Ajker Patrika

সত্যজিৎ-সৌমিত্রের স্মৃতিধন্য বাড়ি, হাত বদলে হয়ে যাচ্ছে করপোরেট অফিস

আপডেট : ০১ জুন ২০২৪, ১৪: ১০
সত্যজিৎ-সৌমিত্রের স্মৃতিধন্য বাড়ি, হাত বদলে হয়ে যাচ্ছে করপোরেট অফিস

দক্ষিণ কলকাতার, ৩ লেক টেম্পল রোডের তিনতলা বাড়িটির ফ্ল্যাটে একসময় সপরিবারে বাস করেছেন গুরু-শিষ্য—সত্যজিৎ রায় ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। বাংলা সিনেমার দুই কৃতীর স্মৃতিধন্য সেই বাড়িই এখন হাত বদলে চলে গেছে করপোরেট সংস্থার হাতে। ঐতিহাসিক বাড়িটির বর্তমান অবস্থা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার অনলাইন।

১৯৫৯ সালে ৩ লেক টেম্পল রোডের বাড়িতে থাকতে শুরু করেন সত্যজিৎ রায়। বাড়ির মালিক বারীন্দ্রনাথ বসুর কাছ থেকে তিনতলার ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন তিনি। ওই বাড়িতে সত্যজিৎ ছিলেন ১৯৭০ সাল পর্যন্ত। তাঁরপর উঠে আসেন বিশপ লেফ্রয় রোডের বাড়িতে। পরের বছর থেকে ওই একই ফ্ল্যাট ভাড়া নেন সৌমিত্র। তিনি ওই বাড়িতে ছিলেন ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত। প্রায় তিন দশক বাড়িটি দুই খ্যাতনামা ব্যক্তিত্বের জীবনযাত্রার সাক্ষী থেকেছে।

লেক টেম্পল রোডে বাড়িটির মূল কাঠামো এখনো আগের মতোই রয়েছে। তবে ভেতরে চলছে সংস্কারকাজ। বাইরে নতুন করে সিমেন্টের প্লাস্টার করা হচ্ছে। জানালা ও দরজার ফ্রেমের আকারও বদলে ফেলা হচ্ছে। বাড়ির মূল গেটে ঝুলছে তালা। অতীতের ‘বসু’ ফলকের পরিবর্তে এখন লেখা হয়েছে ‘মেট্রো আর্ক—ফার্স্ট ইন সিলিকনস ইন ইন্ডিয়া’।

বছর পাঁচেক আগে বারীন্দ্রনাথ বসু ও তাঁর স্ত্রী প্রয়াত হন। বছর দু-এক আগেই তাঁদের তিন ছেলে বাড়িটি বিক্রি করে দেন চুপিসারে।

লেক টেম্পল রোডের বাড়ি যে বিক্রি হয়ে গেছে, সে খবর জানতেন না সত্যজিৎপুত্র সন্দীপ রায়। আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে সন্দীপের প্রতিক্রিয়া, ‘সে কী! কবে বিক্রি করা হলো! ওই বাড়িতে তো আমার ছোটবেলার প্রচুর স্মৃতি।’ সত্যজিতের পর ওই একই বাড়িতে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় কেন থাকতে শুরু করেছিলেন, তার নেপথ্যে সম্ভাব্য কারণ ব্যাখ্যা করলেন সন্দীপ। তাঁর কথায়, ‘সৌমিত্রকাকুর আগের বাড়িটা খুব বড় ছিল না। তারপর যখন জানতে পারলেন যে আমরা চলে যাচ্ছি, তখন তিনি বাবার কাছে ওই ফ্ল্যাটেই থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। বিষয়টা এভাবেই এগোয়।’

লেক টেম্পল রোডের বাড়ির বাইরে নতুন ফলক। ছবি: আনন্দবাজারলেক টেম্পল রোডের বাড়িতে থাকাকালীনই সত্যজিৎ তাঁর পেশাগত জীবনের নতুন আঙিনায় প্রবেশ করেন। ওই বাড়িতেই তাঁর কলমে ফেলুদা এবং প্রফেসর শঙ্কুর জন্ম। সন্দীপ বলেন, ‘১৯৬১ সালে ওই বাড়িতেই তো ‘‘সন্দেশ’’ পত্রিকার নবজন্ম। এমনকি, ‘‘প্রতিদ্বন্দ্বী’’র বেশ কিছু কাজও ওই বাড়িতে শুরু হয়। কিন্তু, শেষ হয় আমাদের বর্তমান বাড়িতে এসে।’

সন্দীপ আরও জানালেন, বছর পাঁচেক আগে এক পরিচিতের সূত্রে লেক টেম্পল রোডের বাড়ির কিছু ছবি তিনি দেখেছিলেন। বাড়ির অন্দরের কিছু কিছু পরিবর্তন তখনই তাঁর নজরে আসে। তবে এই বাড়িতে তাঁর শৈশবের সেরা সময় কাটিয়েছেন বলেই জানালেন সন্দীপ। বললেন, ‘ওই বাড়িতে ঠাকুমা, দিদা সবাই থেকেছেন। তিন তলায় থাকতাম বলে ছাদটা ছিল আমাদের উপরি পাওনা। মনে আছে, ছাদে জন্মদিন পালন ও অন্যান্য অনুষ্ঠানও হতো।’ একই সঙ্গে সন্দীপ জানালেন, ওই বাড়িতে থাকাকালীনই রায় পরিবারে পিয়ানোর প্রবেশ। সন্দীপের কথায়, ‘ও বাড়ি থেকেই তো বাবার সংগীত পরিচালনার সূত্রপাত। তাই বাবার ক্ষেত্রে সব দিক থেকেই ওই বাড়ি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।’

লেক টেম্পল রোডের বাড়িটির মালিকানা বদল নিয়ে অবগত নন সৌমিত্রকন্যা পৌলোমী চট্টোপাধ্যায়ও। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘খবরটা জানতাম না। ওখানে অফিস হবে! ভাবতে পারছি না।’ পৌলোমী জানালেন, তাঁর বড় হওয়ার দিনগুলোর যাবতীয় সুখস্মৃতি লেক টেম্পল রোডের বাড়ির সঙ্গেই জুড়ে রয়েছে। বললেন, ‘এই বাড়িকে আমরা কোনো দিন ভাড়াবাড়ি হিসেবে দেখিনি। বাবা কত ভালো ভালো কাজ ওই বাড়িতে থাকাকালীন করেছিলেন! সামনের বাগানে স্কুল থেকে ফিরে খেলাধুলো করার দিনগুলো এক ঝটকায় মনে পড়ে গেল। ওই পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে আজও আমার যোগাযোগ রয়েছে।’ ছেলেবেলার স্মৃতির হাতবদলে পৌলোমীর মনে কি কোনো আক্ষেপ কাজ করছে? পৌলোমী বলেন, ‘আক্ষেপ নেই, কাউকে দোষারোপও করতে চাই না। কারণ, দিনের শেষে ওটা ব্যক্তিগত সম্পত্তি। অনেক সময়েই অনেক কিছু করে ওঠা সম্ভব হয় না।’

সন্দীপ রায় ও পৌলোমী চট্টোপাধ্যায় । ছবি: সংগৃহীত২০১৪ সালে এই বাড়িতেই তাঁর ‘ফেলুদা: ফিফটি ইয়ারস অব রেজ ডিটেকটিভ’ তথ্যচিত্রের আংশিক শুটিং করেছিলেন পরিচালক সাগ্নিক চট্টোপাধ্যায়। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। ওই বাড়িতেই তো লেখক সত্যজিৎ রায়ের শুরু। ফেলুদার জন্ম ওই বাড়িতে বলে সেখানে শুটিং করতেই হয়েছিল।’

ব্যক্তিগত মালিকানার কোনো সম্পত্তির হাতবদল নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে না। কিন্তু যে বাড়ির ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে, সেখানে সরকারি পদক্ষেপ হয়তো করা যেত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের বাড়িও ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ছিল। কিন্তু উদ্যোগ নিয়ে সেগুলো সংরক্ষণের উদাহরণও আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত