Ajker Patrika

ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধ করলে কপাল পুড়বে চীনের

এএফপি, টোকিও
আপডেট : ২৩ জুন ২০২৫, ২১: ১৮
হরমুজ প্রণালি বন্ধের প্রস্তাব পাস করেছে ইরানের পার্লামেন্ট। ছবি: এএফপি
হরমুজ প্রণালি বন্ধের প্রস্তাব পাস করেছে ইরানের পার্লামেন্ট। ছবি: এএফপি

বিশ্বের মোট তেলের প্রায় ২০ শতাংশ প্রতিদিন পার হয় মধ্যপ্রাচ্যের অতি গুরুত্বপূর্ণ হরমুজ প্রণালি দিয়ে। এর ৮৪ শতাংশই যায় এশিয়ার বিভিন্ন দেশে, ফলে এই রুটে সামান্য বিপর্যয়ও চীন, ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো অর্থনীতির ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন হামলার জেরে ইরান যদি এই প্রণালি অবরোধ করে, তবে বিশ্বজুড়ে জ্বালানি সংকট দেখা দিতে পারে, যার বড় প্রভাব পড়বে এশিয়ার দেশগুলোর ওপর। তবে সবচেয়ে বেশি কপাল পুড়বে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের। কেননা এশিয়ায় এই প্রণালি দিয়ে সর্বাধিক তেল আমদানি করে দেশটি।

যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তথ্য প্রশাসন (ইআইএ) জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রতিদিন হরমুজ প্রণালি দিয়ে পাড়ি দিয়েছে ১৪ দশমিক ২ মিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত তেল এবং ৫ দশমিক ৯ মিলিয়ন ব্যারেল অন্যান্য জ্বালানি পণ্য; যা বিশ্বের মোট সরবরাহের প্রায় ২০ শতাংশ।

চীন: সর্বোচ্চ আমদানিকারক

ইআইএ জানিয়েছে, পূর্ব এশিয়ায় আমদানি করা তেলের অর্ধেকের বেশি হরমুজ প্রণালি হয়ে আসে। শুধু চীনই প্রতিদিন ৫ দশমিক ৪ মিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছে এ রুট দিয়ে।

সৌদি আরব চীনের দ্বিতীয় বৃহত্তম অপরিশোধিত তেল সরবরাহকারী দেশ। সৌদি আরব থেকে প্রতিদিন হরমুজ প্রণালি হয়ে ১ দশমিক ৬ মিলিয়ন ব্যারেল তেল চীনে আসে।

বিশ্লেষণী প্রতিষ্ঠান কেপলার জানায়, ইরানের তেলের ৯০ শতাংশের বেশি রপ্তানি হয় চীনে। এপ্রিল মাসে দেশটি ইরান থেকে আমদানি করেছে ১ দশমিক ৩ মিলিয়ন ব্যারেল তেল।

ভারত: নির্ভরতা কমাতে রাশিয়ার দিকে ঝোঁক

ভারত হরমুজ প্রণালি হয়ে প্রতিদিন ২ দশমিক ১ মিলিয়ন ব্যারেল তেল আমদানি করছে। ২০২৫ সালের শুরুতে দেশটির মোট তেল আমদানির ৫৩ শতাংশই এসেছে মধ্যপ্রাচ্য থেকে, বিশেষত ইরাক ও সৌদি আরব থেকে।

তবে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত বেড়ে যাওয়ায় ভারত গত কয়েক বছরে রাশিয়া থেকে আমদানি বাড়িয়েছে।

দেশটির জ্বালানিমন্ত্রী হরদীপ সিং পুরি বলেন, আমরা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। সরবরাহ স্থিতিশীল রাখতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দক্ষিণ কোরিয়া: ২০০ দিনের মজুত প্রস্তুত

দক্ষিণ কোরিয়ার আমদানি করা তেলের ৬৮ শতাংশই হরমুজ প্রণালি হয়ে আসে। প্রতিদিন আসে ১ দশমিক ৭ মিলিয়ন ব্যারেল। সৌদি আরব দেশটির প্রধান সরবরাহকারী—একাই ৩ ভাগের ১ ভাগ তেল সরবরাহ করে।

দেশটির বাণিজ্য ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এখনো আমদানি ব্যাহত হয়নি। তবে সম্ভাব্য সংকট মোকাবিলার জন্য প্রায় ২০০ দিনের তেল মজুত রাখা হয়েছে।

জাপান: ৯৫ শতাংশ তেল আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে

জাপান প্রতিদিন ১ দশমিক ৬ মিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত তেল আমদানি করে হরমুজ প্রণালি দিয়ে। জাপানের শুল্ক বিভাগ জানায়, গত বছর দেশটির ৯৫ শতাংশ তেলই এসেছে মধ্যপ্রাচ্য থেকে।

দেশটির শীর্ষ জাহাজ পরিবহন সংস্থা মিৎসুই ওএসকে জানিয়েছে, আমরা চেষ্টা করছি উপসাগরীয় অঞ্চলে আমাদের জাহাজগুলো যতটা সম্ভব কম সময় রাখার।

অন্যান্য এশীয় দেশ

হরমুজ প্রণালি দিয়ে আরও প্রতিদিন প্রায় ২ মিলিয়ন ব্যারেল তেল গেছে থাইল্যান্ড, ফিলিপাইনসহ এশিয়ার অন্যান্য দেশে। এ ছাড়া ৫ লাখ ব্যারেল ইউরোপে এবং ৪ লাখ ব্যারেল যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে।

বিকল্প রুট আছে, তবে সীমিত

বিশ্লেষকেরা বলছেন, হরমুজ প্রণালি পুরোপুরি বন্ধ হলে কিছু বিকল্প থাকলেও তা প্রয়োজনীয় জোগান নিশ্চিতে যথেষ্ট নয়।

এমইউএফজি ব্যাংকের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে জ্বালানি মজুত, ওপেক প্লাসের অতিরিক্ত উৎপাদন এবং যুক্তরাষ্ট্রের শেল উৎপাদন কিছুটা সহায়তা দিতে পারে। তবে হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে এসব ব্যবস্থারও সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের কিছু পরিকাঠামো রয়েছে প্রণালি এড়িয়ে তেল রপ্তানির, যার সম্মিলিত ক্ষমতা দিনে প্রায় ২ দশমিক ৬ মিলিয়ন ব্যারেল। ইরানের গোরেহ-জাস্ক পাইপলাইন, যেটি ওমান উপসাগর দিয়ে তেল পাঠাতে পারত, সেটিও বর্তমানে বন্ধ এবং দিনে সর্বোচ্চ সক্ষমতা মাত্র ৩ লাখ ব্যারেল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত