Ajker Patrika

আউটকাম বেসড পড়াশোনা যেমন হয়

মো. আল-আমীন
আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২: ৪২
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

শিক্ষা নিয়ে আলোচনা নতুন কিছু নয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে একটি নতুন শিক্ষাপদ্ধতি—আউটকাম বেসড এডুকেশন। এই শিক্ষার মূল দর্শন হলো শিক্ষক কী পড়াচ্ছেন বা বইয়ে কী লেখা আছে, তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো শিক্ষার্থীরা আসলে কী শিখছে এবং সেই শেখা বাস্তব জীবনে কতটা কাজে লাগাতে পারছে। অর্থাৎ শিক্ষার্থীর দক্ষতা, মনোভাব ও ব্যবহারিক প্রয়োগই এখানে মাপকাঠি। আউটকাম বেসড পড়াশোনা নিয়ে লিখেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আল-আমীন

কেন দরকার আউটকাম বেসড শিক্ষা

দেশে ডিগ্রিধারী অনেক শিক্ষার্থীই বাস্তব সমস্যার সমাধানে অপ্রস্তুত। এখানে আউটকাম বেসড শিক্ষার প্রাসঙ্গিকতা। এই মডেলে নির্ধারণ করে দেওয়া হয় স্নাতক শেষে একজন শিক্ষার্থী কী ধরনের সমস্যা সমাধান করতে পারবে, কীভাবে দলগতভাবে কাজ করবে, তার নৈতিক অবস্থান কতটা দৃঢ় হবে ইত্যাদি। অর্থাৎ শিক্ষার উদ্দেশ্য শুধু ডিগ্রি নয়, দক্ষতা।

প্রচলিত শিক্ষার সঙ্গে পার্থক্য

প্রচলিত শিক্ষায় মুখস্থ বিদ্যা, বই শেষ করা এবং পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়া মূল লক্ষ্য। কিন্তু আউটকাম বেসড শিক্ষায় জোর দেওয়া হয় সমালোচনামূলক চিন্তাশক্তি, যোগাযোগ দক্ষতা, বাস্তব জীবনে জ্ঞানের প্রয়োগ, সামাজিক ও নৈতিক দায়িত্ববোধের ওপর। ফলে শিক্ষার্থীর শিক্ষা পরীক্ষার খাতায় সীমাবদ্ধ না থেকে জীবনে প্রতিফলিত হয়।

বাংলাদেশে বর্তমান অবস্থা

এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষায় আউটকাম বেসড কারিকুলাম চালুর নির্দেশ দিয়েছে। মেডিকেল শিক্ষায়ও ধাপে ধাপে এর প্রয়োগ শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে ওয়াশিংটন অ্যাকর্ড ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষায় আউটকাম বেসড অ্যাক্রিডিটেশন বাধ্যতামূলক করেছে, আর বাংলাদেশও ধীরে ধীরে তার সঙ্গে তাল মেলাচ্ছে। তবে বড় চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে শিক্ষক প্রশিক্ষণ, আধুনিক মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু এবং অবকাঠামো উন্নয়নে।

ইতিবাচক সম্ভাবনা

আউটকাম বেসড শিক্ষা পুরোপুরি কার্যকর হলে শিক্ষার্থীরা ডিগ্রির পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রের জন্য আরও প্রস্তুত হয়ে বের হবে। নিয়োগদাতারা দক্ষ কর্মী পাবে, শিক্ষার্থীর আত্মবিশ্বাস বাড়বে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ডিগ্রির স্বীকৃতি আরও শক্তিশালী হবে।

চ্যালেঞ্জ ও করণীয়

বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের প্রেক্ষাপটে হঠাৎ আউটকাম বেসড শিক্ষা চালু করলে তা কেবল কাগুজে সংস্কারেই সীমিত থাকতে পারে। শিক্ষক প্রশিক্ষণ, পর্যাপ্ত অবকাঠামো ও সহজবোধ্য কারিকুলাম ছাড়া শিক্ষার্থীরা নতুন চাপে পড়বে। তাই করণীয় হলো—

  • শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও কর্মশালা বাধ্যতামূলক করা
  • ধাপে ধাপে কারিকুলাম সংস্কার করা
  • স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত আউটকাম বেসড ধারণার ধীর বিস্তার ঘটানো
  • শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বোঝানো যে নম্বর নয়, আসল লক্ষ্য হলো দক্ষতা অর্জন।

আউটকাম বেসড শিক্ষা বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন দিক উন্মোচন করতে পারে। তবে এটি সফল হবে তখনই, যখন বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা যাবে। নতুন নামে পুরোনো শিক্ষা চালু করলে কোনো লাভ নেই; শিক্ষার্থীরা যদি বাস্তব জীবনের জন্য প্রস্তুত হতে পারে, তাহলেই আউটকাম বেসড শিক্ষাকে সফল বলা যাবে।

অনুলিখন: সাব্বির হোসেন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত