Ajker Patrika

ট্রাম্পের শুল্কে নাইকির খরচ বাড়বে ১ বিলিয়ন ডলার

অনলাইন ডেস্ক
বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্রীড়াসামগ্রী প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান নাইকি। ছবি: এএফপি
বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্রীড়াসামগ্রী প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান নাইকি। ছবি: এএফপি

প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপ করা শুল্কের জেরে এ বছর অতিরিক্ত প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার (৭৩০ মিলিয়ন পাউন্ড) ব্যয় হতে পারে বলে জানিয়েছে বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্রীড়াসামগ্রী প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান নাইকি। কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, মার্কিন বাণিজ্য নীতির প্রভাব কমাতে তারা চীনে উৎপাদনের ওপর নির্ভরতা কমাবে।

গত মাসে নাইকি জানিয়েছিল, তারা যুক্তরাষ্ট্রে কিছু জুতা ও পোশাকের দাম জুনের শুরু থেকে বাড়াবে। এর কয়েক সপ্তাহ আগে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাডিডাসও বলেছিল, শুল্কের কারণে পণ্যের দাম বাড়াতে হবে।

নাইকির প্রথম প্রান্তিকের রাজস্ব প্রত্যাশার চেয়ে কম কমবে, এমন পূর্বাভাস দেওয়ার পর কোম্পানিটির শেয়ারের দাম অতিরিক্ত লেনদেনে ১০ শতাংশের বেশি বেড়ে যায়।

তাদের গত তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ প্রান্তিক হলেও গত তিন মাসে কোম্পানিটির আয় বিশ্লেষকদের পূর্বাভাস ছাড়িয়ে গেছে। নাইকি জানিয়েছে, তাদের চতুর্থ প্রান্তিকের রাজস্ব ছিল ১১.১ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২২ সালের তৃতীয় প্রান্তিকের পর সর্বনিম্ন।

নাইকির চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার ম্যাথিউ ফ্রেন্ড বলেন, ট্রাম্পের শুল্ক নীতির প্রেক্ষিতে তারা চীনের কিছু উৎপাদন কার্যক্রম অন্য দেশে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ চীনের ওপর সবচেয়ে বেশি ট্রাম্পের শুল্কের খড়্গ নেমে এসেছে।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে যেসব নাইকি জুতা বিক্রি হয়, তার ১৬ শতাংশই তৈরি হয় চীনে। তবে ম্যাথিউ ফ্রেন্ড বলছেন, ২০২৬ সালের মে মাসের মধ্যে এই সংখ্যা কমিয়ে ‘এক অঙ্কের উচ্চ শতাংশের মধ্যে’ আনা হবে।

গত ২ এপ্রিল ‘লিবারেশন ডে’ ঘোষণা দিয়ে বিশ্বব্যাপী বেশিরভাগ পণ্যের ওপর ব্যাপক হারে শুল্ক আরোপ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে মাসের শেষ দিকে তিনি বেশিরভাগ শুল্ক সাময়িকভাবে স্থগিত করেন, যাতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালানো যায়। তাঁর এক শীর্ষ উপদেষ্টা তখন ঘোষণা দেন, ‘৯০ দিনে ৯০টি চুক্তি’ করার লক্ষ্য নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।

এই পদক্ষেপের ফলে শুল্কহার অনেক কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়, যেখানে এর আগে অনেক বাণিজ্য অংশীদারের পণ্যের ওপর অনেক বেশি হার প্রযোজ্য ছিল।

তবে এখন হোয়াইট হাউসের ওপর চাপ বাড়ছে। আগামী ৯ জুলাই এই ৯০ দিন শেষ হতে চলেছে। তারপর ট্রাম্প এই শুল্ক আরোপ নিয়ে আরও কঠোর হবেন না কি শুল্ক আরও কমবে, সে নিয়ে ভাবনায় বিশ্ব বাণিজ্যের অংশীদারদের।

গতকাল বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে দেওয়া এক বক্তব্যে চীনের সঙ্গে একটি চুক্তির কথা উল্লেখ করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি বলেন, বাণিজ্য আলোচনা ভালোভাবেই এগোচ্ছে। ভারতের সঙ্গেও একটি চুক্তি হতে পারে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘সব দেশের সঙ্গে আমরা চুক্তি করব না। কিছু দেশকে আমরা শুধু একটি চিঠি পাঠিয়ে বলব, ধন্যবাদ। আপনাদের ২৫,৩৫, ৪৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। এটিই সবচেয়ে সহজ উপায়।’

ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আমার টিম এভাবে করতে চায় না। তারা কিছুটা করতে চায়, তবে তারা আমার চেয়ে বেশি চুক্তি করতে আগ্রহী।’

পরে বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক ব্লুমবার্গকে বলেন, চীনের সঙ্গে চুক্তি মূলত আগের আলোচনার আনুষ্ঠানিক রূপ। এর মধ্যে রয়েছে বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে বিরল খনিজ সরবরাহের প্রতিশ্রুতি।

অবশ্য ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, আলোচনার অগ্রগতির ওপর নির্ভর করে ট্রাম্প ৯০ দিনের সময়সীমা বাড়াতে পারেন।

গতকাল হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট বলেন, এই সময়সীমাটি ‘গুরুত্বপূর্ণ নয়’। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে নতুন শুল্কহার নিয়ে বিভিন্ন ধরনের চুক্তি নিয়ে আলাপ করতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রস্তুত আছেন।

এই মাসের শুরুতে বিরল খনিজ সরবরাহ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন একটি চুক্তি ঘোষণা করে। তখন এ নিয়ে উদ্বেগের জন্ম হয় যে এই খনিজ সরবরাহ বিঘ্নিত হলে দুই অর্থনৈতিক পরাশক্তির মধ্যে আবারও বাণিজ্য উত্তেজনা শুরু হতে পারে।

গতকাল ট্রাম্প চীনের সঙ্গে চুক্তি সইয়ে কথা বললেও বিস্তারিত জানাননি। পরে হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রশাসন ও চীন একটি অতিরিক্ত সমঝোতায় পৌঁছেছে, যার মাধ্যমে জেনেভা চুক্তি বাস্তবায়নের কাঠামো গঠন করা হবে।

এর আগে এপ্রিল মাসে ট্রাম্প শুল্ক বাড়ানোর পর চীন পাল্টা শুল্ক আরোপ করে, যার ফলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। পরে দুই দেশই কিছু শুল্ক কমাতে রাজি হলেও পুরোপুরি শুল্ক বাতিল করা হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত