Ajker Patrika

পূর্ণাঙ্গ কমিশন ছাড়াই ৮ মাস পার

  • যোগ্য লোকের খোঁজে সরকার।
  • নীতিনির্ধারণে বিলম্ব, কার্যক্রম ব্যাহত।
  • অন্য কমিশনারদের ওপর অতিরিক্ত বোঝা।
  • খুব শিগগির নিয়োগ: এফআইডি সচিব
আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা
পূর্ণাঙ্গ কমিশন ছাড়াই ৮ মাস পার

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) এক কমিশনারের পদ আট মাস ধরে শূন্য। অথচ, দেশের পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার মূল নীতিনির্ধারণী এই কমিশনের পূর্ণতা না থাকলে সিদ্ধান্ত নিতে হয় টালমাটাল ভারসাম্যের ওপর দাঁড়িয়ে। অথচ সরকারের দাবি, খুঁজেও যোগ্য লোক পাওয়া যাচ্ছে না।

এই দীর্ঘ শূন্যতা নজিরবিহীন। যিনি পদত্যাগ করেছেন, সেই ড. এ টি এম তারিকুজ্জামান ছিলেন পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট অঙ্গনের অন্যতম অভিজ্ঞ মুখ। ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ২০২৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তিনি পদত্যাগ করেন। এর পর থেকে সময় গড়িয়েছে আট মাস, কিন্তু ফাঁকা চেয়ারটি পূরণ হয়নি। আর তাতেই নীতিনির্ধারণী কার্যক্রমে তৈরি হচ্ছে ধীরগতি ও অনিশ্চয়তা।

পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিশন এখন চলছে চারজনের কাঁধে। কমিশনের চেয়ারম্যান হলেন খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। কমিশনার হিসেবে রয়েছেন মু. মোহসিন চৌধুরী, মো. আলী আকবর ও ফারজানা লালারুখ। নিয়ম অনুযায়ী কমিশন সভার কোরাম গঠনে প্রয়োজন তিনজনের উপস্থিতি। অথচ কেউ একসঙ্গে ছুটিতে গেলে বা হঠাৎ অনুপস্থিত হলে কমিশনের সভাই বসানো যাচ্ছে না। সিদ্ধান্ত ঝুলে যাচ্ছে, বাজারের গতি ও জবাবদিহি পড়ছে প্রশ্নের মুখে।

বিএসইসির মূল কাজ হলো, নিয়মনীতি প্রণয়ন, পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর তত্ত্বাবধান, নতুন আর্থিক পণ্য অনুমোদন এবং কারসাজি রোধের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীর স্বার্থ সুরক্ষা নিশ্চিত করা।

বিএসইসির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অকপটে স্বীকার করেন, ‘কমিশনারদের দায়িত্বে আছে কয়েকটি বিভাগ। একজন না থাকলে বাকি সদস্যদের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। অনেক সময় আমরা সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করে ফেলি, শুধু লোকসংখ্যার ঘাটতির জন্য।’ তিনি আরও বলেন, ‘আইনে বলা আছে কমিশনারদের সার্বক্ষণিকভাবে কাজ করতে হবে। একজন লোক না থাকলে এই ধারাবাহিকতা ভেঙে যায়।’

সরকারের দায়ও এড়ানোর সুযোগ নেই। বিএসইসির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমাদের কিছু বলার দরকার আছে কি? সরকারের তো জানা থাকার কথা!’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের (এফআইডি) সচিব নাজমা মোবারেক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নিয়োগটা যে জরুরি সেটা আমরাও জানি। তবে বাজার থেকে যথেষ্ট যোগ্য লোক পাচ্ছি না। যাঁদের খুঁজে পাচ্ছি, তাঁরা আবার রাজি হচ্ছেন না। কিছু বায়োডাটা এসেছে, আশা করি খুব শিগগির দিতে পারব।’

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, আসলে কি যোগ্য লোক পাওয়া যাচ্ছে না, নাকি পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীগুলোর চাপ ও বিবিধ স্বার্থের হিসাব-নিকাশে নিয়োগপ্রক্রিয়া থমকে আছে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কমিশনের পদ দীর্ঘদিন খালি থাকলে পুঁজিবাজারে সংস্কার, সুশাসন ও স্বচ্ছতা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন বলেন, বিএসইসি যেহেতু বাজারের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক, সেখানে প্রতিটি কমিশনারের অবস্থানই কার্যকর হতে হবে। একটা চেয়ার খালি থাকলে পুরো কাঠামোর ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়, যার প্রভাব সরাসরি পড়ে বিনিয়োগকারীদের ওপর।

সরকার যদি যোগ্যতা ও স্বার্থের ভারসাম্য খুঁজতে গিয়ে দায়িত্ব গ্রহণে আগ্রহী প্রার্থীকেই খুঁজে না পায়, তবে প্রশ্ন থেকেই যায়—এই কাঠামো কি কেবল আইনি কাঠামো হয়ে থাকবে, নাকি আসলেই সক্রিয়ভাবে কাজ করার মতো প্রতিষ্ঠান হবে?

এ অবস্থায় বাজারসংশ্লিষ্ট মহল দাবি তুলেছে—সরকারকে দ্রুত সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শূন্য পদে একজন অভিজ্ঞ, স্বাধীনচেতা ও দক্ষ কমিশনার নিয়োগ দিয়ে বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরানো জরুরি। তা না হলে, নিয়মনীতি ও নজরদারির অভাবে বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরও দুর্বল হয়ে পড়বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালার সঙ্গে শত্রুতা মুহাম্মদ ইউনূসের, আমি ‘কোল্যাটারাল ড্যামেজ’: টিউলিপ সিদ্দিক

এনসিপি নেতার বাড়িতে কাফনের কাপড়, চিরকুটে লেখা—‘প্রস্তুত হ রাজাকার’

৪০ পুলিশ কর্মকর্তার পদক প্রত্যাহার, অর্থ ফেরতের নির্দেশ

গণশুনানিতে দুদক চেয়ারম্যানের প্রতি ক্ষোভ দেখালেন মৎস্যচাষি

‘কাল দেখা হইবে, ভালো থাকিস’—ছেলেকে বলেছিলেন গণপিটুনিতে নিহত প্রদীপ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত