Ajker Patrika

১৩ জনের মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন ১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯: ৪৪
১৩ জনের মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন ১৯

সাভারের আমিনবাজারে বড়দেশী গ্রামে ছয় ছাত্রকে পিটিয়ে খুন করার দায়ে ১৩ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ইসমত জাহান এই রায় ঘোষণা করেন। রায়ে আরও ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অন্য ২৫ অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস দেন আদালত।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৩ আসামি হলেন আবদুল মালেক, সাঈদ মেম্বার, আব্দুর রশিদ, ইসমাইল হোসেন, নিহর, মীর হোসেন, মজিবুর রহমান, আনোয়ার হোসেন, রজ্জব আলী, আলম, মোহাম্মদ রানা, আব্দুল হামিদ ও আসলাম মিয়া। মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ১৯ আসামি হলেন শাহিন আহমেদ, ফরিদ খান, রাজিব হোসেন, ওয়াসিম, সাত্তার, সেলিম, মনির হোসেন, আলমগীর, মোবারক হোসেন, অখিল খন্দকার, বশির, রুবেল, নুর ইসলাম, শাহাদৎ হোসেন জুয়েল, টুটুল, মাসুদ, মোখলেস, তোতন ও সাইফুল। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা দিতে ব্যর্থ হলে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।

মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত প্রত্যেককে আমিনবাজারের ওই দিনের ঘটনায় আলামত গোপন করার অভিযোগে আরও সাত বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও জরিমানা দিতে ব্যর্থ হলে আরও ছয় মাস করে কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। এই মামলার আসামি কবির হোসেন, রাশেদ ও ছাব্বির আহমেদ ওরফে পর্বত মামলা চলাকালে মারা যাওয়ায় তাঁদের দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

আদালত রায়ে উল্লেখ করেছেন, রাষ্ট্রপক্ষ ৩২ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। তাঁরা শবেবরাতের রাতে ঘুরতে যাওয়া ছয় ছাত্রকে নির্মমভাবে পিটিয়ে খুন করেছেন। খুনের পর আলামত গায়েব করার চেষ্টা করেছেন। এমনকি ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা নিহত ছয় ছাত্র এবং ওই ঘটনায় বেঁচে যাওয়া আল আমিনকে ডাকাত সাজিয়েছিলেন। খুনের দায় এড়াতে তাঁরা ডাকাতির মামলা করেছিলেন।

যাঁদের খুন করা হয়
২০১১ সালের ১৭ জুলাই শবেবরাতের রাতে সাভারের আমিনবাজারের বড়দেশী গ্রামের কেবলার চরে ডাকাত সন্দেহে ছয় ছাত্রকে পিটিয়ে খুন করা হয়। নিহত ছাত্ররা হলেন ধানমন্ডির ম্যাপললিফের এ লেভেলের ছাত্র শামস রহিম, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক শ্রেণির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ইব্রাহিম খলিল, একই কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তৌহিদুর রহমান পলাশ, তেজগাঁও কলেজের ব্যবস্থাপনা প্রথম বর্ষের ছাত্র টিপু সুলতান, মিরপুরের বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সিতাব জাবীর মুনিব ও বাঙলা কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র কামরুজ্জামান কান্ত। ওই ঘটনায় নিহত ছাত্রদের বন্ধু আল-আমিন গুরুতর আহত হলেও বেঁচে যান।

ঘটনার বিবরণ: মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণ ও অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, পবিত্র শবেবরাতের রাতে সাত বন্ধু দারুস সালাম এলাকার একটি মসজিদে নামাজ পড়তে যান। নামাজ পড়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাঁরা মসজিদ থেকে বের হন। রাত ১২টার দিকে তাঁরা বিরিয়ানি খেতে গাবতলীর দিকে যান। কিন্তু বিরিয়ানি না পেয়ে তাঁরা হাঁটতে থাকেন। একপর্যায়ে তাঁরা হাঁটতে হাঁটতে আমিনবাজারের বড়দেশী গ্রামে পৌঁছান। রাত সোয়া একটার দিকে হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টি থেকে বাঁচতে তাঁরা ওই এলাকার একটি কুঁড়েঘরে আশ্রয় নেন। এ সময় আচমকা একদল লোক ডাকাত বলে তাঁদের ওপর হামলা চালান।

হঠাৎ একদল লোক ঘুরতে যাওয়া ছাত্রদের চোখে টর্চলাইট ধরে জানতে চান, তাঁরা কোথা থেকে এসেছেন। ছাত্র পরিচয় দিয়ে দারুস সালাম থেকে ঘুরতে এসেছেন বলে ছাত্ররা জানালে তাঁরা বলেন, ‘তোরা ডাকাত’। এরপর সবাই ছাত্রদের মারতে শুরু করেন।

ডাকাতির ঘটনা সাজানো হয়: ঘটনার পর স্থানীয় আব্দুল মালেক মাদবর অন্যদের নিয়ে এ ঘটনাকে ডাকাতি বলে প্রচার করতে থাকেন। আব্দুল মালেক বাদী হয়ে সাভার থানায় একটি ডাকাতি মামলাও করেন। ওই মামলায় আল-আমিনকে সোপর্দ করা হয়।

হত্যা মামলা করে পুলিশ: অন্যদিকে সাভার থানার এসআই আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। অজ্ঞাতনামা ৫০০ জনকে আসামি করা হয়।
আদালতের পরিবেশ: চাঞ্চল্যকর এই ছয় খুন মামলার রায় শুনতে আদালতে হাজির হন আমিনবাজার এলাকার অনেক মানুষ। আসামিদের স্বজনদের অনেকেই রায় শোনার পর কান্নায় ভেঙে পড়েন। দণ্ডিত আসামিরাও কান্নায় ভেঙে পড়েন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত