Ajker Patrika

‘নয়া দামান’–এর জট খুলল

‘নয়া দামান’–এর জট খুলল

ঢাকা: অস্ত্রোপচারের করিডরে ওটির ড্রেস পরেই গানের তালে নাচলেন তিনজন চিকিৎসক। তাঁদের সেই নাচের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ভিডিওতে দেখা যায় একজন পুরুষ ও দুজন নারী চিকিৎসক গানের তালে নাচছেন। গানটি ছিল সিলেটের ভাষায়। গান বাজছে ‘আইলারে নয়া দামান আসমানেরও তেরা...’।

মুজাহিদুর আব্দুল্লাহ (মুজা)।নিউ ইয়র্ক প্রবাসী সিলেটি তরুণ মুজাহিদুর আব্দুল্লাহ (মুজা) গানটির নতুন সংগীতায়োজন করেছেন। একই সঙ্গে সিলেটের এই বিখ্যাত আঞ্চলিক গানের সঙ্গে র‌্যাপ অংশ জুড়ে দিয়েছেন। বাঁশি বাজিয়েছেন মীম। আর গানটি গেয়েছেন সিলেটেরই মেয়ে তোশিবা বেগম। ‘নয়া দামান’-এর আধুনিক ভার্সনের স্রষ্টাদের পাওয়া গেলেও বিতর্ক তৈরি হয়েছে এই গানের মূল গীতিকার ও সুরকার নিয়ে। গানের স্থায়ীটা (উৎসমুখ) একই রকম রেখে বাকি অন্তরাগুলোর বিভিন্ন সময় পরিবর্তন, পরিমার্জন ও পরিবর্ধন হয়েছে। একেকজন একেকভাবে গেয়েছেন। গানের ভণিতায় গীতিকারের নাম না থাকায় বিভ্রান্তি বেড়েছে। ফলে এতকাল ধরে এটি মূলত সিলেট অঞ্চলের বিয়ের গান বা লোকগান হিসেবেই বিবেচিত হয়ে আসছে। লোকসংস্কৃতির গবেষক সুমনকুমার দাশ বলেন, ‘২০১৩ সালে আমাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সংগীতজ্ঞ রামকানাই দাশ গানটি তাঁর মা দিব্যময়ী দাশের রচনা বলে জানিয়েছিলেন। অবশ্য সেই গানের কথায় দামান শব্দের বদলে জামাই শব্দ রয়েছে।’ পণ্ডিত রামকানাই দাশের মেয়ে কাবেরী দাশ ও কানাডাপ্রবাসী ছেলে পিনুসেন দাশ বলেন, ‘এই গান আমার ঠাকুরমা দিব্যময়ী দাশের। ছোটবেলা থেকেই এটা শুনে আসছি। আমার বাবা রামকানাই দাশ বিভিন্ন বই ও সাক্ষাৎকারে তা বলে গেছেন। বাবা গীতিকার হিসেবে দিব্যময়ী দাশের নাম উল্লেখ করে বিভিন্ন জায়গায় এই গান গেয়েছেনও। ফলে এ নিয়ে বিতর্ক বা কোনো প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই।’

সিলেট অঞ্চলের এই গান এখনো কপিরাইট ফ্রি। অর্থাৎ, যে কেউ গানটি বাণিজ্যিকভাবে গাইতে ও ব্যবহার করতে পারবেন। এটি করেছেন বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের রেজিস্ট্রার জাফর রাজা চৌধুরী।

 জাফর রাজা চৌধুরী বলেন, ‘এঁদের কেউ বা তাঁদের পরিবারের কেউ যদি এর স্বত্ব চেয়ে কপিরাইটের জন্য আবেদন করতেন, তাহলে নিশ্চয়ই তা যাচাই করে দেখা যেত। কিন্তু এখন পর্যন্ত এমন কোনো আবেদন আমাদের কাছে আসেনি।’

জানা যায়, ১৯৭৩ সালে ইয়ারুন্নেছা খানম নামের একজন কণ্ঠশিল্পীর কণ্ঠে প্রথম রেকর্ড করা হলেও গানটি ১৯৭৩-৭৪ সালে সমবেত কণ্ঠে সিলেট বেতারে গাওয়া হয়। বেতারের জন্য এই গানের সুর করেছিলেন সিলেট বেতারের সংগীত প্রযোজক আলী আকবর খান। গানের গীতিকার হিসেবে দিব্যময়ী দাশের নাম জানা যায়। ‘নয়া দামান’ গানটি মূলত সিলেট অঞ্চলের বিয়ের গান। আঞ্চলিক ভাষায় রচিত গানটি অর্ধশতাধিক বছর ধরে গীত হয়ে আসছে সিলেটের বিভিন্ন বিয়ের আসরে।

জাফর রাজা চৌধুরী বিস্তারিত তুলে ধরে বলেন, ‘গানের কপিরাইট থাকে ৬০ বছর। এই সময়ের পরে যেকোনো গান যে কেউ গাইতে পারে বা বাণিজ্যিকভাবেও ব্যবহার করতে পারে। যেমন ধরেন ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই’ গানটি এখন যে কেউ গাইতে পারবেন। কিন্তু নৈতিকভাবে আসল সুরকার, গীতিকার ও কণ্ঠশিল্পীর নাম উল্লেখ করতে হবে।’

 সিলেটী মেয়ে তোশিবা বেগম।তিনি আরও বলেন, ‘দিব্যময়ী দাশের কথায় কণ্ঠশিল্পী ইয়ারুন্নেছা খানম যে গানটি গেয়েছেন, তার কোনো প্রমাণ কিন্তু এখনো পাওয়া যায়নি। তা ছাড়া, আলী আকবর খান যে রেডিওতে সুর করেছেন, সেটিও কিন্তু মূল সুর না। আগে একটা সুর ছিল। সেটিই তিনি রেডিওতে তাঁর মতো করে তৈরি করেছেন। তাই তাঁকে বা তার পরিবারকে কোনো স্বত্ব দেওয়া অনিয়ম হবে।’

গানটির স্বত্ব কেউ নিয়ে থাকলে তা ধরা হবে গানটির প্রকাশকাল তথা ১৯৭৩-৭৪ সাল থেকে। কেউ যদি প্রমাণ করে স্বত্ব নেনও, তাহলে আর দুই অথবা তিন বছর সেই স্বত্ব বা রয়েলিটি উপভোগ করতে পারবেন তিনি। প্রকাশের সময় থেকে ৬০ বছর পূরণ হলেই গানটি সবার জন্য উন্মুক্ত হয়ে যাবে।

তাই নিশ্চিন্তে বলা যায়, ‘নয়া দামান’ গানটি এখনো কপিরাইপ ফ্রি। কেউ নিয়ে থাকলেও দুই-তিন বছরের মধ্যে গানটি পুরোপুরিভাবে সবার জন্য উন্মুক্ত হয়ে যাবে।

বিষয়:

গান
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৪ বার কল দিয়েছেন ট্রাম্প, ধরেননি মোদি

প্রায় ৭ লাখ টাকার ধার শোধ না করায় এসপি থেকে অতিরিক্ত এসপি হলেন নিহার রঞ্জন হাওলাদার

জিন সম্পাদনায় নতুন সাফল্য, ডায়াবেটিস রোগীদের আর ইনসুলিন নিতে হবে না

অবৈধ মোবাইল দিয়ে বন্দীরা আমাকে কল করেন, এটা বিস্ময়কর: কারা মহাপরিদর্শক

ফজলুর রহমানের পদ ৩ মাসের জন্য স্থগিত করল বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত