Ajker Patrika

ডিবি পরিচয়ে তুলে নেওয়ার ৮ দিন পর অভিযোগ নিল থানা

বিশেষ প্রতিনিধি ও নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২৩: ০৯
ডিবি পরিচয়ে তুলে নেওয়ার ৮ দিন পর অভিযোগ নিল থানা

রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার বসিলা গার্ডেন সিটি এলাকা থেকে দিলওয়ার হুসাইন (২৫) নামের এক যুবককে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেওয়ার অভিযোগ করেছে পরিবার।

তিনি বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল ইন্ডাস্ট্রিজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে ইমামের পাশাপাশি কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। ঘটনার আট দিনের মাথায় আজ সোমবার পরিবারের একটি অভিযোগ গ্রহণ করেছে মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ।

দিলওয়ারের পরিবারের দাবি, গত ১৯ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ৯টার দিকে একটি মাইক্রোবাসে করে দিলওয়ারকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় আটজন যুবক নিজেদের গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে দেন। হাতের সবার হাতে অস্ত্র ছিল।

ওই দিন থেকে মোহাম্মদপুর থানা এবং মিন্টো রোডের গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে যোগাযোগ করেও কোনো তথ্য পায়নি দিলওয়ারের পরিবার। এমনকি বারবার সাধারণ ডায়েরি করতে গেলেও সেটি থানা গ্রহণ করেনি।

আজ বিকেলে দিলওয়ারের বড় বোন আমেনা খাতুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ঘুম থেকে ডেকে তুলে সাদা রঙের একটি মাইক্রোবাসে করে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়। গাড়িতে আটজন ছিলেন। তাঁদের প্রত্যেকের হাতে অস্ত্র ছিল। নিয়ে যাওয়ার সময় এক ঘণ্টা পর দিয়ে যাবেন বলে জানানো হয়। এরপর থানা ও ডিবি অফিসে যোগাযোগ করা হলে তারা কোনো সন্ধান দিতে পারেনি। এমনকি থানায় জিডি করতে গেলে বলা হয়, ডিবিতে যোগাযোগ করতে। সেখানে গেলে থানায় পাঠানো হয়। এভাবে আট দিন কেটে গেছে।

আমেনা খাতুন আরও বলেন, ‘আমার ভাইকে নিয়ে যাওয়ার সময়ে বাসায় তল্লাশি চালানো হয়। বাসায় থাকা কম্পিউটার, দুটি স্মার্টফোন ও একটি ফিচার ফোন নিয়ে গেছে তারা। আমার ভাইয়ের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের একটি ফাইল নিয়ে যাওয়া হয়। ফাইলের মধ্যে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ছিল।’

পরিবার সূত্রে জানা যায়, দিলওয়ার ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে ফাজিল ও কামিল পাস করেছেন। রাজধানীর তেজগাঁও সরকারি কলেজ থেকে ইসলামিক স্টাডিজ বিষয়ে অনার্স শেষ করে মাস্টার্সে পড়ছেন। চার বছর আগে বিয়ে করেন। এখন দুই সন্তানের জনক। বড় মেয়ের বয়স তিন বছর ও ছেলের বয়স পাঁচ মাস। তিনি বসিলা গার্ডেন সিটি এলাকার নর্থসাউথ রোডের হাজি চান মিয়ার বাড়িতে ভাড়া থাকেন।

পরিবারের সদস্যরা জানান, বসিলা এলাকার বাসা ছেড়ে দিয়ে চলতি মাসের ২৩ তারিখে সাভারের হেমায়েতপুরে নিজেদের বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল। দিলওয়ারের বাবা মো. আব্দুল মোমিন দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে সাভারের হেমায়েতপুরে থাকেন। সেখানে ঝাউচর এলাকায় নিজস্ব বাড়িতে ২০২০ সাল থেকে বাস করেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা।

দিলওয়ারের ছোট ভাই ফাহিম জানান, তাঁরা তিন ভাই-বোন। দিলওয়ার নিয়মিত বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে কোরআন পাঠ করতেন। বিভিন্ন সময় কোরআন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। তাঁর ভাই কোনো রাজনৈতিক বা অন্য কোনো সংগঠনের সঙ্গে জড়িত না বলে দাবি করেন ফাহিম।

এই ঘটনায় দিলওয়ারের পরিবার উৎকণ্ঠায় আছেন জানিয়ে বোন আমেনা খাতুন বলেন, ‘আমার ভাই কোথায় আছে সেটা জানতে চাই। সে যদি অপরাধ করে থাকে সেটার শাস্তি হোক। কিন্তু সে কোথায় আছে সেটা আমাদের জানা দরকার। তার দুটি শিশু সন্তানকে নিয়ে স্ত্রী চিন্তিত।’

আজ রাত ৮টার দিকে পরিবারের পক্ষ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ থানায় জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আমেনা খাতুন। তিনি বলেন, ‘থানার ওসি আমাদের বক্তব্য শুনেছেন। বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ রেখেছেন।’

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজাদ আবুল কালাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পরিবারের পক্ষ থেকে একেক রকম তথ্য দেওয়া হচ্ছে। একবার বলছে বাসা থেকে আবার বলছে আদাবর থেকে নেওয়া হয়েছে। আমরা তাদের অভিযোগ শুনেছি। তদন্ত চলছে। আশা করি, কী হয়েছে তা তদন্তের পর জানাতে পারব।’

সাম্প্রতিক সময়ে এমন বেশ কয়েকটি ঘটনা নজরে এসেছে বলে জানান আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক নুর খান লিটন। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে যে ঘটনাগুলো আসে তাতে দেখা যায়, উঠিয়ে নেওয়ার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা ডিবির লোক পরিচয় দেওয়া হচ্ছে। পরে থানা জিডি ও মামলা নেয় না। তাদের অফিসগুলোতে গেলেও উত্তর মেলে না। পরিবারগুলোকে একটা ভয়ার্ত পরিবেশে ফেলে দেওয়া হচ্ছে।’

পরবর্তীতে কাউকে রাস্তায় পাওয়া যায় কিংবা কোনো মামলায় আদালতে চালান দেয় উল্লেখ করে আসকের নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘গ্রেপ্তার কিংবা জিজ্ঞাসাবাদের যেসব নিয়মনীতি আছে তার কোনোটাই মানা হচ্ছে না।’ নুর খান বলেন, ‘সরকারের এ বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত। যে প্রশ্নগুলো আসছে তা সামনে আরও বড় সংকটের জন্ম দেবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত