Ajker Patrika

থেমে গেল ব্যাংক একীভূতকরণ

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা
আপডেট : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৯: ২৬
থেমে গেল ব্যাংক একীভূতকরণ

বিগত সরকারের আমলে বেহাল অর্থনীতির মধ্যে নাজুক অবস্থায় পড়ে কয়েকটি ব্যাংক। তখন তড়িঘড়ি করে সেগুলোকে তুলনামূলক ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার উদ্যোগ নেয় সরকার। ১০টি ব্যাংক একীভূত করার ঘোষণাও দেওয়া হয়। এ লক্ষ্যে চুক্তি হয় কয়েকটি ব্যাংকের মধ্যে। যদিও অনেক ব্যাংক এই পদক্ষেপকে ভালোভাবে নেয়নি, অভিহিত করেছিল ‘জবরদস্তি’ হিসেবে।

তবে পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে নতুন অন্তর্বর্তী সরকার ব্যাংক একীভূত করার বিষয়ে ভেবেচিন্তে ধীরে চলার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে আগের চুক্তিগুলো বাতিলের পক্ষে মত দিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গর্ভনর। তবে একীভূতকরণ প্রচেষ্টা থেকে পুরোপুরি পিছু হটছে না এই সরকার। তারা বলছে, প্রয়োজন হলে কিছু ব্যাংক একীভূত করা লাগতে পারে। তবে সেটা ‘জবরদস্তিমূলক’ হবে না; বরং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বীকৃত ‘প্রম্প্ট কারেক্টিভ অ্যাকশন (পিসিএ) ফ্রেমওয়ার্ক অনুযায়ী নতুন করে একীভূতকরণ হবে। সেটাও শুরু হতে পারে আগামী বছরের জুন নাগাদ।

সূত্র জানায়, ৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় জোরজবরদস্তি করে ব্যাংক একীভূতকরণের চুক্তি বাতিলের দাবি তোলেন ব্যাংক নির্বাহীরা। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর দাবি মেনে নিয়ে দ্রুততম সময়ে চুক্তি বাতিলের নির্দেশনা জারির আশ্বাস দেন। পাশাপাশি পিসিএ ফ্রেমওয়ার্ক অনুযায়ী ২০২৫ সালের মার্চ থেকে একীভূত করার কথা জানান। কিন্তু মার্চে অনেক ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রস্তুত হয় না। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীরা সময় বাড়ানোর অনুরোধ জানালে গভর্নর জুন মাস থেকে একীভূতকরণ কার্যক্রম পরিচালনার কথা বলেন।

জানতে চাইলে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন আজকের পত্রিকা’কে বলেন, ‘আগের গভর্নরের চাপানো একীভূতকরণ চুক্তির বিষয়ে নতুন গভর্নর ‘না’ করেছেন। আগের চুক্তিগুলো এখন অচল। এসব জবরদস্তির চুক্তি তো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালার সরাসরি লঙ্ঘন। সুতরাং তা বাস্তবায়নের সুযোগ নেই।’

জানা গেছে, একীভূতকরণের আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের বিধি লঙ্ঘন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে গত ১৪ মার্চ দুর্বল পদ্মা ব্যাংককে এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণের ঘোষণা দেওয়া হয়। একই ধারাবাহিকতায় গত ৩ এপ্রিল দুর্বল বিডিবিএলকে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংককে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংককের সঙ্গে একীভূতকরণের ঘোষণা করা হয়। আর ৮ এপ্রিল বেসিক ব্যাংককে সিটি ব্যাংকের সঙ্গে এবং ৯ এপ্রিল ন্যাশনাল ব্যাংককে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিসি) সঙ্গে একীভূতকরণের ঘোষণা দেওয়া হয়। 

জানতে চাইলে বিডিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং সিইও হাবিবুর রহমান গাজী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ব্যাংক একীভূতকরণে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড রয়েছে। সাবেক গভর্নর কোনো কিছুর তোয়াক্কা করেননি। তিনি একীভূতকরণের চুক্তি করতে বাধ্য করেন।’ 

এই অবস্থায় ২ সেপ্টেম্বর বিডিবিএলের ৩২৪তম বোর্ড সভায় সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত না হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান এমডি হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘সেই সিদ্ধান্তের আলোকে একীভূতকরণ চুক্তি বাতিল চেয়ে গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’ 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র জানায়, একীভূতকরণে সিদ্ধান্ত বাতিল চেয়ে এর আগেই চিঠি দিয়েছে বেসিক ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক এবং এক্সিম ব্যাংক। বর্তমান গভর্নর আগের একীভূতকরণ চুক্তি বাতিল করার পক্ষে মত দেওয়ায় খুব শিগগির এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত জানানো হবে। 

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সদ্য সাবেক মুখপাত্র (গত বৃহস্পতিবার নতুন মুখপাত্র নিয়োগ দেওয়া হয়েছে) ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক বলেন, ‘সরকারের পালাবদলে নতুন করে একীভূতকরণ নীতিমালা কার্যকর হবে। আগের সিদ্ধান্ত থাকছে না। পরে পিসিএ অনুযায়ী ব্যাংক একীভূত হবে।’ 

গত ৪ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংকের পিসিএ নীতিমালায় বলা হয়, ২০২৪ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যাংকের স্বাস্থ্য যাচাই করে ২০২৫ সালের মার্চের পর থেকে ব্যাংকগুলো নিজেদের আগ্রহের মাধ্যমে একীভূত হতে পারবে। পিসিএ ফ্রেমওয়ার্ক অনুযায়ী কোনো দুর্বল ব্যাংক ইচ্ছাকৃতভাবে একীভূত না হলে আগামী ডিসেম্বরের প্রতিবেদন প্রকাশের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের একীভূত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, দুর্বল ব্যাংকগুলোর বিষয়ে নিয়মিত খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। যদি বড় কোনো পরিবর্তন না আসে, তবে চলতি বছরের ডিসেম্বরভিত্তিক প্রতিবেদনে অন্তত ১৪টি ব্যাংক খারাপ অবস্থায় পড়তে পারে। তখন যদি মনে হয়, কোনো ব্যাংক একীভূত করা প্রয়োজন, তখন সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। 

সূত্রমতে, বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় রয়েছে জনতা ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, আল-আরাফাহ্‌ ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) ও এবি ব্যাংক।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ব্যাংক একীভূতকরণের আগের উদ্যোগ ভালো ছিল। তবে তাড়াহুড়া করা উচিত হয়নি। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিক ধরে ব্যাংক একীভূত করতে চাইলে ২০২৫ সালের মার্চের পরে তা হতে পারে। তবে অপেক্ষা করতে হবে, ভবিষ্যতে কী হয় তা দেখার জন্য।’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র নির্বাচিত হলেন মামদানি

বাংলা ভাষার সঙ্গে জোহরান মামদানির ঘরের সম্পর্ক, যোগসূত্র মা মীরা নায়ার

জোট নয়, নির্বাচনী সমঝোতা করবে জামায়াত—জানালেন আমির

আজকের রাশিফল: অফিসে মিষ্টি কথায় মন গলবে বসের, প্রেমের ঝগড়ায় চ্যাটজিপিটিতে ভরসা নয়

বুমরা-সূর্যকুমারকে শাস্তি দিল আইসিসি, নিষিদ্ধ পাকিস্তানি ক্রিকেটার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চীনে দেশীয় কোম্পানির কাছে আধিপত্য হারাচ্ছে স্টারবাকস

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বেইজিংয়ের সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্টের একটি অভিজাত শপিং মলে ১৯৯৯ সালে চালু হয় স্টারবাকসের প্রথম শাখা। ছবি: সংগৃহীত
বেইজিংয়ের সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্টের একটি অভিজাত শপিং মলে ১৯৯৯ সালে চালু হয় স্টারবাকসের প্রথম শাখা। ছবি: সংগৃহীত

তিন দশক আগে এশিয়ার দেশ চীনে যাত্রা শুরু করে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কফি চেইন স্টারবাকস। মার্কিন এই কফি ব্র্যান্ডের আগমন চা-প্রধান চীনের মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যে কফি সংস্কৃতির উত্থান ঘটায় এবং দ্রুতই স্টারবাকস হয়ে ওঠে পশ্চিমা প্রভাব ও সমৃদ্ধ জীবনযাত্রার প্রতীক। এক সময় দেশটির অর্থনৈতিক উত্থানের ঢেউয়ে চড়ে স্টারবাকস গড়ে প্রতি ১৫ ঘণ্টায় একটি করে নতুন শাখা খুলতে থাকে। চীন হয়ে ওঠে মার্কিন এই কফি জায়ান্টের বৈশ্বিক কৌশলের কেন্দ্রবিন্দু।

১৯৯৯ সালে বেইজিংয়ের সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্টের একটি অভিজাত শপিং মলে চালু হয় স্টারবাকসের প্রথম শাখা। উদ্বোধনী আয়োজনে ছিল ঐতিহ্যবাহী ‘গোল্ডেন লায়ন’ নাচের আয়োজন। আধুনিক এসপ্রেসো মেশিনে তৈরি কফি দিয়ে প্রথমবারের মতো ক্যাপুচিনো চেখে দেখতে ভিড় করেছিলেন চীনারা।

সেই থেকে দীর্ঘ সময় ধরে চীনে এক অপ্রতিরোধ্য অবস্থান ধরে রেখেছিল এই কফি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু তিন দশক পর এসে এখন সেই পরিস্থিতি আর নেই। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্য যুদ্ধের ধাক্কা লেগেছে স্টারবাকসের গায়েও।

গত সোমবার স্টারবাকস ঘোষণা দিয়েছে, তারা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির এই দেশে নিজেদের ব্যবসার নিয়ন্ত্রণমূলক শেয়ার বিক্রি করবে এক চীনা বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানের কাছে।

চুক্তি অনুযায়ী, বয়ু ক্যাপিটাল নামে ওই চীনা প্রতিষ্ঠানটি স্টারবাকসের ৮ হাজারেরও বেশি আউটলেটসহ খুচরা ব্যবসায় সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ শেয়ার অর্জন করবে। স্টারবাকসের থাকবে ৪০ শতাংশ অংশীদারত্ব এবং নতুন এই যৌথ প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্র্যান্ড ও মেধাস্বত্ব লাইসেন্স দেবে তারা।

স্টারবাকসের এক শাখায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলেন গাড়িশিল্পে কর্মরত ২৮ বছর বয়সী সি হুয়াঝেং। তিনি সিএনএনকে বলেন, “প্রথম যখন স্টারবাকস চীনে আসে, তখন এটি নিজেকে এক ধরনের ‘অ্যাক্সেসিবল লাক্সারি’ (যে বিলাসিতা সবাই উপভোগ করতে পারে) হিসেবে উপস্থাপন করেছিল। কিন্তু এখন এত দেশীয় কফি ব্র্যান্ড এসেছে যে ওই পরিস্থিতিই বদলে গেছে।”

এখন স্টারবাকস চীনে তীব্র দেশীয় প্রতিযোগিতা, ব্যয়-সচেতন ভোক্তা বাজার এবং নিজেদের ব্র্যান্ডকে সমর্থন দিতে আগ্রহী তরুণ প্রজন্মের কারণে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

চীনের কফির বাজার স্টারবাকসের আগমনের সময়কার চেহারা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। ২৬ বছর আগে যখন চীনের অর্থনীতি মাত্রই উত্থান শুরু করছিল এবং কোটি কোটি মানুষ মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে প্রবেশ করছিল, তখন দেশটিতে কফি পান করার কোনো মূলধারার সংস্কৃতি ছিল না।

সেই সময় স্টারবাকস ছিল কয়েকটি মার্কিন ফুড ও বেভারেজ চেইনের মধ্যে একটি, যারা ১৯৮০-এর দশকের চীনের উন্মুক্ত নীতির পর দেশটিতে নিজেদের জায়গা করে নিতে চেষ্টা করছিল।

কিন্তু গত কয়েক বছরে চীনের বাজারে একের পর এক নতুন ব্র্যান্ডের উত্থান ঘটেছে। এই ব্র্যান্ডগুলো বেশ ছাড় দিয়ে বিক্রি করতে থাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই তালিকার শীর্ষে আছে লাকিন কফি (Luckin Coffee)। ২০১৭ সালে যাত্রা শুরু করা এই ব্র্যান্ডটি বিক্রয় ও আউটলেট সংখ্যার দিক থেকে স্টারবাকসকে ছাড়িয়ে গেছে।

বর্তমানে চীনে লাকিনের স্টারবাকসের তুলনায় তিন গুণ বেশি দোকান রয়েছে। তাদের কফির দাম স্টারবাকসের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ কম। অল্প সময়ের মধ্যেই দেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এই কফি ব্র্যান্ড এখন পা রেখেছে স্টারবাকসের ঘরের মার্কেটেও। গত জুন মাসে নিউইয়র্ক সিটিতে প্রথম আউটলেট খোলে লাকিন কফি।

এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার সময়টিতে চীনে স্টারবাকসের সাফল্যের পেছনে কারণ ছিল পশ্চিমা বিলাসপণ্যের প্রতি দেশটির মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রমবর্ধমান আকর্ষণ এবং স্থানীয় বাজারের উপযোগী করে পণ্য তৈরি করার কৌশলের ওপর। যার ফলে ব্র্যান্ডটি চীনের বড় শহরের বাইরের গ্রাহকদের কাছেও জনপ্রিয়তা পায়।

বেইজিংয়ের একটি স্টারবাকস শাখায় বসে ৭০ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত লিউ জিশাং বলেন, বেইজিংয়ে প্রথম স্টারবাকস যখন খুলল, সে সময় কফির স্বাদে অভ্যস্ত হতে চীনা গ্রাহকদের কিছুটা সময় লেগেছিল। এছাড়া তখন স্টারবাকসে যাওয়া মানে শুধু কফি পান নয়, ওদের সংস্কৃতিটাও অনুভব করার বিষয়টি ছিল। তখন মানুষ ভাবতে শুরু করল, এটা তো বেশ ভালো।’

তবে এখন স্টারবাকসের যে চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখি হতে হচ্ছে, তার পেছনে চীনের ভোক্তা ব্যয়ের স্থবিরতাও বড় কারণ হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

লিউ বলেন, চীনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দিনকে দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। ধনীর সংখ্যা কমছে। বাড়ি, গাড়ি আর ঋণের চাপ মানুষের খরচ করার ইচ্ছাকে প্রভাবিত করছে। আর এর প্রভাব পড়ছে স্টারবাকসেও।

২০২৫ অর্থবছরে চীনের দোকানগুলোতে ১ শতাংশ বিক্রি কমে যাওয়ার প্রতিবেদন পেয়েছে স্টারবাকস।

এর পাশাপাশি, স্টারবাকস এখন মিক্সু বিংচেং (Mixue Bingcheng), চা-জি (ChaGee) এবং হেইটি (HeyTea)-এর মতো চাভিত্তিক পানীয় চেইনগুলোর উত্থানের কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে।

বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বেশি আউটলেট থাকা খাদ্য ও পানীয় চেইনে পরিণত হওয়া মিক্সু এখন ম্যাকডোনাল্ডস ও স্টারবাকসকেও ছাড়িয়ে গেছে। তাদের জনপ্রিয় পানীয় ও কফির দাম মাত্র ২ থেকে ৮ ইউয়ান (প্রায় ৩০ সেন্ট থেকে ১.২০ ডলার), যা স্টারবাকসের দামের এক-তৃতীয়াংশও নয়।

এমনকি এই বছরের শুরুতে মিক্সু শেয়ারবাজারে যাত্রা শুরু করলে স্টারবাকসের নতুন মালিক বয়ু ক্যাপিটাল তাদের সমর্থন দেয়।

অন্যদিকে জেসমিন গ্রিন মিল্ক টি কিংবা চিজ ফোমসহ আঙুর মিশ্রিত চায়ের মতো অভিনব পানীয় দিয়ে দ্রুত বদলে যাওয়া রুচির তরুণ চীনা ভোক্তাদের আকৃষ্ট করতে পারছে প্রতিদ্বন্দ্বী চা-জি ও হেইটি ব্র্যান্ড।

তবু স্টারবাকস এখনো পরিবেশ ও ‘উচ্চমানের ব্র্যান্ড’ ভাবমূর্তির কারণে অনেকের কাছে আকর্ষণীয় রয়ে গেছে বলে জানান ফাইন্যান্সে কর্মরত ২৮ বছর বয়সী ক্যারি চেন। সপ্তাহে তিন থেকে চারবার স্টারবাকসে যান তিনি।

হ্যাজেলনাট টফি লাতের কাপে চুমুক দিতে দিতে অনলাইন কোর্স করছিলেন চেন। তিনি বলেন, ‘ক্লায়েন্ট মিটিং বা আড্ডা দেওয়ার জন্য যদি স্টারবাকস বেছে নেন, তা মানে আপনি বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন।’

তবে বর্তমানে বাজারে স্টারবাকস স্বাদ ও অফার নিয়ে খুব বুঝেশুনে খেলছে বলে ধারণা তাঁর।

চীনে স্টারবাকসের বিনিয়োগ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন করলে চেন বলেন, ‘দেশে স্টারবাকসের দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার যুগের হয়তো অবসান হয়েছে, তবে কোনো চীনা পার্টনারের সঙ্গে কাজ করলে ব্র্যান্ডটি হয়তো নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে।’

চীনে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করা জনসংযোগ বিশেষজ্ঞ জিন লু মনে করেন, বৃহৎ অর্থনীতির এই দেশটিতে স্টারবাকসের বিনিয়োগ কমানোর সিদ্ধান্ত মূলত তাদের দুর্বল ব্যবসায়িক কৌশল, তীব্র মূল্য প্রতিযোগিতা এবং দেশীয় ব্র্যান্ডগুলোর প্রতি ভোক্তাদের আগ্রহ বৃদ্ধির কারণে।

আর্থিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান মর্নিংস্টারের বিশ্লেষক ড্যান সু মনে করেন, স্টারবাকস ও বয়ু ক্যাপিটালের নতুন এই যৌথ উদ্যোগকে সামনে কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে হবে। তবে এই অংশীদারিত্ব স্টারবাকসের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানকে শক্তিশালী করতে পারে।

তবে চীনে স্টারবাকস যে সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হয়েছে, সেগুলোর অনেকটাই বিশ্বব্যাপী। বিশেষ করে এর নিজস্ব বাজার উত্তর আমেরিকাতেও একই অবস্থা। সেখানে স্বাধীন কফিশপ ও নতুন প্রতিদ্বন্দ্বী ব্লু বটল (Blue Bottle)-এর চাপের মুখে পড়েছে সিয়াটলভিত্তিক এই কফি কোম্পানি। আবার অনেকে ম্যাকডোনাল্ডস বা ডানকিন-এর তুলনায় স্টারবাকসকে বেশি দামি মনে করে এড়িয়ে যান।

এই প্রেক্ষাপটই তুলে ধরছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্টারবাকসের কৌশলগত ভুল এবং নেতৃত্ব পরিবর্তনের ধাক্কায় কোম্পানিটি টালমাটাল সময় পার করছে। এরই অংশ হিসেবে গত বছর নতুন সিইও হিসেবে ব্রায়ান নিকোল দায়িত্ব নেন। দ্রুত ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় প্রায় শত শত দোকান বন্ধ করার পরিকল্পনা হাতে নেন তিনি, কফি চেইনটির মোট শাখার প্রায় ১ শতাংশ।

তবে ১ বছর পেরিয়ে গেলেও এই সিদ্ধান্তের সুফল পাননি সিইও নিকোল। মেন্যু ছোট করা, দোকান সংস্কার ও বন্ধের পরও গত সপ্তাহে ঘোষিত আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৫ অর্থবছরে কোম্পানির আয় বেড়েছে মাত্র ৩ শতাংশ।

কোম্পানির হিসাব পূর্বাভাস দিচ্ছে, চীনে স্টারবাকসের খুচরা ব্যবসার মোট মূল্য ১৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে। চীনে নতুন যৌথ উদ্যোগ প্রসঙ্গে সিইও নিকোল এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা বর্তমানে ৮ হাজার কফি হাউস থেকে এক সময় ২০ হাজার হাউসে পৌঁছানোর রূপরেখা দেখতে পাচ্ছি।’

এদিকে বিনিয়োগ কমানোর ঘোষণার পর বিষয়টি নিয়ে চীনা সামাজিক মাধ্যমে তুমুল আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই আশা করছেন, এর ফলে স্টারবাকস হয়তো লাকিন কফির মতো আরও সাশ্রয়ী দামের পানীয় চালু করবে।

চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ওয়েইবোতে একজন লিখেছেন, ‘আমি সাধারণত লাকিন কফি খাই, কারণ স্টারবাকস খুবই দামি। এক কাপ স্টারবাকসের দামে আমি লাকিনের তিন-চার কাপ কিনতে পারি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র নির্বাচিত হলেন মামদানি

বাংলা ভাষার সঙ্গে জোহরান মামদানির ঘরের সম্পর্ক, যোগসূত্র মা মীরা নায়ার

জোট নয়, নির্বাচনী সমঝোতা করবে জামায়াত—জানালেন আমির

আজকের রাশিফল: অফিসে মিষ্টি কথায় মন গলবে বসের, প্রেমের ঝগড়ায় চ্যাটজিপিটিতে ভরসা নয়

বুমরা-সূর্যকুমারকে শাস্তি দিল আইসিসি, নিষিদ্ধ পাকিস্তানি ক্রিকেটার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পাঁচ শরিয়াহ ব্যাংকের বোর্ড ভেঙে প্রশাসক নিয়োগ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ৫৪
পাঁচ শরিয়াহ ব্যাংকের বোর্ড ভেঙে প্রশাসক নিয়োগ

শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ব্যাংকের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মাধ্যমে এই ৫টি ব্যাংক মিলে একটি বড় ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ চূড়ান্ত রূপ নিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, আজ বুধবার বিকেলে ব্যাংকগুলোর দায়িত্ব বুঝে নেবেন প্রশাসকেরা।

ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়ে এ নির্দেশনা জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। জানা গেছে, ব্যাংকগুলোর নিয়মিত এমডিরা বাদ পড়ছেন। এখন থেকে এসব ব্যাংক ব্যাংক রেজ্যুলেশন অধ্যাদেশের আওতায় চলবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, পাঁচ ব্যাংক মিলে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের মূলধন হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে সরকার। আর আমানতকারীদের ১৫ হাজার কোটি টাকার শেয়ার দেওয়া হবে। একীভূত হতে যাওয়া পাঁচ ব্যাংকে ৭৫ লাখ আমানতকারীর বর্তমান জমা আছে ১ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে ঋণ রয়েছে ১ লাখ ৯৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকা বা ৭৬ শতাংশ এখন খেলাপি।

সারা দেশে এসব ব্যাংকের ৭৬০টি শাখা, ৬৯৮টি উপশাখা, ৫১১টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট এবং ৯৭৫টি এটিএম বুথ রয়েছে। ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ৯৮ শতাংশ ঋণ খেলাপি ইউনিয়ন ব্যাংকের। পর্যায়ক্রমে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামীর ৯৭ শতাংশ, গ্লোবাল ইসলামীর ৯৫ শতাংশ, সোশ্যাল ইসলামীর ৬২ দশমিক ৩০ শতাংশ ও এক্সিম ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৪৮ দশমিক ২০ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংক আরও জানিয়েছে, প্রশাসকেরা দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হবে। আর এমডির চুক্তি বাতিল হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শওকাতুল আলম এক্সিম ব্যাংকের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পাচ্ছেন। সোশ্যাল ইসলামীতে নির্বাহী পরিচালক সালাহ উদ্দিন এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে দায়িত্ব পাচ্ছেন আরেক নির্বাহী পরিচালক মুহাম্মদ বদিউজ্জামান দিদার। আর গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে পরিচালক মো. মোকসুদুজ্জামান এবং ইউনিয়ন ব্যাংকে পরিচালক মোহাম্মদ আবুল হাসেমকে।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, প্রশাসকদের প্রথম কাজ হবে পাঁচ ব্যাংক একীভূতকরণে সব ধরনের তথ্য সরবরাহ করা। সেনাকল্যাণ ভবনে এসব ব্যাংক একীভূতকরণের জন্য স্থাপিত কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা সব তথ্য সমন্বয় করবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র নির্বাচিত হলেন মামদানি

বাংলা ভাষার সঙ্গে জোহরান মামদানির ঘরের সম্পর্ক, যোগসূত্র মা মীরা নায়ার

জোট নয়, নির্বাচনী সমঝোতা করবে জামায়াত—জানালেন আমির

আজকের রাশিফল: অফিসে মিষ্টি কথায় মন গলবে বসের, প্রেমের ঝগড়ায় চ্যাটজিপিটিতে ভরসা নয়

বুমরা-সূর্যকুমারকে শাস্তি দিল আইসিসি, নিষিদ্ধ পাকিস্তানি ক্রিকেটার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

২৪ ঘণ্টা অ্যাপনির্ভর ব্যাংকিং আসছে

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ১৩: ০৬
২৪ ঘণ্টা অ্যাপনির্ভর ব্যাংকিং আসছে

দেশের ব্যাংকিং সেবাকে সম্পূর্ণভাবে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ডিজিটাল পরিসরে। এ লক্ষ্যেই শুরু হয়েছে অ্যাপনির্ভর ব্যাংক গঠনের প্রস্তুতি। ইতিমধ্যে দেশি ও বিদেশি ১২টি প্রতিষ্ঠান নতুন প্রজন্মের এই ব্যাংক স্থাপনে আগ্রহ জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অনুমোদনের আবেদন করেছে। প্রস্তাবিত এসব ব্যাংকের থাকবে না কোনো শাখা, অবকাঠামো বা এটিএম বুথ; গ্রাহকেরা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমেই ২৪ ঘণ্টায় যেকোনো সময় পাবেন সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা।

নতুন যুগের আবেদনকারীরা

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছে ব্রিটিশ বাংলা ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি, ডিজিটাল ব্যাংকিং অব ভুটান-ডিকে, আমার ডিজিটাল ব্যাংক-২২ এমএফআই, ৩৬ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি, বুস্ট-রবি, আমার ব্যাংক (প্রস্তাবিত), অ্যাপ ব্যাংক-ফার্মারস, নোভা ডিজিটাল ব্যাংক (বাংলালিংক ও স্কয়ার), মৈত্রী ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি, উপকারী ডিজিটাল ব্যাংক, মুনাফা ইসলামী ডিজিটাল ব্যাংক-আকিজ এবং বিকাশ ডিজিটাল ব্যাংক। আবেদনের শেষ সময় ২ নভেম্বর পর্যন্ত চূড়ান্তভাবে এই ১২ প্রতিষ্ঠানের আবেদন জমা পড়েছে।

মূলধনে বড় শর্ত

২০২৩ সালের ১৪ জুন প্রণীত বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, একটি ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য ন্যূনতম ৩০০ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধন থাকতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে কোম্পানি আইন অনুসারে পরিচালিত হতে হবে এবং প্রচলিত ব্যাংকের মতোই সিআরআর (নগদ জমা অনুপাত) ও এসএলআর (বিধিবদ্ধ জমা অনুপাত) বজায় রাখতে হবে।

এই ব্যাংকগুলো বড় বা মাঝারি শিল্পে ঋণ দিতে পারবে না এবং কোনো ধরনের ঋণপত্র (এলসি) খুলতেও পারবে না। কেবল ক্ষুদ্রঋণ, খুচরা পর্যায়ের লেনদেন এবং ডিজিটাল সেবা প্রদানের সুযোগ থাকবে। অনুমোদনের পাঁচ বছরের মধ্যে আইপিও আনতে হবে, যার পরিমাণ উদ্যোক্তাদের প্রাথমিক বিনিয়োগের সমান হতে হবে।

অ্যাপেই পুরো ব্যাংকিং

প্রস্তাবিত ডিজিটাল ব্যাংকগুলো হবে সম্পূর্ণ অ্যাপনির্ভর। কোনো শাখা বা এটিএম থাকবে না; বরং গ্রাহকেরা ভার্চুয়াল কার্ড, কিউআর কোড এবং মোবাইল লেনদেনের মাধ্যমে সব সেবা নিতে পারবেন। প্লাস্টিক কার্ডের পরিবর্তে সব লেনদেন হবে ডিজিটাল উপায়ে। গ্রাহকেরা অন্য ব্যাংকের এটিএম বা এজেন্ট সেবা ব্যবহার করতে পারবেন। সব সেবা পরিচালিত হবে বাংলাদেশ পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেম রেগুলেশন, ২০১৪-এর আওতায়; যা ডিজিটাল লেনদেনে নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে।

যোগ্যতার কঠোর মানদণ্ড

কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণখেলাপি ব্যক্তি বা তাঁর পরিবারের সদস্য এই ডিজিটাল ব্যাংকের উদ্যোক্তা হতে পারবেন না। ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হতে ব্যাংকিং পেশায় অন্তত ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এ ছাড়া পর্ষদের অন্তত ৫০ শতাংশ সদস্যকে প্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংকিং, সাইবার নিরাপত্তা ও উদীয়মান প্রযুক্তি বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞানসম্পন্ন হতে হবে।

ক্যাশলেস সমাজের পথে

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘ডিজিটাল ব্যাংকের লক্ষ্য হলো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেওয়া।’ তিনি জানান, এসব ব্যাংক আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এবং ক্যাশলেস সমাজ গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

যাচাইয়ের পর অনুমোদন

প্রাথমিকভাবে আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর টেকনিক্যাল ও বিজনেস কমিটি নম্বরের ভিত্তিতে যোগ্য প্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করবে। নির্ধারিত মানদণ্ডে উত্তীর্ণরা ‘লেটার অব ইনটেন্ট’ পেয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারবে। চূড়ান্ত সনদ পাওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে নতুন বছরের প্রথমে শুরু হতে পারে তাদের অপারেশনাল কার্যক্রম।

চ্যালেঞ্জ এখন দক্ষতার

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘প্রথাগত ব্যাংকে ডিজিটাল সেবা হালনাগাদ রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। তাই স্বতন্ত্র ও পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ব্যাংক সময়ের দাবি। তবে এই ব্যাংক পরিচালনায় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে দক্ষ জনবল পাওয়া, পাশাপাশি তথ্য-উপাত্ত ব্যবস্থাপনা, জনসচেতনতা ও বিপণন কৌশল তথা নিয়ন্ত্রণ কাঠামো শক্ত রাখা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র নির্বাচিত হলেন মামদানি

বাংলা ভাষার সঙ্গে জোহরান মামদানির ঘরের সম্পর্ক, যোগসূত্র মা মীরা নায়ার

জোট নয়, নির্বাচনী সমঝোতা করবে জামায়াত—জানালেন আমির

আজকের রাশিফল: অফিসে মিষ্টি কথায় মন গলবে বসের, প্রেমের ঝগড়ায় চ্যাটজিপিটিতে ভরসা নয়

বুমরা-সূর্যকুমারকে শাস্তি দিল আইসিসি, নিষিদ্ধ পাকিস্তানি ক্রিকেটার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপো শুরু

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

দেশের ডেনিম শিল্পের সবচেয়ে বড় প্রদর্শনী ‘বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপো’-এর ১৯ তম আসর আজ। দুই দিনের এই এক্সপো অনুষ্ঠিত হবে ৫ ও ৬ নভেম্বর রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি)।

এ বছর প্রদর্শনীতে বাংলাদেশ, ভারত, চীন, পাকিস্তান, তুরস্ক, স্পেন, অস্ট্রেলিয়া, ভিয়েতনাম, জার্মানি ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ ১০টি দেশ থেকে ৪৫ টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে।

এরা মূলত ফ্যাব্রিক মিল (ডেনিম ও নন-ডেনিম), গার্মেন্টস প্রস্তুতকারক, সুতা উৎপাদক, ওয়াশিং ও লন্ড্রি, অ্যাকসেসরিজ ও ট্রিমস, কেমিক্যালস, মেশিনারি বা প্রযুক্তি এবং লজিস্টিকস ক্যাটাগরিতে পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র নির্বাচিত হলেন মামদানি

বাংলা ভাষার সঙ্গে জোহরান মামদানির ঘরের সম্পর্ক, যোগসূত্র মা মীরা নায়ার

জোট নয়, নির্বাচনী সমঝোতা করবে জামায়াত—জানালেন আমির

আজকের রাশিফল: অফিসে মিষ্টি কথায় মন গলবে বসের, প্রেমের ঝগড়ায় চ্যাটজিপিটিতে ভরসা নয়

বুমরা-সূর্যকুমারকে শাস্তি দিল আইসিসি, নিষিদ্ধ পাকিস্তানি ক্রিকেটার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত