Ajker Patrika

বিটিএস ফিরেছে, কিন্তু বদলে গেছে কে-পপের জগৎ

অনলাইন ডেস্ক
এবারের বিটিএস-ফেস্টায় যোগ দিয়েছিলেন ব্যান্ডটির সাত তারকাই। ছবি: সংগৃহীত
এবারের বিটিএস-ফেস্টায় যোগ দিয়েছিলেন ব্যান্ডটির সাত তারকাই। ছবি: সংগৃহীত

সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য প্রায় দুই বছর পর অবশেষে ফিরে এসেছে দক্ষিণ কোরিয়ার বিখ্যাত ব্যান্ড বিটিএস। ভক্তদের আবেগ আর অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে এই প্রত্যাবর্তন শুধু সংগীত জগৎ নয়, পুরো কে-পপ শিল্পকেই আবার আলোচনায় এনে দিয়েছে। শুধু প্রত্যাবর্তনই নয়, এই তারকারা দুই বছর বিরতির পর গত ১৪ জুন অংশ নিয়েছেন সিউলের বিখ্যাত বিটিএস-ফেস্টায়ও। ব্যান্ডটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতিবছর এই সংগীত উৎসবের আয়োজন করা হয়।

বিবিসি জানিয়েছে, এই উৎসবে অংশ নিতে আর প্রিয় তারকাদের একনজর দেখতে সম্প্রতি ব্রাজিল থেকে দক্ষিণ কোরিয়ায় যান বিটিএস-এর ভক্ত স্টেফানি প্রাডো। প্রিয় তারকাদের দীর্ঘ অনুপস্থিতির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি ওদের খুব মিস করেছি।’

এই বছরটি বিটিএস ব্যান্ডের জন্য ছিল বিশেষ। কারণ তাঁদের সাত সদস্যের মধ্যে পাঁচজন—আরএম, ভি, জিমিন, জাং কুক এবং সুগা প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করে সেনাবাহিনী থেকে মুক্ত হয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন দলের বাকি দুই সদস্য জিন এবং জে-হোপও।

তারকাদের সামরিক ধকলের কথা চিন্তা করে স্টেফানি বলেন, ‘আমি চাই ওরা বিশ্রাম নিক। কিন্তু অবশ্যই নতুন অ্যালবাম, কনসার্ট—সবকিছুই চাই।’

২০২২ সালে বাধ্যতামূলক সামরিক দায়িত্ব পালনের জন্য বিটিএস বিরতি নিয়েছিল। এই ফাঁকে কে-পপ শিল্প অনেক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে। বিশেষ করে, এই শিল্পের রেকর্ড বিক্রিতে ভাটা পড়েছে, কিছু স্ক্যান্ডাল ছড়িয়েছে এবং তীব্র সমালোচনার মুখে শিল্পীদের অতিরিক্ত মানসিক চাপও সইতে হয়েছে।

তবে সময়টির উল্লেখ করে সংগীত সমালোচক কিম ইয়ং-দে বলেন, ‘বিটিএস ছাড়া কে-পপ যেন তার অন্যতম স্তম্ভ হারিয়েছিল।’ তিনি মনে করেন, তাদের ফিরে আসা আবার কে-পপে নতুন গতি আনবে।

এবারের বিটিএস-ফেস্টায় শুধু স্টেফানিই নয়, সকাল থেকেই সিউলের কাছাকাছি গোয়াং-এ ভিড় করেছিল হাজার হাজার ভক্ত। তাঁদের মধ্যে ইংরেজি, চীনা, জাপানি, স্প্যানিশের মতো বিভিন্ন ভাষার শব্দই বলে দিচ্ছিল, এই উৎসব শুধু কোরিয়ানদের নয়, গোটা বিশ্বের।

দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এসেছিলেন ভুইয়ো মাতিবানে। তারকাদের বিরতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘১৮ মাস যেন অনন্তকাল।’ দক্ষিণ কোরিয়ায় পা রেখে বিটিএস-এর প্রিয় রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন স্থানে গেছেন মাতিবানে। তিনি বলেন, ‘প্রতিটা জায়গায় আমি কেঁদেছি। যখন ওদের সেনাবাহিনী থেকে ছাড় পাওয়ার লাইভ দেখলাম, তখন তো নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি।’

নেদারল্যান্ডস থেকে আসা ফারা আলা বলেন, ‘বিটিএস-এর মতো একই বাতাসে নিশ্বাস নেওয়া, পানি খাওয়া—এটাই আমাদের জন্য যথেষ্ট।’

দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক সেবা অনেক তারকার জন্যই ক্যারিয়ারে কঠিন ধাক্কা। অনেকে ফিরে এসে আর জনপ্রিয়তা ফিরে পান না। নতুন নতুন ব্যান্ড প্রতিনিয়ত আত্মপ্রকাশ করে। তারা কিশোর প্রজন্মের মনোযোগ কাড়ে।

বিটিএস ও ব্ল্যাকপিংক-এর অনুপস্থিতিতে কে-পপ শিল্পে চতুর্থ ও পঞ্চম প্রজন্মের ব্যান্ডগুলোর উত্থান ঘটেছে। নতুন নতুন দল, যেমন আইভিই বা নিউজিন্স ভিন্ন ধারা ও স্টাইল নিয়ে এসেছে। ১৩ বছরের এক কিশোর ভক্ত বলেন, ‘আমাদের বয়সী ছেলেমেয়েরা এখন নতুন ব্যান্ডকেই বেশি পছন্দ করে। বিটিএস আমাদের কাছে পুরোনো প্রজন্মের মতো লাগে।’

কিন্তু এই শিল্পের বড় চ্যালেঞ্জ হলো, ২০২৩ সালের পর থেকে অ্যালবাম বিক্রির পরিমাণ কমে যাওয়া। কনসার্ট থেকে আয় থাকলেও মূলধারার মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে ধস নেমেছে। পাশাপাশি কিছু বড় ব্যান্ডের সঙ্গে তাদের ম্যানেজমেন্টের দ্বন্দ্ব, শিল্পীদের হয়রানি, আর শিল্পী সংস্থাগুলোর কর্তৃত্ব নিয়েও সমালোচনা বেড়েছে।

তবে বিটিএস-এর প্রত্যাবর্তনকে আশার প্রতীক হিসেবেই দেখা হচ্ছে। সংগীত সমালোচক পার্ক হি-আ বলেন, ‘বিটিএস-এর প্রত্যাবর্তন শুধু ভক্তদের জন্য নয়, কোরিয়ার সাংস্কৃতিক প্রভাব বা সফট পাওয়ার-এর দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।’

বিটিএস তারকা আরএম-এর কণ্ঠেও আশার কথা শোনা গেছে। তিনি বলেন, ‘আমি দ্রুত নতুন অ্যালবাম তৈরি করব এবং মঞ্চে ফিরব।’ যদিও জে-হোপ ও জিন-এর টানা কনসার্ট সূচি, আর সুগার সাম্প্রতিক স্ক্যান্ডাল—সব মিলিয়ে পুরো ব্যান্ডের অ্যালবাম আসতে হয়তো আগামী বছর লেগে যাবে।

তারপরও স্টেফানির মতো লাখ লাখ ভক্তের জন্য এতটুকু যথেষ্ট—বিটিএস ফিরে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত