Ajker Patrika

দীর্ঘদিন বন্ধ অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, বিএসইসির তদন্ত কমিটি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
দীর্ঘদিন বন্ধ অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, বিএসইসির তদন্ত কমিটি

বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে পুঁজিবাজারে বস্ত্র খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সার্বিক দিক খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ লক্ষ্যে সম্প্রতি তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিএসইসি।

তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন—বিএসইসির যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল হক, সহকারী পরিচালক মাহমুদুর রহমান ও মো. মাহমুদুল হাসান।

কমিটিকে ৬০ দিনের মধ্যে একটি প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্তের বিষয়টি অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালককেও অবহিত করা হয়েছে।

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম এ তথ্য নিশ্চিত বলেন, অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের সার্বিক পরিস্থিতি যাচাই করতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে কমিটি তাদের প্রতিবেদন বিএসইসিতে জমা দেবে। এটা কমিশনের রুটিন ওয়ার্ক।

বিএসইসি থেকে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, পুঁজিবাজার ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সার্বিক বিষয় তদন্ত করা প্রয়োজন বলে মনে করে বিএসইসি। তাই, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ এর ধারা ২১ এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কমিশন কোম্পানিটির সার্বিক বিষয়ে তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

তথ্যমতে, তদন্ত কমিটি অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সম্পদ, কারখানা এবং সরঞ্জাম, মজুত পণ্য এবং বিক্রীত পণ্যের খরচ এবং এর সত্যতা যাচাই করবে। কারখানা নির্মাণে পণ্যসামগ্রী কেনার জন্য অগ্রিম টাকা পরিশোধ করা এবং পণ্য বিক্রি করে যে আয় হয়েছে, তা যাচাই করবে। জমি ও কারখানার সরঞ্জামের পুনর্মূল্যায়ন সঠিকভাবে হয়েছে কি না এবং বিলম্বিত কর (ডেফার্ড ট্যাক্স) ইস্যুর সত্যতা যাচাই করবে।

এ ছাড়াও দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি ঋণ এবং তা পরিশোধের সক্ষমতা, সহযোগী কোম্পানির মধ্যে যেসব লেনদেন করা হয়েছে, সেগুলো যাচাই করবে। ভবিষ্যতে কোম্পানিটি ব্যবসায় টিকে থাকতে পারবে কি না এবং ব্যবসা পরিচালনায় সক্ষমতা সম্পর্কিত অন্য যে কোনো বিষয় যাচাই করবে তদন্ত কমিটি।

বিএসইসি থেকে একটি চিঠি পেয়েছেন জানিয়ে অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের কোম্পানি সচিব জিয়াউল হক বলেন, চিঠিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যেহেতু, বিএসইসি তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছে, সেহেতু এ বিষয়ে বেশি কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না।

ইতিমধ্যে স্টক এক্সচেঞ্জকে অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের প্রধান কার্যালয় ও কারখানা সরেজমিন পরিদর্শনেরও নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি। গত ২৬ মার্চ বিএসইসি এ নির্দেশনা জারি করে। দীর্ঘ সময় ধরে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ থাকা, বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করতে ব্যর্থ হওয়া এবং বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিতে না পারা দুর্বল এ কোম্পানির সামগ্রিক ব্যবসায়িক কার্যক্রম যাচাই করতে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

২০২৪ সালের ৩০ জুনে শেষ হওয়া হিসাববছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ‘নো ডিভিডেন্ড’ বা লভ্যাংশ না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। বছরটিতে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে শূন্য দশমিক শূন্য ১ পয়সা। আগের বছরে শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ২ টাকা ৭০ পয়সা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকা চেম্বারের সেমিনার: বিদেশে চিকিৎসার ব্যয় বছরে ৫ বিলিয়ন ডলার

  • স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়ে দ. এশিয়ায় পিছিয়ে বাংলাদেশ
  • মাথাপিছু সরকারি স্বাস্থ্যব্যয় মাত্র ১,০৭০ টাকা
  • মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পায় না ৪৯ শতাংশ মানুষ
  • দেশের স্বাস্থ্যসেবার বাজার ১৪ বিলিয়ন ডলারের
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৫৯
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে আস্থা বৃদ্ধি; মান নিয়ন্ত্রণে কৌশলগত কাঠামো নিশ্চিতকরণ’ শীর্ষক গতকালের সেমিনারে অতিথিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে আস্থা বৃদ্ধি; মান নিয়ন্ত্রণে কৌশলগত কাঠামো নিশ্চিতকরণ’ শীর্ষক গতকালের সেমিনারে অতিথিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

স্বাস্থ্য খাতের ব্যয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশ। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ জিডিপির মাত্র ১ শতাংশ এবং মাথাপিছু সরকারি ব্যয় মাত্র ১,০৭০ টাকা। দেশের প্রায় ৪৯ শতাংশ মানুষ এখনো মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। এ কারণে প্রতিবছর প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার চিকিৎসার জন্য বিদেশে গিয়ে ব্যয় করছে বাংলাদেশি রোগীরা। অথচ দেশের স্বাস্থ্যসেবার বাজার বর্তমানে প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার এবং আগামী আট বছরে আরও ৯ বিলিয়ন ডলার বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা ২০৩৩ সালে ২৩ বিলিয়নে উন্নীত হতে পারে।

গতকাল শনিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে আস্থা বৃদ্ধি; মান নিয়ন্ত্রণে কৌশলগত কাঠামো নিশ্চিতকরণ’ শীর্ষক সেমিনারে উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। রাজধানীর মতিঝিলে ডিসিসিআই কার্যালয়ে আয়োজিত সভায় জাতীয় অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি এ কে আজাদ খান প্রধান অতিথি ছিলেন।

আলোচকেরা বলেন, অবকাঠামোর ঘাটতি, নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে পশ্চাৎপদতা, দক্ষ মানবসম্পদের সংকট, সেবার উচ্চ ব্যয়, কার্যকর তদারকির অভাব—এসব মিলিয়েই কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্য উন্নয়ন অর্জিত হয়নি। অধ্যাপক এ কে আজাদ খান বলেন, কিছু ক্ষেত্রে অর্জন থাকলেও সামগ্রিকভাবে দেশের স্বাস্থ্যসেবা কাঙ্ক্ষিত মানে পৌঁছায়নি। উন্নত দেশ তো দূরের কথা, পার্শ্ববর্তী দেশের তুলনায়ও বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে। তাঁর মতে, ইউনিভার্সেল হেলথকেয়ার বাস্তবায়ন বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব নয়, তবে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় জোর দেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। তিনি ব্যবস্থাপনায় উন্নয়ন ও বিকেন্দ্রীকরণের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউনাইটেড হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ডিসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী। তিনি জানান, সীমিত বাজেট, অদক্ষ ব্যবস্থাপনা, মানের ঘাটতি, শহর-গ্রামের বৈষম্য, বাড়তি ব্যয়, দুর্বল নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা—এসব কারণেই স্বাস্থ্য খাতের চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। যার ফলে তুলনামূলক উন্নত চিকিৎসার জন্য বিপুলসংখ্যক রোগী বিদেশমুখী হওয়ায় বছরে ৫ বিলিয়ন ডলার বাইরে চলে যাচ্ছে।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, মানসম্মত ও রোগীবান্ধব সেবা নিশ্চিতে কাঠামোগত ঘাটতি, দক্ষ জনবলস্বল্পতা, অনুমোদনহীন ক্লিনিক-ফার্মেসির বিস্তার, ভুল রোগনির্ণয়, ভুয়া ওষুধ এবং আইন প্রয়োগের দুর্বলতা জনস্বাস্থ্য আস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। স্বাস্থ্যবিমা কার্যকর না হওয়ায় ৭৪ শতাংশ ব্যয় রোগীকেই বহন করতে হয়, যা নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের জন্য বড় ঝুঁকি।

নির্ধারিত আলোচনায় অধ্যাপক সৈয়দ আতিকুল হক সরকারি হাসপাতালের মানোন্নয়নকে সর্বোচ্চ জরুরি বলে মনে করেন। ইউনিভার্সেল মেডিকেলের চেয়ারম্যান প্রীতি চক্রবর্তী স্বাস্থ্য খাতে আস্থা পুনরুদ্ধারে সরকারি-বেসরকারি সমন্বয় ও পিপিপি ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বছরের বড় হাটে দুই কোটি বেচাকেনা, ঊর্ধ্বমুখী দাম

­যশোর প্রতিনিধি
গাঁদা ফুলের উৎপাদন চাহিদার চেয়ে বেশি হওয়ায় এর দাম কম। মানভেদে প্রতি হাজার গাঁদা ফুল বিক্রি হয়েছে ২০০-৪০০ টাকায়। বিপরীতে চড়া দামে বিক্রি হয়েছে অন্যান্য ফুল। গতকাল যশোরের গদখালী বাজার থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাঁদা ফুলের উৎপাদন চাহিদার চেয়ে বেশি হওয়ায় এর দাম কম। মানভেদে প্রতি হাজার গাঁদা ফুল বিক্রি হয়েছে ২০০-৪০০ টাকায়। বিপরীতে চড়া দামে বিক্রি হয়েছে অন্যান্য ফুল। গতকাল যশোরের গদখালী বাজার থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

অগ্রহায়ণের শীতের সকাল। সাইকেল ও ভ্যানের ওপরে থরে থরে সাজানো রঙিন ফুলে ভরে উঠেছে যশোরের গদখালীর বাজার। গোলাপ, গাঁদা, রজনীগন্ধা, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, চন্দ্রমল্লিকা—ফুলের ঘ্রাণ আর দরদামের হাঁকডাকে মুখর পুরো এলাকা। বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে ফুলের রাজধানী খ্যাত গদখালীতে গতকাল শনিবার জমে ওঠে বছরের বড় হাট।

যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পাশে বসা এই বাজারে এদিন প্রায় ২ কোটি টাকার ফুল বেচাকেনা হয়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। চাহিদা বাড়ায় অন্যান্য দিনের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি ফুলের সরবরাহ ও কেনাবেচা হয়েছে। অতিবৃষ্টিতে চলতি মৌসুমে যে ক্ষতি হয়েছিল, তা কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেওয়ার আশা করছেন ফুলচাষিরা।

গতকাল বাজারে সবচেয়ে বেশি এসেছে গাঁদা ফুল। মানভেদে প্রতি হাজার গাঁদা ফুল বিক্রি হয়েছে ২০০-৪০০ টাকায়। তবে সরবরাহ বেশি থাকায় দাম তুলনামূলক কম। বিপরীতে চড়া দামে বিক্রি হয়েছে অন্যান্য ফুল।

চন্দ্রমল্লিকা বিক্রি হয় ২, জারবেরা ১৬-১৮, গ্লাডিওলাস ১৬-২০, রজনীগন্ধা ১০-১৪, গোলাপ ৮-১০ এবং ভুট্টা ফুল প্রতিটি সর্বোচ্চ ১৫ টাকা দরে।

ফুলচাষি খালেদুর রহমান টিটু বলেন, ‘বিজয় দিবস ও বুদ্ধিজীবী দিবসের বাজার ধরার জন্য কয়েক মাস ধরে গাঁদা ফুলের পরিচর্যা করেছি। গাঁদার কাঙ্ক্ষিত দাম পাইনি, তবে অন্য ফুলের দাম ভালো থাকায় ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া যাবে।’

রজনীগন্ধার চাষি রফিকুল ইসলাম জানান, দুই বিঘা জমিতে চাষ করা ফুল এবার ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আজ ৯০০টি রজনীগন্ধা ১৪ টাকা পিস দরে বিক্রি করেছি। গতকাল ছিল ৯ টাকা। সামনে দাম আরও বাড়ার সম্ভাবনা আছে।’

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, যশোর জেলায় প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে ১১ ধরনের ফুলের বাণিজ্যিক চাষ হয়। ডিসেম্বর থেকে মার্চ—এই চার মাসই ফুলের প্রধান মৌসুম। এ সময় অন্তত ৭-৮টি গুরুত্বপূর্ণ দিবসকে ঘিরে ১৫০-২০০ কোটি টাকার ফুল বেচাকেনার লক্ষ্য থাকে স্থানীয় চাষি ও ব্যবসায়ীদের।

গদখালী ফুলচাষি ও ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি মঞ্জুর আলম বলেন, বিভিন্ন জাতীয় দিবসকে সামনে রেখে চাষিরা ফুল উৎপাদন করেন। এবার গাঁদা ফুলের উৎপাদন চাহিদার চেয়ে বেশি হওয়ায় এর দাম কম। তবে গাঁদা ছাড়া প্রায় সব ফুলের দাম ঊর্ধ্বমুখী। গতকালের হাটে প্রায় ২ কোটি টাকার ফুল বেচাকেনা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার: বিদেশে বাংলাদেশিদের খরচ বাড়ল এক মাসেই ৫১ কোটি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৫৯
ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার: বিদেশে বাংলাদেশিদের খরচ বাড়ল এক মাসেই ৫১ কোটি

দেশের ভেতরে ও বাইরে উভয় ক্ষেত্রেই আর্থিক খাতে নগদ লেনদেন ক্রমেই কমে আসছে; তার জায়গা দখল করছে প্লাস্টিক মানি। অভ্যন্তরীণ পেমেন্ট থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক সফর, অনলাইন কেনাকাটা, ব্যবসায়িক খরচ কিংবা জীবনযাত্রার প্রয়োজন—সব ক্ষেত্রেই এখন ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে লেনদেন বাড়ছে। তবে বিদেশে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ডে এই লেনদেনের প্রবণতা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। মূলত নগদ বহনের ঝুঁকি, বিদেশি মুদ্রা ব্যবস্থাপনা এবং আন্তর্জাতিক পেমেন্টের সুবিধা—এ সব মিলিয়েই সাম্প্রতিক সময়ে নিত্যনতুন রেকর্ড হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বরে মাত্র এক মাসের ব্যবধানে বিদেশে ক্রেডিট কার্ড ব্যয়ের পরিমাণ বেড়েছে ৫১ কোটি টাকা।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালের আগস্টে বাংলাদেশিরা বিদেশে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে খরচ করেছিলেন ৪৪৩ কোটি ৩ লাখ টাকা। মাত্র এক মাস পর সেপ্টেম্বরে সেই ব্যয় দাঁড়ায় ৪৯৪ কোটি ২ লাখ টাকায়। অর্থাৎ বিদেশে কার্ড খরচ এক মাসে বেড়েছে ৫১ কোটি ১ লাখ টাকা।

তথ্য বলছে, বিদেশে বাংলাদেশিদের সর্বোচ্চ ক্রেডিট কার্ডে খরচ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে—৭০ কোটি ৯ লাখ টাকা। থাইল্যান্ডে খরচ হয়েছে ৫৯ কোটি ৯ লাখ এবং যুক্তরাজ্যে ৫৪ কোটি ১ লাখ টাকা। সিঙ্গাপুরে ব্যয় ৪০ কোটি ৪ লাখ, মালয়েশিয়ায় ৩৪ কোটি, ভারতে ৩২ কোটি ৩ লাখ, নেদারল্যান্ডসে ২৫ কোটি, সৌদি আরবে ২৪ কোটি, কানাডায় ২১ কোটি, অস্ট্রেলিয়ায় ১৭ কোটি এবং আয়ারল্যান্ডে ১৬ কোটি টাকা। চীনে ব্যয় হয়েছে ১৫ কোটি টাকা। অন্যান্য দেশে মোট খরচ ৯২ কোটি টাকার বেশি।

অন্যদিকে, বিদেশিরাও বাংলাদেশে এসে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে কত খরচ করে থাকেন। আগস্টে বিদেশিদের ব্যয় ছিল ১৮৩ কোটি ৫ লাখ টাকা, যা সেপ্টেম্বরে সামান্য কমে দাঁড়ায় ১৭৫ কোটি ৯ লাখ টাকায়। অর্থাৎ এক মাসে তাঁদের কার্ডব্যয় কমেছে প্রায় ৮ কোটি টাকা। বিদেশিদের মধ্যেও বাংলাদেশে এসে সর্বোচ্চ খরচ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরা—৩৮ কোটি ৬ লাখ টাকা। যুক্তরাজ্য ও ভারতের নাগরিকদের ব্যয় ছিল ১৭ কোটি টাকা করে।

এ নিয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, নগদ বহনের চেয়ে মানুষ কার্ডে লেনদেনে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। বিদেশ ভ্রমণে এটি সবচেয়ে সহজ, নিরাপদ ও ঝুঁকিহীন পদ্ধতি। সাম্প্রতিক সময়ে চীনে যাত্রীপ্রবাহ রেকর্ড পরিমাণে বেড়েছে—তাই সে দেশে কার্ড ব্যয়েও রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, দৈনন্দিন খরচ, বেতন-ভাতা গ্রহণ এবং নগদ উত্তোলনের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের কাছে এখনো সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম ডেবিট কার্ড। তুলনামূলকভাবে ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা কম হলেও এর ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে এবং তা মূলত শহরকেন্দ্রিক। শহুরে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণির মধ্যে ক্রেডিট কার্ড এখন একটি স্বাভাবিক ব্যয়ের মাধ্যম হয়ে উঠছে। একইভাবে প্রি-পেইড কার্ডের ব্যবহারও উল্লেখযোগ্য গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে—গত পাঁচ বছরে যার প্রবৃদ্ধি প্রায় ১৬ গুণ।

বর্তমানে দেশের ৫৬টি ব্যাংক ও ১টি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফসি) কার্ড সেবা দিচ্ছে। এর মধ্যে ৪৮টি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড, দ্বৈত মুদ্রার ডেবিট কার্ড এবং প্রি-পেইড কার্ড—এই তিন ধরনের সেবা পরিচালনা করে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, সামগ্রিকভাবে মানুষ নগদের চেয়ে কার্ডে লেনদেনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। তাঁর ভাষায়, আঞ্চলিক কূটনীতি ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নতিও ক্রস-বর্ডার কার্ড ব্যবহারে প্রভাব ফেলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এআই ডেটা সেন্টারে ব্যাপক চাহিদা, তামার দাম ১২ হাজার ডলার ছুঁই ছুঁই

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চালিত ডেটা সেন্টারগুলোর ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং বৈশ্বিক সরবরাহ সংকটের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে তামার দাম দ্রুত বেড়ে প্রতি টন প্রায় ১২ হাজার ডলারে পৌঁছেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে তামার ঘাটতি পরিস্থিতিকে আরও ঘনীভূত করেছে।

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরে তামার দাম ইতিমধ্যে ৩৫ শতাংশ বেড়েছে, যা ২০০৯ সালের পর সর্বোচ্চ বার্ষিক প্রবৃদ্ধির পথে। গত শুক্রবার প্রতি টন তামার দাম ১১ হাজার ৯৫২ ডলার উঠে যায়।

উচ্চ বিদ্যুৎ পরিবাহিতার কারণে তামা ডেটা সেন্টার, বৈদ্যুতিক যান, বিদ্যুৎ গ্রিড এবং জ্বালানি রূপান্তর অবকাঠামোর জন্য অপরিহার্য কাঁচামাল। বিশ্বজুড়ে ডেটা সেন্টার সম্প্রসারণ ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানিতে বিপুল বিনিয়োগ তামার চাহিদাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে।

বেঞ্চমার্ক মিনারেল ইনটেলিজেন্সের বিশ্লেষক দান ডে ইয়ং বলেন, এআই খাতকে কেন্দ্র করে যাঁরা বিনিয়োগ করছেন, তাঁরা এমন পণ্য বেছে নিচ্ছেন, যেখানে ডেটা সেন্টারের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল অন্তর্ভুক্ত। ফলে তামাভিত্তিক ইটিএফসহ সংশ্লিষ্ট সম্পদে বিনিয়োগ বাড়ছে।

এ প্রবণতার অংশ হিসেবে কানাডার স্প্রট অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ২০২৪ সালের মাঝামাঝি বিশ্বের প্রথম বাস্তব তামাসমর্থিত এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ) চালু করে। প্রায় ১০ হাজার টন তামা সংরক্ষিত এই তহবিলের ইউনিট মূল্য চলতি বছরে ৪৬ শতাংশ বেড়ে প্রায় ১৪ কানাডিয়ান ডলারে পৌঁছেছে।

রয়টার্সের এক জরিপে বিশ্লেষকেরা জানিয়েছেন, চলতি বছরে বৈশ্বিক তামার বাজারে ১ লাখ ২৪ হাজার টন এবং আগামী বছরে ১ লাখ ৫০ হাজার টনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

অস্ট্রেলিয়ার আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং ও আর্থিক পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা ম্যাকোয়ারির পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি বছরে বিশ্বে তামার চাহিদা দাঁড়াবে প্রায় ২ কোটি ৭০ লাখ টনে, যা আগের বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভোক্তা দেশ চীনে চাহিদা বাড়বে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ, আর চীনের বাইরে আগামী বছর চাহিদা বাড়তে পারে ৩ শতাংশ।

ম্যাকোয়ারির বিশ্লেষক অ্যালিস ফক্স বলেন, কঠোর সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে বাজারে যে আলোচনা চলছে, সেটিই তামার দামে ঊর্ধ্বমুখী চাপ সৃষ্টি করছে।

সরবরাহ সংকটের পেছনে রয়েছে ইন্দোনেশিয়ায় ফ্রিপোর্ট ম্যাকমোরানের গ্রাসবার্গ খনিতে দুর্ঘটনা, গ্লেনকোরসহ বড় খনি কোম্পানির উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা কমানোর সিদ্ধান্ত।

লন্ডন মেটাল এক্সচেঞ্জ, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কমেক্স ও সাংহাই ফিউচার্স এক্সচেঞ্জে মোট তামার মজুত চলতি বছরে ৫৪ শতাংশ বেড়ে ৬ লাখ ৬১ হাজার টনে দাঁড়িয়েছে। তবে এর বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাচ্ছে।

কমেক্সে তামার মজুত রেকর্ড ৪ লাখ ৫ হাজার ৭৮২ টনে পৌঁছেছে, যা মোট বৈশ্বিক এক্সচেঞ্জ মজুতের ৬১ শতাংশ। বছরের শুরুতে যা ছিল মাত্র ২০ শতাংশ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত