Ajker Patrika

ছোট শিল্পীদের বড় সুযোগ

মীর রাকিব হাসান
আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০২১, ২০: ০৭
ছোট শিল্পীদের বড় সুযোগ

ঢাকা: বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো সাত দিন ব্যস্ত থাকে শুধু ঈদকে ঘিরে। গত বছর কারোনার কারণে লন্ডভন্ড ছিল টিভি শিডিউল। নতুন-পুরোনোর সংমিশ্রণ করে চলতে হয়েছে ঈদের অনুষ্ঠানমালাকে।

একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এবারও। টানা ২১ দিনের লকডাউনের কবলে পড়ে ঈদকে ঘিরে যথেষ্ট নাটক তৈরি হয়নি। বড় তারকারা নিজেদের শুটিং থেকে বিরত রেখেছেন প্রায় এক মাস। যদিও সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে শুটিং বন্ধের কোনো নির্দেশনা ছিল না।

ধারণা করা হচ্ছে, এবারের ঈদেও টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রি কয়েক কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়বে। গত বছর নাটকের বাজারের ক্ষতি হয়েছিল প্রায় ৫০ কোটি টাকা। সেক্ষেত্রে আশার কথা শুনিয়েছেন টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রির অনেকে। গত বছরের চেয়ে এবারের দৃশ্যপট অনেকটা আলাদা। ঈদ অনুষ্ঠানমালার ৫০ শতাংশের বেশি কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। সরকার লকডাউন তুলে দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে ঈদের আগে টানা শুটিং চলবে বলেও প্ল্যান করছেন জনপ্রিয় নির্মাতারা।

প্রথম সারির অভিনয়শিল্পীরা এগিয়ে না এলেও অনেকেই কাজ করছেন, করতে মুখিয়ে আছেন। অনেকের এখনই নিজেদের প্রমাণ করার পালা। বর্তমানে ব্যস্ত সময় পার করছেন সৈয়দ জামান শাওন, মুমতাহিনা টয়া, জিয়াউল হক পলাশ, মিশু সাব্বির, এফএস নাইম, রিয়া, জোভান প্রমুখ। বড় তারকাদের অনুপস্থিতির কারণে তাঁদের ডাক আসছে। নির্মাতা ও টিভি চ্যানেল কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে দ্বিতীয় সারির অভিনয়শিল্পীদের ওপরই ভরসা রাখছেন।

আগামী ঈদ অনুষ্ঠানে এসব তারকারা টিভিপর্দা মাতাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটি হবে তাঁদের জন্য বড় সুযোগ।

প্রতিটি টিভি চ্যানেলে সারা বছর নানা আয়োজন থাকলেও শুধু ঈদকে ঘিরে থাকে টানা সাত দিনের আয়োজন। রিয়েলিটি শো, রান্না, নাচ-গান ও নানা আয়োজনে মুখর থাকে টিভি চ্যানেলগুলো। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাজেট থাকে একক নাটক, ঈদ ধারাবাহিক ও টেলিফিল্মে। সব মিলিয়ে প্রায় ৫০ কোটি টাকা লেনদেন হয় শুধু ঈদের নাটকের বাজারে। কিন্তু করোনাকালে এই সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। এই ক্ষতির বেগ পেতে হবে যৌথভাবে নাটকের সঙ্গে জড়িত মানুষ এবং টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিকে। আসন্ন ঈদ নিয়ে পাঁচ শতাধিক নাটকের কাজ হওয়ার কথা থাকলেও করোনা পরিস্থিতিতে তা সম্ভব হচ্ছে না।

প্রায় এক মাস শুটিং হয়েছে হাতে গোনা। বড় তারকারা ঘরবন্দী হয়ে আছেন। দুই শতাধিক নাটকের শুটিং বাতিল হয়েছে। কিছু শুটিং হলেও তা একেবারেই জনসমাগম এড়িয়ে করা হচ্ছে। কোনো কোনো নির্মাতা অবশ্য বিকল্প পথ হিসেবে ইনডোরে শুটিং করার পরিকল্পনা করেন। প্রায় প্রতিটি টেলিভিশন চ্যানেল ইনডোরে অনুষ্ঠান নির্মাণ করেছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আগমনের আগেই নির্মাণ শেষ হয়েছে, সে সংখ্যা নেহাত কম নয়। সেগুলোর প্রচার অনেকটাই নিশ্চিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন নির্মাতা।

যাঁরা শুটিং করছেন না

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যাঁদের দর্শক কিংবা বাজার বেশি তাঁরাই শুটিং করছেন না। ফলে অনেক নাটকের শুটিং বাতিল করতে হয়েছে। সে তালিকায় মোশাররফ করিম, জাহিদ হাসান, চঞ্চল চৌধুরী, তাহসান, অপূর্ব, নিশো, মেহজাবীন, সাবিলা নূর, তাসনিয়া ফারিনসহ অনেকের নাম রয়েছে।

করোনাকালে শুটিং বন্ধ রেখেছেন মোশাররফ করিম

যা বলছেন অভিনেতা–নিমার্তা

মোশাররফ করিম, অভিনেতা

ব্যক্তিগত কাজে এই মুহূর্তে ভারতে আছি। চলতি মাসের সব কাজই বাতিল করেছি। ২৭ এপ্রিল ঢাকায় ফেরার কথা। পরিস্থিতি কাজের উপযোগী নয়। কিছু নাটকের শিডিউল এখনো দেওয়া আছে। সেসব শুটিং করা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে। তবে ঝুঁকি নিয়ে কোনো কাজ করব না।

আফরান নিশো, অভিনেতা

প্রথম দিকে ভেবেছিলাম কাজ করব। করোনা পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করায় কাজ কমিয়ে দিই। লকডাউনে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে পনেরোটি নাটকের শুটিং বাতিল করেছি। পরিস্থিতি এখনো ভালো নয়। লকডাউন শিথিল করলে হয়তো কিছু কাজ করতে পারি।

মেহজাবিন চৌধুরী, অভিনেত্রী

গত মাসের ২৯ তারিখ থেকে শুটিং করছি না। এখন পর্যন্ত ১০টি কাজ বাতিল করেছি। ঈদের আগে পরিস্থিতি ভালো না হলে আরও কমপক্ষে ১০টি নাটকের শুটিং বাতিল করতে হবে। শুটিং শেষে তো আমার বাসায় ফিরতে হবে। আমার জন্য পরিবারকে বিপদে ফেলতে পারি না।

মিজানুর রহমান আরিয়ান, নির্মাতা

আমি ইতিমধ্যে পাঁচটি নাটকের শুটিং বন্ধ করেছি। এর মধ্যে ‘যদি কোনো দিন’ নাটকে অপূর্ব ও মেহ্‌জাবীনের অভিনয় করার কথা ছিল। ঈদের আগে কাজ করতে পারব কি না, জানি না। দুজনের সঙ্গে গতকালও কথা বললাম। তাঁরা অনীহা প্রকাশ করেছেন। সেক্ষেত্রে বিকল্প ভাবতে হতে পারে।

যা বলছেন প্রযোজক ও চ্যানেল

আর্টিস্ট বেজড দর্শক তৈরি করে ফেলেছি

সাজু মুনতাসির, সাধারণ সম্পাদক, টেলিভিশন প্রডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশন

আমাদের ব্যর্থতা আমরা আর্টিস্ট বেজড দর্শক তৈরি করে ফেলেছি। যদি কনটেন্ট বেজড দর্শক তৈরি করতে পারতাম তাহলে আমাদের এ বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করতে হতো না। আমার সঙ্গে তারকাদের অনেকেরই কথা হয়েছে। তাঁরা আবার নতুন করে কাজ শুরুর ব্যাপারে ভাবছেন। আমার মনে হয়, যদি দু–এক দিনের মধ্যে নিয়ম মেনে শুটিং করা যায় তাহলে ক্ষতির পরিমাণ কম হবে। গতকালও পুবাইলে ৭টি পার্টি কাজ করেছে বলে খবর পেয়েছি। তবে যেটা হয়েছে যাদের প্রতি দর্শকের চাহিদা বেশি তারা কাজ না করায় অন্য শিল্পী নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। প্ল্যান বি করেও অনেকে কাজ শেষ করছেন। এতে কিছুটা ক্ষতি হয়তো হবে।

দুই শ থেকে আড়াই শ নাটক কম হবে

তারেক আখন্দ, অনুষ্ঠান প্রধান, বাংলাভিশন

মার্কেট যাঁদের ওপর নির্ভর করে সেসব তারকাদের বড় একটা অংশ এবার লকডাউনে শুটিং করছেন না। তার ফলে মানি ফ্লো ব্যাপক অর্থে বন্ধ আছে। সেটার প্রভাব সবকিছুর ওপর পড়বে বলে মনে হচ্ছে। এবার দুই শ থেকে আড়াই শ নাটক কম হবে। তবে প্রভাবটা গতবারের মতো হবে না। কারণ, সেবার তো আতঙ্কে সব বন্ধ ছিল। আর এবার কিছু কাজ হয়েছে। সেদিক থেকে হয়তো ক্ষতির পরিমাণটা কিছুটা কম হতে পারে।

ঈদের টেলিভিশন নাটকের কাজগুলো শেষ

এসকে শাহেদ আলী পাপ্পু, কর্ণধার, সিএমভি

বিভিন্ন টেলিভিশনে অনেক আগেই ঈদের অনুষ্ঠানমালার পরিকল্পনা করা হয়। সে অনুযায়ী কাজ করে, ফলে ঈদের টেলিভিশন নাটকের কাজগুলো কিন্তু শেষ হয়ে গেছে। এখন অনলাইন বা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের জন্য কাজগুলো হতো। এগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট সবারই ক্ষতি হবে। এই যে শিল্পীরা কাজ করল না, সেটার একটা ধাক্কা ইন্ডাস্ট্রিতে পড়বে। সামনে কোরবানির ঈদ আছে, তার পরিকল্পনা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। নতুনদের বড় সুযোগ দিতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত