Ajker Patrika

ডিবি হেফাজতে মৃত্যু: সুস্থ মানুষ নিয়ে গিয়ে ১২ দিন পর লাশ ফেরত, বলছেন স্ত্রী

নুরুল আমিন হাসান, তুরাগ থেকে
ডিবি হেফাজতে মৃত্যু: সুস্থ মানুষ নিয়ে গিয়ে ১২ দিন পর লাশ ফেরত, বলছেন স্ত্রী

তুরাগের একটি বাসা থেকে এক নারীর মরদেহ উদ্ধারের দিন সকালে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে আমার স্বামীকে (আলাল উদ্দিন দেওয়ান) ছেড়ে দেয়। দুপুরে বাসায় আসছে। গোসল করে মোটরের সুইচ অন দেওয়ার পর বাসায় পুলিশ এসে আবার জিজ্ঞাসাবাদ করে চলে যায়। কিছু খাওয়া দাওয়াও করে নাই। তারপর আবার ডিবি পুলিশ তাকে ফোন করে ডেকেছে। কিছু না খেয়েই সে ৬ কিলোমিটার হেঁটে ওই বাসায় (ঘটনাস্থলে) গেছে। রাতে ধরে নিয়ে গেছে ডিবি পুলিশ। তখন সে পুরো সুস্থ মানুষ ছিল। নিয়ে গেল সুস্থ মানুষ। আর ১২ দিন পর দিয়ে গেল লাশ! 

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে মৃত আলাল উদ্দিন দেওয়ানের (৫০) আজ রোববার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। তুরাগের বাউনিয়ার আব্দুল্লাহ মেমোরিয়াল স্কুল মাঠে জানাজা শেষে রাত ৮টার দিকে পারিবারিক কবরস্থানের দাফন হয়। এরপর কান্নাজড়িত কণ্ঠে আজকের পত্রিকাকে ওপরের কথাগুলো বলেন আলাল উদ্দিনের স্ত্রী পারভিন আক্তার। 

এর আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করে পুলিশ। পরে মাগরিবের আজানের আগে মরদেহটি নিয়ে আসেন স্বজনেরা। এ সময় সাদা পোশাকে চারজন ডিবি ও কয়েকজন পুলিশ সদস্য মরদেহের আশপাশে ছিল বলে দাবি স্বজনদের। 

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, তুরাগের বাউনিয়া পশ্চিম মইশাগার এলাকার হায়দারের ভাড়া বাসা থেকে গত মঙ্গলবার (৬ জুন) সকাল ১০টার দিকে ভাড়া বাসার মেঝেতে বিবস্ত্র রক্তাক্ত অবস্থায় ফাতেমা আক্তার (৩৩) নামে এক নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নারীর ভাই বাদী হয়ে তাঁর চতুর্থ স্বামী সাইফুল ইসলাম রানাকে একমাত্র আসামি করে হত্যা মামলা করেন। পুলিশ তাঁকে গত ৮ জুন সকালে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। 

তুরাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মওদুত হাওলাদারও আজকের পত্রিকাকে এসব তথ্য জানিয়েছেন। 

জানা যায়, ওই বাসার কেয়ারটেকারের দায়িত্ব পালন করতেন আলাল উদ্দিন দেওয়ান। তাই তাঁকে সন্দেহভাজন হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে নিয়ে গিয়েছিল ডিবি পুলিশ। আর মামলাটিও তদন্ত করছে পুলিশের এই বিভাগ। 

আলাল উদ্দিন দেওয়ানের স্ত্রী পারভীন আক্তার বলেন, ‘ওই দিন (৬ জুন) রাত ১০টার দিকে ডিবি পুলিশ তাঁকে (স্বামী) নিয়ে গেছে। এরপর থেকে আমরা তাঁকে খোঁজাখুঁজি করেও পাইনি। দশ দিন পর রাতে আমাদের পুলিশ ফোন করে জানায়, আলাল মারা গেছে। তাঁর লাশ নিয়ে আসার জন্য আমাদের বলে।’ 

পারভীন অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার স্বামীরে অত্যাচার করে মারছে। কী অন্যায় করছে, যার কারণে আমার স্বামীরে এমনভাবে নির্যাতন করে মারছে? আমার স্বামী তো সরল সোজা মানুষ ছিল। তার বিরুদ্ধে কোনো দিন থানায় একটি জিডিও হয় নাই, মামলা নাই।’ 

 ‘ওরা আমারে বিধবা করল কেন, সন্তানদের বাবা ছাড়া করল কেন? এখন ছেলে মেয়ে আমার কী হবে? ওদের ভবিষ্যৎ কী হবে? আমি এর কঠিন বিচার চাই। আমি এক নারী। এক নারী হয়ে চাই না যে আরেক নারী যেন আমার মতো এভাবে বিধবা হোক। তাই আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চাই।’ কাঁদতে কাঁদতে বলেন পারভীন আক্তার। 

আলালের ছেলে নবম শ্রেণি পড়ুয়া পাবেল দেওয়ান আজকের পত্রিকার এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘ঘটনার দিন সুস্থ অবস্থায় আমার বাবাকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় নিয়ে গেছে। পরে তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলছে। আমি আমার বাবাকে হত্যার বিচার চাই। অথবা আমার আব্বুকে ফেরত চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।’ 

আলালের মেয়ে সুমাইয়া আক্তার পায়েল অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার আব্বুরে অনেক টর্চার করছে। আমার আব্বুর হাত পায়ে অনেক ফোলা ছিল। ডিবি তারে মেরে তার ডান হাত ভেঙে দিছে বলে জানতে পারছি। তার লাশ আমাদের কাউকে দেখতে দেয় নাই। তার কোনো ফুল ছবিও দেয় নাই। শুধু একটা হাফ ছবি দিছে। সেখানেও ডান হাতে ব্যান্ডেজ ছিল। পেটে ফুটা ছিল। মেডিকেল থেকে গোসল করিয়ে, কাফনের কাপড় পরিয়ে কফিনের মধ্যে লাশ পাঠিয়েছে। বাবার লাশের মুখ ছাড়া শরীরের বাকি অংশ কাউকে দেখতেও দেয় নাই।’ 

সুমাইয়া আক্তার দায়ীদের শাস্তি দাবি করে বলেন, ‘আমার আব্বুকে যারা মারছে, যারা অপরাধগুলো করছে, তারাও যেন আব্বুর থেকে নির্মম শাস্তি পায়। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চাই।’ 

আলালের ভাগনি মাহমুদা আক্তার বলেন, ‘যে খুন করছে, তার কিছুই হয় নাই। যে নিরপরাধ তাকে ধরে নিয়ে মেরে ফেলছে। যদি অন্যায় করত, তাহলে আদালতে দিত। আদালত বিচার করত। কিন্তু আইনের লোক হয়ে তাকে কীভাবে অন্যায়ভাবে মেরে ফেলল?’ 

এদিকে বাউনিয়ায় ভাড়া বাসা থেকে গৃহবধূর বিবস্ত্র মরদেহ উদ্ধারের দুই দিন পর কেয়ারটেকার আলালকে আটকের তথ্য আসে আজকের পত্রিকার এ প্রতিবেদকের কাছে। পরে গত ৮ জুন রাত সোয়া ১১টায় গোয়েন্দা পুলিশের উত্তরা জোনাল টিমের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. আকরামুল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘কে বলেছে ভাই? এখনো বলার মতো কিছু হয় নাই। বলার মতো হলে আপনাকে জানাব।’ 

সর্বশেষ ডিবি হেফাজতে নির্যাতনের মৃত্যুর অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে আজ রাতে ডিসি আকরামুল হোসেনকে একাধিকবার ফোনকল করে ও এসএমএস পাঠিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। 

জাতীয় হৃদ্‌রোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় মারা যান আলাল উদ্দিন। তাঁর মরদেহটি গতকাল শনিবার দুপুর পর্যন্ত একটি কক্ষে রাখা ছিল। লাশ ঘিরে রেখেছিল পুলিশ। আসা-যাওয়া করছিলেন থানা ও গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় ক্যাসিনো-কাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধান ৩ দিনের রিমান্ডে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
সেলিম প্রধান। ছবি: সংগৃহীত
সেলিম প্রধান। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর গুলশান থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলায় ক্যাসিনো-কাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধানকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আজ সোমবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমান এ নির্দেশ দেন বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. হারুনুর রশিদ।

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ওই মামলায় সেলিম প্রধানকে আজ কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোজাম্মেল হক মামুন ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

গত ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বারিধারার একটি রেস্তোরাঁ থেকে সেলিম প্রধানসহ ৯ জনকে আটক করে পুলিশ। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ৬ দশমিক ৭ কেজি ওজনের সিসা জব্দ করা হয়। এ ছাড়া সাতটি সিসা স্ট্যান্ড ও অন্যান্য সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় মাদক আইনে মামলা করা হয়। পরে সেলিম প্রধানকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আরেক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জেনেভা ক্যাম্পে জাহিদ হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত বুধবার ভোররাতে দুই গ্রুপ মাদক কারবারির সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ (২০)। পরিবারের দাবি, দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে জাহিদের পায়ের কাছে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ সময় স্প্লিন্টার তাঁর ঘাড় ও পিঠে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে র‍্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও তিনটি তাজা গুলিসহ বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র ও পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়।

জাহিদের ভগ্নিপতি মো. উজ্জ্বল জানান, রাজধানীর কল্যাণপুরে মিজান টাওয়ারে একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করতেন জাহিদ। বুধবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সময় তাঁরা সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। পরে হাসপাতালে জাহিদের মৃত্যু হয়।

তবে পুলিশ বলছে, ককটেল তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

বিদেশ থেকে পার্সেল এসেছে—এমন দাবি করে কাস্টমস থেকে তা ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ওই তরুণের নাম মো. নূরে আলম ওরফে তুহিন (২৪)।

এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।

পরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আদায় করেন নূরে আলম। টাকা পাওয়ার পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন তিনি।

ভুক্তভোগী আদালতের শরণাপন্ন হলে রামপুরা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। পরে নূরে আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিআইডি জানায়, প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

জুয়া ও প্রতারণায় জড়িত থাকায় ৫০ হাজারের বেশি এমএফএস (মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবা) অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ (স্থগিত) করেছে বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট)। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এই নম্বরগুলো স্থগিত করা হয়।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় বিএফআইইউর প্রতিনিধি এ তথ্য জানান।

সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স), এনএসআই (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স), এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার), সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট), বিএফআইইউ, এমএফএস ও মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত) করা হয়েছে, সেগুলো থেকে কোথায় কোথায় টাকা লেনদেন করা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

ডিজিএফআই প্রতিনিধি জানান, অনলাইন জুয়ার মতো আর্থিক নানা প্রতারণায় বেনামি সিম ব্যবহার করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া সিম বিক্রি করছে। মানুষের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিকাশের অ্যাপ নকল করা হয়েছে। নাগরিকদের ডেটাবেইস ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। এটা নিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।

সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সরকার সতর্ক করার পরও অনেক গণমাধ্যমের অনলাইন পোর্টালে এখনো জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে যেকোনো মুহূর্তে বিনা নোটিশে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রায় সব কটি মিডিয়ার পোর্টালে এখনো অনিরাপদ কনটেন্ট আসে। জুয়ার বিজ্ঞাপন আসে। এখান থেকে তারা টাকা পায়।

১৯ অক্টোবর পর্যন্ত জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে গণমাধ্যমগুলো তা মানছে না বলে অভিযোগ করেন বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল জুয়ার বিজ্ঞাপন ও অনিরাপদ কনটেন্ট বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ করে দেব। যেহেতু একাধিক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা পাবলিকলি কোনো নোটিশ দেব না।’

অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি জানান, সরকারের হিসাবে গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২০টি এমএফএস নম্বর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৩৩১টি ওয়েব পোর্টালের লিংক পাওয়া গেছে।

সরকারের চ্যালেঞ্জ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, যখনই একটা নম্বর ব্লক করা হয়, তখন এর চেয়ে বেশিসংখ্যক বা সমসংখ্যক নম্বর ব্যবহার করে সিগন্যাল-হোয়াটসঅ্যাপের মতো গ্রুপগুলোয় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আইপি পরিবর্তন করে ওয়েবসাইটের নাম একটু পরিবর্তন করা হয়। এভাবে নতুন ওয়েবসাইট বানিয়ে আবার শুরু করা হয়। এমএফএস, ওয়েব লিংক বন্ধ করার পর এ চক্রগুলো আবার অ্যাপ তৈরি ফেলে। অ্যাপগুলো অনেক ক্ষেত্রেই পাবলিশড নয়, এপিকে হিসেবে ব্যবহার করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত