Ajker Patrika

এলসি যথেষ্ট, নজর এখন আমদানিতে

রোকন উদ্দীন, ঢাকা
আপডেট : ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬: ৫৬
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

প্রতিবছর রোজা এলেই তেল, চিনি, ডাল, ছোলা, খেজুরসহ কয়েকটি পণ্যের বাজার যেন চড়ে যায়। তাই রোজার আগে এসব পণ্যের চাহিদা ও আমদানির হিসাব-নিকাশ শুরু হয়ে যায়। এবারের হিসাব বলছে, চাহিদার বিপরীতে আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছে যথেষ্ট। এখন ঠিকমতো আমদানি হলে রোজার সময় এসব পণ্যের সংকট হওয়ার কথা নয়।

এমন ধারণা দিচ্ছেন ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকেরা। তবে তাঁরা আমদানির প্রক্রিয়া আরও সহজ করার কথা বলছেন।

আগামী মার্চের প্রথম সপ্তাহে পবিত্র রমজান মাস শুরু হবে। রোজার বাজার ধরার জন্য ঋণপত্র খোলা হবে জানুয়ারি শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত। ফেব্রুয়ারি মাসে পাইকারি বাজারে রোজার পণ্যের বেচাকেনা শুরু হবে। তার আগে রোজার বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ৯ জানুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠায় ট্যারিফ কমিশন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে দেশে বছরে চিনির চাহিদা ২০ থেকে ২২ লাখ টন। সে হিসাবে ছয় মাসে লাগে ১০ থেকে ১১ লাখ টন। কিন্তু গত ছয় মাসে দেশে চিনি আমদানি হয়েছে ৬ লাখ ৬৪ হাজার টন। এর মধ্যে রোজার সময় লাগে ৩ লাখ টন।

একইভাবে সয়াবিন, পাম, সূর্যমুখী মিলিয়ে বছরে ভোজ্যতেলের চাহিদা ২২-২৩ লাখ টন। এর মধ্যে ৩ লাখ টন চাহিদা রয়েছে রমজান মাসে। সে হিসাবে ছয় মাসে ভোজ্যতেল লাগে ১১ লাখ ৫০ হাজার টনের বেশি। বিপরীতে আমদানি করা হয়েছে ১৩ লাখ ৫০ হাজার টন।

দেশে ছোলার বার্ষিক চাহিদা ২ লাখ টন। যার অর্ধেক প্রয়োজন হয় পবিত্র রমজানে। ছয় মাসে ১ লাখ টন ছোলার চাহিদার বিপরীতে আমদানি হয়েছে মাত্র ৪৮ হাজার টন।

মসুর ডালের চাহিদা সাড়ে ৩ লাখ টন, যার মধ্যে রমজান মাসে চাহিদা থাকে ১ লাখ টন। জুলাই থেকে জানুয়ারির ৫ তারিখ পর্যন্ত দেশে মসুর ডাল এসেছে ২ লাখ ৫১ হাজার টন।

এ ছাড়া বিদেশি ফল খেজুরের চাহিদা এখন সারা বছর। কিন্তু দেশে সারা বছরে যত খেজুর লাগে, তার অর্ধেক চাহিদা থাকে রমজান মাসে। সারা বছর খেজুরের চাহিদা ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ ১০ হাজার টন। ট্যারিফ কমিশনের হিসাবে পবিত্র রমজানে খেজুরের চাহিদা ৬০ হাজার টন। তবে গত জুলাই থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত দেশে খেঁজুর আমদানি হয়েছে মাত্র ৫ হাজার ৮৮৩ টন।

ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

এর বাইরে রমজান মাসে পেঁয়াজের চাহিদা বাড়ে। তবে দেশের পেঁয়াজের বাজার রপ্তানিনির্ভর নয়। চাহিদার খুব সামান্যই আমদানি করতে হয়। দেশে ২৭ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে, যার মধ্যে রমজানে চাহিদা থাকে ৫ লাখ টন।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে ৬-৭ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। তবে সেটা মৌসুম শেষে। চলতি বছর রমজানের সময় মার্চ মাসে দেশে হালি পেঁয়াজের ভরা মৌসুম থাকবে। ফলে পেঁয়াজের ঘাটতি হবে না।

ভোজ্যতেল, ছোলা, মসুর ও মটর ডালের বড় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান টি কে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতহার বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়তি দাম, ডলারের উচ্চ মূল্য ও ডলার-সংকটে গত ছয় মাসে অনেকে পণ্য আমদানি করতে পারেননি। এ ছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতাও বড় একটি কারণ। ফলে অনেক পণ্যের আমদানি কমেছে। তবে গত ডিসেম্বর থেকে পণ্য আমদানি বাড়ছে। কারণ, এ মুহূর্তে বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রয়েছে। যেসব ঋণপত্র খোলা হয়েছে, সেগুলোর বিপরীতে পণ্য যদি যথাসময়ে আমদানি হয়, তবে রোজার মাসে পণ্যের সংকট হবে না।

চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) ১ জুলাই থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় অপরিশোধিত চিনি, চাল, মসুর ডাল, ছোলা ও খেজুরের ঋণপত্র খোলার হার বেড়েছে।

এবার খেজুর আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছে ৮৬ হাজার টনের। গত বছর একই সময়ে ৪৮ হাজার টন খেজুরের ঋণপত্র খোলা হয়েছিল, অর্থাৎ খেজুরের ঋণপত্র খোলার হার বেড়েছে ৭৯ শতাংশ। এবার ১ লাখ ৮৯ হাজার টন ছোলার ঋণপত্র খোলা হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬০ শতাংশ বেশি। মসুর ডালের ঋণপত্র খোলার হার ২১ শতাংশ বেড়ে ২ লাখ ২ হাজার টনে উন্নীত হয়েছে। অপরিশোধিত চিনি আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলার হার শূন্য দশমিক ২১ শতাংশ বেড়ে ৮ লাখ ৬ হাজার ৭১৯ টনে দাঁড়িয়েছে।

খেজুরের আমদানিকারক মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ী হাজি এনায়েতুল্লাহ বলেন, অতিরিক্ত শুল্কের কারণে এবার খেজুরের আমদানি প্রায় বন্ধ ছিল। তবে গত ২১ নভেম্বর শুল্কছাড়ের পর অনেকে ঋণপত্র খুলছে। তারপরও ৪১ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। তার চেয়ে বড় বিষয় হলো ট্যারিফ ভ্যালু বাস্তবে কেনা দামের চেয়ে অনেক বেশি। ফলে খেজুরের আমদানি নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুল্কছাড়ের কারণে চাল, ভোজ্যতেল, খেজুরসহ নিত্যপণ্যের দাম রমজান মাসে স্থিতিশীল থাকবে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারণে মসুর ও ছোলার মজুত ও সরবরাহ তদারক করা দরকার বলে মনে করে সংস্থাটি।

ট্যারিফ কমিশনের বাণিজ্য নীতি বিভাগের উপপ্রধান মাহমুদুল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যেহেতু আমদানি পরিস্থিতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এবার শুল্কছাড় বেশি দেওয়া হয়েছে, তাই রমজানে পণ্যের বাজারে সমস্যা হবে না বলে আমরা মনে করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আমদানির পথ খুলতেই কারসাজিতে মূল্যবৃদ্ধি

  • দেশে মজুত পর্যাপ্ত, আসছে নতুন পেঁয়াজও
  • অভিযানের প্রভাবে পাইকারিতে দাম কিছুটা কমেছে
  • কিছু আমদানির সুপারিশ ট্যারিফ কমিশনের
  • পরিকল্পনার প্রয়োজন ছিল আগেই: অর্থনীতিবিদ
রোকন উদ্দীন, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণ বলছে, কারসাজি করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করায় বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। দেশে কৃষিপণ্যটির সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। তবে প্রতিবেশী ভারতে পেঁয়াজের দাম কম থাকায় সীমান্তের স্থলবন্দরগুলোর ওপারে কাছাকাছি প্রচুর ভারতীয় পেঁয়াজ জমা করা হয়েছে। এই পেঁয়াজ আমদানি করে মোটা মুনাফা বাগাতে একটি পক্ষ কৃত্রিমভাবে দাম বাড়াচ্ছে। অন্যদিকে ট্যারিফ কমিশন কৃত্রিম সংকটের বিষয়টি স্বীকার করলেও মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্য কমানোর যুক্তি দিয়ে ‘স্বল্প পরিসরে’ আমদানির সুপারিশ করেছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, দেশে বর্তমানে আগের মৌসুমের সাড়ে ৩ লাখ টন পেঁয়াজ মজুত রয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে চলতি মাসেই নতুন মৌসুমের পেঁয়াজ বাজারে আসার বিষয়ে নিশ্চিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, চলতি মাসে ১ লাখ টন মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে আসবে। আগামী মাসে আসবে এ জাতেরই আরও ২ লাখ ৫ হাজার টন। এমন পরিস্থিতিতে আমদানির পথ খুলে দেওয়া হলে নতুন পেঁয়াজ নিয়ে কৃষক লোকসানে পড়বেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ভারতে পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম কমে কেজিপ্রতি ৮ রুপিতে (প্রায় ১২ টাকা) নেমেছে। এখন আমদানির অনুমোদন দিলে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের লাভ হবে। ক্ষতি হবে আমাদের কৃষকের। ভারতের ব্যবসায়ীদের লাভের জন্য দেশের কৃষকের ক্ষতি করতে পারি না। এ কারণে বাণিজ্য, কৃষি মন্ত্রণালয়সহ যৌথ কমিটির গত সপ্তাহের বৈঠকে আপাতত পেঁয়াজ আমদানি না করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এরই মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কয়েকটি টিম ফরিদপুর, পাবনাসহ পেঁয়াজের উৎপাদন অঞ্চলগুলোতে অভিযান শুরু করেছে। গত মঙ্গলবার থেকে এই অভিযান শুরুর পর পাইকারি পর্যায়ে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মণপ্রতি দাম ২৫০ টাকার বেশি কমেছে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের পেঁয়াজের মজুত পর্যাপ্ত। তারপরও দাম বেড়েছে কারসাজিতে। মনিটরিং টিমগুলো পেঁয়াজের উৎস বাজারগুলোতে কাজ শুরু করেছে। এতে পাইকারি পর্যায়ে দাম কমেছে। খুচরায় কেন কমেনি, সেটাও আমরা দেখছি। আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত আমরা বাজার পর্যবেক্ষণ করব।’

বাণিজ্যসচিব বলেন, ‘এখন আমদানির অনুমোদন দিলে আমাদের কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এবং ভারতীয় ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন। এটা আমরা করতে পারি না।’

দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৬-২৭ লাখ টন। গত মৌসুমে উৎপাদিত হয়েছিল ৩৮ লাখ টনের কিছু বেশি। তবে উৎপাদন-পরবর্তী ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে প্রতিবছর উৎপাদিত পেঁয়াজের ২৫ শতাংশের বেশি নষ্ট হয়ে যায়। এতে মৌসুম শেষে আমদানি করে চাহিদা পূরণ করা হয় এবং দামের ভারসাম্য রাখতে হয়।

সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গতকাল শনিবার রাজধানীর বাজারে খুচরায় প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১২৫ টাকায় বিক্রি হয়। এক সপ্তাহ আগে তা ছিল ৭০-৮০ টাকা।

পেঁয়াজের এমন চড়া দামের পেছনের কারণ হিসেবে সরকারের ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনও (বিটিটিসি) কৃত্রিম সংকটের কথা বলছে। তবে একই সঙ্গে দাম কমাতে তারা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে ‘স্বল্প পরিসরে’ আমদানির সুপারিশও করেছে। গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও কৃষি মন্ত্রণালয়কে দেওয়া এক চিঠিতে কমিশন বলেছে, পেঁয়াজের বাড়তি দামের সুবিধা কৃষক পাচ্ছেন না। বাজারের মধ্যস্বত্বভোগীরাই এর সুযোগ নিচ্ছেন। আমদানির সুযোগ দিলে মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব কমে যাবে। তাতে ভোক্তারা যৌক্তিক দামে পেঁয়াজ কিনতে পারবেন।

এর আগে গত ৪ সেপ্টেম্বর ডিমের দাম প্রতি ডজন ১৫০ টাকা আর পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজি ৯০ টাকা পেরোলে আমদানির অনুমতিসহ শুল্কছাড় দেওয়ার সুপারিশ করেছিল ট্যারিফ কমিশন।

চিঠিতে ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মইনুল খান বলেছেন, কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে কিছু মধ‍্যস্বত্বভোগী বাজারে অস্থিরতা তৈরি করছে। প্রতি কেজি পেঁয়াজ এই সময়ে ৯০ টাকার মধ্যে থাকার কথা, কিন্তু তা বেড়ে এখন ১২০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে।

কৃষি অর্থনীতিবিদ এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা ও বিপণন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের মতে, প্রতিবছর এই সময়টাতে পেঁয়াজের দাম বেশি থাকে। তাই আমদানি করতে হলে পরিকল্পনা আরও আগেই করার প্রয়োজন ছিল। তাহলেই দাম এই পর্যায়ে আসত না।

অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পর্যাপ্ত মজুত আছে বললেও আমাদের বাজারের চিত্র ভিন্ন। দাম কমাতে কিছু পেঁয়াজ আমদানি করা যেতে পারে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেয়ারবাজারে মুনাফা লাভের সঠিক কৌশল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
শেয়ারবাজারে মুনাফা লাভের সঠিক কৌশল

শেয়ারবাজারে মুনাফা করতে হলে জানতে হবে কিছু মৌলিক দিক। এখানে সাফল্যের আসল চাবিকাঠি হলো জ্ঞান, ধৈর্য ও শৃঙ্খলা। বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বিনিয়োগ করলে সময়ের সঙ্গে বাজার হয়ে উঠতে পারে বড় অর্থ আয়ের অসাধারণ ক্ষেত্র।

  • ব্যবসার মৌলভিত্তি: যে কোম্পানিতে বিনিয়োগ করবেন, প্রথমেই তার আয়-ব্যয়, ঋণের পরিমাণ, বাজারে সুনাম এবং টিকে থাকার সামর্থ্য যাচাই করুন। বার্ষিক বা ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন ও লভ্যাংশের ইতিহাস দেখে নিন।
  • মৌলিক ও প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ: মৌলিক বিশ্লেষণে কোম্পানির প্রকৃত আর্থিক অবস্থা বোঝা যায়, আর প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণে দামের ধারা ধরা পড়ে। দুটোই জানা থাকলে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়।
  • খাতভেদে ঝুঁকি ও সম্ভাবনা ভিন্ন: যেমন ব্যাংক, বিমা, বিদ্যুৎ, ওষুধ, টেলিকম বা টেক্সটাইল—প্রতিটি খাতের সম্ভাবনা আলাদা। শুধু সময় বুঝে ভালো খাত বেছে নেওয়া দরকার।
  • বিনিয়োগের দৃষ্টিভঙ্গি: ধৈর্য নিয়ে ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করুন, দ্রুত ধনী হওয়ার আশায় নয়। সব টাকা এক জায়গায় না রেখে বিভিন্ন মৌলভিত্তির কোম্পানিতে বিনিয়োগ করলে ক্ষতির ঝুঁকি কমে।
  • লাভ ও ঝুঁকি সচেতনতা: নিয়মিত লভ্যাংশ দেওয়া কোম্পানি ভালো, তবে শুধু বেশি লভ্যাংশ দেখে নয়, মৌলিক অবস্থা দেখুন। লাভের আশা বাস্তবসম্মত রাখুন, বছরে ১৫-৩০ শতাংশ রিটার্নই যথেষ্ট। ধার করে বিনিয়োগ নয়, ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে নির্দিষ্ট সীমায় বিক্রি করুন।
  • অর্থনৈতিক প্রভাব: কোম্পানির মূল্যায়ন বোঝার জন্য পিই ও পিবি অনুপাত, ইপিএস, এনএভি ইত্যাদি দেখে শেয়ার ভালো নাকি দুর্বল, বোঝা যায়। একই সঙ্গে অর্থনীতি, রাজস্ব নীতি ও সুদের হার পর্যবেক্ষণ করুন; এগুলোর গতিবিধি বাজারে বড় প্রভাব ফেলে।
  • গুজবে বিনিয়োগ নয়: গুজব বা শোনা কথায় নয়, তথ্য-যুক্তিতে সিদ্ধান্ত নিন। লোভ ও ভয় নিয়ন্ত্রণ করে ধৈর্য রাখুন; বিনিয়োগে মানসিক স্থিরতাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
  • নতুনদের জন্য পরামর্শ: নতুন বিনিয়োগকারীরা ছোট অঙ্কে শুরু করুন, কয়েকটি ভালো কোম্পানি বেছে নিন, নিয়মিত শিখুন ও ধীরে ধীরে বিনিয়োগ বাড়ান। মনে রাখবেন, শেয়ারবাজারে সফলতার মূলমন্ত্র হলো জ্ঞান, ধৈর্য ও শৃঙ্খলা।
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মুহূর্তেই উধাও ৬ হাজার কোটি টাকা

আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা 
মুহূর্তেই উধাও ৬ হাজার কোটি টাকা

বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তে পাঁচ ইসলামী ধারার দুর্বল ব্যাংকের শেয়ার সম্প্রতি ‘শূন্য’ ঘোষণা করা হয়—এতে এক ঝটকায় ৬,০০০ কোটি টাকার সম্পদ মুহূর্তে উধাও হয়ে গেছে। ১০ টাকা ফেসভ্যালুতে পাঁচ ব্যাংকের মোট ৫৮১ কোটি ৯৫ লাখ ৭১ হাজার ৯৫৯টি শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ৫,৮১৯ কোটি টাকারও বেশি। এর মধ্যে ৩৭ শতাংশই ক্ষতি হয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের—তাঁদের হাতে থাকা ২১৯ কোটি ৮৪ লাখ ৭৫ হাজার ৩৬৪টি শেয়ারের বিনিয়োগমূল্য ২,২০০ কোটি টাকা, যা মুহূর্তেই পোর্টফোলিও থেকে মুছে গেছে।

প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ছিল ২২৪ কোটি ৪০ লাখ ৩৭ হাজার, যার বাজারমূল্য ২,২০৩ কোটি ৭ লাখ টাকা। উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে ছিল ১৪৩ কোটি ২ লাখ ৭৫ হাজার শেয়ার, যার মূল্যমান দাঁড়াচ্ছিল ১,৩৯০ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। বিদেশি বিনিয়োগকারীর কাছে থাকা ১১৪ লাখ ৬৯ হাজার শেয়ারের দামও ২৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে এই বিশাল বিনিয়োগ আর্থিক মূল্যহীন হয়ে গেছে।

এসব ব্যাংকের মালিক, পরিচালক ও পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। কিন্তু এ সংকট কোনো একদিনের ফল নয়; এটি বছরের পর বছর ধরে রাজনৈতিক প্রভাব, স্বজনপ্রীতি, পরিচালকদের অনিয়ম ও ঋণ কেলেঙ্কারির ফলাফল। তবু এ দায়ভার এখন সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাঁধে চাপানো হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিনিয়োগকারীর ঘাড়ে পড়েছে নিঃস্বতার ভার—এটি শুধু কোনো একক বিনিয়োগকারীর ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়। শেয়ারবাজারে আস্থা দুলবে, বিনিয়োগের প্রবাহ স্থবির হবে, আর আর্থিক স্থিতিশীলতার ভিত্তিতে কাঁপন ছড়িয়ে পড়বে। নিঃস্বতা, ক্ষতির তীব্রতা এবং অর্থের হঠাৎ উধাও—সব একসঙ্গে ভেসে উঠছে। অর্থনীতির ভবিষ্যতের ওপর এ প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে, আর বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনা কঠিন হয়ে যাবে।

ইতিমধ্যে পাঁচ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত করে সেখানে প্রশাসক নিয়োগ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই ব্যাংকগুলো হলো : ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল), এক্সিম ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক এবং ইউনিয়ন ব্যাংক। বিনিয়োগকারী মো. মহসিন বলেন, ‘একীভূত হওয়া ব্যাংকে বিনিয়োগকারীর শেয়ার ফিরিয়ে দিতে হবে। লুটের দায় কেন সাধারণ মানুষকে নিতে হবে?’

5 bank

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ মনে করেন, ‘যারা ব্যাংক লুট করেছে, তাদের দায়ভার এখন সাধারণ বিনিয়োগকারীর ওপর চাপানো হচ্ছে। এটি আর্থিক অন্যায়ের এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ।’

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, শেয়ারহোল্ডারদের কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না। গভর্নরের ভাষ্য, ‘পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের ইকুইটির মূল্য নেতিবাচক ৩০০-৪০০ শতাংশ। এখন তা আদায় করা উচিত। তবে তা না করে শূন্যের নিচের শেয়ারগুলোর মূল্য জিরো হিসেবে ধরা হবে।’

আইন ও বাস্তবতার মধ্যে ছেদও চোখে পড়ে। পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ও হিসাববিদ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ‘আইন অনুযায়ী, কোম্পানি অবসায়ন বা মার্জনের পর সম্পদ বিক্রি করে দায়দেনা শোধের পর যদি কিছু থাকে, শেয়ারহোল্ডাররা পাবেন। এখানে তো কিছুই নেই।’ তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সরকার চাইলে সাধারণ বিনিয়োগকারীর জন্য কিছু করতে পারে।

অর্থনৈতিক চিত্র ভয়াবহ

পাঁচ ব্যাংকের সম্মিলিত মূলধন ঘাটতি ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে বড় শিল্পগোষ্ঠীর লুট ১ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংকগুলোর অ্যাসেট কোয়ালিটি রিভিউ (একিউআর) প্রতিবেদনে মোট আমানত ১ লাখ ৪৭ হাজার ৩৬৮ কোটি, মোট ঋণ ১ লাখ ৯০ হাজার ৪৮৪ কোটি, খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৪৬ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা—গড় খেলাপি ৭৭ শতাংশ উল্লেখ রয়েছে। এর মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ সর্বোচ্চ ৯৮ শতাংশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ৯৬ শতাংশ, গ্লোবাল ইসলামী ৯৫ শতাংশ, সোশ্যাল ইসলামী ৬২ শতাংশ, এক্সিম ব্যাংকের ৪৮ শতাংশ।

শেয়ার বিন্যাসও হতাশাজনক। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে সাধারণ বিনিয়োগকারীর শেয়ার ৭৮ কোটি ৫৮ লাখ, মূল্য ৭৮৫ কোটি; সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে সাধারণের শেয়ার ২১ কোটি, দাম ২১৪ কোটি; এক্সিম ব্যাংকে ৫৬ কোটি ৯০ লাখ, দাম ৫৬৯ কোটি; গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে ৩০ কোটি ৮৯ লাখ, দাম ৩০৮ কোটি; ইউনিয়ন ব্যাংকে ৩৩ কোটি ২ লাখ, দাম ৩৩০ কোটি টাকা। গত দুই বছরে শেয়ারের দর ১০-১৩ টাকার মধ্যে ওঠানামা করেছে, ফলে ক্ষতি আরও গভীর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

১০ বিলিয়ন ডলারে মেটসেরা অধিগ্রহণের পথে ফাইজার

এএফপি, সানফ্রান্সিসকো
১০ বিলিয়ন ডলারে মেটসেরা অধিগ্রহণের পথে ফাইজার

তীব্র দর-কষাকষির পর যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ ওষুধ তৈরি প্রতিষ্ঠান ফাইজার প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার মূল্যে বায়োটেক স্টার্টআপ মেটসেরা অধিগ্রহণের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। স্থূলতা চিকিৎসায় বিশেষায়িত মেটসেরা ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার ও ডেনমার্কের ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি নভো নরডিস্কের মধ্যে কয়েক সপ্তাহ ধরে তীব্র দর-কষাকষি চলছিল। অবশেষে গতকাল শনিবার নভো নরডিস্ক প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয়। নভো নরডিস্ক বর্তমানে ওজন কমানোর জনপ্রিয় ওষুধ উইগোভি এবং ডায়াবেটিসের ওষুধ ওজেম্পিক তৈরি করে।

গত শুক্রবার মেটসেরা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ফাইজার শেয়ারপ্রতি ৮৬ দশমিক ২৫ ডলার পর্যন্ত মূল্যে অধিগ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছে, যা মোট প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের সমান। কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ জানিয়েছে, তারা সর্বসম্মতিক্রমে ফাইজারের প্রস্তাব অনুমোদনের সুপারিশ করেছে এবং আশা করছে, ১৩ নভেম্বরের শেয়ারহোল্ডার সভা শেষে চুক্তিটি দ্রুত সম্পন্ন হবে।

ফাইজারের সর্বশেষ প্রস্তাব সেপ্টেম্বরে করা তাদের প্রাথমিক প্রস্তাবের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। সেই প্রস্তাবের পরই নভো নরডিস্ক পাল্টা প্রস্তাব দেয়, যা দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একধরনের ‘দর যুদ্ধ’ সৃষ্টি করে।

তবে শনিবার নভো নরডিস্ক জানায়, তারা মেটসেরার জন্য আর নতুন কোনো প্রস্তাব দেবে না। কোম্পানিটি এক বিবৃতিতে বলে, তারা তাদের কৌশলগত লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ অন্য ব্যবসায়িক অধিগ্রহণের সুযোগগুলো খুঁজবে।

এদিকে নভো নরডিস্কের প্রস্তাব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্রেড কমিশন (এফটিসি) উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মেটসেরা জানায়, এফটিসি কর্তৃপক্ষ সম্ভাব্য প্রতিযোগিতাবিরোধী (অ্যান্টিট্রাস্ট) আইনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। ফলে পরিচালনা পর্ষদ মনে করে, নভো নরডিস্কের প্রস্তাব ‘অগ্রহণযোগ্যভাবে বেশি আইনি ও নিয়ন্ত্রক ঝুঁকি’ তৈরি করছে, যেখানে ফাইজারের প্রস্তাবে সেই ঝুঁকি অনেক কম।

তবে নভো নরডিস্ক দাবি করেছে, তাদের প্রস্তাব সম্পূর্ণভাবে অ্যান্টিট্রাস্ট আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে বিশ্বজুড়ে এক বিলিয়নের বেশি মানুষ স্থূলতায় ভুগছিল এবং ৮০০ মিলিয়নের বেশি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিল।

চুক্তিটি সম্পন্ন হলে স্থূলতা চিকিৎসা এবং ওজন নিয়ন্ত্রণের বৈশ্বিক বাজারে ফাইজার নতুন এক শক্তিশালী অবস্থান পাবে; যেখানে এরই মধ্যে নভো নরডিস্ক আধিপত্য বিস্তার করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত