Ajker Patrika

রাজশাহীতে বাসায় ঢুকে বিচারকের ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা, স্ত্রী আহত

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৮: ২৮
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আব্দুর রহমানের বাসায় ঢুকে তাঁর ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা করেছে এক দুর্বৃত্ত। আজ বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) বেলা ৩টার দিকে নগরের ডাবতলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। স্পার্ক ভিউ নামের দশতলা ভবনের পাঁচতলার একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকেন বিচারক।

এ ঘটনায় বিচারকের স্ত্রী ও হামলাকারী যুবকও আহত হয়েছেন। তাঁদের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। নিহত স্কুলছাত্রের নাম তাওসিফ রহমান সুমন (১৬)। ভবনের অন্য ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রামেক হাসপাতালের মুখপাত্র শংকর কুমার বিশ্বাস।

সুমনের মায়ের নাম তাসমিন নাহার। তাঁকেও আহত অবস্থায় রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া হামলাকারী যুবককেও আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ভবনে ঢোকার সময় ওই যুবক দারোয়ানের কাছে থাকা খাতায় নিজের নাম লিখেছেন লিমন। বিচারক আব্দুর রহমান সম্পর্কে ভাই, এ পরিচয় দিয়ে তিনি পাঁচতলার ফ্ল্যাটে চলে যান।

ভবনের দারোয়ান মেসের আলী জানান, ওই যুবককে তিনি আগে কখনো দেখেননি। বিচারককে ভাই পরিচয় দেওয়ায় তিনি ঢুকতে দেন। তবে তার আগে নাম ও মোবাইল নম্বর লিখিয়ে নেন। বেলা আড়াইটার দিকে ওই যুবক ফ্ল্যাটে যান।

এর প্রায় ৩০ মিনিট পর ফ্ল্যাটের গৃহকর্মী দারোয়ানকে এসে জানান যে, ফ্ল্যাটে বিচারকের ছেলে ও স্ত্রীকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। এর মধ্যে ভবনের অন্য ফ্ল্যাটের বাসিন্দারাও চলে আসেন। তাঁরা সবাই ফ্ল্যাটে ঢুকে তিনজনকেই আহত পান। এরপর তিনজনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, নিহত সুমনের মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে আর হামলাকারী যুবক ও বিচারকের স্ত্রীকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়েছে।

ঘটনার পর বিকেল ৫টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান। তিনি জানান, হামলাকারী ব্যক্তির পকেটে একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি চালক। তাঁর সঙ্গে পূর্ববিরোধ থাকতে পারে।

পুলিশ কমিশনার জানান, সিলেটের সুরমা থানায় এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে জিডি করেছিলেন তাসমিন নাহার। কেন এ ঘটনা ঘটেছে, তা তাঁরা এখনো বিস্তারিত জানেন না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দোলাইরপাড়ে কিশোরকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা, গ্রেপ্তার ১

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর দোলাইরপাড়ে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে এক কিশোরকে (১৫) আটকে রেখে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার দোলাইরপাড়ের শেখপাড়া এলাকায় তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ফৌজিয়া রওশন আক্তার ওরফে প্রীতি নামের এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

নিহত কিশোরের নাম মো. বাপ্পী। তার বাবা মো. শাহজাহান পেশায় রিকশাচালক। তাদের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার নলবুনিয়ায়। বাপ্পী মায়ের সঙ্গে যাত্রাবাড়ীর একটি কারখানায় শ্রমিকের কাজ করত।

আজ বৃহস্পতিবার নিহত ব্যক্তির বড় ভাই মো. পারভেজ জানান, গত মঙ্গলবার স্থানীয় কয়েকজন চিহ্নিত মাদক কারবারি বাপ্পীকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে এলাকার ফৌজিয়া রওশনের বাসায় নিয়ে যান। ওই নারীর বাসায় চুরির অভিযোগে বাপ্পীকে আটক রেখে নির্মমভাবে লাঠিপেটা করা হয়। তাঁদের বাসায় এসেও তল্লাশির নামে কাপড়চোপড় ও জিনিসপত্র এলোমেলো করে। কিছু না পেয়ে ফিরে যায়। সারা দিন ধরে ওকে নির্যাতন করে হত্যা করে।

পরে বুধবার সন্ধ্যায় শেখপাড়ার বায়তুল রহমত নুরানি মাদ্রাসার সামনে বাপ্পীর লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়।

যাত্রাবাড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আসাদুজ্জামান জুয়েল বলেন, শেখপাড়ার মাদ্রাসার সামনে থেকে কিশোর বাপ্পীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, চোর সন্দেহে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

মো. আসাদুজ্জামান জুয়েল আরও জানান, নিহত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে কয়েকজনকে আসামি করে যাত্রাবাড়ী থানায় হত্যা মামলা করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘নাগরিক সেবা বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নে ৬৪ জেলার উদ্যোক্তাদের নিয়ে ঢাকায় কর্মশালা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
‘নাগরিক সেবা বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নে ৬৪ জেলার উদ্যোক্তাদের নিয়ে ঢাকায় কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
‘নাগরিক সেবা বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নে ৬৪ জেলার উদ্যোক্তাদের নিয়ে ঢাকায় কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

‘নাগরিক সেবা বাংলাদেশ’ উদ্যোগ কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ৬৪ জেলার নাগরিক সেবা, ডিজিটাল সেন্টার ও ই-পোস্ট সেন্টারের প্রতিনিধি উদ্যোক্তাদের নিয়ে দিনব্যাপী এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) ঢাকার আগারগাঁও ডাক ভবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের আয়োজনে এবং এসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) প্রোগ্রামের সহযোগিতায় এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

কর্মশালায় নাগরিক সেবা প্ল্যাটফর্মের উদ্দেশ্য, লক্ষ্য ও কার্যপরিধি, উদ্যোক্তাদের দায়িত্ব, প্ল্যাটফর্ম ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহারসংক্রান্ত প্রক্রিয়া, বিএমইটি, বিআরটিএসহ বিভিন্ন সেবার লাইভ প্রদর্শন, ই-গভর্নমেন্ট স্কিলস, সেবাকেন্দ্রের ব্র্যান্ডিং, গ্রাহকসেবা ও আচরণগত দক্ষতা নিয়ে আলোচনা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পাশাপাশি ডিজিটাল নিরাপত্তা, সাইবার সিকিউরিটি ও তথ্য সুরক্ষার মৌলিক ধারণা এবং বিভিন্ন মৌলিক ও উন্নত ডিজিটাল টুলস নিরাপদ ব্যবহারের ওপর হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

আয়োজকদের মতে, এসব দক্ষতা সেবাকেন্দ্রগুলোকে আরও আধুনিক, দক্ষ ও নাগরিকবান্ধব হিসেবে রূপান্তর করতে সহায়ক হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আইসিটি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এস এম শাহাব উদ্দীন, ডাক অধিদপ্তরের পরিচালক (মেইলস) কবির আহমেদ, আইসিটি বিভাগের যুগ্ম সচিব (ডিজিটাল গভর্ন্যান্স ও সিকিউরিটি অনুবিভাগ) মো. মজিবর রহমান এবং এটুআইয়ের যুগ্ম প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. রশিদুল মান্নাফ কবীর।

কর্মশালার উদ্বোধন করেন এটুআইয়ের প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মোহা. আব্দুর রফিক। স্বাগত বক্তব্য দেন এটুআইয়ের হেড অব প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট আব্দুল্লাহ আল ফাহিম।

শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, দেশে সরকারি সেবা গ্রহণে এখনো সময়, খরচ ও জটিলতা বড় চ্যালেঞ্জ। এই প্রেক্ষাপটে ডিজিটাল সেন্টার, নাগরিক সেবাকেন্দ্র ও ই-পোস্ট সেন্টারের উদ্যোক্তারা সেবা প্রদান ব্যবস্থার প্রথম সারির যোদ্ধা হিসেবে কাজ করছেন। তিনি বলেন, উদ্যোক্তা নেতৃত্বাধীন সেবা মডেল একদিকে সেবার প্রবেশগম্যতা বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে প্রশিক্ষিত উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে সেবার মান ও নাগরিক আস্থা নিশ্চিত করছে।

শীষ হায়দার চৌধুরী জানান, সাধারণ মানুষের হয়রানিমুক্ত ও সহজ সেবাপ্রাপ্তির প্রত্যাশা প্রতিফলিত করতেই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত ২৬ মে ‘নাগরিক সেবা প্ল্যাটফর্ম’ উদ্বোধন করেন। জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন, পাসপোর্ট, অনলাইন জিডি, ভূমিসেবা, ট্রেড লাইসেন্স, টিকিটিং, সামাজিক সুরক্ষা, বিআরটিএ, কৃষি, স্বাস্থ্যসেবাসহ বিভিন্ন সরকারি সেবা এক প্ল্যাটফর্ম থেকে নেওয়ার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। বর্তমানে ৪৬৫টি সেবা ডিজিটালাইজড হয়েছে এবং ধাপে ধাপে নাগরিক সেবা প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে সেবাগুলোকে সংযুক্ত করার কাজ চলছে।

এস এম শাহাব উদ্দীন বলেন, ডাক বিভাগের ‘সেবাই ধর্ম’ নীতির মতোই উদ্যোক্তারা আন্তরিকতা নিয়ে নাগরিক সেবা দিচ্ছেন, যা প্রশংসনীয়।

মো. মজিবর রহমান বলেন, এসব সেবাকেন্দ্রের মাধ্যমে গ্রাম ও শহরের মধ্যে বিদ্যমান ডিজিটাল দূরত্ব উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে এবং সরকারি সেবা পাওয়া সহজ ও কম হয়রানিমুক্ত হয়েছে।

মোহা. আব্দুর রফিক বলেন, ‘নাগরিক সেবাকেন্দ্রের মাধ্যমে এখন থেকে সরকারি সেবাগুলোর আবেদন থেকে সেবাগ্রহীতা হাতে পাওয়া পর্যন্ত পুরো একটি সেবা কেন্দ্র থেকে যাতে নিতে পারেন, তা নিয়ে আমরা কাজ করছি।’

আব্দুল্লাহ আল ফাহিম বলেন, ডিজিটাল সেন্টার, ই-পোস্ট সেন্টার ও নাগরিক সেবা বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের জন্য একটি সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়নের কাজ চলছে, যার মাধ্যমে উদ্যোক্তারা তাঁদের কার্যক্রমে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা পাবেন।

উদ্যোক্তাদের পক্ষে সিরাজগঞ্জের রায়দৌলতপুর ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা সাব্বির আহমেদ ও ঢাকার আশুলিয়া ই-পোস্ট সেন্টারের উদ্যোক্তা খন্দকার কণা আক্তার মতামত ব্যক্ত করেন। তাঁরা বলেন, এ কর্মশালা থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান ও দক্ষতা নিজ জেলায় অন্য উদ্যোক্তাদের সঙ্গেও ভাগ করে নেবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গলা থেকে পা ২৬ টুকরা লাশ, মুখে দাড়ি, আঙুলের ছাপে মিলল পরিচয়

ঢামেক প্রতিবেদক
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ২১: ৩২
আশরাফুল হক। ছবি: সংগৃহীত
আশরাফুল হক। ছবি: সংগৃহীত

হাইকোর্ট এলাকায় নীল রঙের ড্রামের ভেতরে ২৬ টুকরা মানবদেহের পরিচয় মিলেছে। আঙুলের ছাপের মাধ্যমে খণ্ড–বিখণ্ড লাশের পরিচয় শনাক্ত করা হয়।

আজ বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় লাশ উদ্ধারের ঘণ্টা দু-এক পর শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর এ তথ্য জানান।

পুলিশ বলছে, মৃত ব্যক্তির নাম আশরাফুল হক (৪২)। তিনি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর নয়াপাড়া গ্রামের আব্দুর রশীদের ছেলে।

আজ রাতে শাহবাগ থানার ওসি খালিদ মনসুর আজকের পত্রিকাকে জানান, আঙুলের ছাপের মাধ্যমে খণ্ডিত মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করা হয়।

ওসি আরও বলেন, সন্ধ্যার দিকে হাইকোর্টসংলগ্ন রাস্তা থেকে নীল রঙের দুটি ড্রাম দেখে লোকজন থানায় খবর দেন। পরে ড্রাম খুলে খণ্ডিত মানবদেহ পাওয়া যায়। মরদেহ থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল। দুটি ড্রামের একটিতে চাল ছিল।

অন্যটিতে হাত–পা–মাথাসহ ২৬ টুকরা মরদেহ কালো পলিথিনে মোড়ানো ছিল। মৃত ব্যক্তির গলা থেকে পা পর্যন্ত সবকিছুই খণ্ডিত, মুখে ছিল দাড়ি।

এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে হাইকোর্টের কাছে ঈদগাহ মাঠ পানির পাম্পের পাশে প্রধান সড়কে ড্রাম থেকে খণ্ডিত মানবদেহ উদ্ধার করা হয়।

পুলিশের ধারণা, দু-এক দিন আগে হত্যার পর মরদেহটি ড্রামে ভরা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হুমকি পেয়ে সাত দিন আগেই জিডি করেন বিচারকের স্ত্রী, তবু খুন হলো ছেলে

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ২১: ৪০
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আবদুর রহমানের ছেলে তাওসিফ রহমান সুমনকে (১৬) কুপিয়ে হত্যা করা লিমন মিয়ার (৩৫) বিরুদ্ধে সাত দিন আগেই একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছিল। লিমনের হামলায় আহত বিচারকের স্ত্রী তাসমিন নাহার লুসী (৪৪) নিরাপত্তাহীনতার স্বার্থে সিলেটের জালালাবাদ থানায় জিডিটি করেছিলেন। তবে এ জিডির তদন্ত শুরু হয়নি।

৬ নভেম্বর করা এ জিডিতে তাসমিন নাহার লুসী উল্লেখ করেন, ‘কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের সদস্য হওয়ায় লিমনের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। পরিচয় হওয়ার পর সে আমার মোবাইল নম্বর নেয়। তার পরিবার আর্থিকভাবে কিছুটা দুর্বল হওয়ায় প্রায় সময় সে আমার কাছ থেকে আর্থিক সহযোগিতা নিত। একটা পর্যায়ে লিমন প্রতিনিয়ত আমার কাছে সহযোগিতা চাইলে আমি তা করতে অপারগতা প্রকাশ করায় সে ফোন করে নানা রকম হুমকি-ধমকি দিচ্ছে।’

জিডিতে আরও বলা হয়, ‘সর্বশেষ ৩ নভেম্বর সকালে লিমন আমার মেয়ের ফেসবুক মেসেঞ্জারে কল করে আমাকে ও আমার পরিবারের লোকজনদের প্রাণে হত্যা করবে বলে হুমকি দেয়। লিমন যেকোনো সময় আমিসহ আমার পরিবারের সদস্যদের বড় ধরনের ক্ষতিসাধন করতে পারে বলে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এই অবস্থায় ব্যক্তি নিরাপত্তার স্বার্থে জিডি করা একান্ত প্রয়োজন।’

যোগাযোগ করা হলে জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ মোহাম্মদ মোবাশ্বির আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জিডি হওয়ার পর আদালত থেকে তদন্তের অনুমতি নিতে হয়। আমরা জিডিটি আদালতে পাঠিয়েছি। তবে এখনো তদন্তের অনুমতি পাইনি। তাই জিডির তদন্ত কার্যক্রম শুরু করা যায়নি।’

ওসি জানান, বিচারক আবদুর রহমানের মেয়ে বিবাহিত। তবে তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। তাই সিলেটে মেয়ের কাছে ছিলেন তাসমিন নাহার লুসী। সেখানে থাকা অবস্থায় লিমন মিয়ার হুমকি পেয়ে তিনি থানায় জিডি করেছিলেন।

বিচারক আবদুর রহমানের গ্রামের বাড়ি জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার চকপাড়া গ্রামে। আর ঘাতক লিমন মিয়ার বাড়ি গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার মদনেরপাড়া ভবানীগঞ্জ গ্রামে। তাঁর সম্পর্কে এখনো বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি।

পুলিশ বলছে, লিমন এ পরিবারের পূর্বপরিচিত। বিচারকের নিহত ছেলে সুমন রাজশাহী গভ. ল্যাবরেটরি স্কুলে নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল।

হাসপাতালে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসাধীন হামলাকারী লিমন। ছবি: আজকের পত্রিকা
হাসপাতালে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসাধীন হামলাকারী লিমন। ছবি: আজকের পত্রিকা

বিচারক আবদুর রহমান রাজশাহী নগরের ডাবতলা এলাকায় স্পার্ক ভিউ নামের একটি দশতলা ভবনের পাঁচতলার ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকেন। আজ বিকেলে ওই ফ্ল্যাটেই লিমনের হাতে খুন হয় বিচারকের নবম শ্রেণিপড়ুয়া ছেলে তাওসিফ রহমান সুমন। আহত হন তার মা তাসমিন নাহার লুসী। হামলাকারী লিমন মিয়াও আহত হয়ে এখন হাসপাতালে।

স্পার্ক ভিউ ভবনের দারোয়ান মেসের আলী জানান, লিমন মিয়াকে তিনি আগে কখনো দেখেননি। বিচারককে ভাই পরিচয় দেওয়ায় তিনি তাঁকে ভেতরে ঢুকতে দেন। তবে এর আগে খাতায় তাঁর নাম ও মোবাইল নম্বর লিখিয়ে নেন। হাতে একটি ব্যাগ নিয়ে বেলা আড়াইটার দিকে ওই যুবক ফ্ল্যাটে যান। এর প্রায় ৩০ মিনিট পর ফ্ল্যাটের গৃহকর্মী তাঁকে এসে জানান যে, ফ্ল্যাটে বিচারকের ছেলে ও স্ত্রীকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। এর মধ্যে ভবনের অন্য ফ্ল্যাটের বাসিন্দারাও চলে আসেন। তাঁরা সবাই ফ্ল্যাটে ঢুকে তিনজনকে আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। এরপর তাঁদের দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

রামেক হাসপাতালের মুখপাত্র শংকর কে বিশ্বাস জানান, ধারালো অস্ত্রের গুরুতর আঘাতের ফলে সুমনের মৃত্যু হয়েছে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাত পাওয়া গেছে। লাশ হাসপাতালের মর্গে আছে।

শংকর কে বিশ্বাস আরও জানান, বিচারকের স্ত্রীর ডান হাত, উরু ও বাম বাহুতে গুরুতর জখম দেখা গেছে। এ ছাড়া তাঁর ডান হাতের একটি রগ কেটে গেছে। চিকিৎসকদের একটি সমন্বিত দল অস্ত্রোপচার করেছেন। বর্তমানে তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। তিনি আরও জানান, লিমন মিয়ার ডান হাতে জখম ছিল, তবে সেটি গুরুতর নয়।

বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান। তিনি জানান, হামলাকারী ব্যক্তির পকেটে একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি চালক। তাঁর সঙ্গে পূর্ববিরোধ থাকতে পারে। হাসপাতালে তাঁকে পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। পুলিশ সার্বিক ঘটনা তদন্ত করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত