Ajker Patrika

চাপের মুখে সিদ্ধান্ত দিলেন বিমানের বিদায়ী এমডি, জানালেন আপত্তিও

মনজুরুল ইসলাম, ঢাকা
আপডেট : ২৫ আগস্ট ২০২৪, ১৮: ০২
চাপের মুখে সিদ্ধান্ত দিলেন বিমানের বিদায়ী এমডি, জানালেন আপত্তিও

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের নানা স্তরের কর্মীরা বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু করেন। এ অবস্থায় কয়েক দিন কর্মস্থলে অনিয়মিত থাকার পর ১২ আগস্ট বিভিন্ন বিভাগের প্রধানদের নিয়ে বৈঠক করেন বিমানের সদ্য বিদায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও জাহিদুল ইসলাম ভূঞা। বৈঠকে চাপের মুখে নির্বাহী পরিচালকদের আহ্বানে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এ ধারা অব্যাহত থাকে পরবর্তী কয়েক দিন। তবে ১৫ আগস্ট বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হওয়ার আগেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে দেওয়া এক চিঠিতে চাপের মুখে নেওয়া নিজের সিদ্ধান্তগুলোর বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে যান তিনি। 

জানা গেছে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের এমডিসহ মন্ত্রণালয় থেকে আসা সব কর্মকর্তার পদত্যাগসহ বেশ কিছু দাবিতে ৮ আগস্ট থেকে আন্দোলনে নামেন প্রতিষ্ঠানটির সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাঁদের দাবির মধ্যে অন্যতম ছিল প্রেষণে আসা আমলাদের প্রত্যাহার, কোভিডকালীন স্টাফদের কর্তিত বেতন ফিরিয়ে দেওয়া, তিন হাজার ক্যাজুয়াল (অস্থায়ী) কর্মচারীর চাকরি স্থায়ী করা, বিমানের প্রায় ছয় হাজার জনবলকে পেনশনের আওতাভুক্ত করা। পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে এয়ারলাইনসটিতে বেতন, ভাতাদি, পদোন্নতি, বদলি, পদায়ন ও বিদেশ ভ্রমণ নিয়ে নানা  বৈষম্য, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি বন্ধ করার দাবিও জানান তাঁরা। 

কর্মীদের এসব দাবির মুখে ১২ আগস্ট বিমানের প্রধান কার্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগের প্রধানদের নিয়ে বৈঠক করেন সদ্য বিদায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও। বৈঠকে বিমানের প্রকৌশলীদের প্রোডাকটিভিটি ও অন্যান্য ভাতা এবং নিরাপত্তা বিভাগের কর্মীদের ঝুঁকি ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বৈমানিকসহ সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর চলমান মামলা নিষ্পত্তি, চাকরি-সংক্রান্ত বিবিধ অভিযোগ, অনিচ্ছাকৃত স্বেচ্ছা অবসর, পদোন্নতি-সংক্রান্ত জটিলতায় থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবেদন নিষ্পত্তি করতে কমিটিকে ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। এ ছাড়া কোভিডকালীন স্টাফদের কর্তিত বেতন ফিরিয়ে দেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়। 

বৈঠকে আরও সিদ্ধান্ত হয়, বেতন বিভাগ ৩(২)-এ ক্যাজুয়াল হিসেবে কর্মরতদের চাকরির মেয়াদ ১ বছর পর ৩ বছর মেয়াদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হবে। ওই ৩ বছর সন্তোষজনকভাবে চাকরি সম্পন্ন হলে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের তারিখ থেকে স্থায়ী করা হবে। অন্যদিকে বেতন বিভাগ ৩(১)-এ ক্যাজুয়াল হিসেবে চাকরির মেয়াদ ৫ বছর থেকে কমিয়ে ৩ বছর করা হয়। বলা হয়, ক্যাজুয়াল হিসেবে ৩ বছর চাকরি করার পর ৩ বছর মেয়াদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হবে। ওই ৩ বছর সন্তোষজনকভাবে চাকরি সম্পন্ন হলে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের তারিখ থেকে স্থায়ী করা হবে। 

এর আগে ২০ দফা দাবিতে ৮ আগস্ট স্মারকলিপি দেয় বিমানের কেবিন ক্রু ইউনিয়ন। তাঁদের অন্যতম দাবি ছিল, ফ্লাইট সার্ভিসে সব চুক্তিভিত্তিক কেবিন ক্রুর চাকরি স্থায়ীকরণ করা ও পেনশন সুবিধার আওতায় আনা। দাবি না মানলে তাঁরা কর্মবিরতির হুমকিও দেন। পরবর্তী সময়ে ১২ আগস্টের বৈঠকে বেতন বিভাগ চতুর্থের চুক্তিভিত্তিক কেবিন ক্রুদের নিয়োগের তারিখ থেকে স্থায়ীকরণের ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত দেন বিদায়ী এমডি। 

এদিকে ১৪ আগস্ট বিমানে শীর্ষ পদে বড় রদবদল করেন বিদায়ী এমডি। ওই দিন এক অফিস আদেশে বিমানের পরিচালক করপোরেট প্ল্যানিং অ্যান্ড ট্রেনিং (ভারপ্রাপ্ত) পদে নিয়োগ দেওয়া হয় শাকিল মেরাজকে। তিনি বিমানের গ্রাউন্ড সাপোর্ট ইক্যুইপমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক হিসেবে ছিলেন। পৃথক আরেক আদেশে বিমানের জেলা বিক্রয় অফিসের (মতিঝিল) মহাব্যবস্থাপক আশরাফুল আলমকে পরিচালক বিপণন ও বিক্রয় পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। 

এদিকে একই দিনে জারি করা আদেশে বিমানের ডিজিএম-ফ্লাইট সার্ভিস মনিরুজ্জামান খানকে প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড লজিস্টিক সাপোর্ট পরিদপ্তর, বিমানের আইন বিভাগের ডিজিএম রাশেদ মেহের চৌধুরীকে বিমান এয়ারলাইনস ট্রেনিং সেন্টার এবং বিমানের ম্যানেজার (জনসংযোগ) মো. আল মাসুদ খানকে আইন উপবিভাগে বদলি করা হয়। 

১৫ আগস্ট জাহিদুল ইসলাম ভূঞাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়। এর আগেই ১৪ আগস্ট বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে বল প্রয়োগে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোর বিষয়ে আপত্তি জানান তিনি। 

চিঠিতে জাহিদুল ইসলাম ভূঞা উল্লেখ করেন, ‘দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মতো বিমানেও যৌক্তিক-অযৌক্তিক অনেক দাবি উত্থাপিত হয়েছে এবং ফ্লাইট সার্ভিস ও এয়ারপোর্টের কার্যক্রম চলমান রাখার প্রয়োজনে চাপের মুখে নির্বাহী পরিচালকমণ্ডলীর আহ্বানপূর্বক অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে এবং প্রশাসনিক আদেশ জারি করতে হয়েছে। যেগুলোর মধ্যে কিছু ব্যত্যয় হতে পারে, যা বোর্ডে উপস্থাপনের মাধ্যমে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করার প্রয়োজন হতে পারে।’ 

উল্লেখ্য, অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম ভূঞা বিমানে এমডি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্তির আগের ৫ বছর সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের একান্ত সচিব হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি বিসিএস (প্রশাসন) ১৮তম ব্যাচের কর্মকর্তা। 

এ প্রসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা আজকের পত্রিকা’কে জানান, বিমানের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মীরা নানা দাবি নিয়ে সদ্য বিদায়ী এমডিকে চাপ দিচ্ছিলেন। এ অবস্থায় ফ্লাইট চলাচলে বিঘ্ন ঘটলে সাধারণ যাত্রী বিশেষ করে প্রবাসী কর্মীরা সংকটে পড়তেন। পাশাপাশি বিমানের ভাবমূর্তিও নষ্ট হতো। এমন পরিস্থিতি এড়াতে অধিকাংশ দাবি মানতে বাধ্য হয়েছিলেন সাবেক এমডি। যদিও নিয়ম অনুযায়ী এসব সিদ্ধান্ত পরিচালনা পর্ষদে পাস হওয়া প্রয়োজন ছিল।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এত শক্তি প্রদর্শন আপনাদের মানায় না—অন্তর্বর্তী সরকারকে কড়া হুঁশিয়ারি সালাহউদ্দিনের

মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে ডাকাতির চেষ্টা ব্যর্থ, দোকানদার থেকে ২৫ সেকেন্ডে খেলেন ২০টি চড়

ফরিদপুরে বিএনপির সংঘর্ষের সময় আগ্নেয়াস্ত্র হাতে যুবক, ভিডিও ভাইরাল

মাথায় হেলমেট নেই চালকের, এক লাখের স্কুটারে জরিমানা ২১ লাখ

জাকসু আর জকসু হলে বাকসু কেন দুই প্রতিষ্ঠানের?

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মেধাস্বত্ব নিয়ে ফোকাস গ্রুপ আলোচনা

আইপি সুরক্ষায় আন্তর্জাতিক মান মেনে চলা এখন সময়ের দাবি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

এফবিসিসিআই ইনোভেশন অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার (এফবিসিসিআই–আইআরসি) বাংলাদেশে পোস্ট-এলডিসি প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ‘উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণোত্তর প্রতিযোগিতায় মেধাস্বত্ব সুরক্ষা জোরদারকরণ’ শীর্ষক একটি ফোকাস গ্রুপ আলোচনা আয়োজন করেছে। আজ শনিবার এফবিসিসিআই আইআরসির কনফারেন্স রুমে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ওবাইদুর রহমান; সভাপতিত্ব করেন এফবিসিসিআই ইনোভেশন অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটি সেলের সাবেক মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইর সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোস্তাফা আজাদ চৌধুরী বাবুসহ আরও অনেকে।

ফোকাস গ্রুপ আলোচনায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ওবাইদুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পথে রয়েছে। আমাদের অর্থনীতির জন্য এটি যেমন গৌরবের বিষয়, তেমনি এটি নতুন কিছু চ্যালেঞ্জও নিয়ে এসেছে। বিশেষ করে মেধাস্বত্ব বা “ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি’ (আইপি) সুরক্ষার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান মেনে চলার প্রয়োজনীয়তা এখন সময়ের দাবি।’

এফবিসিসিআই ইনোভেশন অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন বলেন, পোস্ট-এলডিসি বা এলডিসি থেকে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি হবে মেধাস্বত্ব সুরক্ষা নিশ্চিত করা। তিনি উল্লেখ করেন, উদ্ভাবন ও সৃজনশীল কর্মসমূহ সময়মতো আইনগত সুরক্ষা না পেলে বিদেশি কোম্পানির পেটেন্ট ও প্রযুক্তি ব্যবহারে অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হবে, যা দেশীয় উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে দেবে।

এফবিসিসিআইর সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোস্তাফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, ‘আমরা ডিপিডিটির সঙ্গে কার্যকর সমন্বয় স্মারক স্বাক্ষরে প্রস্তুত। যার মাধ্যমে এফবিসিসিআই–আইআরসি ইনোভেশন অ্যান্ড রিসার্চ ফ্লোর একটি “কানেক্টিং ব্রিজ” হিসেবে কাজ করবে, যেখানে উদ্ভাবকেরা তাঁদের নতুন ধারণা উপস্থাপন করবেন এবং আমাদের টিম সেগুলোকে পেটেন্টযোগ্য উদ্ভাবনে রূপান্তরে সহায়তা করবে।’

ফোকাস গ্রুপ আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মো. হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, উদ্ভাবকদের জন্য প্রয়োজনীয় সুবিধা বিবেচনায় নিয়ে একটি সমন্বিত মেধাস্বত্ব সুরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারলে পোস্ট-এলডিসি সময়েও বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান ধরে রাখা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতিতে উন্নীত করবে, যেখানে উদ্ভাবন, ন্যায়বিচার এবং সবার সমৃদ্ধি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এত শক্তি প্রদর্শন আপনাদের মানায় না—অন্তর্বর্তী সরকারকে কড়া হুঁশিয়ারি সালাহউদ্দিনের

মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে ডাকাতির চেষ্টা ব্যর্থ, দোকানদার থেকে ২৫ সেকেন্ডে খেলেন ২০টি চড়

ফরিদপুরে বিএনপির সংঘর্ষের সময় আগ্নেয়াস্ত্র হাতে যুবক, ভিডিও ভাইরাল

মাথায় হেলমেট নেই চালকের, এক লাখের স্কুটারে জরিমানা ২১ লাখ

জাকসু আর জকসু হলে বাকসু কেন দুই প্রতিষ্ঠানের?

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

৭০-৮০ টাকার পেঁয়াজ ১২০, দাম কমাতে দ্রুত আমদানির সুপারিশ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ০০: ৩২
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বাজারে দাম কমাতে স্বল্প পরিসরে পেঁয়াজ আমদানির সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি)। ট্যারিফ কমিশন বলেছে, পেঁয়াজের বাড়তি দামের সুবিধা কৃষক পাচ্ছে না। মধ্যস্বত্বভোগীরা দাম বাড়ার সুযোগ নিচ্ছে। তাই পেঁয়াজ আমদানির সুযোগ দিলে বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব কমে যাবে। ভোক্তারা যৌক্তিক মূল্যে পেঁয়াজ কিনতে পারবে।

গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও কৃষি মন্ত্রণালয়কে দেওয়া এক চিঠিতে এই সুপারিশ করেছে ট্যারিফ কমিশন।

ওই চিঠিতে বলা হয়, গত এক সপ্তাহে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১২০ টাকা ওঠায় দ্রুত আমদানির অনুমতি দেওয়া যেতে পারে।

প্রতিবছর অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসে পেঁয়াজের দাম বাড়ে বলে জানায় ট্যারিফ কমিশন। ট্যারিফ কমিশন স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধিতে সরবরাহ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এই চিঠি দেয়।

গত ৪ সেপ্টেম্বর ডিমের দাম ১৫০ টাকা ডজন আর পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৯০ টাকা পেরোলে আমদানির অনুমতিসহ শুল্কছাড় দেওয়ার সুপারিশ করেছিল ট্যারিফ কমিশন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দেওয়া এক চিঠিতে এই সুপারিশ করা হয়েছিল।

টিসিবির তথ্য বলছে, গত শুক্রবার রাজধানীর বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১১০-১২০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৭০-৮০ টাকা। টিসিবির হিসাবে এক সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৪০ টাকা।

চিঠিতে ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মইনুল খান বলেন, কিছু মধ‍্যস্বত্বভোগী কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। প্রতি কেজি পেঁয়াজ এই সময়ে ৯০ টাকার মধ্যে থাকার কথা থাকলেও তা বেড়ে এখন ১১৫ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ পার্শ্ববর্তী দেশে এই পেঁয়াজের দাম এখন প্রায় ৩০ টাকার মধ্যে রয়েছে। তাই সীমিত পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানির জন‍্য দ্রুত অনুমতি দিতে কমিশনের পক্ষ থেকে সুপারিশ করা হয়েছে।

ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পেঁয়াজ আমদানির প্রধান উৎস দেশ ভারত। পেঁয়াজের মোট আমদানির ৯৯ শতাংশই করা হয় ভারত থেকে। এ ছাড়া তুরস্ক, পাকিস্তান, মিয়ানমার, চীন ও মিসর থেকেও পেঁয়াজ আমদানি করা হয়।

গত অর্থবছরে মোট ৪ লাখ ৮৩ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। বর্তমানে পেঁয়াজের ওপর মোট ১০ শতাংশ শুল্ক-কর প্রযোজ্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এত শক্তি প্রদর্শন আপনাদের মানায় না—অন্তর্বর্তী সরকারকে কড়া হুঁশিয়ারি সালাহউদ্দিনের

মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে ডাকাতির চেষ্টা ব্যর্থ, দোকানদার থেকে ২৫ সেকেন্ডে খেলেন ২০টি চড়

ফরিদপুরে বিএনপির সংঘর্ষের সময় আগ্নেয়াস্ত্র হাতে যুবক, ভিডিও ভাইরাল

মাথায় হেলমেট নেই চালকের, এক লাখের স্কুটারে জরিমানা ২১ লাখ

জাকসু আর জকসু হলে বাকসু কেন দুই প্রতিষ্ঠানের?

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আমন ও আমদানিতে চালের বাজারে স্বস্তির আভাস

  • এক সপ্তাহে কমেছে কেজিপ্রতি ২ টাকা।
  • বিভিন্ন জেলায় নতুন আমন ধান উঠছে।
  • আমদানি হয়েছে সোয়া ৪ লাখ টন।
  • আরও ১ লাখ টন আমদানির অনুমতি।
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৮: ১৯
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আমনের ভরা মৌসুম শুরু হতে আর বাকি মাত্র ১০-১৫ দিন। ইতিমধ্যে কোনো কোনো অঞ্চলে রোপা আমন ধান মাঠ থেকে উঠতে শুরু করেছে। কিছু চাল আমদানিও করা হচ্ছে। এই দুইয়ে মিলে চালের বাজারে স্বস্তির আভাস মিলছে। নতুন চাল বাজারে না এলেও পুরোনো কোনো কোনো ধরনের চালের দাম কমেছে। জিরা, পাইজাম, গুটি স্বর্ণাসহ কয়েক ধরনের চালের দাম কেজিপ্রতি ১ থেকে ২ টাকা কমেছে। দাম এর আগের সপ্তাহেও ১-২ টাকা করে কমেছিল। সে হিসাবে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দাম কেজিপ্রতি ৪ টাকা পর্যন্ত কমেছে। তবে মোটের ওপর এখনো দাম তুলনামূলকভাবে বেশি।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মালিবাগ, সেগুনবাগিচা, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট মানিকনগরসহ কয়েকটি পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে এবং খোঁজ নিয়ে চালের দরের এমন তথ্য পাওয়া যায়।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আগের আমদানি করা চালের মজুত এখনো রয়েছে। এ ছাড়া আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে নতুন চাল বাজারে আসা শুরু হবে। এমন অবস্থায় মজুত চাল দ্রুত বাজারে ছাড়ার চেষ্টা করছেন মিলমালিক ও আমদানিকারকেরা। এতে দাম কমতে শুরু করেছে।

রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে গতকাল শম্পা কাটারিও নাজিরশাইলসহ বিভিন্ন সরু চাল বিক্রি হয়েছে ৭৮-৮০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহ পর্যন্ত ৮০-৮২ টাকা ছিল। এ ছাড়া জিরাশাইল, জিরা নাজির, মিনিকেটসহ বিভিন্ন জাতের সরু চাল বিক্রি হয়েছে ৭০-৭৬ টাকায়। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, এই চালগুলোর দামও গত এক সপ্তাহে কেজিপ্রতি ১ থেকে ২ টাকা কমেছে। তবে মোটা ধরনের ব্রি২৮ চালের দাম স্থির রয়েছে আগের মতোই কেজিপ্রতি ৫৮-৬০ টাকায়।

পাইজাম, গুটি স্বর্ণা ও কিছু মোটা জাতের চালের দামও কমেছে কিছুটা। এসব চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৬ টাকা কেজি। গত সপ্তাহ পর্যন্ত তা ছিল ৫২-৫৮ টাকা কেজি।

সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত এক সপ্তাহে মাঝারি ও মোটা চালের দাম ১-২ টাকা কমেছে। মাঝারি মানের চাল গতকাল বিভিন্ন খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছে ৫৮-৭০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০-৭০ টাকা কেজি। টিসিবির তথ্য বলছে, মোটা চাল বিক্রি হয়েছে ৫৪-৬০ টাকা কেজি, যা কয়েক দিন আগে ছিল ৫৫-৬০ টাকা।

মানিকনগর বাজারের চাল ব্যবসায়ী মরিয়ম স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. ইউসুফ বলেন, বাজারে এখনো নতুন চাল না উঠলেও দাম কমতে শুরু করেছে। অনেক ধরনের চালের দামই কেজিপ্রতি ২-১ টাকা কমেছে।

আমন মৌসুমে সাধারণত পাইজাম, জিরা, স্বর্ণা, গুটি চাল বেশি উৎপাদন হয়। ফলে এসব চালের দামই বেশি কমবে বলে জানান ব্যবসায়ী ইউসুফ।

বাজারের তথ্য বলছে, চলতি বছর দেশে বোরো ধানের ফলন ভালো হলেও গত জুন থেকে বাড়তে শুরু করে দাম। জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত মোটা, মাঝারি ও সরু সব ধরনের চালের দাম কেজিতে প্রায় ৮-১০ টাকা বেড়েছিল। অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত দাম সেটা থাকলেও দুই সপ্তাহ ধরে কমছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানির চেয়ে আমন মৌসুমের ধান উঠতেই দামের ওপর বেশি প্রভাব ফেলছে।

বাংলাদেশ রাইস মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি কাউসার আলম বাবু বলেন, খুলনাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে এক সপ্তাহ ধরে রোপা আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। আগামী দু-এক সপ্তাহের মধ্যে হয়তো আরও অনেক জেলায় ধান কাটা শুরু হবে। এর মধ্যে আবার গত বুধবার নতুন করে বেসরকারি পর্যায়ে আরও ১ লাখ টন চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এর আগে বেসরকারি পর্যায়ে ৫ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। সেই চালও বাজারে রয়েছে। সব মিলিয়ে চালের দাম কমছে।

এদিকে পাইকারি বাজারে গত ১০-১৫ দিনে প্রতি কেজি চালের দাম ৪-৫ টাকা কমেছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। পাইকারি বাজারে গতকাল গুটি স্বর্ণাসহ তুলনামূলক মোটা চাল বিক্রি হয়েছে ৪৫-৫২ টাকা কেজি করে। জিরাশাইল, নাজিরশাইল, শম্পা কাটারি ও মিনিকেটসহ কিছুটা সরু চাল বিক্রি হয়েছে ৬২-৮০ টাকা কেজিতে। ব্রি২৮ ও ২৯সহ মাঝারি মানের চাল বিক্রি হয়েছে ৫৪-৫৮ টাকা কেজি।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত জুলাই থেকে সর্বশেষ ৫ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে মোট ৪ লাখ ২৫ হাজার ৬৮০ টন চাল আমদানি করা হয়েছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে চালের চাহিদা ৩ কোটি ৭ লাখ থেকে ৩ কোটি ৯ লাখ টন। স্থানীয়ভাবে বোরো ও আমন মৌসুম মিলিয়ে উৎপাদন হয় ৪ কোটি ৪৩ লাখ টন। এর মধ্যে আমন মৌসুমে উৎপাদন হয় ১ কোটি ৬৫ লাখের কিছু বেশি। তারপরও বিভিন্ন সময়ে চালের দাম বাড়ে। দাম বাড়াসহ নানা কারণে চাল আমদানি করা হয়।

ট্যারিফ কমিশনের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূলত স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন ব্যয় বাড়ায় দেশে চালের দাম বেড়েছিল। দীর্ঘ মেয়াদে শুল্কছাড়ে চাল আমদানি হতে থাকলে স্থানীয় কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়বেন। তাই স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন ব্যয় কমাতে কাঁচামাল সহজলভ্য করা ও নীতি-সহায়তা দেওয়ার সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এত শক্তি প্রদর্শন আপনাদের মানায় না—অন্তর্বর্তী সরকারকে কড়া হুঁশিয়ারি সালাহউদ্দিনের

মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে ডাকাতির চেষ্টা ব্যর্থ, দোকানদার থেকে ২৫ সেকেন্ডে খেলেন ২০টি চড়

ফরিদপুরে বিএনপির সংঘর্ষের সময় আগ্নেয়াস্ত্র হাতে যুবক, ভিডিও ভাইরাল

মাথায় হেলমেট নেই চালকের, এক লাখের স্কুটারে জরিমানা ২১ লাখ

জাকসু আর জকসু হলে বাকসু কেন দুই প্রতিষ্ঠানের?

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বড়দের লুটে ছোটরা নিঃস্ব

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ১১: ০৪
পাঁচ ব্যাংক একীভূত করার ঘটনায় পুঁজিবাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ সংবাদ সম্মেলন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের পদত্যাগ দাবি করেছে। গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পুরোনো ভবনের সামনে। ছবি: আজকের পত্রিকা
পাঁচ ব্যাংক একীভূত করার ঘটনায় পুঁজিবাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ সংবাদ সম্মেলন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের পদত্যাগ দাবি করেছে। গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পুরোনো ভবনের সামনে। ছবি: আজকের পত্রিকা

লুটপাটে বিপর্যস্ত শরিয়াহভিত্তিক ৫ ব্যাংক একীভূত করে গঠিত হচ্ছে নতুন একটি ইসলামী ব্যাংক। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ব্যাংকগুলোর শেয়ারের মূল্য শূন্য ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে একেবারে শূন্য হাতে ফিরতে হবে এই পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারের পেছনে অর্থলগ্নি করা বিনিয়োগকারীদের। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন পুজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তাঁরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের চোখের সামনে লুটেরা গোষ্ঠী ব্যাংক লুটপাট করেছে। এখন তাদের লুটপাটের দায় চাপানো হচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ঘাড়ে।

ব্যাংক পাঁচটির শেয়ারের মূল্য শূন্য ঘোষণার প্রতিবাদে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মতিঝিলে বিক্ষোভ, সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন ক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা। ব্যাংক লুটেরাদের কোন স্বার্থে গভর্নর অব্যাহতি দিলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিনিয়োগকারী ও আমানতকারীরা। তাঁরা বলছেন, গভর্নরকে তার জবাব দিতে হবে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পুরোনো ভবনের সামনে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে আয়োজিত কর্মসূচি থেকে অর্থ উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের পদত্যাগ দাবি করেছেন তাঁরা। সেই সঙ্গে খেয়ালখুশিমতো ব্যাংক একীভূতকরণ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। দাবি পূরণ না হলে আগামী মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক ঘেরাও কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

একীভূত করার লক্ষ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী, ইউনিয়ন, এক্সিম ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত করে এরই মধ্যে সেখানে প্রশাসক বসিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর ব্যাংকগুলোর পর্ষদ বিলুপ্তির ঘোষণা দেন। সেই সঙ্গে শেয়ারহোল্ডারদেরও কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না বলে জানান তিনি। গভর্নর বলেন, ‘পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের ইকুইটির মূল্য নেতিবাচক হয়েছে ৩০০-৪০০ শতাংশ। এখন তা আদায় করা উচিত। কিন্তু তা না করে শূন্যের নিচের শেয়ারগুলোর ভ্যালু জিরো হিসেবে বিবেচিত হবে। কাউকে (শেয়ারহোল্ডারদের) কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না।’

গভর্নরের এমন ঘোষণার পরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন একীভূত হতে যাওয়া ব্যাংকগুলোর শেয়ারহোল্ডাররা। বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রশিদ চৌধুরী বলেন, ‘মার্জারের সার্কুলার হওয়ার পরে তা প্রত্যাহারের দাবি করেছিলাম। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর সেই দাবি আমলে নেননি। আজকে পাঁচটি ব্যাংকের বিনিয়োগকারীরা যে অবস্থান করছেন, তাঁরা কোথায় যাবেন? কাদের স্বার্থে আপনি (গভর্নর) কাজ করছেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। কেন লুটেরা গোষ্ঠী জনসমক্ষে আসছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের চোখের সামনে সব লুটপাট হয়েছে, এটি সবার জানা। বাংলাদেশ ব্যাংক ও গভর্নর তার দায় এড়াতে পারেন না।’

এই বিনিয়োগকারী আরও বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের উদাহরণ বাংলাদেশে চলে না। এই ব্যাংকগুলোকে ‘ভালো’ তকমা দিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে আকৃষ্ট করা হয়েছে। গত ৫ আগস্টের পরই ব্যাংকগুলোর দুর্বলতা সামনে এসেছে। তত দিনে উদ্যোক্তা-পরিচালকরা তাঁদের শেয়ার বিক্রি করে বেরিয়ে গেছেন। যাঁদের হাতে শেয়ার ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাঁদের বেশির ভাগই সাধারণ ও স্বল্প মূলধনি বিনিয়োগকারী। তাঁরা যদি তাঁদের বিনিয়োগের কোনো অংশ ফেরত না পান, তাহলে সারা জীবনের জন্য পুঁজিবাজার ত্যাগ করবে। এসবের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে পদত্যাগ করতে হবে।

বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের আরেক নেতা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের অন্ধকারে রেখে ব্যাংক মার্জার বন্ধ করা হোক। এই সরকার আসার পরে ৩০ হাজারের বেশি গার্মেন্টস কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেছে। এখন ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আগামীতে লিজিং কোম্পানি বন্ধ হয়ে যাবে। এরপরে আমাদের হাউস বন্ধ হয়ে যাবে। এই সেক্টরে ৩০ লাখ বিনিয়োগকারী, হাউসের মেম্বার, মালিকসহ পরিবারের ১ কোটি সদস্য আছে, তাঁদের কী অবস্থা হবে?’

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গতকাল বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিবৃতিতে বলা হয়, পাঁচটি ব্যাংক একীভূতকরণের ক্ষেত্রে সাধারণ বিনিয়োগকারী বা শেয়ারধারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয় বিবেচনার কোনো সুযোগ আপাতত নেই। তবে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী বা শেয়ারধারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে তাঁদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়টি সরকার বিবেচনা করতে পারে।

পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য বলছে, উদ্যোক্তা ও পরিচালক বাদে ওই পাঁচ ব্যাংকের অন্য শেয়ারহোল্ডারদের হাতে থাকা শেয়ারের পরিমাণের গড় ৭৬ দশমিক ০২ শতাংশ। অভিহিত মূল্যে এসব শেয়ারের বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা। পাঁচটি ব্যাংকের মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাংকের মোট শেয়ারের সংখ্যা ১০৩ কোটি ৬২ লাখ ৮০ হাজার ৪৪৮টি, যার ৪৫ দশমিক ৫১ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে। এসব শেয়ারের অভিহিত মূল্যে তাঁদের বিনিয়োগের পরিমাণ ৪৭১ কোটি ৬১ লাখ টাকা।

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের মোট শেয়ারের সংখ্যা ৯৮ কোটি ৭৪ লাখ ৩৯ হাজার ৬৮৮টি। যার ৮৪ দশমিক ৫৭ শতাংশই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে। অভিহিত মূল্যে এসব শেয়ারে বিনিয়োগের পরিমাণ ৮৩৫ কোটি ৭ লাখ টাকা। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের মোট শেয়ারের সংখ্যা ১১৪ কোটি ১ লাখ ৫৫ হাজার ১০০টি, যার ৮৮ দশমিক ৩৮ শতাংশই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে। অভিহিত মূল্যে এসব শেয়ারে বিনিয়োগের পরিমাণ ১ হাজার ৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এক্সিম ব্যাংকের মোট শেয়ারের সংখ্যা ১৪৪ কোটি ৭৫ লাখ ৫৭ হাজার ৩৪৪টি, যার মধ্যে ৬৭ দশমিক ৫৬ শতাংশই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে। অভিহিত মূল্যে এই বিনিয়োগের পরিমাণ ৯৭৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের মোট শেয়ারের সংখ্যা ১২০ কোটি ৮১ লাখ ৩৯ হাজার ৩৭৯টি। এসব শেয়ারের ৯৪ দশমিক ১০ শতাংশই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে, যার অভিহিত মূল্য ১ হাজার ১৩৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।

এসব বিনিয়োগকারীর পক্ষে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের মুখপাত্র মো. মহসিন গতকাল কয়েকটি দাবি তুলে ধরেছেন। দাবিগুলো হলো, একীভূত হওয়া ব্যাংকে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার দিতে হবে। বেনামে থাকা সম্পত্তির মালিক বিনিয়োগকারীদের করতে হবে। এস আলমের সম্পত্তি ব্যাংকের শেয়ারের সম্পদমূল্যে (এনএভি) যোগ করতে হবে। ব্যাংক লুটে জড়িত কর্মকর্তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেট (বিএএসএম) এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ব্যাংক একীভূত চিন্তা করে করা উচিত ছিল। শেয়ারহোল্ডারদের অবস্থা কী হবে, ডিপোজিটরদের অবস্থা কী হবে? এই যে প্রতিটা জায়গায় এখন ব্যাংকগুলোর যে শাখা আছে, এগুলো কীভাবে অ্যাকোমোডেট করবেন, এগুলো চিন্তাভাবনা না করে বলে দেওয়া হলো শেয়ারহোল্ডাররা কিছু পাবেন না। এটা হতে পারে নাকি?

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, একীভূত প্রক্রিয়ায় থাকা পাঁচটি ব্যাংকের সম্মিলিত মূলধন ঘাটতি ও খেলাপি ঋণের মোট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা। এসব ব্যাংক থেকে বড় বড় শিল্পগোষ্ঠী লুটপাট করেছে প্রায় ১ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা। একিউআর (অ্যাসেট কোয়ালিটি রিভিউ) প্রতিবেদন অনুযায়ী পাঁচ ব্যাংকের মোট আমানত ১ লাখ ৪৭ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা। এর বিপরীতে মোট ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৯০ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা। খেলাপির পরিমাণ ১ লাখ ৪৬ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা। গড় খেলাপি ৭৭ শতাংশ। তার মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার সর্বোচ্চ, ৯৮ শতাংশ। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৯৬ শতাংশ এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৯৫ শতাংশ। অন্যদিকে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৬২ শতাংশ এবং এক্সিম ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৪৮ শতাংশ রয়েছে।

পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, আন্তর্জাতিক আইন বা যেকোনো আইনে, বিনিয়োগকারী বা শেয়ারহোল্ডাররা সবার দায়দেনা শোধ করার পরে কিছু থাকলে সেটা পায়। ওইসব ব্যাংকের কোনো কোনোটার ক্ষেত্রে শেয়ারপ্রতি সম্পদ (এনএভিপিএস) ৪৫০ টাকা ঋণাত্মক আছে। অর্থাৎ একটা শেয়ার কেনার মানে ৪৫০ টাকা দায় দিতে হবে। যেহেতু কোম্পানিতে বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগের অ্যামাউন্ট দ্বারা সীমাবদ্ধ, সেই কারণে শেয়ারহোল্ডারদের দায়টা দিতে হচ্ছে না। কিন্তু নতুন করে সে কিছু পাচ্ছে না। এটা হচ্ছে বাস্তবতা।

ওই সহযোগী অধ্যাপক আরও বলেন, বিনিয়োগকারীদের আসলে ক্ষতিটাকে মেনে নিতে হবে। আর সমাধান হিসেবে যারা টাকা পাচার করছে, তাদের রিলেটেড পার্টির সব সম্পদ জব্দ করে, যারা দেশের বাইরে চলে গেছে, তাদের টাকা যদি ফেরত আনা যায়, তাহলে হয়তো যারা আর্থিকভাবে ক্ষতি হয়েছে, তারা সান্ত্বনা পেতে পারে। কিন্তু ক্ষতিপূরণ দেওয়ার অপশন আর থাকছে না।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, লিকুইডেশনে গেলে সম্পদ বিক্রি করে দায়দেনা শোধ করার পর এবং আমানতকারীদের টাকা দেওয়ার পরে যদি কিছু থেকে থাকে, তাহলে শেয়ারহোল্ডাররা পাবে। আর যদি কিছু না থাকে, তাহলে তো শেয়ারহোল্ডার দাবি করতে পারে না। এটা হলো আইনের ভাষা।

চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ব্যক্তির ক্ষেত্রে লস হয়ে গেলে তার অন্য সম্পদ থেকে সেগুলো দাবি করতে পারবে। কিন্তু লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে শেয়ারের যে ফেস ভ্যালু, এর বাইরে কোনো কিছু মালিকদের কাছ থেকে দাবি করা যাবে না। না হলে শেয়ারহোল্ডারদের ওই লোকসানের ভাগটা নিতে হতো। বেঁচে গেছে।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কমিশনার মু. মোহসিন চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, শেয়ারহোল্ডাররা যেহেতু মালিক, আর মালিকের ঘরে তো টাকা নেই, বরং ঋণাত্মক, তো এখন মালিক হয়ে টাকা পাবে কোথায়? মালিকের ঘরে যারা টাকা জমা রেখেছে, তাদের জন্য একটা প্ল্যান দেখলাম। আর শেয়ারহোল্ডারদের বিষয়টা গভর্নর মহোদয় যে কথা বলছেন, এর বাইরে তো আসলে কিছু দেখছি না। আমরা তো আইন-কানুনের বাইরে গিয়ে কিছু করতে পারব না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এত শক্তি প্রদর্শন আপনাদের মানায় না—অন্তর্বর্তী সরকারকে কড়া হুঁশিয়ারি সালাহউদ্দিনের

মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে ডাকাতির চেষ্টা ব্যর্থ, দোকানদার থেকে ২৫ সেকেন্ডে খেলেন ২০টি চড়

ফরিদপুরে বিএনপির সংঘর্ষের সময় আগ্নেয়াস্ত্র হাতে যুবক, ভিডিও ভাইরাল

মাথায় হেলমেট নেই চালকের, এক লাখের স্কুটারে জরিমানা ২১ লাখ

জাকসু আর জকসু হলে বাকসু কেন দুই প্রতিষ্ঠানের?

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত