Ajker Patrika

চুরি করা টিকা গোপনে বিক্রি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ আগস্ট ২০২১, ১০: ০২
চুরি করা টিকা গোপনে বিক্রি

গণটিকার ক্যাম্পেইনের সময় রাজধানীর উত্তরখানের একটি কেন্দ্র থেকে ‘মডার্নার টিকা’ চুরি করেছিলেন একটি ফার্মেসির মালিক বিজয় কৃষ্ণ তালুকদার। সেই টিকা তিনি ৫০০ টাকা করে বিক্রি করছিলেন সাধারণ মানুষের কাছে। পুলিশের ধারণা, তিনি প্রায় ৫০০ মানুষের কাছে এভাবে টিকা বিক্রি করেছেন। বুধবার রাতে দক্ষিণখানের ‘দরিদ্র পরিবার সেবা সংস্থা’ নামের একটি ক্লিনিকে ক্রেতা সেজে অভিযান চালিয়ে ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর কাছ থেকে দুই অ্যাম্পুল মডার্না ভ্যাকসিন এবং ২০টি খালি বাক্স জব্দ করা হয়। গতকাল তাঁকে আদালতে পাঠিয়ে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম আজকের পত্রিকাকে বলেছেন, টিকা উদ্ধারের ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। মূলে কারা থাকতে পারে, সেটি খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। পুলিশ গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে। অধিদপ্তরের কারও সম্পৃক্ততা থাকলে তাও বের করা হবে।

টিকা চুরির ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া ফার্মেসির মালিকসহ অজ্ঞাত আরও দুজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর হাকিম আবু সাঈদের আদালতে নেওয়ার পর বিজয় কৃষ্ণ তালুকদারের ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। আদালত ২৩ আগস্ট তদন্ত কর্মকর্তা দক্ষিণখান থানার পরিদর্শক (ওসি) আজিজুল হকের উপস্থিতিতে রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেন।

গত বুধবার রাতে দক্ষিণখান চালাবনের হাজীপাড়া এলাকার দরিদ্র পরিবার সেবা সংস্থা ক্লিনিকে অভিযান চালিয়ে দুই অ্যাম্পুল টিকা এবং ২০টি খালি বাক্স জব্দ করে পুলিশ। সাধারণত প্রতি বাক্সে ১০টি করে অ্যাম্পুল থাকে। পুলিশের অভিযানের সময় এক দম্পতিকে টিকা দেওয়া হচ্ছিল। পুলিশ আশপাশের লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারে, ওই ফার্মেসি থেকে আরও অনেককে টিকা দেওয়া হয়েছে। এর সংখ্যা ৫০০-এর বেশি বলে পুলিশের ধারণা।

দক্ষিণখান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আজিজুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া বিজয় কৃষ্ণ এসব টিকার ডোজ ৫০০ টাকা করে বিক্রি করতেন। ইতিমধ্যে পুলিশ ওই ক্লিনিকের পাশের এক দোকানি ও তাঁর স্ত্রীকে এক হাজার টাকার বিনিময়ে টিকা দেওয়ার প্রমাণ পেয়েছে।

প্রশ্ন হলো, সরকারি টিকা এই ফার্মেসি মালিকের কাছে কীভাবে গেল? তার জবাব দিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা বিভাগের পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত ব্যক্তি সবকিছু স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন টিকাদান কেন্দ্রে দায়িত্ব পালনের সময় সেখান থেকেই তিনি টিকা সরিয়েছিলেন। পরে কোনো ডোজ ৫০০ টাকা, আবার কোনো ডোজ ১০০০ টাকা করে বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, ‘উত্তর সিটি করপোরেশনকে (ডিএনসিসি) আমরা অনুরোধ করেছি, ওই এলাকায় যে কেন্দ্রগুলো ছিল, সেখানকার টিকার খালি ভায়াল ও ডোজের হিসাব মেলানোর জন্য। তদন্তে সেটাও লাগবে।’

জানা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪৪ নং ওয়ার্ডের উত্তরখান কলেজিয়েট স্কুলের কেন্দ্রের দায়িত্ব ছিলেন অভিযুক্ত বিজয় কৃষ্ণ তালুকার। টিকা দেওয়ার দায়িত্বে ছিল দরিদ্র পরিবার সেবা সংস্থা ক্লিনিকের, যার মালিক বিজয় নিজে। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জয়নাল আবেদিন বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তি এলাকায় বাবু নামে পরিচিত। গণটিকার ক্যাম্পেইন চলার সময় প্রতিদিন ৩৫০ জনকে টিকা দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী ২৫টি করে মডার্নার ভায়াল তাঁর কেন্দ্রে নিতেন। কিন্তু মাঝেমধ্যে ৫-৭ ডোজ কম হতো। তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি ভায়ালে ১৪ জনকে টিকা দেওয়ার কথা থাকলেও বিজয় সব সময় কমবেশি করতেন। পরবর্তী সময়ে অতিরিক্ত থাকা ডোজগুলো রেখে কৌশলে বিক্রি করে দিতেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বিভিন্ন দেশ থেকে টিকা আসার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) নিজস্ব সংক্ষরণাগারে কঠোর নিরাপত্তায় সংরক্ষণে রাখা হয়। সেখান থেকে বরাদ্দ অনুযায়ী টিকাকেন্দ্রগুলোতে পাঠানো হয়। করোনার টিকা কীভাবে ক্লিনিকে গেল জানতে চাইলে ইপিআইয়ের ব্যবস্থাপক ডা. মওলা বক্স চৌধুরী বলেন, ‘কীভাবে এই টিকা গেল তা এখনো বলতে পারছি না। আমরা অবশ্যই এটা নিয়ে তদন্ত করব। ঘটনার সঙ্গে যাঁদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তবে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ শিহাব উদ্দিন বলেন, ক্যাম্পেইনের আগের দিন টিকাগুলো সিটি করপোরেশনের কেন্দ্রে পাঠায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। পরে টিকাদানের দিন সকালে প্রতিটি কেন্দ্রে সেগুলো পাঠানো হয়। সেখান থেকেও কোনো না কোনোভাবে এসব টিকা নেওয়া হতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত