Ajker Patrika

মার্কিন শুল্কের খড়্গ: খাঁ খাঁ করছে বিশ্বের বৃহত্তম ডায়মন্ড কমপ্লেক্স

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ আগস্ট ২০২৫, ১৬: ২৮
মার্কিন শুল্কের খড়্গ: খাঁ খাঁ করছে বিশ্বের বৃহত্তম ডায়মন্ড কমপ্লেক্স

‘সুরাট ডায়মন্ড বোরস’—বিশ্বের সবচেয়ে বড় অফিস কমপ্লেক্স হিসেবে খ্যাত এই ভবন আকারে মার্কিন প্রতিরক্ষা ভবন পেন্টাগনের চেয়েও বড়। তবে, এত বড় ভবন এখন সুনসান, ভুতুড়ে। কারণ, ব্যবসা এখন চরম মন্দার মধ্যে, ভবিষ্যৎ নিয়েও তৈরি হয়েছে আশঙ্কা।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের তথ্যমতে, চীনে চাহিদা কমে যাওয়ায় বর্তমানে ভারতের হিরা রপ্তানি নেমে এসেছে দুই দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে। এর ওপর ট্রাম্পের শুল্কাঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশও ভারতের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। অথচ যুক্তরাষ্ট্রই ভারতের হীরার সবচেয়ে বড় বাজার। ভারতের মোট বার্ষিক হীরা ও গয়না রপ্তানির এক-তৃতীয়াংশই রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে। প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্রে হিরা ও গয়না রপ্তানি করে ২৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার আয় করে ভারত।

বিশ্বের ৮০ শতাংশেরও বেশি অপরিশোধিত হিরা কেটে-ঘষে ঝকঝকে করা হয় সুরাটে। মারাত্মক ব্যস্ত এই জায়গা এখন একপ্রকার নিস্তব্ধ। মার্কিন নতুন শুল্কের ভয়ে এরই মধ্যে পকেট টান ক্রেতাদের। বড় রপ্তানিকারকেরা তাওয় উৎপাদনের কিছু অংশ এরই মধ্যে বতসোয়ানার মতো দেশে সরিয়ে নিতে শুরু করেছে। কিন্তু ছোট রপ্তানিকারকদের সামনে তেমন বিকল্প নেই। আগামীকাল থেকেই ভারতের পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হবে। অন্যদিকে, বতসোয়ানার ওপর এই শুল্কহার ১৫ শতাংশ।

ধর্মানন্দন ডায়মন্ডস নামের এক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা হিতেশ প্যাটেল বলেন, ‘আমরা আগস্টের শেষ পর্যন্ত দেখব। অবস্থা যদি এমনই থাকে, তাহলে বসতোয়ানা উৎপাদন বাড়ানোর কথা ভাবব।’ তাঁর আশঙ্কা, নতুন মার্কিন শুল্ক তাদের বার্ষিক আয়ে ২০–২৫ শতাংশ কমিয়ে দেবে।

জেম অ্যান্ড জুয়েলারি এক্সপোর্ট প্রোমোশন কাউন্সিলের (জিজেইপিসি) সহসভাপতি শৌনক পারিখ জানান, চাহিদা কমে যাওয়ায় কর্মঘণ্টাও কমিয়ে আনা হচ্ছে। সুরাট ডায়মন্ড বোরসে প্রায় ৫ হাজার হীরার ব্যবসায়ীর অফিস থাকলেও এখন চলছে মাত্রা আড়াই শতাধিক। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, এখন অনেক প্রতিষ্ঠান এখানে অফিস নেওয়ার আগে দ্বিতীয়বার ভেবে দেখছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মুম্বাইয়ের এক ব্যবসায়ী রয়টার্সকে জানিয়েছেন, তিনি গত বছর বোরসে জায়গা কিনেছেন। কিন্তু এখনো সেখানে কার্যক্রম শুরু করেননি। মার্কিন শুল্কের কারণে এখন তিনি ভাবছেন সেখানে আর যাবেন না। বলেন, ‘মার্কিন শুল্ক ইতিমধ্যেই আমার ব্যবসাকে নড়বড়ে করে দিয়েছে। এখন আবার মুম্বাই থেকে সুরাটে সব স্থানান্তরিত করার বাড়তি ঝামেলা নিতে চাই না।’

২০২৩ সালের ডিসেম্বরে সুরাট ডায়মন্ড বোরসের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একে ‘ভারতের নতুন শক্তি ও নতুন সংকল্পের প্রতীক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। ১৫ তলা এই ভবনের আয়তন ৬ দশমিক ৭ মিলিয়ন বর্গফুট। ঝকঝকে কাচের দেয়াল ঘেরা এই সুবিশাল স্থাপনায় আছে ব্যাংক, কাস্টমস অফিস, নিরাপদ ভল্ট, এমনকি একটি গয়নার শপিং মল—যা বৈশ্বিক হিরা ব্যবসার জন্য এক ছাদের নিচে সব সুবিধা দেওয়ার মতো করে ডিজাইন করা হয়েছে।

সাধারণত বছরের এই সময়টায় সুরাটে ক্রিসমাস ও নিউ ইয়ারের আগে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাড়তি অর্ডার মেটাতে উৎপাদন বাড়ানো হয়। কিন্তু এবার অনেক কারিগরই নিশ্চিত নন, আদৌ তাঁদের জন্য পর্যাপ্ত কাজ থাকবে কি না।

সুরাটে কাটিং ও পলিশিং ইউনিট চালান শৈলেশ মাঙ্গুকিয়া নামের এক ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, ‘চাহিদা এতই কমে গেছে যে, গত বছর যে হিরা আমি ২৫ হাজার রুপিতে বিক্রি করেছি, তার দাম এবার ১৮ হাজারো উঠতে চাচ্ছে না।’ জানান বাধ্য হয়ে তাঁকে কর্মী ছাঁটাই করতে হয়েছে। বলেন, আগে তাঁর অধীনে প্রায় আড়াই শ কর্মী কাজ করত। বর্তমানে তা কমে এসে দাঁড়িয়েছে অর্ধেকে। জিজেইপিসির সহসভাপতি শৌনক পারিখের তথ্যমতে, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শুল্ক কমানোর কোনো বাণিজ্য চুক্তি না হলে অন্তত দেড় থেকে দুই লাখ কর্মীর চাকরি হারাবেন।

শিল্প কর্মকর্তারা বলছেন, শুল্কের ধাক্কায় মার্কিন ক্রেতারা এখন ইসরায়েল, বেলজিয়াম কিংবা বতসোয়ানার মতো দেশ থেকে হিরা কেনার দিকে ঝুঁকছেন। ভারতীয় রপ্তানিকারকেরা চেষ্টা করছেন এশিয়া, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে বিক্রি বাড়িয়ে মার্কিন ক্ষতি পুষিয়ে নিতে, তবে নতুন ক্রেতা খুঁজে পাওয়া সহজ কাজ নয়। এ কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান নগদ প্রবাহ টিকিয়ে রাখতে কাঁচা হিরা কেনা কমিয়ে দিয়েছে এবং সীমিত মজুত নিয়ে কাজ চালাচ্ছে। অর্থাভাবের কারণে টিকে থাকার জন্য বড় ধরনের ছাড় দিয়ে বিক্রি শুরু করেছে ছোট ইউনিটগুলো।

তবে এর মাঝেও একটুখানি আশার আলো হলো ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজার।টিফানি অ্যান্ড কো. এবং হ্যারি উইনস্টনের মতো আন্তর্জাতিক বিলাসবহুল ব্র্যান্ডকে হিরা সরবরাহকারী ভেনাস জুয়েলের অংশীদার হিতেশ শাহ বলেন, ‘ভারত এখন চীনের জায়গা নিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম হিরা বাজার হয়েছে। স্থানীয় চাহিদা এখনো বাড়ছে। গত ১০–১৫ দিনে আমাদের বিক্রি কিছুটা ধীর হয়েছে ঠিকই, কিন্তু আমেরিকান বাজারের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে দিচ্ছে ভারতের অভ্যন্তরীণ চাহিদা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাইকোর্টের বিচারপতি হলেন সারজিস আলমের শ্বশুর

কুমিল্লায় দুই ট্যাংকে পানি, তদন্ত শেষ হয়নি ১ মাসে

জিন সম্পাদনায় নতুন সাফল্য, ডায়াবেটিস রোগীদের আর ইনসুলিন নিতে হবে না

অবৈধ মোবাইল দিয়ে বন্দীরা আমাকে কল করেন, এটা বিস্ময়কর: কারা মহাপরিদর্শক

কনস্যুলেটে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের হামলা, ব্যবস্থা নিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে চিঠি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত