Ajker Patrika

শিক্ষাজট থেকে মুক্তি চান শিক্ষার্থীরা

রবিউল আলম, ঢাকা
আপডেট : ০৫ জুলাই ২০২১, ১১: ৩৪
শিক্ষাজট থেকে মুক্তি চান শিক্ষার্থীরা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের আজাদ হোসাইন সর্বশেষ ২০১৯ সালের নভেম্বরে স্নাতক তৃতীয় বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টার পরীক্ষায় বসেন। ২০২০ সালের মধ্যে স্নাতক শেষ হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে দীর্ঘ ১৫ মাস বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। ২০২১ সালের মাঝামাঝি এসেও এখনো তাঁর স্নাতকের দুই সেমিস্টার বাকি। চলতি বছর এসব পরীক্ষা শেষ হবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় তিনি। পরিবারের আর্থিক সহায়তায় স্নাতক শেষে চাকরিতে ঢোকার তাগিদ রয়েছে নিজের মধ্যে। সেজন্য চাকরির প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। কিন্তু স্নাতকের সনদ না থাকায় কোথাও চাকরির আবেদন করতে পারছেন না।

আজাদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বলা হয়েছিল আটকে থাকা দুই সেমিস্টারের পরীক্ষা ১০ আগস্ট থেকে সশরীরে নেওয়া হবে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির অবনতির কারণে সেই পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা দেড়-দুই বছর পিছিয়ে গেছি। করোনা গেলে সশরীরে পরীক্ষা হবে—সে আশায় বসে থাকলে বয়স ৩০ পার হয়ে যাবে, কিন্তু অনার্স শেষ হবে না ৷ অনলাইনে পরীক্ষা বা প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে হলেও স্নাতকটা শেষ করা উচিত।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ইমদাদুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের কষ্ট লাঘবে ঈদের পর ১০ আগস্ট থেকে সশরীরে পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। অনলাইন পরীক্ষার বিষয়ে ভাইস চ্যান্সেলর একা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগ পর্যবেক্ষণ করে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

আজাদের মতো অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব অনেক শিক্ষার্থী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষে শিক্ষার্থী ইসমাইল হোসেন সোহাগ বলেন, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চতুর্থ সেমিস্টার পরীক্ষা দিয়েছি। তারপর এখনো কোনো খবর নেই। সশরীরে সম্ভব না হলে জুলাই থেকে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া হবে বলা হলেও কঠোর বিধিনিষেধের কারণে সেটি হচ্ছে না।

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার পর অনলাইনে পরীক্ষা নিতে বিভাগগুলোকে আমরা অনুরোধ করেছি। কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগ ইতিমধ্যে পরীক্ষা নিয়েছে। কিছু শিক্ষার্থীর ইন্টারনেটের গতি ভালো না থাকায় তাদের পরীক্ষা দিতে শহরে যেতে হয়। তাই বিধিনিষেধ শেষ হলে পরীক্ষা নিতে বলা হয়েছে।

সেশনজটের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা অনলাইনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। গত ৬ মে দেওয়া সেই নির্দেশনায় বলা হয়, একাডেমিক কাউন্সিল সিদ্ধান্ত দিলে বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে পরীক্ষা নিতে পারবে। পরে মে মাসের শেষ দিকে অনলাইনের পাশাপাশি সশরীরে পরীক্ষা নেওয়ারও অনুমতি দেয় ইউজিসি। সেই নির্দেশনা অনুসরণ করে জুনে পরীক্ষা শুরু করে চট্টগ্রাম, শাবিপ্রবি, হাবিপ্রবিসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়।

দেশে আঞ্চলিক লকডাউন ও কঠোর বিধিনিষেধ ঘোষণার পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরীক্ষা স্থগিত করে। কিন্তু সশরীরে সম্ভব না হলে অনলাইন পরীক্ষা নিতে ইউজিসির নির্দেশনা অনুসরণ করছে না বেশির ভাগ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ‘সশরীরেই পরীক্ষা হবে’—এমন সিদ্ধান্ত নিয়েই বসে আছেন তাঁরা। অথচ বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে পরীক্ষা নিচ্ছে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাবে অনলাইনে চূড়ান্ত পরীক্ষা হচ্ছে না।

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যুক্তি, অনলাইন পরীক্ষায় সব শিক্ষার্থীর উপস্থিতি এবং মান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।

তবে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা শতভাগ উপস্থিতি নিয়ে পরীক্ষা নিচ্ছি। স্বাভাবিক সময়ে যেভাবে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা হয়, এখনো সেভাবেই হবে।’

শাবিপ্রবির মতো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ও ১ জুলাই থেকে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া শুরু করেছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনেক আগে থেকেই অনলাইনে পরীক্ষা নিচ্ছে।

অনলাইনে পরীক্ষার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরীক্ষা না নিলে শিক্ষকদের বেতন–ভাতাসহ অন্যান্য ব্যয় ঠিকঠাক দিতে পারবে না। তাই তারা পরীক্ষাগুলো নিয়ে নেয়। তাতে শিক্ষকেরা খুশি, শিক্ষার্থীরাও খুশি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা মাস গেলেই বেতন পান। তাঁদের মধ্যে এ চিন্তা নেই। ফলে তাঁদের আলস্য পেয়ে বসেছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...