্মকর্তা জানালেন, দলে ২৭-২৮টা হাতি আছে। তবে দুটি উপদলে ভাগ হয়ে একটা পাল আছে অফিসের পেছনে সেগুনবাগানে, আর বড় দলটা ৮ নম্বর নামে পরিচিত একটা জায়গায়। আমাদের সঙ্গে লম্বা, হ্যাংলা-পাতলা গড়নের এক লোক আর বন বিভাগের দুজন কর্মচারীকে দিলেন গাইড হিসেবে। ঠাঠা রোদের মধ্যে বেশ কিছুটা পথ পাড়ি দিয়ে ৮ নম্বরে পৌঁছে মিলল কেবল হাতির নাদি আর বিশাল পায়ের ছাপ।
ওই পাহাড়ে আছে হাতি
জানলাম, আমাদের সঙ্গের তালপাতার সেপাইর নাম আব্দুর রহমান। সবার কাছে রহম আলী নামেই বেশি পরিচিত। হাতির আচার-আচরণ সম্পর্কে নাকি তাঁর অগাধ জ্ঞান। আট নম্বরে হাতিদের না পেয়ে বন বিভাগের অফিসের কাছের সেগুন বাগানের দিকে রওনা হলাম। এক ছড়ার ওপরে মরা গাছের ডাল দিয়ে বানানো নড়বড়ে এক সেতু পেরিয়ে ওঠে এলাম পাহাড়ের একটা ঢালে। এখানে বেশ কিছু ছেলে জড়ো হয়েছে। আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছি তার পরে নিচু একটা জায়গা। তারপরই আবার উঁচু জমি। সবার দৃষ্টি সেদিকেই। মাঝে মাঝে এখান থেকেই কেউ কেউ হাতির ডাক নকল করে শব্দ করছে। বুঝতে বাকি রইল না ওই পাহাড়েই আছে হাতি। গাছপালার ফাঁক গলে প্রথম একটা হাতির শুঁড় নজর কাড়ল। ভালোভাবে ঠাহর করতে বোঝা গেল কয়েকটা শুয়ে, কয়েকটা দাঁড়িয়ে আছে।
হাতির মুখোমুখি
ঢুকলাম হাতির পাহাড়ে। একটু অসাবধান হলেই পায়ের নিচে মচমচ করে উঠছে শুকনো পাতা। রহম আলীর পিছু পিছু কিছুটা পথ পেরোতেই হাতিগুলোকে দেখলাম। কোনোটা শুয়ে কানোটা বসে, আমাদের দিকে পেছন ফিরে। হাতিগুলোর কাছাকাছি চলে এলাম, বড়জোর গজ পনেরো দূরে। রহম আলী আরও সামনে বাড়ল। ইশারা করতেই তার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। হাতির পালের সাত-আট গজের মধ্যে চলে এসেছি। ফুট খানিক উঁচু একটা কাটা গাছের ওপর দাঁড়ালাম। পড়ে বুঝেছিলাম এতো কাছাকাছি যাওয়াটা খুব বোকার মতো কাজ হয়ে গিয়েছিল। তিনটা হাতি একেবারে আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। চারটা বড় আর একটা বাচ্চা শুয়ে আছে। বুক ঢিপ ঢিপ করছে। পরিস্থিতি খারাপ দেখলেই দৌড় দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। একটা শুঁড় তুলল মাথার ওপর। দেখাদেখি দাঁড়ানো বাকিদুটোও। রহম আলী বলল, আপনারে সালাম দিছে। আসলে কী জন্য শুঁড় তুলেছে কে জানে! মিনিট দশেক স্থির দাঁড়িয়ে রইলাম, হাতিরাও নিশ্চল। কেবল কান নাড়ছে। আর এখানে থাকা নিরাপদ মনে করলাম না। তবে মনটা আনন্দে ভরে গেছে! শেষ পর্যন্ত বুনো হাতির সঙ্গে দেখা হলো।
এশীয় হাতি আছে যেসব দেশে
এই ভ্রমণের মূল রোমাঞ্চটাই তখনো বাকি। তবে সেটা বলার আগে একটু অন্য দিকে দৃষ্টি দেওয়া যাক। নেট ঘাঁটাঘাঁটি করে যা বুঝেছি এশীয় হাতি আছে এখন যে তেরোটি দেশে এর সবগুলোই দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। বাংলাদেশ বাদে বাকি বারোটি দেশ হলো ভারত, শ্রীলঙ্কা, কম্বোডিয়া, ভুটান, নেপাল, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, লাওস ও চীন। এই দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হাতি আছে ভারতের জঙ্গলে। ধারণা করা হয় এই ১৩টি দেশের জঙ্গলে টিকে থাকা বুনো হাতির সংখ্যা ৫০ হাজারের আশপাশে। এদের মধ্যে ২৬০০০ থেকে ২৮০০০ আছে ভারতে। আমরা সৌভাগ্যবান যে এখনো যে কটি দেশে বুনো হাতিরা আছে এর একটি আমাদের দেশ। তবে যেভাবে হাতি মৃত্যুর খবর আসছে ভয় হয়, এক সময় হয়তো আর এ দেশ থেকে যেভাবে গন্ডার, বুনো মোষের মতো প্রাণীরা হারিয়ে গেছে সেভাবে হয়তো হারিয়ে যেতে পারে হাতিরাও। তখন কেবল রূপকথা গল্পেই ওদের কথা পড়বে আমাদের শিশুরা।
পুরোনো দিনের গল্প
মাইনি বন বাংলোর ডাইনিং রুমের দেয়ালে ঝোলানো ছবিগুলো দেখলে এক লাফে ষাট-সত্তর বছর কিংবা তার চেয়েও বেশি পিছিয়ে যাবেন আপনি। হাতিসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর অনেক পুরোনো ফটোগ্রাফ চোখে পড়বে। সত্যি আগে হাতিরা কী সুন্দর দিন কাটাত।
কাপ্তাই আর কাসালং রিজার্ভে খেদার মাধ্যমে বুনো হাতি ধরার বর্ণনা আছে ইউসুফ এস আহমদের ‘উইথ দ্য ওয়াইল্ড অ্যানিমেল’স অব বেঙ্গল’ বইয়েও। এনায়েত মাওলার ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বই থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়, বিংশ শতকের মাঝামাঝির দিকে রাঙামাটির কাসালংয়ের মাইনিমুখ, মাহিল্লা, শিশক, কাপ্তাইয়ের অরণ্যে ঘটা করে খেদার আয়োজন হতো। এক একটা খেদায় ত্রিশ-চল্লিশ, এমনকি ষাট-সত্তরটি হাতিও ধরা পড়ত। ওই জঙ্গলগুলোতে যে তখন বিস্তর হাতি ঘুরে বেড়াত, তাতে সন্দেহ নেই। মাইনিতে এক বৃদ্ধ এক যুগ আগে বলেছিলেন, তরুণ বয়সে কাসালংয়ের অরণ্যে ১০০ হাতির পালও দেখেছেন। ১২ বছর আগের সেই অভিযানে আমি প্রায় ৩০টি হাতির দলের খোঁজ পেয়েছিলাম। কিন্তু ২০১৬ সালের জরিপে রাঙামাটির কাসালং, কাপ্তাই মিলিয়ে সাকল্যে ৫০ টির মতো বুনো হাতি থাকার খবর অশনিসংকেত আমাদের জন্য।
এনায়েত মাওলার ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বইয়ে গত শতকের পঞ্চাশের দশকে থানচি থেকে সাঙ্গু নদী ধরে রেমাক্রির দিকে যাওয়ার পথে মধু নামের এক জায়গায় পাগলা হাতি শিকারের বর্ণনা আছে। ওই হাতিটার ভয়ে ম্রোরা গাছের ওপর মাচা বানিয়ে থাকা শুরু করেছিল। ওই সময় রেমাক্রি নদীর তীরের বড় মোদক ও সাঙ্গু রিজার্ভে বুনো হাতির বিচরণ ছিল বেশ। তবে এখন আর ওদিকে স্থায়ী হাতির আস্তানা নেই। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) ২০১৬ সালের জরিপ বলছে সাঙ্গু রিজার্ভে ১৫-২০টি বুনো হাতি মিয়ানমারের সীমানা পেরিয়ে বেড়াতে আসে কখনো-সখনো। অবশ্য এখন ওই হাতিগুলোর কী অবস্থা কে জানে।
মধুপুর জঙ্গলেও বিচরণ ছিল বুনো হাতির। ময়মনসিংহের মহারাজারা গারো পাহাড়ে খেদার আয়োজন করতেন। অবশ্য এটি সোয়া শ বছর আগের ঘটনা! তেমনি সিলেটের লালাখালের ওদিকটাসহ আরও বিভিন্ন এলাকায় এই কয়েক দশক আগেও হাতিরা নামত ভারত থেকে। বুঝুন তাহলে, বুনো হাতির দিক থেকে মোটামুটি গর্ব করার জায়গায় ছিলাম আমরা!
হাতির তাড়া
আবার ফিরে যাই সেই ২০১১ সালে। হাতির পালের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলাম যেদিন তার পরের দিন সকালে আবার এলাম রাঙ্গীপাড়া। শুনলাম অন্য হাতিগুলো রাতে দূরের পাহাড়ে চলে গেলেও বাচ্চাসহ মা হাতি আটকা পড়েছে বন বিভাগের ওষুধি গাছের এক বাগানে। আজকেও সঙ্গী রহম আলী। বারবার মানা করা সত্ত্বেও জুটে গেছে এক দল ছেলে-ছোকরা। মনে কু গাইছে। মা হাতি খুবই বিপজ্জনক। বাচ্চাটার যে কোনো ক্ষতির আশঙ্কা দেখলে লঙ্কা কাণ্ড বাধাবে।
বাগানে ঢুকলাম রহম আলীর পিছু পিছু। গাছপালা বেশ ফাঁকা ফাঁকা হওয়ায় একটু এগোতেই বাচ্চাসহ মা হাতিটাকে দেখলাম। একপর্যায়ে মানুষের উপস্থিতিতে বিরক্ত হয়ে ক্ষেপে জোরে চিৎকার দিয়ে একটা গাছ ভাঙল প্রচণ্ড শব্দে মা হাতি। আমাদেরতো ভয়ে আত্মা শুকিয়ে গেছে। রহম আলীর ধমকে ওটা শান্ত হলো। আবারও বাচ্চা নিয়ে দূরে সরে যেতে চাইল। হাতি এক্সপার্ট রহম আলী ভুলটা করল তখনই। আবার হস্তিনীকে এদিকে ফিরাতে চাইল। আমরা তখন দাঁড়িয়ে মোটামুটি চওড়া একটা বনপথের ওপর। হঠাৎই ক্ষেপে গিয়ে দৌড়ে এই পথে উঠে এল হাতিটা। তারপর কলজে কাঁপিয়ে চিৎকার করে ছুটে আসল। রহম আলীর কণ্ঠে আতঙ্কের ছোঁয়া, বলল, ‘দৌড়ান’।
ছুটছি পাগলের মতো। বিশাল শরীর নিয়ে কীভাবে এত জোরে দৌড়াচ্ছে মা হাতি খোদা জানে। দৌড়ানোর ফাঁকে এক পায়ের স্যান্ডেল ছুটে গেল। থোড়াই কেয়ার করে ছুটলাম। এখন ভেবে হাসি পায়, আমাদের মধ্যে তুলনামূলক স্বাস্থ্যবান মিশুক ছিল দৌড়ে সবার আগে। হাতিটা আমাদের সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে ফেলেছিল, নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলাম একটা অঘটন আজ ঘটছে, তখনই হঠাৎ ঘুরে, বাচ্চার কাছে ফিরে গেল হাতিটা।
হাতি আছে বিপদে
এখন আমাদের দেশে স্থায়ী বুনো হাতি আছে কেবল পার্বত্য চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলে। ড. রেজা খান ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশের বনগুলোতে ৪০০ টির মতো স্থায়ী বন্য হাতি আছে বলে ধারণা করেছিলেন। তবে আইইউসিএনের ২০১৬ সালের জরিপে হাতির গড় সংখ্যা ২৬৮ টির মতো বলে ধারণা করা হয়েছে। অস্থায়ী হাতিগুলোর বেশির ভাগের আবাস গারো পাহাড়ের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোয়। এ ছাড়া সিলেটের লাঠিটিলা ও ভারতের জঙ্গল মিলিয়ে চারটি বুনো হাতির বিচরণের খবর মেলে।
কিন্তু ঘটনা হলো গত কয়েক বছরে কক্সবাজার ও আশপাশের বনাঞ্চলে একের পর এক হাতির অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর পাচ্ছি। এগুলোর অনেকগুলোই গুলি ও বৈদ্যুতিক ফাঁদে আটকা পড়ে। গারো পাহাড় সীমান্তবর্তী শেরপুর-জামালপুরেও হাতি-মানুষ সংঘাতে হাতি মারা পড়ছে। বন বিভাগের হিসেবে ১৯৯২ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দেশে বুনো হাতি মৃত্যুর ঘটনা ১৫১। এর মধ্যে ২০১৩ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মারা যাওয়া হাতির সংখ্যা ৮৬ টি। বিশেষ করে ২০২০ এবং ২১ এই দুই বছরে মৃত হাতির সংখ্যা ৩৬। বুঝতেই পারছেন হাতিরা মোটেই ভালো নেই।
অবশ্য হাতির আক্রমণে মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনাও কম নয়। বন বিভাগের দেওয়া তথ্যে জানা যায় ২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ২৪৮ জন মানুষ মারা গিয়েছে হাতির আক্রমণে।
এদিকে কক্সবাজারের দিকে রেল চলাচল শুরু হলেও বাড়তি সতর্কতা জরুরি। কারণ, ওই হাতিগুলোর রেলগাড়ি নামক জিনিসটির সঙ্গে পরিচয়ই নেই।
হাতি-মানুষ দ্বন্দ্ব
সত্যি বিপদে আছে হাতিরা। বন-জঙ্গল কাটা পড়ায় অনেক জায়গায় আশ্রয় হারিয়েছে। যুগের পর যুগ ধরে যে পথে হাতিরা চলাফেরা করে আসছে তার মধ্যে, চারপাশেই গড়ে উঠেছে মানুষের বসতি, খেত খামার। এ ছাড়া বনে সুযোগের অপেক্ষায় থাকে চোরা শিকারিরা। দাঁতাল হাতি এখন চোখে পড়ে একেবারে কম। এমনকি এক যুগ আগে রাঙীপাড়ার সেগুন বাগানে যে দলটি দেখেছিলাম তার মধ্যে একটাও দাঁতাল হাতি নেই।
কক্সবাজার-টেকনাফ-লামা-আলীকদম—এই জায়গাগুলোয় বেশ কয়েকটি বড় পাল ঘুরে বেড়াচ্ছে হাতিদের, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে। রোহিঙ্গা বসতির কারণে ওগুলোর চলার পথ আটকে গেছে, আবাস স্থল ধ্বংস হয়ে গেছে। আছে চরম খাবার সংকটে।
এবার একটু গারো পাহাড়ের দিকে দৃষ্টি দেওয়া যাক। মেঘালয়ের বিশাল অংশজুড়ে গারো পাহাড়। গারো পাহাড়ের মূল অংশ ভারতে, বাংলাদেশে পড়েছে ছোট কিছু টিলা। আর এই গারো পাহাড় সব সময়ই হাতির জন্য বিখ্যাত। পুরোনো দিনে গারো পাহাড় ছিল সুসঙ্গ রাজ্যের অধীনে। প্রায় তিন হাজার ৩৫৯ বর্গমাইল এলাকা নিয়ে বিস্তৃত ছিল সুসঙ্গ রাজ্য। পরে সুসঙ্গের সঙ্গে দুর্গাপুর যোগ করে নাম হয় সুসঙ্গ দুর্গাপুর। রাজধানী ছিল দুর্গাপুর।
সুসঙ্গ মুল্লুকের হাতির খবর ছিল মোগল বাদশাহর কাছেও। সুসঙ্গের রাজারা খেদার মাধ্যমে গারো পাহাড় থেকে হাতি ধরতেন। এসব হাতি বিক্রি করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করতেন। খেদায় ধরা এই হাতি নিয়ে যাওয়া হতো ঢাকায়। তখন ঢাকায়ই ছিল সরকারের খেদা অফিস। ময়মনসিংহের মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য ও রাজা জগৎকশোর আচার্যও গারো পাহাড়ে বেশ কয়েকবার খেদা পরিচালনা করেছেন।
তবে এগুলো সবই অতীত ইতিহাস। বহু বছর ধরেই স্থায়ী হাতি নেই গারো পাহাড়ের বাংলাদেশ অংশে। তবে হাতির বড় একটা দল ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে চলাফেরা করে শেরপুর-ময়মনসিংহের ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোয়। কিন্তু এই এলাকাটিকে এখন হাতি-মানুষ সংঘাত বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। হাতির আক্রমণে মারা পড়ছে মানুষ, আবার মানুষের পেতে রাখা বিদ্যুতের ফাঁদে প্রাণ যাচ্ছে হাতির। ঘটনা হলো, এই এলাকার বন-পাহাড়ে এখন হাতির প্রয়োজনীয় খাবার নেই। তাই হাতিরা নিয়মিত হানা দিচ্ছে মানুষের কৃষি জমিতে। এদিকে সীমান্তের ওই পাশের কাঁটাতারের বেড়ার কারণে হাতিদের ভারত-বাংলাদেশের বন-পাহাড়ে যাতায়াত আগের মতো সহজ নেই। সব মিলিয়ে তৈরি হয়েছে বিপজ্জনক এক পরিস্থিতি।
হাতি বাঁচাব কেন
এখন হয়তো আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে আমরা হাতি বাঁচাব কেন? উত্তরটা দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রধান ও বন্যপ্রাণী গবেষক মনিরুল খান। তিনি বলেন, ‘পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে হাতি। হাতির নাদি বা মলের সঙ্গে মাটিতে পড়া বীজের মাধ্যমে বিভিন্ন উদ্ভিদের বিস্তার ঘটে। আবার হাতি চলাফেরার কারণে ঘন জঙ্গলের গাছপালার ঠাসবুনোটের মাঝখানে যে ফাঁকা জায়গা তৈরি হয় সেখান দিয়ে সূর্যের আলো প্রবেশ করে উদ্ভিদকে পর্যাপ্ত আলো পেতে সাহায্য করে।
চাই হাতি শিশুর নিরাপদ আবাস
সেদিন তাড়া খাওয়ার পরে মা হাতিটাকে দেখেছিলাম বাচ্চাটাকে নিয়ে ছড়া পাড় হয়ে আরেকটা পাহাড়ে উঠে যাচ্চে। বাচ্চাটাকে দেখে একটা কষ্ট দানা বাঁধছিল মনে। বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না, এখনো আমার ওর কথা মনে হয়, কষ্টটা ফিরে আসে বুকে। কেমন আছে ও? হাতি গড়ে ৭০ বছর বাঁচে। সে হিসাবে ছোট্ট হাতি তো বটেই ওর মারও জঙ্গল দাপিয়ে বেড়াবার কথা! কিন্তু এখন যে পরিস্থিতি, ভয় হয়, ওই ছোট্ট হাতি, যার কিনা এখন যুবা বয়সে বন-পাহাড় শাসন করার কথা, সেই বেঁচে আছে তো?
তারপরও আশা হারাতে চাই না। হাতিদের রক্ষায় কাজ করছেন অনেকেই। বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ বলেন, হাতি অধ্যুষিত এলাকায়গুলোয় এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম (ইআরটি) গঠন করা হয়েছে। এর সদস্যরা মানুষকে হাতির আসার সংবাদ দেয়। হাতির কাছাকাছি যেতে নিরুৎসাহিত করে। এভাবে তাঁরা হাতি-মানুষ সংঘাত এড়াতে সাহায্য করে। তা ছাড়া হাতি রক্ষায় বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কমিটি করা আছে। এর সদস্যরা হাতি-মানুষ সংঘাত এড়াতে সাহায্য করে।
এই বন কর্মকর্তা আরও বলেন, সরকারিভাবে হাতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের ক্ষতিপূরণে অর্থ সাহায্য দেওয়া হয়। তা ছাড়া প্ল্যানিং কমিশনে একটি প্রজেক্ট পেশ করা হয়েছে। যেটা পাশ হলে হাতি রক্ষায় সুবিধা হবে। এর আওতায় ইআরটিদের জন্যও একটা ভাতার ব্যবস্থা করা যাবে। তেমনি হাতি অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকায় সোলার ফেন্সিংয়রে ব্যবস্থা করা হবে। এটাও হাতি রক্ষায় সাহায্য করবে।
এদিকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দিকে ট্রেন চালু হয়ে গেলে হাতিরা যেন বিপদে না পড়ে সে ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ইমরান আহমেদ বলেন, হাতি অধ্যুষিত যেসব এলাকাগুলোর ভেতর দিয়ে রেলপথ গিয়েছে সেখানে হাতি চলাচলের জন্য আন্ডার পাস ও ওভার পাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া হাতির বিচরণের ব্যাপারে আগে থেকে যেন ট্রেনে বসেই সতর্ক বার্তা পাওয়া যায় এ ব্যাপারে আধুনিক ডিভাইস স্থাপন ও সিগন্যালিং সিস্টেম চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।
বরাবরের মতো আশা নিয়েই তাই শেষ করতে চাই। আশা করি হাতিরা আবার পুরনো দিনের মতো নিরাপদে বন-পাহাড়ে ঘুরে বেড়াতে পারবে। কমে যাবে হাতি-মানুষ সংঘাত। হয়তো নিজের অজান্তেই সেই ছোট্ট হাতির সঙ্গে (যে এখন বয়সে তরুণ) দেখা হয়ে যাবে রাঙামাটির কোনো পাহাড়ে, কিংবা ছড়া বা জঙ্গলে। স্বাভাবিকভাবেই সে আমাকে চিনবেই না, আমিও তাকে চিনব না।

একটা সময় বাংলাদেশের অনেক অরণ্য-পাহাড়েই দেখা মিলত বুনো হাতিদের। এমনকি পার্বত্য চট্টগ্রাম, গারো পাহাড়ের মতো জায়গাগুলোতে খেদার মাধ্যমে বুনো হাতি ধরে পোষ মানানো হতো। এখন অল্প কিছু জঙ্গলেই আর এরা টিকে আছে। তাও থাকার জায়গার সংকট, খাবারের অভাব আর মানুষের সঙ্গে সংঘাত মিলিয়ে বিশাল আকারের এই প্রাণীরা আছে বড় বিপদে। আজ ১২ আগস্ট বিশ্ব হাতি দিবসে আমাদের দেশে বুনো হাতির অবস্থা, মানুষের সঙ্গে দ্বন্দ্ব, হাতির মুখোমুখি হওয়ার রোমাঞ্চকর গল্প ছাড়াও থাকছে হাতি নিয়ে অনেক কিছু।
হাতির খোঁজে
শুরুটা করছি ঠিক এক যুগ আগের একটি ঘটনা দিয়ে। সালটা ২০১১। হাতি দেখতে দুই বন্ধু মিশুক-মেহেদীসহ গিয়েছিলাম রাঙামাটির পাবলাখালীর অরণ্যে। এর আগে যে জায়গায় হাতি দেখতে গিয়েছি সেখানেই হাতিরা ফাঁকি দিয়েছে। রাঙামাটির কাপ্তাই মুখ খাল কিংবা বান্দরবানের দুধপুকুরিয়ার জঙ্গলে গিয়ে হাতির উপস্থিতির তাজা চিহ্ন পেয়েও এদের দেখা পাইনি। পাবলাখালী গিয়েও শুনলাম হাতি আছে রাঙ্গীপাড়ার বনে। সেখানে পৌঁছাতে হলে প্রথমে যেতে হবে মাইনি।
চটজলদি একটা ট্রলার ভাড়া করলাম। কাসালং নদী দিয়ে মাইনি যাওয়ার পথে পড়ল বন বিভাগের মাহিল্লা বিট অফিস। এটা এবং দুপারের ছড়ানো-ছিটানো গাছপালা দেখে অদ্ভুত একটা মন খারাপ করা অনুভূতি হয়। এনায়েত মাওলা ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বইয়ে মাইনি আর মাহিল্লায় বাঘ ও চিতা বাঘ শিকারের কাহিনি বর্ণনা করেছেন। অবশ্য সেটা গত শতকের মাঝামাঝি কিংবা তার কিছু পরের ঘটনা। তখন কাপ্তাই বাঁধ তৈরির কাজ চলছে। এদিকটায় পাগলা হাতি শিকারের বর্ণনাও দিয়েছেন এনায়েত মাওলা। নদীর দুই ধারে ছিল দিনেও আঁধার নামিয়ে দেওয়া অরণ্য।
বন বিভাগের মাইনি বাংলোতে বাক্স-পেটরা রেখে আবার ছুটলাম। নৌকায় করে মাইনি নদীর অন্য পাড়ে গিয়ে মোটরসাইকেল ভাড়া করলাম। মিনিট বিশেকের মধ্যে পৌঁছে গেলাম বন বিভাগের রাঙ্গীপাড়া বিট অফিসে। বিট কর্মকর্তা জানালেন, দলে ২৭-২৮টা হাতি আছে। তবে দুটি উপদলে ভাগ হয়ে একটা পাল আছে অফিসের পেছনে সেগুনবাগানে, আর বড় দলটা ৮ নম্বর নামে পরিচিত একটা জায়গায়। আমাদের সঙ্গে লম্বা, হ্যাংলা-পাতলা গড়নের এক লোক আর বন বিভাগের দুজন কর্মচারীকে দিলেন গাইড হিসেবে। ঠাঠা রোদের মধ্যে বেশ কিছুটা পথ পাড়ি দিয়ে ৮ নম্বরে পৌঁছে মিলল কেবল হাতির নাদি আর বিশাল পায়ের ছাপ।
ওই পাহাড়ে আছে হাতি
জানলাম, আমাদের সঙ্গের তালপাতার সেপাইর নাম আব্দুর রহমান। সবার কাছে রহম আলী নামেই বেশি পরিচিত। হাতির আচার-আচরণ সম্পর্কে নাকি তাঁর অগাধ জ্ঞান। আট নম্বরে হাতিদের না পেয়ে বন বিভাগের অফিসের কাছের সেগুন বাগানের দিকে রওনা হলাম। এক ছড়ার ওপরে মরা গাছের ডাল দিয়ে বানানো নড়বড়ে এক সেতু পেরিয়ে ওঠে এলাম পাহাড়ের একটা ঢালে। এখানে বেশ কিছু ছেলে জড়ো হয়েছে। আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছি তার পরে নিচু একটা জায়গা। তারপরই আবার উঁচু জমি। সবার দৃষ্টি সেদিকেই। মাঝে মাঝে এখান থেকেই কেউ কেউ হাতির ডাক নকল করে শব্দ করছে। বুঝতে বাকি রইল না ওই পাহাড়েই আছে হাতি। গাছপালার ফাঁক গলে প্রথম একটা হাতির শুঁড় নজর কাড়ল। ভালোভাবে ঠাহর করতে বোঝা গেল কয়েকটা শুয়ে, কয়েকটা দাঁড়িয়ে আছে।
হাতির মুখোমুখি
ঢুকলাম হাতির পাহাড়ে। একটু অসাবধান হলেই পায়ের নিচে মচমচ করে উঠছে শুকনো পাতা। রহম আলীর পিছু পিছু কিছুটা পথ পেরোতেই হাতিগুলোকে দেখলাম। কোনোটা শুয়ে কানোটা বসে, আমাদের দিকে পেছন ফিরে। হাতিগুলোর কাছাকাছি চলে এলাম, বড়জোর গজ পনেরো দূরে। রহম আলী আরও সামনে বাড়ল। ইশারা করতেই তার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। হাতির পালের সাত-আট গজের মধ্যে চলে এসেছি। ফুট খানিক উঁচু একটা কাটা গাছের ওপর দাঁড়ালাম। পড়ে বুঝেছিলাম এতো কাছাকাছি যাওয়াটা খুব বোকার মতো কাজ হয়ে গিয়েছিল। তিনটা হাতি একেবারে আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। চারটা বড় আর একটা বাচ্চা শুয়ে আছে। বুক ঢিপ ঢিপ করছে। পরিস্থিতি খারাপ দেখলেই দৌড় দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। একটা শুঁড় তুলল মাথার ওপর। দেখাদেখি দাঁড়ানো বাকিদুটোও। রহম আলী বলল, আপনারে সালাম দিছে। আসলে কী জন্য শুঁড় তুলেছে কে জানে! মিনিট দশেক স্থির দাঁড়িয়ে রইলাম, হাতিরাও নিশ্চল। কেবল কান নাড়ছে। আর এখানে থাকা নিরাপদ মনে করলাম না। তবে মনটা আনন্দে ভরে গেছে! শেষ পর্যন্ত বুনো হাতির সঙ্গে দেখা হলো।
এশীয় হাতি আছে যেসব দেশে
এই ভ্রমণের মূল রোমাঞ্চটাই তখনো বাকি। তবে সেটা বলার আগে একটু অন্য দিকে দৃষ্টি দেওয়া যাক। নেট ঘাঁটাঘাঁটি করে যা বুঝেছি এশীয় হাতি আছে এখন যে তেরোটি দেশে এর সবগুলোই দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। বাংলাদেশ বাদে বাকি বারোটি দেশ হলো ভারত, শ্রীলঙ্কা, কম্বোডিয়া, ভুটান, নেপাল, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, লাওস ও চীন। এই দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হাতি আছে ভারতের জঙ্গলে। ধারণা করা হয় এই ১৩টি দেশের জঙ্গলে টিকে থাকা বুনো হাতির সংখ্যা ৫০ হাজারের আশপাশে। এদের মধ্যে ২৬০০০ থেকে ২৮০০০ আছে ভারতে। আমরা সৌভাগ্যবান যে এখনো যে কটি দেশে বুনো হাতিরা আছে এর একটি আমাদের দেশ। তবে যেভাবে হাতি মৃত্যুর খবর আসছে ভয় হয়, এক সময় হয়তো আর এ দেশ থেকে যেভাবে গন্ডার, বুনো মোষের মতো প্রাণীরা হারিয়ে গেছে সেভাবে হয়তো হারিয়ে যেতে পারে হাতিরাও। তখন কেবল রূপকথা গল্পেই ওদের কথা পড়বে আমাদের শিশুরা।
পুরোনো দিনের গল্প
মাইনি বন বাংলোর ডাইনিং রুমের দেয়ালে ঝোলানো ছবিগুলো দেখলে এক লাফে ষাট-সত্তর বছর কিংবা তার চেয়েও বেশি পিছিয়ে যাবেন আপনি। হাতিসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর অনেক পুরোনো ফটোগ্রাফ চোখে পড়বে। সত্যি আগে হাতিরা কী সুন্দর দিন কাটাত।
কাপ্তাই আর কাসালং রিজার্ভে খেদার মাধ্যমে বুনো হাতি ধরার বর্ণনা আছে ইউসুফ এস আহমদের ‘উইথ দ্য ওয়াইল্ড অ্যানিমেল’স অব বেঙ্গল’ বইয়েও। এনায়েত মাওলার ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বই থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়, বিংশ শতকের মাঝামাঝির দিকে রাঙামাটির কাসালংয়ের মাইনিমুখ, মাহিল্লা, শিশক, কাপ্তাইয়ের অরণ্যে ঘটা করে খেদার আয়োজন হতো। এক একটা খেদায় ত্রিশ-চল্লিশ, এমনকি ষাট-সত্তরটি হাতিও ধরা পড়ত। ওই জঙ্গলগুলোতে যে তখন বিস্তর হাতি ঘুরে বেড়াত, তাতে সন্দেহ নেই। মাইনিতে এক বৃদ্ধ এক যুগ আগে বলেছিলেন, তরুণ বয়সে কাসালংয়ের অরণ্যে ১০০ হাতির পালও দেখেছেন। ১২ বছর আগের সেই অভিযানে আমি প্রায় ৩০টি হাতির দলের খোঁজ পেয়েছিলাম। কিন্তু ২০১৬ সালের জরিপে রাঙামাটির কাসালং, কাপ্তাই মিলিয়ে সাকল্যে ৫০ টির মতো বুনো হাতি থাকার খবর অশনিসংকেত আমাদের জন্য।
এনায়েত মাওলার ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বইয়ে গত শতকের পঞ্চাশের দশকে থানচি থেকে সাঙ্গু নদী ধরে রেমাক্রির দিকে যাওয়ার পথে মধু নামের এক জায়গায় পাগলা হাতি শিকারের বর্ণনা আছে। ওই হাতিটার ভয়ে ম্রোরা গাছের ওপর মাচা বানিয়ে থাকা শুরু করেছিল। ওই সময় রেমাক্রি নদীর তীরের বড় মোদক ও সাঙ্গু রিজার্ভে বুনো হাতির বিচরণ ছিল বেশ। তবে এখন আর ওদিকে স্থায়ী হাতির আস্তানা নেই। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) ২০১৬ সালের জরিপ বলছে সাঙ্গু রিজার্ভে ১৫-২০টি বুনো হাতি মিয়ানমারের সীমানা পেরিয়ে বেড়াতে আসে কখনো-সখনো। অবশ্য এখন ওই হাতিগুলোর কী অবস্থা কে জানে।
মধুপুর জঙ্গলেও বিচরণ ছিল বুনো হাতির। ময়মনসিংহের মহারাজারা গারো পাহাড়ে খেদার আয়োজন করতেন। অবশ্য এটি সোয়া শ বছর আগের ঘটনা! তেমনি সিলেটের লালাখালের ওদিকটাসহ আরও বিভিন্ন এলাকায় এই কয়েক দশক আগেও হাতিরা নামত ভারত থেকে। বুঝুন তাহলে, বুনো হাতির দিক থেকে মোটামুটি গর্ব করার জায়গায় ছিলাম আমরা!
হাতির তাড়া
আবার ফিরে যাই সেই ২০১১ সালে। হাতির পালের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলাম যেদিন তার পরের দিন সকালে আবার এলাম রাঙ্গীপাড়া। শুনলাম অন্য হাতিগুলো রাতে দূরের পাহাড়ে চলে গেলেও বাচ্চাসহ মা হাতি আটকা পড়েছে বন বিভাগের ওষুধি গাছের এক বাগানে। আজকেও সঙ্গী রহম আলী। বারবার মানা করা সত্ত্বেও জুটে গেছে এক দল ছেলে-ছোকরা। মনে কু গাইছে। মা হাতি খুবই বিপজ্জনক। বাচ্চাটার যে কোনো ক্ষতির আশঙ্কা দেখলে লঙ্কা কাণ্ড বাধাবে।
বাগানে ঢুকলাম রহম আলীর পিছু পিছু। গাছপালা বেশ ফাঁকা ফাঁকা হওয়ায় একটু এগোতেই বাচ্চাসহ মা হাতিটাকে দেখলাম। একপর্যায়ে মানুষের উপস্থিতিতে বিরক্ত হয়ে ক্ষেপে জোরে চিৎকার দিয়ে একটা গাছ ভাঙল প্রচণ্ড শব্দে মা হাতি। আমাদেরতো ভয়ে আত্মা শুকিয়ে গেছে। রহম আলীর ধমকে ওটা শান্ত হলো। আবারও বাচ্চা নিয়ে দূরে সরে যেতে চাইল। হাতি এক্সপার্ট রহম আলী ভুলটা করল তখনই। আবার হস্তিনীকে এদিকে ফিরাতে চাইল। আমরা তখন দাঁড়িয়ে মোটামুটি চওড়া একটা বনপথের ওপর। হঠাৎই ক্ষেপে গিয়ে দৌড়ে এই পথে উঠে এল হাতিটা। তারপর কলজে কাঁপিয়ে চিৎকার করে ছুটে আসল। রহম আলীর কণ্ঠে আতঙ্কের ছোঁয়া, বলল, ‘দৌড়ান’।
ছুটছি পাগলের মতো। বিশাল শরীর নিয়ে কীভাবে এত জোরে দৌড়াচ্ছে মা হাতি খোদা জানে। দৌড়ানোর ফাঁকে এক পায়ের স্যান্ডেল ছুটে গেল। থোড়াই কেয়ার করে ছুটলাম। এখন ভেবে হাসি পায়, আমাদের মধ্যে তুলনামূলক স্বাস্থ্যবান মিশুক ছিল দৌড়ে সবার আগে। হাতিটা আমাদের সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে ফেলেছিল, নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলাম একটা অঘটন আজ ঘটছে, তখনই হঠাৎ ঘুরে, বাচ্চার কাছে ফিরে গেল হাতিটা।
হাতি আছে বিপদে
এখন আমাদের দেশে স্থায়ী বুনো হাতি আছে কেবল পার্বত্য চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলে। ড. রেজা খান ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশের বনগুলোতে ৪০০ টির মতো স্থায়ী বন্য হাতি আছে বলে ধারণা করেছিলেন। তবে আইইউসিএনের ২০১৬ সালের জরিপে হাতির গড় সংখ্যা ২৬৮ টির মতো বলে ধারণা করা হয়েছে। অস্থায়ী হাতিগুলোর বেশির ভাগের আবাস গারো পাহাড়ের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোয়। এ ছাড়া সিলেটের লাঠিটিলা ও ভারতের জঙ্গল মিলিয়ে চারটি বুনো হাতির বিচরণের খবর মেলে।
কিন্তু ঘটনা হলো গত কয়েক বছরে কক্সবাজার ও আশপাশের বনাঞ্চলে একের পর এক হাতির অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর পাচ্ছি। এগুলোর অনেকগুলোই গুলি ও বৈদ্যুতিক ফাঁদে আটকা পড়ে। গারো পাহাড় সীমান্তবর্তী শেরপুর-জামালপুরেও হাতি-মানুষ সংঘাতে হাতি মারা পড়ছে। বন বিভাগের হিসেবে ১৯৯২ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দেশে বুনো হাতি মৃত্যুর ঘটনা ১৫১। এর মধ্যে ২০১৩ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মারা যাওয়া হাতির সংখ্যা ৮৬ টি। বিশেষ করে ২০২০ এবং ২১ এই দুই বছরে মৃত হাতির সংখ্যা ৩৬। বুঝতেই পারছেন হাতিরা মোটেই ভালো নেই।
অবশ্য হাতির আক্রমণে মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনাও কম নয়। বন বিভাগের দেওয়া তথ্যে জানা যায় ২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ২৪৮ জন মানুষ মারা গিয়েছে হাতির আক্রমণে।
এদিকে কক্সবাজারের দিকে রেল চলাচল শুরু হলেও বাড়তি সতর্কতা জরুরি। কারণ, ওই হাতিগুলোর রেলগাড়ি নামক জিনিসটির সঙ্গে পরিচয়ই নেই।
হাতি-মানুষ দ্বন্দ্ব
সত্যি বিপদে আছে হাতিরা। বন-জঙ্গল কাটা পড়ায় অনেক জায়গায় আশ্রয় হারিয়েছে। যুগের পর যুগ ধরে যে পথে হাতিরা চলাফেরা করে আসছে তার মধ্যে, চারপাশেই গড়ে উঠেছে মানুষের বসতি, খেত খামার। এ ছাড়া বনে সুযোগের অপেক্ষায় থাকে চোরা শিকারিরা। দাঁতাল হাতি এখন চোখে পড়ে একেবারে কম। এমনকি এক যুগ আগে রাঙীপাড়ার সেগুন বাগানে যে দলটি দেখেছিলাম তার মধ্যে একটাও দাঁতাল হাতি নেই।
কক্সবাজার-টেকনাফ-লামা-আলীকদম—এই জায়গাগুলোয় বেশ কয়েকটি বড় পাল ঘুরে বেড়াচ্ছে হাতিদের, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে। রোহিঙ্গা বসতির কারণে ওগুলোর চলার পথ আটকে গেছে, আবাস স্থল ধ্বংস হয়ে গেছে। আছে চরম খাবার সংকটে।
এবার একটু গারো পাহাড়ের দিকে দৃষ্টি দেওয়া যাক। মেঘালয়ের বিশাল অংশজুড়ে গারো পাহাড়। গারো পাহাড়ের মূল অংশ ভারতে, বাংলাদেশে পড়েছে ছোট কিছু টিলা। আর এই গারো পাহাড় সব সময়ই হাতির জন্য বিখ্যাত। পুরোনো দিনে গারো পাহাড় ছিল সুসঙ্গ রাজ্যের অধীনে। প্রায় তিন হাজার ৩৫৯ বর্গমাইল এলাকা নিয়ে বিস্তৃত ছিল সুসঙ্গ রাজ্য। পরে সুসঙ্গের সঙ্গে দুর্গাপুর যোগ করে নাম হয় সুসঙ্গ দুর্গাপুর। রাজধানী ছিল দুর্গাপুর।
সুসঙ্গ মুল্লুকের হাতির খবর ছিল মোগল বাদশাহর কাছেও। সুসঙ্গের রাজারা খেদার মাধ্যমে গারো পাহাড় থেকে হাতি ধরতেন। এসব হাতি বিক্রি করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করতেন। খেদায় ধরা এই হাতি নিয়ে যাওয়া হতো ঢাকায়। তখন ঢাকায়ই ছিল সরকারের খেদা অফিস। ময়মনসিংহের মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য ও রাজা জগৎকশোর আচার্যও গারো পাহাড়ে বেশ কয়েকবার খেদা পরিচালনা করেছেন।
তবে এগুলো সবই অতীত ইতিহাস। বহু বছর ধরেই স্থায়ী হাতি নেই গারো পাহাড়ের বাংলাদেশ অংশে। তবে হাতির বড় একটা দল ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে চলাফেরা করে শেরপুর-ময়মনসিংহের ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোয়। কিন্তু এই এলাকাটিকে এখন হাতি-মানুষ সংঘাত বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। হাতির আক্রমণে মারা পড়ছে মানুষ, আবার মানুষের পেতে রাখা বিদ্যুতের ফাঁদে প্রাণ যাচ্ছে হাতির। ঘটনা হলো, এই এলাকার বন-পাহাড়ে এখন হাতির প্রয়োজনীয় খাবার নেই। তাই হাতিরা নিয়মিত হানা দিচ্ছে মানুষের কৃষি জমিতে। এদিকে সীমান্তের ওই পাশের কাঁটাতারের বেড়ার কারণে হাতিদের ভারত-বাংলাদেশের বন-পাহাড়ে যাতায়াত আগের মতো সহজ নেই। সব মিলিয়ে তৈরি হয়েছে বিপজ্জনক এক পরিস্থিতি।
হাতি বাঁচাব কেন
এখন হয়তো আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে আমরা হাতি বাঁচাব কেন? উত্তরটা দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রধান ও বন্যপ্রাণী গবেষক মনিরুল খান। তিনি বলেন, ‘পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে হাতি। হাতির নাদি বা মলের সঙ্গে মাটিতে পড়া বীজের মাধ্যমে বিভিন্ন উদ্ভিদের বিস্তার ঘটে। আবার হাতি চলাফেরার কারণে ঘন জঙ্গলের গাছপালার ঠাসবুনোটের মাঝখানে যে ফাঁকা জায়গা তৈরি হয় সেখান দিয়ে সূর্যের আলো প্রবেশ করে উদ্ভিদকে পর্যাপ্ত আলো পেতে সাহায্য করে।
চাই হাতি শিশুর নিরাপদ আবাস
সেদিন তাড়া খাওয়ার পরে মা হাতিটাকে দেখেছিলাম বাচ্চাটাকে নিয়ে ছড়া পাড় হয়ে আরেকটা পাহাড়ে উঠে যাচ্চে। বাচ্চাটাকে দেখে একটা কষ্ট দানা বাঁধছিল মনে। বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না, এখনো আমার ওর কথা মনে হয়, কষ্টটা ফিরে আসে বুকে। কেমন আছে ও? হাতি গড়ে ৭০ বছর বাঁচে। সে হিসাবে ছোট্ট হাতি তো বটেই ওর মারও জঙ্গল দাপিয়ে বেড়াবার কথা! কিন্তু এখন যে পরিস্থিতি, ভয় হয়, ওই ছোট্ট হাতি, যার কিনা এখন যুবা বয়সে বন-পাহাড় শাসন করার কথা, সেই বেঁচে আছে তো?
তারপরও আশা হারাতে চাই না। হাতিদের রক্ষায় কাজ করছেন অনেকেই। বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ বলেন, হাতি অধ্যুষিত এলাকায়গুলোয় এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম (ইআরটি) গঠন করা হয়েছে। এর সদস্যরা মানুষকে হাতির আসার সংবাদ দেয়। হাতির কাছাকাছি যেতে নিরুৎসাহিত করে। এভাবে তাঁরা হাতি-মানুষ সংঘাত এড়াতে সাহায্য করে। তা ছাড়া হাতি রক্ষায় বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কমিটি করা আছে। এর সদস্যরা হাতি-মানুষ সংঘাত এড়াতে সাহায্য করে।
এই বন কর্মকর্তা আরও বলেন, সরকারিভাবে হাতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের ক্ষতিপূরণে অর্থ সাহায্য দেওয়া হয়। তা ছাড়া প্ল্যানিং কমিশনে একটি প্রজেক্ট পেশ করা হয়েছে। যেটা পাশ হলে হাতি রক্ষায় সুবিধা হবে। এর আওতায় ইআরটিদের জন্যও একটা ভাতার ব্যবস্থা করা যাবে। তেমনি হাতি অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকায় সোলার ফেন্সিংয়রে ব্যবস্থা করা হবে। এটাও হাতি রক্ষায় সাহায্য করবে।
এদিকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দিকে ট্রেন চালু হয়ে গেলে হাতিরা যেন বিপদে না পড়ে সে ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ইমরান আহমেদ বলেন, হাতি অধ্যুষিত যেসব এলাকাগুলোর ভেতর দিয়ে রেলপথ গিয়েছে সেখানে হাতি চলাচলের জন্য আন্ডার পাস ও ওভার পাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া হাতির বিচরণের ব্যাপারে আগে থেকে যেন ট্রেনে বসেই সতর্ক বার্তা পাওয়া যায় এ ব্যাপারে আধুনিক ডিভাইস স্থাপন ও সিগন্যালিং সিস্টেম চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।
বরাবরের মতো আশা নিয়েই তাই শেষ করতে চাই। আশা করি হাতিরা আবার পুরনো দিনের মতো নিরাপদে বন-পাহাড়ে ঘুরে বেড়াতে পারবে। কমে যাবে হাতি-মানুষ সংঘাত। হয়তো নিজের অজান্তেই সেই ছোট্ট হাতির সঙ্গে (যে এখন বয়সে তরুণ) দেখা হয়ে যাবে রাঙামাটির কোনো পাহাড়ে, কিংবা ছড়া বা জঙ্গলে। স্বাভাবিকভাবেই সে আমাকে চিনবেই না, আমিও তাকে চিনব না।
ইশতিয়াক হাসান

একটা সময় বাংলাদেশের অনেক অরণ্য-পাহাড়েই দেখা মিলত বুনো হাতিদের। এমনকি পার্বত্য চট্টগ্রাম, গারো পাহাড়ের মতো জায়গাগুলোতে খেদার মাধ্যমে বুনো হাতি ধরে পোষ মানানো হতো। এখন অল্প কিছু জঙ্গলেই আর এরা টিকে আছে। তাও থাকার জায়গার সংকট, খাবারের অভাব আর মানুষের সঙ্গে সংঘাত মিলিয়ে বিশাল আকারের এই প্রাণীরা আছে বড় বিপদে। আজ ১২ আগস্ট বিশ্ব হাতি দিবসে আমাদের দেশে বুনো হাতির অবস্থা, মানুষের সঙ্গে দ্বন্দ্ব, হাতির মুখোমুখি হওয়ার রোমাঞ্চকর গল্প ছাড়াও থাকছে হাতি নিয়ে অনেক কিছু।
হাতির খোঁজে
শুরুটা করছি ঠিক এক যুগ আগের একটি ঘটনা দিয়ে। সালটা ২০১১। হাতি দেখতে দুই বন্ধু মিশুক-মেহেদীসহ গিয়েছিলাম রাঙামাটির পাবলাখালীর অরণ্যে। এর আগে যে জায়গায় হাতি দেখতে গিয়েছি সেখানেই হাতিরা ফাঁকি দিয়েছে। রাঙামাটির কাপ্তাই মুখ খাল কিংবা বান্দরবানের দুধপুকুরিয়ার জঙ্গলে গিয়ে হাতির উপস্থিতির তাজা চিহ্ন পেয়েও এদের দেখা পাইনি। পাবলাখালী গিয়েও শুনলাম হাতি আছে রাঙ্গীপাড়ার বনে। সেখানে পৌঁছাতে হলে প্রথমে যেতে হবে মাইনি।
চটজলদি একটা ট্রলার ভাড়া করলাম। কাসালং নদী দিয়ে মাইনি যাওয়ার পথে পড়ল বন বিভাগের মাহিল্লা বিট অফিস। এটা এবং দুপারের ছড়ানো-ছিটানো গাছপালা দেখে অদ্ভুত একটা মন খারাপ করা অনুভূতি হয়। এনায়েত মাওলা ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বইয়ে মাইনি আর মাহিল্লায় বাঘ ও চিতা বাঘ শিকারের কাহিনি বর্ণনা করেছেন। অবশ্য সেটা গত শতকের মাঝামাঝি কিংবা তার কিছু পরের ঘটনা। তখন কাপ্তাই বাঁধ তৈরির কাজ চলছে। এদিকটায় পাগলা হাতি শিকারের বর্ণনাও দিয়েছেন এনায়েত মাওলা। নদীর দুই ধারে ছিল দিনেও আঁধার নামিয়ে দেওয়া অরণ্য।
বন বিভাগের মাইনি বাংলোতে বাক্স-পেটরা রেখে আবার ছুটলাম। নৌকায় করে মাইনি নদীর অন্য পাড়ে গিয়ে মোটরসাইকেল ভাড়া করলাম। মিনিট বিশেকের মধ্যে পৌঁছে গেলাম বন বিভাগের রাঙ্গীপাড়া বিট অফিসে। বিট কর্মকর্তা জানালেন, দলে ২৭-২৮টা হাতি আছে। তবে দুটি উপদলে ভাগ হয়ে একটা পাল আছে অফিসের পেছনে সেগুনবাগানে, আর বড় দলটা ৮ নম্বর নামে পরিচিত একটা জায়গায়। আমাদের সঙ্গে লম্বা, হ্যাংলা-পাতলা গড়নের এক লোক আর বন বিভাগের দুজন কর্মচারীকে দিলেন গাইড হিসেবে। ঠাঠা রোদের মধ্যে বেশ কিছুটা পথ পাড়ি দিয়ে ৮ নম্বরে পৌঁছে মিলল কেবল হাতির নাদি আর বিশাল পায়ের ছাপ।
ওই পাহাড়ে আছে হাতি
জানলাম, আমাদের সঙ্গের তালপাতার সেপাইর নাম আব্দুর রহমান। সবার কাছে রহম আলী নামেই বেশি পরিচিত। হাতির আচার-আচরণ সম্পর্কে নাকি তাঁর অগাধ জ্ঞান। আট নম্বরে হাতিদের না পেয়ে বন বিভাগের অফিসের কাছের সেগুন বাগানের দিকে রওনা হলাম। এক ছড়ার ওপরে মরা গাছের ডাল দিয়ে বানানো নড়বড়ে এক সেতু পেরিয়ে ওঠে এলাম পাহাড়ের একটা ঢালে। এখানে বেশ কিছু ছেলে জড়ো হয়েছে। আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছি তার পরে নিচু একটা জায়গা। তারপরই আবার উঁচু জমি। সবার দৃষ্টি সেদিকেই। মাঝে মাঝে এখান থেকেই কেউ কেউ হাতির ডাক নকল করে শব্দ করছে। বুঝতে বাকি রইল না ওই পাহাড়েই আছে হাতি। গাছপালার ফাঁক গলে প্রথম একটা হাতির শুঁড় নজর কাড়ল। ভালোভাবে ঠাহর করতে বোঝা গেল কয়েকটা শুয়ে, কয়েকটা দাঁড়িয়ে আছে।
হাতির মুখোমুখি
ঢুকলাম হাতির পাহাড়ে। একটু অসাবধান হলেই পায়ের নিচে মচমচ করে উঠছে শুকনো পাতা। রহম আলীর পিছু পিছু কিছুটা পথ পেরোতেই হাতিগুলোকে দেখলাম। কোনোটা শুয়ে কানোটা বসে, আমাদের দিকে পেছন ফিরে। হাতিগুলোর কাছাকাছি চলে এলাম, বড়জোর গজ পনেরো দূরে। রহম আলী আরও সামনে বাড়ল। ইশারা করতেই তার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। হাতির পালের সাত-আট গজের মধ্যে চলে এসেছি। ফুট খানিক উঁচু একটা কাটা গাছের ওপর দাঁড়ালাম। পড়ে বুঝেছিলাম এতো কাছাকাছি যাওয়াটা খুব বোকার মতো কাজ হয়ে গিয়েছিল। তিনটা হাতি একেবারে আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। চারটা বড় আর একটা বাচ্চা শুয়ে আছে। বুক ঢিপ ঢিপ করছে। পরিস্থিতি খারাপ দেখলেই দৌড় দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। একটা শুঁড় তুলল মাথার ওপর। দেখাদেখি দাঁড়ানো বাকিদুটোও। রহম আলী বলল, আপনারে সালাম দিছে। আসলে কী জন্য শুঁড় তুলেছে কে জানে! মিনিট দশেক স্থির দাঁড়িয়ে রইলাম, হাতিরাও নিশ্চল। কেবল কান নাড়ছে। আর এখানে থাকা নিরাপদ মনে করলাম না। তবে মনটা আনন্দে ভরে গেছে! শেষ পর্যন্ত বুনো হাতির সঙ্গে দেখা হলো।
এশীয় হাতি আছে যেসব দেশে
এই ভ্রমণের মূল রোমাঞ্চটাই তখনো বাকি। তবে সেটা বলার আগে একটু অন্য দিকে দৃষ্টি দেওয়া যাক। নেট ঘাঁটাঘাঁটি করে যা বুঝেছি এশীয় হাতি আছে এখন যে তেরোটি দেশে এর সবগুলোই দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। বাংলাদেশ বাদে বাকি বারোটি দেশ হলো ভারত, শ্রীলঙ্কা, কম্বোডিয়া, ভুটান, নেপাল, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, লাওস ও চীন। এই দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হাতি আছে ভারতের জঙ্গলে। ধারণা করা হয় এই ১৩টি দেশের জঙ্গলে টিকে থাকা বুনো হাতির সংখ্যা ৫০ হাজারের আশপাশে। এদের মধ্যে ২৬০০০ থেকে ২৮০০০ আছে ভারতে। আমরা সৌভাগ্যবান যে এখনো যে কটি দেশে বুনো হাতিরা আছে এর একটি আমাদের দেশ। তবে যেভাবে হাতি মৃত্যুর খবর আসছে ভয় হয়, এক সময় হয়তো আর এ দেশ থেকে যেভাবে গন্ডার, বুনো মোষের মতো প্রাণীরা হারিয়ে গেছে সেভাবে হয়তো হারিয়ে যেতে পারে হাতিরাও। তখন কেবল রূপকথা গল্পেই ওদের কথা পড়বে আমাদের শিশুরা।
পুরোনো দিনের গল্প
মাইনি বন বাংলোর ডাইনিং রুমের দেয়ালে ঝোলানো ছবিগুলো দেখলে এক লাফে ষাট-সত্তর বছর কিংবা তার চেয়েও বেশি পিছিয়ে যাবেন আপনি। হাতিসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর অনেক পুরোনো ফটোগ্রাফ চোখে পড়বে। সত্যি আগে হাতিরা কী সুন্দর দিন কাটাত।
কাপ্তাই আর কাসালং রিজার্ভে খেদার মাধ্যমে বুনো হাতি ধরার বর্ণনা আছে ইউসুফ এস আহমদের ‘উইথ দ্য ওয়াইল্ড অ্যানিমেল’স অব বেঙ্গল’ বইয়েও। এনায়েত মাওলার ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বই থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়, বিংশ শতকের মাঝামাঝির দিকে রাঙামাটির কাসালংয়ের মাইনিমুখ, মাহিল্লা, শিশক, কাপ্তাইয়ের অরণ্যে ঘটা করে খেদার আয়োজন হতো। এক একটা খেদায় ত্রিশ-চল্লিশ, এমনকি ষাট-সত্তরটি হাতিও ধরা পড়ত। ওই জঙ্গলগুলোতে যে তখন বিস্তর হাতি ঘুরে বেড়াত, তাতে সন্দেহ নেই। মাইনিতে এক বৃদ্ধ এক যুগ আগে বলেছিলেন, তরুণ বয়সে কাসালংয়ের অরণ্যে ১০০ হাতির পালও দেখেছেন। ১২ বছর আগের সেই অভিযানে আমি প্রায় ৩০টি হাতির দলের খোঁজ পেয়েছিলাম। কিন্তু ২০১৬ সালের জরিপে রাঙামাটির কাসালং, কাপ্তাই মিলিয়ে সাকল্যে ৫০ টির মতো বুনো হাতি থাকার খবর অশনিসংকেত আমাদের জন্য।
এনায়েত মাওলার ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বইয়ে গত শতকের পঞ্চাশের দশকে থানচি থেকে সাঙ্গু নদী ধরে রেমাক্রির দিকে যাওয়ার পথে মধু নামের এক জায়গায় পাগলা হাতি শিকারের বর্ণনা আছে। ওই হাতিটার ভয়ে ম্রোরা গাছের ওপর মাচা বানিয়ে থাকা শুরু করেছিল। ওই সময় রেমাক্রি নদীর তীরের বড় মোদক ও সাঙ্গু রিজার্ভে বুনো হাতির বিচরণ ছিল বেশ। তবে এখন আর ওদিকে স্থায়ী হাতির আস্তানা নেই। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) ২০১৬ সালের জরিপ বলছে সাঙ্গু রিজার্ভে ১৫-২০টি বুনো হাতি মিয়ানমারের সীমানা পেরিয়ে বেড়াতে আসে কখনো-সখনো। অবশ্য এখন ওই হাতিগুলোর কী অবস্থা কে জানে।
মধুপুর জঙ্গলেও বিচরণ ছিল বুনো হাতির। ময়মনসিংহের মহারাজারা গারো পাহাড়ে খেদার আয়োজন করতেন। অবশ্য এটি সোয়া শ বছর আগের ঘটনা! তেমনি সিলেটের লালাখালের ওদিকটাসহ আরও বিভিন্ন এলাকায় এই কয়েক দশক আগেও হাতিরা নামত ভারত থেকে। বুঝুন তাহলে, বুনো হাতির দিক থেকে মোটামুটি গর্ব করার জায়গায় ছিলাম আমরা!
হাতির তাড়া
আবার ফিরে যাই সেই ২০১১ সালে। হাতির পালের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলাম যেদিন তার পরের দিন সকালে আবার এলাম রাঙ্গীপাড়া। শুনলাম অন্য হাতিগুলো রাতে দূরের পাহাড়ে চলে গেলেও বাচ্চাসহ মা হাতি আটকা পড়েছে বন বিভাগের ওষুধি গাছের এক বাগানে। আজকেও সঙ্গী রহম আলী। বারবার মানা করা সত্ত্বেও জুটে গেছে এক দল ছেলে-ছোকরা। মনে কু গাইছে। মা হাতি খুবই বিপজ্জনক। বাচ্চাটার যে কোনো ক্ষতির আশঙ্কা দেখলে লঙ্কা কাণ্ড বাধাবে।
বাগানে ঢুকলাম রহম আলীর পিছু পিছু। গাছপালা বেশ ফাঁকা ফাঁকা হওয়ায় একটু এগোতেই বাচ্চাসহ মা হাতিটাকে দেখলাম। একপর্যায়ে মানুষের উপস্থিতিতে বিরক্ত হয়ে ক্ষেপে জোরে চিৎকার দিয়ে একটা গাছ ভাঙল প্রচণ্ড শব্দে মা হাতি। আমাদেরতো ভয়ে আত্মা শুকিয়ে গেছে। রহম আলীর ধমকে ওটা শান্ত হলো। আবারও বাচ্চা নিয়ে দূরে সরে যেতে চাইল। হাতি এক্সপার্ট রহম আলী ভুলটা করল তখনই। আবার হস্তিনীকে এদিকে ফিরাতে চাইল। আমরা তখন দাঁড়িয়ে মোটামুটি চওড়া একটা বনপথের ওপর। হঠাৎই ক্ষেপে গিয়ে দৌড়ে এই পথে উঠে এল হাতিটা। তারপর কলজে কাঁপিয়ে চিৎকার করে ছুটে আসল। রহম আলীর কণ্ঠে আতঙ্কের ছোঁয়া, বলল, ‘দৌড়ান’।
ছুটছি পাগলের মতো। বিশাল শরীর নিয়ে কীভাবে এত জোরে দৌড়াচ্ছে মা হাতি খোদা জানে। দৌড়ানোর ফাঁকে এক পায়ের স্যান্ডেল ছুটে গেল। থোড়াই কেয়ার করে ছুটলাম। এখন ভেবে হাসি পায়, আমাদের মধ্যে তুলনামূলক স্বাস্থ্যবান মিশুক ছিল দৌড়ে সবার আগে। হাতিটা আমাদের সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে ফেলেছিল, নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলাম একটা অঘটন আজ ঘটছে, তখনই হঠাৎ ঘুরে, বাচ্চার কাছে ফিরে গেল হাতিটা।
হাতি আছে বিপদে
এখন আমাদের দেশে স্থায়ী বুনো হাতি আছে কেবল পার্বত্য চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলে। ড. রেজা খান ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশের বনগুলোতে ৪০০ টির মতো স্থায়ী বন্য হাতি আছে বলে ধারণা করেছিলেন। তবে আইইউসিএনের ২০১৬ সালের জরিপে হাতির গড় সংখ্যা ২৬৮ টির মতো বলে ধারণা করা হয়েছে। অস্থায়ী হাতিগুলোর বেশির ভাগের আবাস গারো পাহাড়ের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোয়। এ ছাড়া সিলেটের লাঠিটিলা ও ভারতের জঙ্গল মিলিয়ে চারটি বুনো হাতির বিচরণের খবর মেলে।
কিন্তু ঘটনা হলো গত কয়েক বছরে কক্সবাজার ও আশপাশের বনাঞ্চলে একের পর এক হাতির অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর পাচ্ছি। এগুলোর অনেকগুলোই গুলি ও বৈদ্যুতিক ফাঁদে আটকা পড়ে। গারো পাহাড় সীমান্তবর্তী শেরপুর-জামালপুরেও হাতি-মানুষ সংঘাতে হাতি মারা পড়ছে। বন বিভাগের হিসেবে ১৯৯২ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দেশে বুনো হাতি মৃত্যুর ঘটনা ১৫১। এর মধ্যে ২০১৩ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মারা যাওয়া হাতির সংখ্যা ৮৬ টি। বিশেষ করে ২০২০ এবং ২১ এই দুই বছরে মৃত হাতির সংখ্যা ৩৬। বুঝতেই পারছেন হাতিরা মোটেই ভালো নেই।
অবশ্য হাতির আক্রমণে মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনাও কম নয়। বন বিভাগের দেওয়া তথ্যে জানা যায় ২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ২৪৮ জন মানুষ মারা গিয়েছে হাতির আক্রমণে।
এদিকে কক্সবাজারের দিকে রেল চলাচল শুরু হলেও বাড়তি সতর্কতা জরুরি। কারণ, ওই হাতিগুলোর রেলগাড়ি নামক জিনিসটির সঙ্গে পরিচয়ই নেই।
হাতি-মানুষ দ্বন্দ্ব
সত্যি বিপদে আছে হাতিরা। বন-জঙ্গল কাটা পড়ায় অনেক জায়গায় আশ্রয় হারিয়েছে। যুগের পর যুগ ধরে যে পথে হাতিরা চলাফেরা করে আসছে তার মধ্যে, চারপাশেই গড়ে উঠেছে মানুষের বসতি, খেত খামার। এ ছাড়া বনে সুযোগের অপেক্ষায় থাকে চোরা শিকারিরা। দাঁতাল হাতি এখন চোখে পড়ে একেবারে কম। এমনকি এক যুগ আগে রাঙীপাড়ার সেগুন বাগানে যে দলটি দেখেছিলাম তার মধ্যে একটাও দাঁতাল হাতি নেই।
কক্সবাজার-টেকনাফ-লামা-আলীকদম—এই জায়গাগুলোয় বেশ কয়েকটি বড় পাল ঘুরে বেড়াচ্ছে হাতিদের, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে। রোহিঙ্গা বসতির কারণে ওগুলোর চলার পথ আটকে গেছে, আবাস স্থল ধ্বংস হয়ে গেছে। আছে চরম খাবার সংকটে।
এবার একটু গারো পাহাড়ের দিকে দৃষ্টি দেওয়া যাক। মেঘালয়ের বিশাল অংশজুড়ে গারো পাহাড়। গারো পাহাড়ের মূল অংশ ভারতে, বাংলাদেশে পড়েছে ছোট কিছু টিলা। আর এই গারো পাহাড় সব সময়ই হাতির জন্য বিখ্যাত। পুরোনো দিনে গারো পাহাড় ছিল সুসঙ্গ রাজ্যের অধীনে। প্রায় তিন হাজার ৩৫৯ বর্গমাইল এলাকা নিয়ে বিস্তৃত ছিল সুসঙ্গ রাজ্য। পরে সুসঙ্গের সঙ্গে দুর্গাপুর যোগ করে নাম হয় সুসঙ্গ দুর্গাপুর। রাজধানী ছিল দুর্গাপুর।
সুসঙ্গ মুল্লুকের হাতির খবর ছিল মোগল বাদশাহর কাছেও। সুসঙ্গের রাজারা খেদার মাধ্যমে গারো পাহাড় থেকে হাতি ধরতেন। এসব হাতি বিক্রি করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করতেন। খেদায় ধরা এই হাতি নিয়ে যাওয়া হতো ঢাকায়। তখন ঢাকায়ই ছিল সরকারের খেদা অফিস। ময়মনসিংহের মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য ও রাজা জগৎকশোর আচার্যও গারো পাহাড়ে বেশ কয়েকবার খেদা পরিচালনা করেছেন।
তবে এগুলো সবই অতীত ইতিহাস। বহু বছর ধরেই স্থায়ী হাতি নেই গারো পাহাড়ের বাংলাদেশ অংশে। তবে হাতির বড় একটা দল ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে চলাফেরা করে শেরপুর-ময়মনসিংহের ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোয়। কিন্তু এই এলাকাটিকে এখন হাতি-মানুষ সংঘাত বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। হাতির আক্রমণে মারা পড়ছে মানুষ, আবার মানুষের পেতে রাখা বিদ্যুতের ফাঁদে প্রাণ যাচ্ছে হাতির। ঘটনা হলো, এই এলাকার বন-পাহাড়ে এখন হাতির প্রয়োজনীয় খাবার নেই। তাই হাতিরা নিয়মিত হানা দিচ্ছে মানুষের কৃষি জমিতে। এদিকে সীমান্তের ওই পাশের কাঁটাতারের বেড়ার কারণে হাতিদের ভারত-বাংলাদেশের বন-পাহাড়ে যাতায়াত আগের মতো সহজ নেই। সব মিলিয়ে তৈরি হয়েছে বিপজ্জনক এক পরিস্থিতি।
হাতি বাঁচাব কেন
এখন হয়তো আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে আমরা হাতি বাঁচাব কেন? উত্তরটা দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রধান ও বন্যপ্রাণী গবেষক মনিরুল খান। তিনি বলেন, ‘পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে হাতি। হাতির নাদি বা মলের সঙ্গে মাটিতে পড়া বীজের মাধ্যমে বিভিন্ন উদ্ভিদের বিস্তার ঘটে। আবার হাতি চলাফেরার কারণে ঘন জঙ্গলের গাছপালার ঠাসবুনোটের মাঝখানে যে ফাঁকা জায়গা তৈরি হয় সেখান দিয়ে সূর্যের আলো প্রবেশ করে উদ্ভিদকে পর্যাপ্ত আলো পেতে সাহায্য করে।
চাই হাতি শিশুর নিরাপদ আবাস
সেদিন তাড়া খাওয়ার পরে মা হাতিটাকে দেখেছিলাম বাচ্চাটাকে নিয়ে ছড়া পাড় হয়ে আরেকটা পাহাড়ে উঠে যাচ্চে। বাচ্চাটাকে দেখে একটা কষ্ট দানা বাঁধছিল মনে। বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না, এখনো আমার ওর কথা মনে হয়, কষ্টটা ফিরে আসে বুকে। কেমন আছে ও? হাতি গড়ে ৭০ বছর বাঁচে। সে হিসাবে ছোট্ট হাতি তো বটেই ওর মারও জঙ্গল দাপিয়ে বেড়াবার কথা! কিন্তু এখন যে পরিস্থিতি, ভয় হয়, ওই ছোট্ট হাতি, যার কিনা এখন যুবা বয়সে বন-পাহাড় শাসন করার কথা, সেই বেঁচে আছে তো?
তারপরও আশা হারাতে চাই না। হাতিদের রক্ষায় কাজ করছেন অনেকেই। বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ বলেন, হাতি অধ্যুষিত এলাকায়গুলোয় এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম (ইআরটি) গঠন করা হয়েছে। এর সদস্যরা মানুষকে হাতির আসার সংবাদ দেয়। হাতির কাছাকাছি যেতে নিরুৎসাহিত করে। এভাবে তাঁরা হাতি-মানুষ সংঘাত এড়াতে সাহায্য করে। তা ছাড়া হাতি রক্ষায় বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কমিটি করা আছে। এর সদস্যরা হাতি-মানুষ সংঘাত এড়াতে সাহায্য করে।
এই বন কর্মকর্তা আরও বলেন, সরকারিভাবে হাতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের ক্ষতিপূরণে অর্থ সাহায্য দেওয়া হয়। তা ছাড়া প্ল্যানিং কমিশনে একটি প্রজেক্ট পেশ করা হয়েছে। যেটা পাশ হলে হাতি রক্ষায় সুবিধা হবে। এর আওতায় ইআরটিদের জন্যও একটা ভাতার ব্যবস্থা করা যাবে। তেমনি হাতি অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকায় সোলার ফেন্সিংয়রে ব্যবস্থা করা হবে। এটাও হাতি রক্ষায় সাহায্য করবে।
এদিকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দিকে ট্রেন চালু হয়ে গেলে হাতিরা যেন বিপদে না পড়ে সে ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ইমরান আহমেদ বলেন, হাতি অধ্যুষিত যেসব এলাকাগুলোর ভেতর দিয়ে রেলপথ গিয়েছে সেখানে হাতি চলাচলের জন্য আন্ডার পাস ও ওভার পাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া হাতির বিচরণের ব্যাপারে আগে থেকে যেন ট্রেনে বসেই সতর্ক বার্তা পাওয়া যায় এ ব্যাপারে আধুনিক ডিভাইস স্থাপন ও সিগন্যালিং সিস্টেম চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।
বরাবরের মতো আশা নিয়েই তাই শেষ করতে চাই। আশা করি হাতিরা আবার পুরনো দিনের মতো নিরাপদে বন-পাহাড়ে ঘুরে বেড়াতে পারবে। কমে যাবে হাতি-মানুষ সংঘাত। হয়তো নিজের অজান্তেই সেই ছোট্ট হাতির সঙ্গে (যে এখন বয়সে তরুণ) দেখা হয়ে যাবে রাঙামাটির কোনো পাহাড়ে, কিংবা ছড়া বা জঙ্গলে। স্বাভাবিকভাবেই সে আমাকে চিনবেই না, আমিও তাকে চিনব না।

একটা সময় বাংলাদেশের অনেক অরণ্য-পাহাড়েই দেখা মিলত বুনো হাতিদের। এমনকি পার্বত্য চট্টগ্রাম, গারো পাহাড়ের মতো জায়গাগুলোতে খেদার মাধ্যমে বুনো হাতি ধরে পোষ মানানো হতো। এখন অল্প কিছু জঙ্গলেই আর এরা টিকে আছে। তাও থাকার জায়গার সংকট, খাবারের অভাব আর মানুষের সঙ্গে সংঘাত মিলিয়ে বিশাল আকারের এই প্রাণীরা আছে বড় বিপদে। আজ ১২ আগস্ট বিশ্ব হাতি দিবসে আমাদের দেশে বুনো হাতির অবস্থা, মানুষের সঙ্গে দ্বন্দ্ব, হাতির মুখোমুখি হওয়ার রোমাঞ্চকর গল্প ছাড়াও থাকছে হাতি নিয়ে অনেক কিছু।
হাতির খোঁজে
শুরুটা করছি ঠিক এক যুগ আগের একটি ঘটনা দিয়ে। সালটা ২০১১। হাতি দেখতে দুই বন্ধু মিশুক-মেহেদীসহ গিয়েছিলাম রাঙামাটির পাবলাখালীর অরণ্যে। এর আগে যে জায়গায় হাতি দেখতে গিয়েছি সেখানেই হাতিরা ফাঁকি দিয়েছে। রাঙামাটির কাপ্তাই মুখ খাল কিংবা বান্দরবানের দুধপুকুরিয়ার জঙ্গলে গিয়ে হাতির উপস্থিতির তাজা চিহ্ন পেয়েও এদের দেখা পাইনি। পাবলাখালী গিয়েও শুনলাম হাতি আছে রাঙ্গীপাড়ার বনে। সেখানে পৌঁছাতে হলে প্রথমে যেতে হবে মাইনি।
চটজলদি একটা ট্রলার ভাড়া করলাম। কাসালং নদী দিয়ে মাইনি যাওয়ার পথে পড়ল বন বিভাগের মাহিল্লা বিট অফিস। এটা এবং দুপারের ছড়ানো-ছিটানো গাছপালা দেখে অদ্ভুত একটা মন খারাপ করা অনুভূতি হয়। এনায়েত মাওলা ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বইয়ে মাইনি আর মাহিল্লায় বাঘ ও চিতা বাঘ শিকারের কাহিনি বর্ণনা করেছেন। অবশ্য সেটা গত শতকের মাঝামাঝি কিংবা তার কিছু পরের ঘটনা। তখন কাপ্তাই বাঁধ তৈরির কাজ চলছে। এদিকটায় পাগলা হাতি শিকারের বর্ণনাও দিয়েছেন এনায়েত মাওলা। নদীর দুই ধারে ছিল দিনেও আঁধার নামিয়ে দেওয়া অরণ্য।
বন বিভাগের মাইনি বাংলোতে বাক্স-পেটরা রেখে আবার ছুটলাম। নৌকায় করে মাইনি নদীর অন্য পাড়ে গিয়ে মোটরসাইকেল ভাড়া করলাম। মিনিট বিশেকের মধ্যে পৌঁছে গেলাম বন বিভাগের রাঙ্গীপাড়া বিট অফিসে। বিট কর্মকর্তা জানালেন, দলে ২৭-২৮টা হাতি আছে। তবে দুটি উপদলে ভাগ হয়ে একটা পাল আছে অফিসের পেছনে সেগুনবাগানে, আর বড় দলটা ৮ নম্বর নামে পরিচিত একটা জায়গায়। আমাদের সঙ্গে লম্বা, হ্যাংলা-পাতলা গড়নের এক লোক আর বন বিভাগের দুজন কর্মচারীকে দিলেন গাইড হিসেবে। ঠাঠা রোদের মধ্যে বেশ কিছুটা পথ পাড়ি দিয়ে ৮ নম্বরে পৌঁছে মিলল কেবল হাতির নাদি আর বিশাল পায়ের ছাপ।
ওই পাহাড়ে আছে হাতি
জানলাম, আমাদের সঙ্গের তালপাতার সেপাইর নাম আব্দুর রহমান। সবার কাছে রহম আলী নামেই বেশি পরিচিত। হাতির আচার-আচরণ সম্পর্কে নাকি তাঁর অগাধ জ্ঞান। আট নম্বরে হাতিদের না পেয়ে বন বিভাগের অফিসের কাছের সেগুন বাগানের দিকে রওনা হলাম। এক ছড়ার ওপরে মরা গাছের ডাল দিয়ে বানানো নড়বড়ে এক সেতু পেরিয়ে ওঠে এলাম পাহাড়ের একটা ঢালে। এখানে বেশ কিছু ছেলে জড়ো হয়েছে। আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছি তার পরে নিচু একটা জায়গা। তারপরই আবার উঁচু জমি। সবার দৃষ্টি সেদিকেই। মাঝে মাঝে এখান থেকেই কেউ কেউ হাতির ডাক নকল করে শব্দ করছে। বুঝতে বাকি রইল না ওই পাহাড়েই আছে হাতি। গাছপালার ফাঁক গলে প্রথম একটা হাতির শুঁড় নজর কাড়ল। ভালোভাবে ঠাহর করতে বোঝা গেল কয়েকটা শুয়ে, কয়েকটা দাঁড়িয়ে আছে।
হাতির মুখোমুখি
ঢুকলাম হাতির পাহাড়ে। একটু অসাবধান হলেই পায়ের নিচে মচমচ করে উঠছে শুকনো পাতা। রহম আলীর পিছু পিছু কিছুটা পথ পেরোতেই হাতিগুলোকে দেখলাম। কোনোটা শুয়ে কানোটা বসে, আমাদের দিকে পেছন ফিরে। হাতিগুলোর কাছাকাছি চলে এলাম, বড়জোর গজ পনেরো দূরে। রহম আলী আরও সামনে বাড়ল। ইশারা করতেই তার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। হাতির পালের সাত-আট গজের মধ্যে চলে এসেছি। ফুট খানিক উঁচু একটা কাটা গাছের ওপর দাঁড়ালাম। পড়ে বুঝেছিলাম এতো কাছাকাছি যাওয়াটা খুব বোকার মতো কাজ হয়ে গিয়েছিল। তিনটা হাতি একেবারে আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। চারটা বড় আর একটা বাচ্চা শুয়ে আছে। বুক ঢিপ ঢিপ করছে। পরিস্থিতি খারাপ দেখলেই দৌড় দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। একটা শুঁড় তুলল মাথার ওপর। দেখাদেখি দাঁড়ানো বাকিদুটোও। রহম আলী বলল, আপনারে সালাম দিছে। আসলে কী জন্য শুঁড় তুলেছে কে জানে! মিনিট দশেক স্থির দাঁড়িয়ে রইলাম, হাতিরাও নিশ্চল। কেবল কান নাড়ছে। আর এখানে থাকা নিরাপদ মনে করলাম না। তবে মনটা আনন্দে ভরে গেছে! শেষ পর্যন্ত বুনো হাতির সঙ্গে দেখা হলো।
এশীয় হাতি আছে যেসব দেশে
এই ভ্রমণের মূল রোমাঞ্চটাই তখনো বাকি। তবে সেটা বলার আগে একটু অন্য দিকে দৃষ্টি দেওয়া যাক। নেট ঘাঁটাঘাঁটি করে যা বুঝেছি এশীয় হাতি আছে এখন যে তেরোটি দেশে এর সবগুলোই দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। বাংলাদেশ বাদে বাকি বারোটি দেশ হলো ভারত, শ্রীলঙ্কা, কম্বোডিয়া, ভুটান, নেপাল, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, লাওস ও চীন। এই দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হাতি আছে ভারতের জঙ্গলে। ধারণা করা হয় এই ১৩টি দেশের জঙ্গলে টিকে থাকা বুনো হাতির সংখ্যা ৫০ হাজারের আশপাশে। এদের মধ্যে ২৬০০০ থেকে ২৮০০০ আছে ভারতে। আমরা সৌভাগ্যবান যে এখনো যে কটি দেশে বুনো হাতিরা আছে এর একটি আমাদের দেশ। তবে যেভাবে হাতি মৃত্যুর খবর আসছে ভয় হয়, এক সময় হয়তো আর এ দেশ থেকে যেভাবে গন্ডার, বুনো মোষের মতো প্রাণীরা হারিয়ে গেছে সেভাবে হয়তো হারিয়ে যেতে পারে হাতিরাও। তখন কেবল রূপকথা গল্পেই ওদের কথা পড়বে আমাদের শিশুরা।
পুরোনো দিনের গল্প
মাইনি বন বাংলোর ডাইনিং রুমের দেয়ালে ঝোলানো ছবিগুলো দেখলে এক লাফে ষাট-সত্তর বছর কিংবা তার চেয়েও বেশি পিছিয়ে যাবেন আপনি। হাতিসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর অনেক পুরোনো ফটোগ্রাফ চোখে পড়বে। সত্যি আগে হাতিরা কী সুন্দর দিন কাটাত।
কাপ্তাই আর কাসালং রিজার্ভে খেদার মাধ্যমে বুনো হাতি ধরার বর্ণনা আছে ইউসুফ এস আহমদের ‘উইথ দ্য ওয়াইল্ড অ্যানিমেল’স অব বেঙ্গল’ বইয়েও। এনায়েত মাওলার ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বই থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়, বিংশ শতকের মাঝামাঝির দিকে রাঙামাটির কাসালংয়ের মাইনিমুখ, মাহিল্লা, শিশক, কাপ্তাইয়ের অরণ্যে ঘটা করে খেদার আয়োজন হতো। এক একটা খেদায় ত্রিশ-চল্লিশ, এমনকি ষাট-সত্তরটি হাতিও ধরা পড়ত। ওই জঙ্গলগুলোতে যে তখন বিস্তর হাতি ঘুরে বেড়াত, তাতে সন্দেহ নেই। মাইনিতে এক বৃদ্ধ এক যুগ আগে বলেছিলেন, তরুণ বয়সে কাসালংয়ের অরণ্যে ১০০ হাতির পালও দেখেছেন। ১২ বছর আগের সেই অভিযানে আমি প্রায় ৩০টি হাতির দলের খোঁজ পেয়েছিলাম। কিন্তু ২০১৬ সালের জরিপে রাঙামাটির কাসালং, কাপ্তাই মিলিয়ে সাকল্যে ৫০ টির মতো বুনো হাতি থাকার খবর অশনিসংকেত আমাদের জন্য।
এনায়েত মাওলার ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বইয়ে গত শতকের পঞ্চাশের দশকে থানচি থেকে সাঙ্গু নদী ধরে রেমাক্রির দিকে যাওয়ার পথে মধু নামের এক জায়গায় পাগলা হাতি শিকারের বর্ণনা আছে। ওই হাতিটার ভয়ে ম্রোরা গাছের ওপর মাচা বানিয়ে থাকা শুরু করেছিল। ওই সময় রেমাক্রি নদীর তীরের বড় মোদক ও সাঙ্গু রিজার্ভে বুনো হাতির বিচরণ ছিল বেশ। তবে এখন আর ওদিকে স্থায়ী হাতির আস্তানা নেই। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) ২০১৬ সালের জরিপ বলছে সাঙ্গু রিজার্ভে ১৫-২০টি বুনো হাতি মিয়ানমারের সীমানা পেরিয়ে বেড়াতে আসে কখনো-সখনো। অবশ্য এখন ওই হাতিগুলোর কী অবস্থা কে জানে।
মধুপুর জঙ্গলেও বিচরণ ছিল বুনো হাতির। ময়মনসিংহের মহারাজারা গারো পাহাড়ে খেদার আয়োজন করতেন। অবশ্য এটি সোয়া শ বছর আগের ঘটনা! তেমনি সিলেটের লালাখালের ওদিকটাসহ আরও বিভিন্ন এলাকায় এই কয়েক দশক আগেও হাতিরা নামত ভারত থেকে। বুঝুন তাহলে, বুনো হাতির দিক থেকে মোটামুটি গর্ব করার জায়গায় ছিলাম আমরা!
হাতির তাড়া
আবার ফিরে যাই সেই ২০১১ সালে। হাতির পালের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলাম যেদিন তার পরের দিন সকালে আবার এলাম রাঙ্গীপাড়া। শুনলাম অন্য হাতিগুলো রাতে দূরের পাহাড়ে চলে গেলেও বাচ্চাসহ মা হাতি আটকা পড়েছে বন বিভাগের ওষুধি গাছের এক বাগানে। আজকেও সঙ্গী রহম আলী। বারবার মানা করা সত্ত্বেও জুটে গেছে এক দল ছেলে-ছোকরা। মনে কু গাইছে। মা হাতি খুবই বিপজ্জনক। বাচ্চাটার যে কোনো ক্ষতির আশঙ্কা দেখলে লঙ্কা কাণ্ড বাধাবে।
বাগানে ঢুকলাম রহম আলীর পিছু পিছু। গাছপালা বেশ ফাঁকা ফাঁকা হওয়ায় একটু এগোতেই বাচ্চাসহ মা হাতিটাকে দেখলাম। একপর্যায়ে মানুষের উপস্থিতিতে বিরক্ত হয়ে ক্ষেপে জোরে চিৎকার দিয়ে একটা গাছ ভাঙল প্রচণ্ড শব্দে মা হাতি। আমাদেরতো ভয়ে আত্মা শুকিয়ে গেছে। রহম আলীর ধমকে ওটা শান্ত হলো। আবারও বাচ্চা নিয়ে দূরে সরে যেতে চাইল। হাতি এক্সপার্ট রহম আলী ভুলটা করল তখনই। আবার হস্তিনীকে এদিকে ফিরাতে চাইল। আমরা তখন দাঁড়িয়ে মোটামুটি চওড়া একটা বনপথের ওপর। হঠাৎই ক্ষেপে গিয়ে দৌড়ে এই পথে উঠে এল হাতিটা। তারপর কলজে কাঁপিয়ে চিৎকার করে ছুটে আসল। রহম আলীর কণ্ঠে আতঙ্কের ছোঁয়া, বলল, ‘দৌড়ান’।
ছুটছি পাগলের মতো। বিশাল শরীর নিয়ে কীভাবে এত জোরে দৌড়াচ্ছে মা হাতি খোদা জানে। দৌড়ানোর ফাঁকে এক পায়ের স্যান্ডেল ছুটে গেল। থোড়াই কেয়ার করে ছুটলাম। এখন ভেবে হাসি পায়, আমাদের মধ্যে তুলনামূলক স্বাস্থ্যবান মিশুক ছিল দৌড়ে সবার আগে। হাতিটা আমাদের সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে ফেলেছিল, নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলাম একটা অঘটন আজ ঘটছে, তখনই হঠাৎ ঘুরে, বাচ্চার কাছে ফিরে গেল হাতিটা।
হাতি আছে বিপদে
এখন আমাদের দেশে স্থায়ী বুনো হাতি আছে কেবল পার্বত্য চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলে। ড. রেজা খান ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশের বনগুলোতে ৪০০ টির মতো স্থায়ী বন্য হাতি আছে বলে ধারণা করেছিলেন। তবে আইইউসিএনের ২০১৬ সালের জরিপে হাতির গড় সংখ্যা ২৬৮ টির মতো বলে ধারণা করা হয়েছে। অস্থায়ী হাতিগুলোর বেশির ভাগের আবাস গারো পাহাড়ের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোয়। এ ছাড়া সিলেটের লাঠিটিলা ও ভারতের জঙ্গল মিলিয়ে চারটি বুনো হাতির বিচরণের খবর মেলে।
কিন্তু ঘটনা হলো গত কয়েক বছরে কক্সবাজার ও আশপাশের বনাঞ্চলে একের পর এক হাতির অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর পাচ্ছি। এগুলোর অনেকগুলোই গুলি ও বৈদ্যুতিক ফাঁদে আটকা পড়ে। গারো পাহাড় সীমান্তবর্তী শেরপুর-জামালপুরেও হাতি-মানুষ সংঘাতে হাতি মারা পড়ছে। বন বিভাগের হিসেবে ১৯৯২ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দেশে বুনো হাতি মৃত্যুর ঘটনা ১৫১। এর মধ্যে ২০১৩ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মারা যাওয়া হাতির সংখ্যা ৮৬ টি। বিশেষ করে ২০২০ এবং ২১ এই দুই বছরে মৃত হাতির সংখ্যা ৩৬। বুঝতেই পারছেন হাতিরা মোটেই ভালো নেই।
অবশ্য হাতির আক্রমণে মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনাও কম নয়। বন বিভাগের দেওয়া তথ্যে জানা যায় ২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ২৪৮ জন মানুষ মারা গিয়েছে হাতির আক্রমণে।
এদিকে কক্সবাজারের দিকে রেল চলাচল শুরু হলেও বাড়তি সতর্কতা জরুরি। কারণ, ওই হাতিগুলোর রেলগাড়ি নামক জিনিসটির সঙ্গে পরিচয়ই নেই।
হাতি-মানুষ দ্বন্দ্ব
সত্যি বিপদে আছে হাতিরা। বন-জঙ্গল কাটা পড়ায় অনেক জায়গায় আশ্রয় হারিয়েছে। যুগের পর যুগ ধরে যে পথে হাতিরা চলাফেরা করে আসছে তার মধ্যে, চারপাশেই গড়ে উঠেছে মানুষের বসতি, খেত খামার। এ ছাড়া বনে সুযোগের অপেক্ষায় থাকে চোরা শিকারিরা। দাঁতাল হাতি এখন চোখে পড়ে একেবারে কম। এমনকি এক যুগ আগে রাঙীপাড়ার সেগুন বাগানে যে দলটি দেখেছিলাম তার মধ্যে একটাও দাঁতাল হাতি নেই।
কক্সবাজার-টেকনাফ-লামা-আলীকদম—এই জায়গাগুলোয় বেশ কয়েকটি বড় পাল ঘুরে বেড়াচ্ছে হাতিদের, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে। রোহিঙ্গা বসতির কারণে ওগুলোর চলার পথ আটকে গেছে, আবাস স্থল ধ্বংস হয়ে গেছে। আছে চরম খাবার সংকটে।
এবার একটু গারো পাহাড়ের দিকে দৃষ্টি দেওয়া যাক। মেঘালয়ের বিশাল অংশজুড়ে গারো পাহাড়। গারো পাহাড়ের মূল অংশ ভারতে, বাংলাদেশে পড়েছে ছোট কিছু টিলা। আর এই গারো পাহাড় সব সময়ই হাতির জন্য বিখ্যাত। পুরোনো দিনে গারো পাহাড় ছিল সুসঙ্গ রাজ্যের অধীনে। প্রায় তিন হাজার ৩৫৯ বর্গমাইল এলাকা নিয়ে বিস্তৃত ছিল সুসঙ্গ রাজ্য। পরে সুসঙ্গের সঙ্গে দুর্গাপুর যোগ করে নাম হয় সুসঙ্গ দুর্গাপুর। রাজধানী ছিল দুর্গাপুর।
সুসঙ্গ মুল্লুকের হাতির খবর ছিল মোগল বাদশাহর কাছেও। সুসঙ্গের রাজারা খেদার মাধ্যমে গারো পাহাড় থেকে হাতি ধরতেন। এসব হাতি বিক্রি করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করতেন। খেদায় ধরা এই হাতি নিয়ে যাওয়া হতো ঢাকায়। তখন ঢাকায়ই ছিল সরকারের খেদা অফিস। ময়মনসিংহের মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য ও রাজা জগৎকশোর আচার্যও গারো পাহাড়ে বেশ কয়েকবার খেদা পরিচালনা করেছেন।
তবে এগুলো সবই অতীত ইতিহাস। বহু বছর ধরেই স্থায়ী হাতি নেই গারো পাহাড়ের বাংলাদেশ অংশে। তবে হাতির বড় একটা দল ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে চলাফেরা করে শেরপুর-ময়মনসিংহের ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোয়। কিন্তু এই এলাকাটিকে এখন হাতি-মানুষ সংঘাত বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। হাতির আক্রমণে মারা পড়ছে মানুষ, আবার মানুষের পেতে রাখা বিদ্যুতের ফাঁদে প্রাণ যাচ্ছে হাতির। ঘটনা হলো, এই এলাকার বন-পাহাড়ে এখন হাতির প্রয়োজনীয় খাবার নেই। তাই হাতিরা নিয়মিত হানা দিচ্ছে মানুষের কৃষি জমিতে। এদিকে সীমান্তের ওই পাশের কাঁটাতারের বেড়ার কারণে হাতিদের ভারত-বাংলাদেশের বন-পাহাড়ে যাতায়াত আগের মতো সহজ নেই। সব মিলিয়ে তৈরি হয়েছে বিপজ্জনক এক পরিস্থিতি।
হাতি বাঁচাব কেন
এখন হয়তো আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে আমরা হাতি বাঁচাব কেন? উত্তরটা দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রধান ও বন্যপ্রাণী গবেষক মনিরুল খান। তিনি বলেন, ‘পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে হাতি। হাতির নাদি বা মলের সঙ্গে মাটিতে পড়া বীজের মাধ্যমে বিভিন্ন উদ্ভিদের বিস্তার ঘটে। আবার হাতি চলাফেরার কারণে ঘন জঙ্গলের গাছপালার ঠাসবুনোটের মাঝখানে যে ফাঁকা জায়গা তৈরি হয় সেখান দিয়ে সূর্যের আলো প্রবেশ করে উদ্ভিদকে পর্যাপ্ত আলো পেতে সাহায্য করে।
চাই হাতি শিশুর নিরাপদ আবাস
সেদিন তাড়া খাওয়ার পরে মা হাতিটাকে দেখেছিলাম বাচ্চাটাকে নিয়ে ছড়া পাড় হয়ে আরেকটা পাহাড়ে উঠে যাচ্চে। বাচ্চাটাকে দেখে একটা কষ্ট দানা বাঁধছিল মনে। বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না, এখনো আমার ওর কথা মনে হয়, কষ্টটা ফিরে আসে বুকে। কেমন আছে ও? হাতি গড়ে ৭০ বছর বাঁচে। সে হিসাবে ছোট্ট হাতি তো বটেই ওর মারও জঙ্গল দাপিয়ে বেড়াবার কথা! কিন্তু এখন যে পরিস্থিতি, ভয় হয়, ওই ছোট্ট হাতি, যার কিনা এখন যুবা বয়সে বন-পাহাড় শাসন করার কথা, সেই বেঁচে আছে তো?
তারপরও আশা হারাতে চাই না। হাতিদের রক্ষায় কাজ করছেন অনেকেই। বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ বলেন, হাতি অধ্যুষিত এলাকায়গুলোয় এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম (ইআরটি) গঠন করা হয়েছে। এর সদস্যরা মানুষকে হাতির আসার সংবাদ দেয়। হাতির কাছাকাছি যেতে নিরুৎসাহিত করে। এভাবে তাঁরা হাতি-মানুষ সংঘাত এড়াতে সাহায্য করে। তা ছাড়া হাতি রক্ষায় বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কমিটি করা আছে। এর সদস্যরা হাতি-মানুষ সংঘাত এড়াতে সাহায্য করে।
এই বন কর্মকর্তা আরও বলেন, সরকারিভাবে হাতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের ক্ষতিপূরণে অর্থ সাহায্য দেওয়া হয়। তা ছাড়া প্ল্যানিং কমিশনে একটি প্রজেক্ট পেশ করা হয়েছে। যেটা পাশ হলে হাতি রক্ষায় সুবিধা হবে। এর আওতায় ইআরটিদের জন্যও একটা ভাতার ব্যবস্থা করা যাবে। তেমনি হাতি অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকায় সোলার ফেন্সিংয়রে ব্যবস্থা করা হবে। এটাও হাতি রক্ষায় সাহায্য করবে।
এদিকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দিকে ট্রেন চালু হয়ে গেলে হাতিরা যেন বিপদে না পড়ে সে ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ইমরান আহমেদ বলেন, হাতি অধ্যুষিত যেসব এলাকাগুলোর ভেতর দিয়ে রেলপথ গিয়েছে সেখানে হাতি চলাচলের জন্য আন্ডার পাস ও ওভার পাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া হাতির বিচরণের ব্যাপারে আগে থেকে যেন ট্রেনে বসেই সতর্ক বার্তা পাওয়া যায় এ ব্যাপারে আধুনিক ডিভাইস স্থাপন ও সিগন্যালিং সিস্টেম চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।
বরাবরের মতো আশা নিয়েই তাই শেষ করতে চাই। আশা করি হাতিরা আবার পুরনো দিনের মতো নিরাপদে বন-পাহাড়ে ঘুরে বেড়াতে পারবে। কমে যাবে হাতি-মানুষ সংঘাত। হয়তো নিজের অজান্তেই সেই ছোট্ট হাতির সঙ্গে (যে এখন বয়সে তরুণ) দেখা হয়ে যাবে রাঙামাটির কোনো পাহাড়ে, কিংবা ছড়া বা জঙ্গলে। স্বাভাবিকভাবেই সে আমাকে চিনবেই না, আমিও তাকে চিনব না।

শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকেই ভারত উপমহাদেশের তিন প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধান শহরগুলো বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় শুরুর দশের মধ্যে অবস্থান করছে। এর মধ্যে আজ বুধবার এই তালিকায় শীর্ষে আছে ভারতের কলকাতা। শহরটির অবস্থা আজ খুব অস্বাস্থ্যকর। আজ ঢাকার বাতাসেও দূষণ কিছুটা বেড়েছে।
১১ ঘণ্টা আগে
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি আরও শক্তিশালী হয়েছে। এটি আজ বুধবার সকালে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করেছে। এর প্রভাবে চট্টগ্রাম উপকূলীয় অঞ্চলে বৃষ্টি হচ্ছে।
১৩ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের জলবায়ু তহবিলের বরাদ্দে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটির সর্বশেষ গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতীয় জলবায়ু তহবিল বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্টের (বিসিসিটি) বরাদ্দের ৫৪ শতাংশেই দুর্নীতি হয়েছে। ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়
১ দিন আগে
পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন মিয়ানমার উপকূলের কাছে একটি লঘুচাপ বিরাজ করছে। এটি উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে মিয়ানমার-বাংলাদেশ উপকূল বরাবর অগ্রসর হতে পারে। এর প্রভাবে উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে।
১ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকেই ভারত উপমহাদেশের তিন প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধান শহরগুলো বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় শুরুর দশের মধ্যে অবস্থান করছে। এর মধ্যে আজ বুধবার এই তালিকায় শীর্ষে আছে ভারতের কলকাতা। শহরটির অবস্থা আজ খুব অস্বাস্থ্যকর। আজ ঢাকার বাতাসেও দূষণ কিছুটা বেড়েছে। ঢাকার বাতাস আজ শিশু ও বৃদ্ধদের মতো সংবেদনশীল মানুষের জন্য অস্বাস্থ্যকর।
বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের আজ সকাল ৮টা ৫০ মিনিটের রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান ১১১, যা গতকাল ছিল ১০৫। দূষিত বায়ুর শহরগুলোর তালিকায় আজ ১৭তম স্থানে আছে ঢাকা, গতকাল ছিল ১১তম স্থানে।
বায়ুদূষণের শীর্ষে থাকা ভারতের কলকাতা শহরটির বায়ুমান আজ ২৬৭, যা অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক। শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই, ভারতের দিল্লি, চীনের বেইজিং ও মিসরের কায়রো। শহরগুলোর বায়ুমান যথাক্রমে ২১৪, ২০৭, ১৯৩ ও ১৮১।
বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশি মাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১ থেকে ১৫০-এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।
বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতিবছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।
দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।
পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকেই ভারত উপমহাদেশের তিন প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধান শহরগুলো বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় শুরুর দশের মধ্যে অবস্থান করছে। এর মধ্যে আজ বুধবার এই তালিকায় শীর্ষে আছে ভারতের কলকাতা। শহরটির অবস্থা আজ খুব অস্বাস্থ্যকর। আজ ঢাকার বাতাসেও দূষণ কিছুটা বেড়েছে। ঢাকার বাতাস আজ শিশু ও বৃদ্ধদের মতো সংবেদনশীল মানুষের জন্য অস্বাস্থ্যকর।
বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের আজ সকাল ৮টা ৫০ মিনিটের রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান ১১১, যা গতকাল ছিল ১০৫। দূষিত বায়ুর শহরগুলোর তালিকায় আজ ১৭তম স্থানে আছে ঢাকা, গতকাল ছিল ১১তম স্থানে।
বায়ুদূষণের শীর্ষে থাকা ভারতের কলকাতা শহরটির বায়ুমান আজ ২৬৭, যা অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক। শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই, ভারতের দিল্লি, চীনের বেইজিং ও মিসরের কায়রো। শহরগুলোর বায়ুমান যথাক্রমে ২১৪, ২০৭, ১৯৩ ও ১৮১।
বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশি মাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১ থেকে ১৫০-এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।
বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতিবছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।
দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।
পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশের অল্প কিছু বন-পাহাড়েই এখন টিকে আছে বুনো হাতিরা। তাও থাকার জায়গার সংকট, খাবারের অভাব আর মানুষের সঙ্গে দ্বন্দ্ব মিলিয়ে বিশাল আকারের এই প্রাণীরা আছে বড় বিপদে। আজ ১২ আগস্ট বিশ্ব হাতি দিবসে আমাদের দেশে বুনো হাতির অবস্থা, মানুষের সঙ্গে দ্বন্দ্ব, হাতির মুখোমুখি হওয়ার রোমাঞ্চকর গল্প ছাড়াও থাকছে হা
১২ আগস্ট ২০২৩
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি আরও শক্তিশালী হয়েছে। এটি আজ বুধবার সকালে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করেছে। এর প্রভাবে চট্টগ্রাম উপকূলীয় অঞ্চলে বৃষ্টি হচ্ছে।
১৩ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের জলবায়ু তহবিলের বরাদ্দে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটির সর্বশেষ গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতীয় জলবায়ু তহবিল বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্টের (বিসিসিটি) বরাদ্দের ৫৪ শতাংশেই দুর্নীতি হয়েছে। ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়
১ দিন আগে
পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন মিয়ানমার উপকূলের কাছে একটি লঘুচাপ বিরাজ করছে। এটি উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে মিয়ানমার-বাংলাদেশ উপকূল বরাবর অগ্রসর হতে পারে। এর প্রভাবে উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে।
১ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি আরও শক্তিশালী হয়েছে। এটি আজ বুধবার সকালে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করেছে। এর প্রভাবে চট্টগ্রাম উপকূলীয় অঞ্চলে বৃষ্টি হচ্ছে।
এ ছাড়া বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের ওপর দিয়ে আজ দুপুরের মধ্যে ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। এই অঞ্চলের নৌবন্দরগুলোকে ২ নম্বর সতর্কসংকেত দেখাতে হবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক আজ সকালে আজকের পত্রিকাকে বলেন, সুস্পষ্ট লঘুচাপটি আজ চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করার সময় বৃষ্টি ঝরাতে ঝরাতে দুর্বল হয়ে যাবে। অবশ্য এর প্রভাবে গতকাল রাত থেকেই চট্টগ্রাম অঞ্চলে বৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া আজ সিলেট অঞ্চলেও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চলে সামান্য বৃষ্টি হতে পারে। সুস্পষ্ট লঘুচাপ চলে যাওয়ার পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে।
তিনি আরও বলেন, সুস্পষ্ট লঘুচাপের কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখাতে হবে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার সব নৌযানকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে হবে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর আজ সকাল ৭টার পূর্বাভাসে জানিয়েছে, ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের আকাশ দুপুর পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে মেঘলা থাকতে পারে। তবে আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। এ সময় উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা হ্রাস পেতে পারে।
আজ সকাল ৬টায় ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ২৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৮৫ শতাংশ। আজকে ঢাকায় সূর্যাস্ত বিকেল ৫টা ১৭ মিনিটে। আগামীকাল সূর্যোদয় সকাল ৬টা ৮ মিনিটে।
সারা দেশের আজকের পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য অঞ্চলে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারা দেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি আরও শক্তিশালী হয়েছে। এটি আজ বুধবার সকালে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করেছে। এর প্রভাবে চট্টগ্রাম উপকূলীয় অঞ্চলে বৃষ্টি হচ্ছে।
এ ছাড়া বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের ওপর দিয়ে আজ দুপুরের মধ্যে ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। এই অঞ্চলের নৌবন্দরগুলোকে ২ নম্বর সতর্কসংকেত দেখাতে হবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক আজ সকালে আজকের পত্রিকাকে বলেন, সুস্পষ্ট লঘুচাপটি আজ চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করার সময় বৃষ্টি ঝরাতে ঝরাতে দুর্বল হয়ে যাবে। অবশ্য এর প্রভাবে গতকাল রাত থেকেই চট্টগ্রাম অঞ্চলে বৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া আজ সিলেট অঞ্চলেও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চলে সামান্য বৃষ্টি হতে পারে। সুস্পষ্ট লঘুচাপ চলে যাওয়ার পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে।
তিনি আরও বলেন, সুস্পষ্ট লঘুচাপের কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখাতে হবে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার সব নৌযানকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে হবে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর আজ সকাল ৭টার পূর্বাভাসে জানিয়েছে, ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের আকাশ দুপুর পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে মেঘলা থাকতে পারে। তবে আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। এ সময় উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা হ্রাস পেতে পারে।
আজ সকাল ৬টায় ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ২৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৮৫ শতাংশ। আজকে ঢাকায় সূর্যাস্ত বিকেল ৫টা ১৭ মিনিটে। আগামীকাল সূর্যোদয় সকাল ৬টা ৮ মিনিটে।
সারা দেশের আজকের পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য অঞ্চলে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারা দেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

বাংলাদেশের অল্প কিছু বন-পাহাড়েই এখন টিকে আছে বুনো হাতিরা। তাও থাকার জায়গার সংকট, খাবারের অভাব আর মানুষের সঙ্গে দ্বন্দ্ব মিলিয়ে বিশাল আকারের এই প্রাণীরা আছে বড় বিপদে। আজ ১২ আগস্ট বিশ্ব হাতি দিবসে আমাদের দেশে বুনো হাতির অবস্থা, মানুষের সঙ্গে দ্বন্দ্ব, হাতির মুখোমুখি হওয়ার রোমাঞ্চকর গল্প ছাড়াও থাকছে হা
১২ আগস্ট ২০২৩
শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকেই ভারত উপমহাদেশের তিন প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধান শহরগুলো বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় শুরুর দশের মধ্যে অবস্থান করছে। এর মধ্যে আজ বুধবার এই তালিকায় শীর্ষে আছে ভারতের কলকাতা। শহরটির অবস্থা আজ খুব অস্বাস্থ্যকর। আজ ঢাকার বাতাসেও দূষণ কিছুটা বেড়েছে।
১১ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের জলবায়ু তহবিলের বরাদ্দে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটির সর্বশেষ গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতীয় জলবায়ু তহবিল বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্টের (বিসিসিটি) বরাদ্দের ৫৪ শতাংশেই দুর্নীতি হয়েছে। ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়
১ দিন আগে
পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন মিয়ানমার উপকূলের কাছে একটি লঘুচাপ বিরাজ করছে। এটি উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে মিয়ানমার-বাংলাদেশ উপকূল বরাবর অগ্রসর হতে পারে। এর প্রভাবে উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে।
১ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বাংলাদেশের জলবায়ু তহবিলের বরাদ্দে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটির সর্বশেষ গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতীয় জলবায়ু তহবিল বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্টের (বিসিসিটি) বরাদ্দের ৫৪ শতাংশেই দুর্নীতি হয়েছে। ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়ে বাস্তবায়িত ৮৯১টি প্রকল্পে অনিয়মের আনুমানিক পরিমাণ বলা হয়েছে ২৪৮ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ২ হাজার ১১০ কোটি টাকা)।
আজ মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) টিআইবির ধানমন্ডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলাদেশে জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন টিআইবির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো মো. মাহফুজুল হক এবং রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট মো. সহিদুল ইসলাম। এ সময় সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ও আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলামও ছিলেন।
প্রতিবেদনে ২০০৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাস্তবায়িত ১২টি তহবিলের আওতায় ৯৪২টি প্রকল্পের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রণীত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ঘাটতি রয়েছে। অর্থের চাহিদার বিপরীতে সামঞ্জস্যপূর্ণ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাব প্রকট।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সবচেয়ে বিপদাপন্ন অঞ্চলে বরাদ্দের অগ্রাধিকার কম এবং অনেক প্রকল্প বাস্তবে জলবায়ু অভিযোজনের সঙ্গে সম্পর্কহীন। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, জলবায়ু তহবিলের অর্থে সাফারি পার্ক ও ইকোপার্ক নির্মাণের মতো প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, যেখানে নিম্নমানের কাজ, অর্থ আত্মসাৎ ও সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে নিয়মবহির্ভূত অর্থ আদায়ের ঘটনা ঘটেছে।
জাতীয় তহবিলের প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা এবং ব্যর্থতার প্রকটতাও গবেষণায় উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৮৯১টি প্রকল্পের মধ্যে ৫৪৯টির (৬১ দশমিক ৬ শতাংশ) মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। গড়ে প্রকল্পের মেয়াদ ৬৪৮ দিন থেকে বেড়ে ১ হাজার ৫১৫ দিনে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ ১৩৩ শতাংশের বেশি সময় লেগেছে। কোনো কোনো প্রকল্পে চার বছরের পরিবর্তে ১৪ বছর পর্যন্ত সময় লেগেছে।
টিআইবির অভিযোগ, জলবায়ু অর্থায়নে প্রয়োজনীয় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব রয়েছে। ২০১৫ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশের জলবায়ু অভিযোজনের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মাত্র ৮৬ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার, যা প্রয়োজনীয় অর্থের মাত্র শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রতিবছর জলবায়ু ক্ষতিপূরণ হিসাবে ১০ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। কিন্তু ২০০৩ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আমরা পেয়েছি মাত্র ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার, যা অত্যন্ত নগণ্য।’
গবেষণা প্রতিবেদনে কিছু সুপারিশ করেছে টিআইবি। সেগুলো হলো—
১. বিসিসিএসএপি ২০০৯ এবং জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত জাতীয় পরিকল্পনাসমূহ হালনাগাদ করে যুগোপযোগী করতে হবে। জাতীয় পরিকল্পনাসমূহ বাস্তবায়নে ট্রাস্ট ফান্ড এবং উন্নয়ন প্রকল্পের আওতার জলবায়ু-সংশ্লিষ্ট অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে।
২. জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট আইন, ২০১০ সংশোধন করতে হবে। আইনে ট্রাস্টের জনবল নিয়োগ ও পদোন্নতির বিষয়ক ধারা সংযোজন করতে হবে। বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি স্বাধীন ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের বিধান যুক্ত করতে হবে। ট্রাস্ট থেকে কমপক্ষে একজন বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানসম্পন্ন কর্মকর্তাকে প্রকল্প প্রস্তাব মূল্যায়ন-সংক্রান্ত কারিগরি কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল অর্জনে সক্ষম বা ট্রান্সফর্মেটিভ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য তহবিলের আওতায় অর্থ বরাদ্দের সীমা বৃদ্ধি করতে হবে। জবাবদিহি নিশ্চিত এবং অনিয়ম-দুর্নীতি প্রতিরোধে দেশে প্রচলিত আইন, যেগুলো ট্রাস্টের জন্য প্রযোজ্য, তা সুনির্দিষ্ট করে ট্রাস্ট আইনে উল্লেখ করতে হবে। আর্থিক ও কারিগরি ব্যবস্থাপক হিসেবে বিসিসিটির কর্মকর্তাদের প্রকল্প প্রস্তাব মূল্যায়ন, প্রকল্প বাস্তবায়নের চুক্তি ও শর্তাবলি নির্ধারণ, প্রকল্প অনুমোদন, প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি ও অর্থ ছাড়, মাঠপর্যায়ে প্রকল্প তদারকি, প্রকল্প পরিবীক্ষণ এবং নথি ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত বিষয়ে দায়িত্ব স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করতে হবে। দুর্নীতি ও স্বার্থের দ্বন্দ্ব প্রতিরোধ, অংশীজনের অংশগ্রহণ, তহবিল ও প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট তথ্য উন্মুক্তকরণ, পরিবেশ ও সামাজিক মূল্যায়ন এবং নিয়মিত নিরীক্ষা-সংক্রান্ত বিষয় নতুন আইনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৩. রাজস্ব বাজেটের বাইরে বিসিসিটিকে উদ্ভাবনীমূলক কার্যক্রম, যেমন—আন্তর্জাতিক জলবায়ু তহবিল, কার্বন ট্রেডিং, ক্লিন ডেভেলপমেন্ট মেকানিজমসহ বেসরকারি অর্থায়ন উৎস থেকে তহবিল সংগ্রহে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
৪. থিমভিত্তিক, বিপদাপন্নতা ও ঝুঁকির ভৌগোলিক বিন্যাসভিত্তিক এবং বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানভিত্তিক অগ্রাধিকার নির্ধারণ করে বিসিসিটি প্রকল্প বাস্তবায়নে একটি সমন্বিত পথ নকশা প্রস্তুত করতে হবে। পথ নকশায় মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রমকে অন্তর্ভুক্ত করে সেই অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ, প্রকল্প অনুমোদন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
৫. বিসিসিটির আওতায় স্বল্পমেয়াদি এবং টাকার অঙ্ক ক্ষুদ্র প্রকল্প বাস্তবায়ন পরিহার করতে হবে। প্রান্তিক, দুর্গম ও ঝুঁকিপূর্ণ জেলা, উপজেলা এবং স্থান যেখানে সাধারণ উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে জলবায়ু ঝুঁকি কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব নয় এমন স্থানে বিসিসিটি থেকে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প বাস্তবায়নকে প্রাধান্য দিতে হবে।
৬. বাংলাদেশে বাস্তবায়িত জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক জলবায়ু তহবিলের প্রকল্প নিয়মিত তদারকি ও নিরীক্ষা করার জন্য একটি পৃথক স্বাধীন তদারকি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
৭. স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করে প্রকল্প অনুমোদন এবং বাস্তবায়নসহ ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর কাছে জলবায়ু তহবিল কার্যকরভাবে পৌঁছানো নিশ্চিতে বিপদাপন্নতার সূচক এবং ভৌগোলিক বা স্থানিক ঝুঁকিকে প্রাধান্য দিতে হবে।
৮. জাতীয় পর্যায়ে একটি প্রতিষ্ঠানকে জলবায়ু-সংক্রান্ত বিষয় সমন্বয়ের জন্য ফোকাল পয়েন্ট নির্ধারণ করতে হবে। সেই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিকল্পনাসহ অংশীজন সমন্বয় ও আন্তপ্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
৯. তহবিলসমূহের প্রকল্প বাস্তবায়নে বিবিধ অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে, অবকাঠামো ও সৌর সড়কবাতি-সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের স্বাধীন তদন্ত করতে হবে।

বাংলাদেশের জলবায়ু তহবিলের বরাদ্দে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটির সর্বশেষ গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতীয় জলবায়ু তহবিল বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্টের (বিসিসিটি) বরাদ্দের ৫৪ শতাংশেই দুর্নীতি হয়েছে। ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়ে বাস্তবায়িত ৮৯১টি প্রকল্পে অনিয়মের আনুমানিক পরিমাণ বলা হয়েছে ২৪৮ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ২ হাজার ১১০ কোটি টাকা)।
আজ মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) টিআইবির ধানমন্ডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলাদেশে জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন টিআইবির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো মো. মাহফুজুল হক এবং রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট মো. সহিদুল ইসলাম। এ সময় সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ও আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলামও ছিলেন।
প্রতিবেদনে ২০০৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাস্তবায়িত ১২টি তহবিলের আওতায় ৯৪২টি প্রকল্পের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রণীত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ঘাটতি রয়েছে। অর্থের চাহিদার বিপরীতে সামঞ্জস্যপূর্ণ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাব প্রকট।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সবচেয়ে বিপদাপন্ন অঞ্চলে বরাদ্দের অগ্রাধিকার কম এবং অনেক প্রকল্প বাস্তবে জলবায়ু অভিযোজনের সঙ্গে সম্পর্কহীন। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, জলবায়ু তহবিলের অর্থে সাফারি পার্ক ও ইকোপার্ক নির্মাণের মতো প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, যেখানে নিম্নমানের কাজ, অর্থ আত্মসাৎ ও সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে নিয়মবহির্ভূত অর্থ আদায়ের ঘটনা ঘটেছে।
জাতীয় তহবিলের প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা এবং ব্যর্থতার প্রকটতাও গবেষণায় উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৮৯১টি প্রকল্পের মধ্যে ৫৪৯টির (৬১ দশমিক ৬ শতাংশ) মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। গড়ে প্রকল্পের মেয়াদ ৬৪৮ দিন থেকে বেড়ে ১ হাজার ৫১৫ দিনে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ ১৩৩ শতাংশের বেশি সময় লেগেছে। কোনো কোনো প্রকল্পে চার বছরের পরিবর্তে ১৪ বছর পর্যন্ত সময় লেগেছে।
টিআইবির অভিযোগ, জলবায়ু অর্থায়নে প্রয়োজনীয় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব রয়েছে। ২০১৫ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশের জলবায়ু অভিযোজনের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মাত্র ৮৬ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার, যা প্রয়োজনীয় অর্থের মাত্র শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রতিবছর জলবায়ু ক্ষতিপূরণ হিসাবে ১০ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। কিন্তু ২০০৩ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আমরা পেয়েছি মাত্র ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার, যা অত্যন্ত নগণ্য।’
গবেষণা প্রতিবেদনে কিছু সুপারিশ করেছে টিআইবি। সেগুলো হলো—
১. বিসিসিএসএপি ২০০৯ এবং জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত জাতীয় পরিকল্পনাসমূহ হালনাগাদ করে যুগোপযোগী করতে হবে। জাতীয় পরিকল্পনাসমূহ বাস্তবায়নে ট্রাস্ট ফান্ড এবং উন্নয়ন প্রকল্পের আওতার জলবায়ু-সংশ্লিষ্ট অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে।
২. জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট আইন, ২০১০ সংশোধন করতে হবে। আইনে ট্রাস্টের জনবল নিয়োগ ও পদোন্নতির বিষয়ক ধারা সংযোজন করতে হবে। বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি স্বাধীন ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের বিধান যুক্ত করতে হবে। ট্রাস্ট থেকে কমপক্ষে একজন বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানসম্পন্ন কর্মকর্তাকে প্রকল্প প্রস্তাব মূল্যায়ন-সংক্রান্ত কারিগরি কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল অর্জনে সক্ষম বা ট্রান্সফর্মেটিভ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য তহবিলের আওতায় অর্থ বরাদ্দের সীমা বৃদ্ধি করতে হবে। জবাবদিহি নিশ্চিত এবং অনিয়ম-দুর্নীতি প্রতিরোধে দেশে প্রচলিত আইন, যেগুলো ট্রাস্টের জন্য প্রযোজ্য, তা সুনির্দিষ্ট করে ট্রাস্ট আইনে উল্লেখ করতে হবে। আর্থিক ও কারিগরি ব্যবস্থাপক হিসেবে বিসিসিটির কর্মকর্তাদের প্রকল্প প্রস্তাব মূল্যায়ন, প্রকল্প বাস্তবায়নের চুক্তি ও শর্তাবলি নির্ধারণ, প্রকল্প অনুমোদন, প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি ও অর্থ ছাড়, মাঠপর্যায়ে প্রকল্প তদারকি, প্রকল্প পরিবীক্ষণ এবং নথি ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত বিষয়ে দায়িত্ব স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করতে হবে। দুর্নীতি ও স্বার্থের দ্বন্দ্ব প্রতিরোধ, অংশীজনের অংশগ্রহণ, তহবিল ও প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট তথ্য উন্মুক্তকরণ, পরিবেশ ও সামাজিক মূল্যায়ন এবং নিয়মিত নিরীক্ষা-সংক্রান্ত বিষয় নতুন আইনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৩. রাজস্ব বাজেটের বাইরে বিসিসিটিকে উদ্ভাবনীমূলক কার্যক্রম, যেমন—আন্তর্জাতিক জলবায়ু তহবিল, কার্বন ট্রেডিং, ক্লিন ডেভেলপমেন্ট মেকানিজমসহ বেসরকারি অর্থায়ন উৎস থেকে তহবিল সংগ্রহে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
৪. থিমভিত্তিক, বিপদাপন্নতা ও ঝুঁকির ভৌগোলিক বিন্যাসভিত্তিক এবং বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানভিত্তিক অগ্রাধিকার নির্ধারণ করে বিসিসিটি প্রকল্প বাস্তবায়নে একটি সমন্বিত পথ নকশা প্রস্তুত করতে হবে। পথ নকশায় মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রমকে অন্তর্ভুক্ত করে সেই অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ, প্রকল্প অনুমোদন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
৫. বিসিসিটির আওতায় স্বল্পমেয়াদি এবং টাকার অঙ্ক ক্ষুদ্র প্রকল্প বাস্তবায়ন পরিহার করতে হবে। প্রান্তিক, দুর্গম ও ঝুঁকিপূর্ণ জেলা, উপজেলা এবং স্থান যেখানে সাধারণ উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে জলবায়ু ঝুঁকি কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব নয় এমন স্থানে বিসিসিটি থেকে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প বাস্তবায়নকে প্রাধান্য দিতে হবে।
৬. বাংলাদেশে বাস্তবায়িত জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক জলবায়ু তহবিলের প্রকল্প নিয়মিত তদারকি ও নিরীক্ষা করার জন্য একটি পৃথক স্বাধীন তদারকি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
৭. স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করে প্রকল্প অনুমোদন এবং বাস্তবায়নসহ ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর কাছে জলবায়ু তহবিল কার্যকরভাবে পৌঁছানো নিশ্চিতে বিপদাপন্নতার সূচক এবং ভৌগোলিক বা স্থানিক ঝুঁকিকে প্রাধান্য দিতে হবে।
৮. জাতীয় পর্যায়ে একটি প্রতিষ্ঠানকে জলবায়ু-সংক্রান্ত বিষয় সমন্বয়ের জন্য ফোকাল পয়েন্ট নির্ধারণ করতে হবে। সেই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিকল্পনাসহ অংশীজন সমন্বয় ও আন্তপ্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
৯. তহবিলসমূহের প্রকল্প বাস্তবায়নে বিবিধ অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে, অবকাঠামো ও সৌর সড়কবাতি-সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের স্বাধীন তদন্ত করতে হবে।

বাংলাদেশের অল্প কিছু বন-পাহাড়েই এখন টিকে আছে বুনো হাতিরা। তাও থাকার জায়গার সংকট, খাবারের অভাব আর মানুষের সঙ্গে দ্বন্দ্ব মিলিয়ে বিশাল আকারের এই প্রাণীরা আছে বড় বিপদে। আজ ১২ আগস্ট বিশ্ব হাতি দিবসে আমাদের দেশে বুনো হাতির অবস্থা, মানুষের সঙ্গে দ্বন্দ্ব, হাতির মুখোমুখি হওয়ার রোমাঞ্চকর গল্প ছাড়াও থাকছে হা
১২ আগস্ট ২০২৩
শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকেই ভারত উপমহাদেশের তিন প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধান শহরগুলো বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় শুরুর দশের মধ্যে অবস্থান করছে। এর মধ্যে আজ বুধবার এই তালিকায় শীর্ষে আছে ভারতের কলকাতা। শহরটির অবস্থা আজ খুব অস্বাস্থ্যকর। আজ ঢাকার বাতাসেও দূষণ কিছুটা বেড়েছে।
১১ ঘণ্টা আগে
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি আরও শক্তিশালী হয়েছে। এটি আজ বুধবার সকালে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করেছে। এর প্রভাবে চট্টগ্রাম উপকূলীয় অঞ্চলে বৃষ্টি হচ্ছে।
১৩ ঘণ্টা আগে
পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন মিয়ানমার উপকূলের কাছে একটি লঘুচাপ বিরাজ করছে। এটি উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে মিয়ানমার-বাংলাদেশ উপকূল বরাবর অগ্রসর হতে পারে। এর প্রভাবে উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে।
১ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ঘূর্ণিঝড় মোন্থার প্রভাব কাটতে না কাটতেই বঙ্গোপসাগরে আবারও লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার আবহাওয়া অধিদপ্তরের সতর্কবার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ খো. হাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত সতর্কবার্তায় বলা হয়, পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন মিয়ানমার উপকূলের কাছে একটি লঘুচাপ বিরাজ করছে। এটি উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে মিয়ানমার-বাংলাদেশ উপকূল বরাবর অগ্রসর হতে পারে। এর প্রভাবে উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন এলাকার ওপর দিয়ে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
এ জন্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
সতর্কবার্তায় উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
তবে চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চল ছাড়া লঘুচাপটির প্রভাব দেশের অন্যান্য অঞ্চলে পড়বে না বলে মনে করছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা।
আজ মঙ্গলবার সকালে আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা আজকের পত্রিকাকে বলেন, বঙ্গোপসাগরে এই লঘুচাপটির নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা খুব। এর প্রভাবে চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও আজ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া সিলেট বিভাগেও আগামীকাল বুধবার বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় মোন্থার প্রভাব কাটতে না কাটতেই বঙ্গোপসাগরে আবারও লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার আবহাওয়া অধিদপ্তরের সতর্কবার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ খো. হাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত সতর্কবার্তায় বলা হয়, পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন মিয়ানমার উপকূলের কাছে একটি লঘুচাপ বিরাজ করছে। এটি উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে মিয়ানমার-বাংলাদেশ উপকূল বরাবর অগ্রসর হতে পারে। এর প্রভাবে উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন এলাকার ওপর দিয়ে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
এ জন্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
সতর্কবার্তায় উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
তবে চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চল ছাড়া লঘুচাপটির প্রভাব দেশের অন্যান্য অঞ্চলে পড়বে না বলে মনে করছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা।
আজ মঙ্গলবার সকালে আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা আজকের পত্রিকাকে বলেন, বঙ্গোপসাগরে এই লঘুচাপটির নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা খুব। এর প্রভাবে চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও আজ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া সিলেট বিভাগেও আগামীকাল বুধবার বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

বাংলাদেশের অল্প কিছু বন-পাহাড়েই এখন টিকে আছে বুনো হাতিরা। তাও থাকার জায়গার সংকট, খাবারের অভাব আর মানুষের সঙ্গে দ্বন্দ্ব মিলিয়ে বিশাল আকারের এই প্রাণীরা আছে বড় বিপদে। আজ ১২ আগস্ট বিশ্ব হাতি দিবসে আমাদের দেশে বুনো হাতির অবস্থা, মানুষের সঙ্গে দ্বন্দ্ব, হাতির মুখোমুখি হওয়ার রোমাঞ্চকর গল্প ছাড়াও থাকছে হা
১২ আগস্ট ২০২৩
শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকেই ভারত উপমহাদেশের তিন প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধান শহরগুলো বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় শুরুর দশের মধ্যে অবস্থান করছে। এর মধ্যে আজ বুধবার এই তালিকায় শীর্ষে আছে ভারতের কলকাতা। শহরটির অবস্থা আজ খুব অস্বাস্থ্যকর। আজ ঢাকার বাতাসেও দূষণ কিছুটা বেড়েছে।
১১ ঘণ্টা আগে
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি আরও শক্তিশালী হয়েছে। এটি আজ বুধবার সকালে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করেছে। এর প্রভাবে চট্টগ্রাম উপকূলীয় অঞ্চলে বৃষ্টি হচ্ছে।
১৩ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের জলবায়ু তহবিলের বরাদ্দে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটির সর্বশেষ গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতীয় জলবায়ু তহবিল বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্টের (বিসিসিটি) বরাদ্দের ৫৪ শতাংশেই দুর্নীতি হয়েছে। ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়
১ দিন আগে