Ajker Patrika

আড়াই লাখে আইইএলটিএসের প্রশ্ন ফাঁসের ফাঁদ

আল-আমিন রাজু, ঢাকা
আপডেট : ২৭ আগস্ট ২০২৩, ২১: ১৫
আড়াই লাখে আইইএলটিএসের প্রশ্ন ফাঁসের ফাঁদ

ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্টিং সিস্টেম (আইইএলটিএস) বিশ্বের সর্বাধিক জনপ্রিয় ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা যাচাইয়ের পরীক্ষা। ইংরেজি বিষয়ে কার কেমন দক্ষতা রয়েছে, তা মূল্যায়ন করতে এই পরীক্ষা নেওয়া হয়। রিডিং, রাইটিং, লিসেনিং, স্পিকিং—এসব বিষয়ের ভিত্তিতে এই পরীক্ষার ফলাফল মূল্যায়ন করা হয়। ইউরোপসহ বিশ্বের ‍উন্নত দেশগুলোতে বৈধভাবে পড়াশোনা ও কাজের ক্ষেত্রে এই পরীক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

তবে কোনো ধরনের দক্ষতা ছাড়াই মাত্র আড়াই লাখ টাকায় মিলছে আইইএলটিএসের প্রশ্ন! শুধু তা-ই নয়, দেওয়া হচ্ছে ন্যূনতম সাড়ে ৭ স্কোর পাওয়ার নিশ্চয়তা। অনলাইনে পরীক্ষার্থীদের প্রলোভন দেখিয়ে এমন প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে একটি চক্র। 

চক্রের অন্যতম হোতা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার বিষ্ণুপুর এলাকার মো. খালেক চৌধুরীর ছেলে রেদুওয়ান চৌধুরী। মাত্র ২২ বছরের এই তরুণের দাবি, তিনি আইইএলটিএস পাসের শতভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারেন। আর এভাবে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। বিকাশসহ নিজের নামে খোলা দুই বেসরকারি ব্যাংকে লেনদেনের তথ্য-প্রমাণও পাওয়া গেছে।

রাজধানীতে কোচিং সেন্টার খুলে পড়াশোনা ছাড়াই প্রশ্ন পাওয়ার শতভাগ নিশ্চয়তা দিচ্ছেন রেদুওয়ান। পরীক্ষা শুরুর ছয় ঘণ্টা আগে প্রশ্নপত্র দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। চক্রটির মাধ্যমে অনেকে আইইএলটিএস পরীক্ষায় ভালো স্কোর করেছেন বলেও প্রচার করা হচ্ছে। 

ধানমন্ডিতে নিজ অফিসে বসে এক আইইএলটিএস পরীক্ষার্থীকে এসব কথাই বলেন রেদুওয়ান চৌধুরী। তিনি ফেসবুকে স্টাডি স্পার্ক ইন্টারন্যাশনাল ও ভিসাপাথ এডুকেশন নামে দুটি পেজ চালান। 

একজন পরীক্ষার্থীর সঙ্গে তাঁর হোয়াটসঅ্যাপ আলাপের স্ক্রিনশট আজকের পত্রিকার হাতে এসেছে। কথোপকথনে চলতি বছরের ২৫ জুলাই পরীক্ষার প্রশ্ন পাঠিয়ে মিলিয়ে নিতে বলেন রেদুওয়ান। টাস্ক ১ ও টাস্ক ২-এ কী প্রশ্ন এসেছে, সেটিও উল্লেখ করে দেন।

এক পরীক্ষার্থীর স্বজনের সঙ্গে আলাপের একটি ভিডিও ক্লিপও আজকের পত্রিকার হাতে এসেছে। যেখানে অকপটেই রেদুওয়ান জানাচ্ছেন প্রশ্ন ফাঁসের বিস্তারিত তথ্য। এমনকি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে এক লাখ টাকা নিয়েছেন, বাকি টাকা দিলেই পরীক্ষায় বসতে পারবে বলে জানান তিনি। 

ব্রিটিশ কাউন্সিলের অধীনে দেশের বাইরে থেকে করা হয় আইইএলটিএসের প্রশ্ন। সেই প্রশ্ন ফাঁস করার ঘটনা কখনো শোনা যায়নি। তাহলে রেদুওয়ান আসলে কী করছেন, সেটি জানতে এক নারীর সহযোগিতা নেওয়া হয়। শিক্ষিত মধ্যবিত্ত, বিধবা এক সন্তানের মা পরিচয় দেওয়া ওই নারী রেদুওয়ানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেন। পরীক্ষা দিয়ে দ্রুত ইউরোপের একটি দেশে যেতে চান বলে জানান তিনি। পরে তাঁর দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী ধানমন্ডির শংকর এলাকার চেয়ারম্যান গলিতে দুই কক্ষের অফিসে যান। এ সময় সাংবাদিক পরিচয় গোপন করে নারীর স্বজন পরিচয়ে এই প্রতিবেদকও অফিসে প্রবেশ করেন।

ভিসাপাথ এডুকেশন ও স্টাডি স্পার্ক ইন্টারন্যাশনাল নামে ফেসবুক পেজ খুলেছেন রেদুওয়ান।একটি টেবিল ও কিছু চেয়ার দিয়ে কোচিং সেন্টারের আদলে সাজানো একটি কক্ষ। ভেতরের কক্ষে পরিপাটি টেবিল, চেয়ার ও সোফা দিয়ে সাজানো। অফিস ‍রুমে গিয়ে দেখা যায়, আরও অনেকে এসেছেন। পড়াশোনা ছাড়াই পরীক্ষা দিতে চান তাঁরা। টাকা নিয়ে দর-কষাকষি চলছে। টাকার বিনিময়ে আইইএলটিএসে সাতের বেশি (সাড়ে আট) স্কোর পাওয়ার নিশ্চয়তা দিচ্ছেন রেদুওয়ান। তাঁর সঙ্গে ছদ্মবেশী নারীসহ উপস্থিত কয়েকজনের আলোচনার রেকর্ড আজকের পত্রিকার হাতে রয়েছে। 

ছদ্মবেশী নারীকে রেদুওয়ান বলেন, পরীক্ষায় বসতে হলে আড়াই লাখ টাকা দিতে হবে। রিডিং, রাইটিং, লিসেনিংয়ে শতভাগ নিশ্চয়তা। তবে স্পিকিংয়ের নিশ্চয়তা তিনি দেবেন না। অবশ্য এই চারটি মডিউল ছাড়াও ১৫ লাখ টাকায় সনদ দিতে পারেন তিনি। পরীক্ষার দিন সকাল ৬টায় প্রশ্ন পাওয়া যাবে। শতভাগ নিশ্চয়তা আছে। যদি পরীক্ষার সময় এক ভাগ প্রশ্ন না মেলে, তাহলে আড়াই লাখ টাকার বিনিময়ে দ্বিতীয়বার পরীক্ষা বসতে পারবে। সাড়ে ৮ স্কোর পাওয়ার নিশ্চয়তা দেন তিনি।

উপস্থিত সবাইকে আশ্বস্ত করতে রেদুওয়ান বলেন, ‘আমি মাত্র ২২ বছর বয়সে যা আয় করেছি, তা দিয়ে আগামী ১০০ বছর বসে খেতে পারব!’ 

দীর্ঘ আলাপ শেষে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে আইইএলটিএসের প্রশ্ন ফাঁস কীভাবে সম্ভব জানতে চাইলে রেদুওয়ান এতক্ষণের সব আলাপ অস্বীকার করেন। তখন ভিডিও ও অডিও রেকর্ড দেখালে বলেন, তিনি এসব বলেননি।

এই সময়ে মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়া এলাকার এক ভুক্তভোগী হাজির হন। প্রথমে তাঁর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেন। পরে টাকা দেওয়ার প্রমাণ দেখালে বলেন, ‘২০ হাজার টাকা রেজিস্ট্রেশন করার জন্য নিয়েছি।’

পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে এই শিক্ষার্থী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ফেসবুকের মাধ্যমে আইইএলটিএস পরীক্ষা দেওয়ার জন্য যোগাযোগ করি। কিন্তু রেদুওয়ানের এই অফিসে আসার পরে কোনো ধরনের প্রস্তুতি ছাড়াই আমাকে পরীক্ষা দেওয়ার প্রস্তাব দেন। এ জন্য তাঁকে দেড় লাখ টাকা দিতে হবে। প্রস্তাবে রাজি হয়ে বিকাশ, ব্যাংকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়েছি। কিন্তু এই টাকা পেয়ে আরও ১ লাখ টাকা দাবি করেন। এখন আমার পরিবার বিষয়টি জেনে যাওয়ায় টাকা তুলে নিতে বলে। কিন্তু সেই টাকা ফেরত না দিয়ে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিত।’

এ ঘটনাগুলোর বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) লালবাগ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আইইএলটিএস একটি আন্তর্জাতিক পরীক্ষা। দেশের হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও পেশাজীবীরা এই পরীক্ষায় অংশ নিতে অনেক পড়াশোনা করেন। কোচিং করেন। নিজেদের কষ্টার্জিত টাকা ব্যয় করেন। এই পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের যে কথা শোনা যাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব। না হলে আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে বিভিন্ন প্রশ্ন আসবে।’

আইইএলটিএস পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করা সম্ভব কি না—জানতে চাইলে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এটা একেবারে অসম্ভব। আমরা কাজ করছি। কাউকে এই পরীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ দেওয়া হবে না।’

আজ রোববার জানা গেছে, ভুক্তভোগী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষার্থী রেদুওয়ানকে আসামি করে হাজারীবাগ থানায় মামলা করেছেন। বিষয়টি তদন্ত শুরু করেছে ডিবি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় ক্যাসিনো-কাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধান ৩ দিনের রিমান্ডে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
সেলিম প্রধান। ছবি: সংগৃহীত
সেলিম প্রধান। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর গুলশান থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলায় ক্যাসিনো-কাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধানকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আজ সোমবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমান এ নির্দেশ দেন বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. হারুনুর রশিদ।

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ওই মামলায় সেলিম প্রধানকে আজ কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোজাম্মেল হক মামুন ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

গত ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বারিধারার একটি রেস্তোরাঁ থেকে সেলিম প্রধানসহ ৯ জনকে আটক করে পুলিশ। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ৬ দশমিক ৭ কেজি ওজনের সিসা জব্দ করা হয়। এ ছাড়া সাতটি সিসা স্ট্যান্ড ও অন্যান্য সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় মাদক আইনে মামলা করা হয়। পরে সেলিম প্রধানকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আরেক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জেনেভা ক্যাম্পে জাহিদ হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত বুধবার ভোররাতে দুই গ্রুপ মাদক কারবারির সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ (২০)। পরিবারের দাবি, দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে জাহিদের পায়ের কাছে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ সময় স্প্লিন্টার তাঁর ঘাড় ও পিঠে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে র‍্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও তিনটি তাজা গুলিসহ বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র ও পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়।

জাহিদের ভগ্নিপতি মো. উজ্জ্বল জানান, রাজধানীর কল্যাণপুরে মিজান টাওয়ারে একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করতেন জাহিদ। বুধবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সময় তাঁরা সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। পরে হাসপাতালে জাহিদের মৃত্যু হয়।

তবে পুলিশ বলছে, ককটেল তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ

বিদেশ থেকে পার্সেল এসেছে—এমন দাবি করে কাস্টমস থেকে তা ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ওই তরুণের নাম মো. নূরে আলম ওরফে তুহিন (২৪)।

এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।

পরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আদায় করেন নূরে আলম। টাকা পাওয়ার পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন তিনি।

ভুক্তভোগী আদালতের শরণাপন্ন হলে রামপুরা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। পরে নূরে আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিআইডি জানায়, প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জুয়া, প্রতারণায় জড়িত ৫০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব স্থগিত

জুয়া ও প্রতারণায় জড়িত থাকায় ৫০ হাজারের বেশি এমএফএস (মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবা) অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ (স্থগিত) করেছে বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট)। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এই নম্বরগুলো স্থগিত করা হয়।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় বিএফআইইউর প্রতিনিধি এ তথ্য জানান।

সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স), এনএসআই (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স), এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার), সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট), বিএফআইইউ, এমএফএস ও মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত) করা হয়েছে, সেগুলো থেকে কোথায় কোথায় টাকা লেনদেন করা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

ডিজিএফআই প্রতিনিধি জানান, অনলাইন জুয়ার মতো আর্থিক নানা প্রতারণায় বেনামি সিম ব্যবহার করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া সিম বিক্রি করছে। মানুষের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিকাশের অ্যাপ নকল করা হয়েছে। নাগরিকদের ডেটাবেইস ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। এটা নিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।

সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সরকার সতর্ক করার পরও অনেক গণমাধ্যমের অনলাইন পোর্টালে এখনো জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে যেকোনো মুহূর্তে বিনা নোটিশে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রায় সব কটি মিডিয়ার পোর্টালে এখনো অনিরাপদ কনটেন্ট আসে। জুয়ার বিজ্ঞাপন আসে। এখান থেকে তারা টাকা পায়।

১৯ অক্টোবর পর্যন্ত জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে গণমাধ্যমগুলো তা মানছে না বলে অভিযোগ করেন বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল জুয়ার বিজ্ঞাপন ও অনিরাপদ কনটেন্ট বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ করে দেব। যেহেতু একাধিক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা পাবলিকলি কোনো নোটিশ দেব না।’

অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি জানান, সরকারের হিসাবে গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২০টি এমএফএস নম্বর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৩৩১টি ওয়েব পোর্টালের লিংক পাওয়া গেছে।

সরকারের চ্যালেঞ্জ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, যখনই একটা নম্বর ব্লক করা হয়, তখন এর চেয়ে বেশিসংখ্যক বা সমসংখ্যক নম্বর ব্যবহার করে সিগন্যাল-হোয়াটসঅ্যাপের মতো গ্রুপগুলোয় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আইপি পরিবর্তন করে ওয়েবসাইটের নাম একটু পরিবর্তন করা হয়। এভাবে নতুন ওয়েবসাইট বানিয়ে আবার শুরু করা হয়। এমএফএস, ওয়েব লিংক বন্ধ করার পর এ চক্রগুলো আবার অ্যাপ তৈরি ফেলে। অ্যাপগুলো অনেক ক্ষেত্রেই পাবলিশড নয়, এপিকে হিসেবে ব্যবহার করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত