Ajker Patrika

সাইবার হামলার নতুন টার্গেট পণ্যবাহী জাহাজ: কেবল নাইজেরিয়ান গ্যাং নয়, জড়িত চীন-রাশিয়াও

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: এআই
ছবি: এআই

লন্ডনভিত্তিক বাণিজ্যিক আইন পরামর্শক সংস্থা এইচএফডব্লিউতে যুক্ত রয়েছেন আইনজীবী হেনরি ক্ল্যাক। সাগরপথে বিশ্বজুড়ে সাইবার হামলার শিকার শিপিং কোম্পানিগুলোর পক্ষে কাজ করেন তিনি। ক্লায়েন্টদের হয়ে কীভাবে তিনি অপরাধী চক্রকে মোকাবিলা করেন, তা নিয়ে বিবিসির সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।

ক্ল্যাক জানান, এইচএফডব্লিউকে এখন পর্যন্ত যেসব মামলা লড়তে হয়েছে, তার বেশির ভাগই নাইজেরিয়ার গ্যাং বা সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে। গত কয়েক বছরের বেশ কয়েকটি বড় অঙ্কের প্রতারণার পেছনে তারাই দায়ী।

বিবিসির প্রতিবেদনে জানা যায়, ই-মেইল থেকে বা আড়ি পেতে জাহাজপথ ব্যবহারের জন্য দুই পক্ষের যোগাযোগের তথ্য সংগ্রহ করে হ্যাকাররা। এমনকি কোনো কোম্পানির কম্পিউটার সিস্টেমের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে লগইন ডেটা বা আর্থিক লেনদেনের তথ্য চুরি করে সেই কোম্পানির ছদ্মবেশে প্রতারণা করে তারা। আবার চুরি করা তথ্য বা কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে মোটা অঙ্কের অর্থ দাবি করে এই চক্র।

আইন সংস্থা এইচএফডব্লিউ জানায়, সাইবার হামলা জাহাজ, সমুদ্রপথ ও বন্দর সবক্ষেত্রেই ক্রমবর্ধমান একটি সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এ হামলা বাড়তে থাকায় ২০২২ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে এসব মোকাবিলায় খরচ দ্বিগুণ হয়ে ৫ লাখ ৫০ হাজার ডলারে দাঁড়িয়েছে। আর যেসব ক্ষেত্রে সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞরা হ্যাকারদের হাত থেকে সিস্টেম ফিরিয়ে নিতে পারেন না, সেখানে মুক্তিপণে গড় খরচ করতে হয় ৩ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার।

বিশ্বের প্রায় ৮০ শতাংশ বাণিজ্য সমুদ্রপথে বহন করা হয়। এই অবস্থায় এ ধরনের ব্যাঘাত শিপিং কোম্পানিগুলোর খরচ অনেক বাড়িয়ে দিচ্ছে আর সক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব শিপিংয়ের (আইসিএস) মেরিন বিভাগের পরিবেশ ও বাণিজ্য ব্যবস্থাপক জন স্টাপার্ট বলেন, সমুদ্রপথের এই পরিস্থিতির কারণে সমুদ্র-বাণিজ্য এখন অপরাধী চক্রের প্রধান লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে। এমনকি যেসব দেশের মধ্যে বৈরী সম্পর্ক রয়েছে, তারাও এ পন্থা অবলম্বনে আগ্রহী হয়ে উঠছে।

স্টাপার্ট আরও বলেন, সমুদ্র-বাণিজ্যের জন্য সাইবার সিকিউরিটি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং উদ্বেগের বিষয়। কারণ, এই মাধ্যমে বিশ্ব অনেক বেশি আন্তসংযুক্ত।

আইসিএসের এ কর্মকর্তা জানান, বিশ্বব্যাপী সাইবার অপরাধীরা শিপিং খাতকে শীর্ষ ১০টি লক্ষ্যের মধ্যে অন্যতম হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। যদি সাইবার অপরাধীরা আপনার কার্যক্রম ব্যাহত করতে সক্ষম হয় বা ধরুন কোনো র‍্যানসমওয়্যার হামলা চালায়, এর প্রভাব যথেষ্ট ক্ষতিকর হতে পারে।

সমুদ্রপথে হামলার হার দ্রুতগতিতে বাড়ছে। নেদারল্যান্ডসের এনএইচএল স্টেনডেন ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লায়েড সায়েন্সেসের একটি গবেষণা দল গত কয়েক বছরে জাহাজ চলাচল-সংক্রান্ত সাইবার হামলাগুলোর তথ্য যাচাই করে দেখেছে, ২০২১ সালে ১০টি হামলা হয়েছিল আর তা বেড়ে গত বছর ৬৪টিতে দাঁড়িয়েছে।

নেদারল্যান্ডসের বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিটাইম আইটি সিকিউরিটি গবেষণা দলের জেরোন পিপকার জানান, এসব সাইবার হামলার ঘটনার মধ্যে অনেকগুলোর সঙ্গে চারটি দেশের সরকার—রাশিয়া, চীন, উত্তর কোরিয়া ও ইরান জড়িত।

পিপকার বলেন, ‘আমরা একবার দেখলাম, ইউক্রেনে কিছু সরঞ্জাম পাঠানো হচ্ছিল, তখন একটি টেলিগ্রাম চ্যানেলে এ নিয়ে তথ্য দেওয়া হচ্ছিল, যাতে ডেলিভারির লজিস্টিক চেইনে কিছু ব্যাঘাত সৃষ্টি করা যায়।

‘আর অন্য হামলাগুলো আর্থিক চাপ বা মুক্তিপণ আদায়ের জন্য হয়। সাম্প্রতিক সাইবার হামলা দ্রুত বাড়ার একটি কারণ হলো, হ্যাকারদের কাজের সুযোগ দিনকে দিন আরও সহজ হয়ে যাচ্ছে। কারণ, গত কয়েক বছরে জাহাজশিল্প আরও বেশি ডিজিটাল হয়েছে, আবার নতুন যোগাযোগ প্রযুক্তি, যেমন ইলন মাস্কের স্টারলিংক স্যাটেলাইট পরিষেবা, জাহাজগুলোকে বাইরের বিশ্বের সঙ্গে আরও সংযুক্ত করেছে। আর তাই এগুলো আরও বেশি হ্যাকিংয়ের শিকার হচ্ছে।

গত বছরের একটি ঘটনায় মার্কিন নৌবাহিনীর এক প্রধানকে তাঁর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। কারণ, তিনি তাঁর যুদ্ধজাহাজে একটি অননুমোদিত স্যাটেলাইট ডিশ স্থাপন করেছিলেন, যাতে তিনি ও অন্য কর্মকর্তারা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন।

জাহাজ চলাচল শিল্পে বেশির ভাগ দাপ্তরিক অংশ ভাগে ভাগে ডিজিটালাইজেশন হয়েছে এবং এর সঙ্গে জড়িত প্রযুক্তিও দ্রুত পুরোনো হয়ে যেতে পারে। পিপকার বলেন, একটি কার্গো জাহাজের গড় বয়স প্রায় ২২ বছর। জাহাজ কোম্পানিগুলোর পক্ষে প্রায়শই সেগুলোকে হালনাগাদ করার জন্য ডাঙ্গায় তুলে রাখা সম্ভব হয় না।

ডিজিটালাইজেশনের আরও কিছু ঝুঁকি রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে জিপিএস জ্যামিং ও ‘স্পুফিং’।

সিকিউরিটি ফার্ম ক্লারোটির আরিক ডায়ামান্ট বলেন, জিপিএস স্পুফিং মানে হলো—নেভিগেশন সিস্টেমকে ভুয়া অবস্থান পাঠানো এবং এর ফলে জাহাজটি ভিন্ন পথে চলে যায়। এরপর অগভীর জলে গেলে জাহাজটির গায়ে আঘাত লেগে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

গত মে মাসে এমএসসি অ্যান্টোনিয়া নামের একটি কনটেইনার জাহাজ লোহিত সাগরে আটকে পড়ে। ধারণা করা হয়, জিপিএস স্পুফিংয়ের কারণে এ ঘটনা ঘটেছিল। এ ঘটনায় কোনো সন্দেহভাজনকে অভিযুক্ত করা না হলেও এই এলাকার অন্যান্য কার্গো জাহাজে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা হামলা করায় তাদের দিকে সন্দেহের নজর গেছে। আর বাল্টিক সাগরে জিপিএস লক্ষ্য করে চালানো অন্যান্য হামলার জন্য রাশিয়াকে দায়ী করা হয়েছে।

জিপিএস জ্যামিং ও স্পুফিং থেকে রক্ষা পাওয়া কঠিন এবং ব্যয়বহুল, তবে ‘অ্যান্টি-জ্যাম’ প্রযুক্তি সহজলভ্য।

এদিকে কার্গো জাহাজগুলোর আরও একটি দুর্বলতা হলো—তাদের নির্গমন পর্যবেক্ষণের জন্য সেন্সরের ব্যবহার বাড়ানো। এসব সেন্সর প্রায়শই ডেটা পাঠায়, যা হ্যাকারদের অনুপ্রবেশ ও হামলার সুযোগ সৃষ্টি করে।

তবে এসবের মধ্যে ভালো খবর হলো, সমুদ্র-বাণিজ্যে নিরাপত্তা কড়াকড়ি বাড়ছে। ২০২১ সালে আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক সংস্থা (আইএমও) নিয়ন্ত্রক বাণিজ্যিক শিপিংয়ের জন্য এর গ্লোবাল সেফটি ম্যানেজমেন্ট কোডে নতুন সাইবার নিরাপত্তা বিধান যুক্ত করেছে।

এইচএফডব্লিউর শিপিং বিশেষজ্ঞ টম ওয়াল্টার্স বলেন, এই বিধানগুলো জাহাজের সেফটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যাতে আরও নির্দিষ্টভাবে সাইবার ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা অন্তর্ভুক্ত করা যায়। বিশেষ করে, যাতে ইচ্ছাকৃত সাইবার হামলা মোকাবিলা করা যায় এবং নিয়ম মেনে চলা বাণিজ্যিক জাহাজ পরিচালনার জন্য ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার অনুশীলনগুলো নির্দিষ্ট করে দেওয়া যায়।

জাহাজ ব্যবস্থাপনা সিস্টেমগুলোতে এখন ক্রমবর্ধমান কঠোর সাইবার নিরাপত্তাব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে—মৌলিক নিরাপত্তা পদ্ধতি থেকে শুরু করে আরও কারিগরি এবং প্রযুক্তিগত কর্মপদ্ধতি ও আইটি ব্যবস্থা।

আইসিএসের মেরিন বিভাগের পরিবেশ ও বাণিজ্য ব্যবস্থাপক জন স্টাপার্ট বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, শিল্পটি হুমকি মোকাবিলায় অন্তত গত ছয় বা সাত বছর আগের তুলনায় ভালো অবস্থানে রয়েছে।’

স্টাপার্ট আরও যোগ করেন, সাইবার হামলা ও সাইবার অপরাধ সম্পর্কে সমুদ্রশিল্পে সচেতনতা অনেক বেড়েছে এবং আগামী বছরগুলোতে তা আরও বাড়বে।

সাইবার হামলার পর অপরাধী গ্যাংগুলোর সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ করা হয়—জানতে চাইলে আইন সংস্থা এইচএফডব্লিউর আইনজীবী হেনরি ক্ল্যাক বলেন, খুদেবার্তার মাধ্যমে এটি করা হয় এবং যতটা সম্ভব সংক্ষিপ্ত রাখা হয়।

ক্ল্যাক আরও বলেন, যখন এমনটা হয়, বেশির ভাগ সময়ই র‍্যানসমওয়্যারের মুক্তিপণ আলোচনার প্রসঙ্গে হয়। যোগাযোগ হয় অনলাইন মেসেজিং সার্ভিসের মাধ্যমে, হয়তো দিনে একটি বার্তা পাঠানো হয় বা দু-একটি বাক্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

টিকায় বদলাবে মাছ চাষের হিসাব

মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা

ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসজনিত রোগে প্রতিবছর মাছ চাষ খাত হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এবার সেই ক্ষতি ঠেকাতে সরকার নিচ্ছে ৪৩ কোটি টাকার টিকা প্রকল্প। দেশীয় প্রজাতির মাছকে রোগমুক্ত রাখতে প্রথমবারের মতো তৈরি হবে মিঠাপানির মাছের টিকা, যা মৃত্যুহার কমাবে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকল্পের সফল প্রয়োগ হলে মাছ চাষ খাত নতুনভাবে ঘুরে দাঁড়াবে, বাড়বে উৎপাদন, বিনিয়োগ আর রপ্তানির সুযোগ।

দেশের মিঠাপানির খামারগুলোয় প্রতিবছর অজানা ও ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগে বিপুল পরিমাণ মাছ মারা যায়। এই ক্ষতি থেকে চাষিদের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় শতকোটি টাকায়। এতে অনেক উদ্যোক্তা বাধ্য হয়ে খামার বন্ধ করে দিচ্ছেন। সেই হতাশার পরিপ্রেক্ষিতেই শুরু হচ্ছে ‘মিঠাপানির মাছের মড়ক প্রতিরোধে ভ্যাকসিন উদ্ভাবন’ প্রকল্প; যা দেশের মাছ চাষে এক নতুন যুগের সূচনা করতে পারে।

সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে। পাঁচ বছর মেয়াদি এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১১ জেলার ৩৩ উপজেলায়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের আজকের পত্রিকাকে বলেন, দেশীয় প্রজাতির টেকসই উৎপাদন ধরে রাখতে এই প্রকল্প অপরিহার্য। এটি সফল হলে শুধু উৎপাদন বাড়বে না, বরং মাছ চাষে আত্মনির্ভরতা আরও সুদৃঢ় হবে।

সরকারি তথ্যমতে, বর্তমানে দেশের মোট মাছ উৎপাদনের ৫৭ শতাংশ আসে মিঠাপানির খামার থেকে। চার লাখ হেক্টরের বেশি পুকুরে এই চাষ পরিচালিত হলেও সঠিক পানি ব্যবস্থাপনা ও রোগনিয়ন্ত্রণের ঘাটতিতে খামারগুলো ক্রমেই ঝুঁকিতে পড়ছে। বিশেষ করে ময়মনসিংহ, বগুড়া, যশোর ও রাজশাহীর মতো মাছ চাষের প্রধান এলাকাগুলোয় ভাইরাস সংক্রমণে কয়েক দিনের মধ্যেই ৮০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত মাছ মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটছে নিয়মিতভাবেই।

এই বাস্তবতা থেকে বেরিয়ে আসার লক্ষ্যেই সরকারের এই টিকা উদ্ভাবনের উদ্যোগ। প্রথম ধাপে ৯টি বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতি—কই, পাঙাশ, তেলাপিয়া, কার্প, শিং, মাগুর, পাবদা, ট্যাংরা ও গুলশায় এই টিকা প্রয়োগ করা হবে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ প্রকল্পে সহযোগিতা দেবে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ার গবেষণা প্রতিষ্ঠান, যারা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মাছের রোগ নিয়ন্ত্রণে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মুখে খাওয়ার এই টিকা সফলভাবে প্রয়োগ করা গেলে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় টেকসই মাছ চাষে নেতৃত্ব নিতে পারে। এতে একদিকে খামারিদের আর্থিক ঝুঁকি কমবে, অন্যদিকে মাছ চাষ খাত পাবে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতি ও বিনিয়োগের নতুন গতি। মৎস্য বিশেষজ্ঞ ও জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. সিরাজুম মুনির বলেন, চাষিরা বিক্রির ঠিক আগমুহূর্তে অনেক সময় ৭০-৮০ শতাংশ মাছ হারান। কার্যকর টিকা প্রয়োগ করা গেলে এই মৃত্যুহার নাটকীয়ভাবে কমবে।

প্রকল্পের আওতায় আধুনিক বায়োমলিকুলার প্রযুক্তিতে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস শনাক্ত করা, জীবাণুর বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ এবং তাদের বিরুদ্ধে লক্ষ্যভিত্তিক টিকা তৈরি করা হবে। মুখে খাওয়ার টিকা উদ্ভাবনকে দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার; কারণ, এটি প্রয়োগে সহজ, খরচে সাশ্রয়ী এবং মাছের ওপর কোনো শারীরিক চাপ ফেলে না।

সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি ও একাডেমিক খাতেও চলছে গবেষণা। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ ইতিমধ্যে উদ্ভাবন করেছে ‘বায়োফ্লিম’ নামে একটি টিকা, যা এরোমোনাস হাইড্রোফিলা ব্যাকটেরিয়াজনিত ক্ষত, আলসার ও পাখনা পচা রোগ প্রতিরোধে ৮৪ শতাংশ কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। ওই গবেষণার নেতৃত্বে থাকা সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, বায়োফ্লিম শুধু পাঙাশ নয়; রুই, কাতলা, কই, শিংসহ অন্যান্য প্রজাতিতেও কার্যকর। এটি বাণিজ্যিক পর্যায়ে গেলে দেশীয় ফিশ হেলথ ইন্ডাস্ট্রির নতুন বাজার তৈরি হবে।

পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি ও পানিসম্পদ বিভাগের সচিব ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, টিকা উদ্ভাবন সফল হলে এই খাত বিদেশি বিনিয়োগের নতুন দ্বার খুলে দেবে।

২০২৫ সালের জুলাই থেকে শুরু হয়ে ২০৩০ সালের জুন পর্যন্ত এই প্রকল্প ধাপে ধাপে বাস্তবায়িত হবে। বাজেট কাঠামো অনুসারে প্রতি অর্থবছরে ৭ থেকে ১৬ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। সরকারের প্রত্যাশা, এই প্রকল্প শুধু রোগ প্রতিরোধে নয়, বরং উৎপাদন বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের পুনরুজ্জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝিনাইদহের গান্না বাজার: মৌসুমে দিনে কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা

  • চাষাবাদ ২৯৪ হেক্টর জমি।
  • প্রথম দুই দিনে বিক্রি ৯ লাখ টাকার বেশি।
  • হলুদ ও কমলা গাঁদা ফুলের চাহিদা বেশি।
  • আরও রয়েছে গ্লাডিওলাস, জারবেরা, চায়না গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা।
আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, ঝিনাইদহ 
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না বাজারে জমে উঠেছে শীত মৌসুমের ফুলের বাণিজ্য। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না বাজারে জমে উঠেছে শীত মৌসুমের ফুলের বাণিজ্য। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফুল উৎপাদন কেন্দ্র ঝিনাইদহে শীত মৌসুমের ফুলের বাণিজ্য শুরু হয়েছে। গত শনিবার জেলার সদর উপজেলার গান্না বাজারে সকাল ৬টায় ফুলচাষিরা তাঁদের উৎপাদিত ফুল বাজারে আনেন। সকাল ১০টা পর্যন্ত বিক্রি চলে, এরপর পাইকারেরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তা পৌঁছে দেন।

বাজার সূত্রে জানা গেছে, শীতকালে ফুলের চাহিদা বেশি থাকায় দাম তুলনামূলক ভালো থাকে। বাজারের প্রথম দুই দিনে ৯ লাখ টাকার বেশি ফুল বিক্রি হয়েছে। ফুলচাষিরা আশা করছেন, ভরা মৌসুমে দিনে এই বিক্রি কোটি টাকায় পৌঁছাবে।

দেশের মোট ফুলের বড় একটি অংশ ঝিনাইদহের ফুলচাষিরা জোগান দিয়ে থাকেন। বিভিন্ন দিবস ও বিয়ে অনুষ্ঠান উপলক্ষে অতিরিক্ত চাহিদার কারণে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে ঝিনাইদহের এ বড় পাইকারি ফুল বাজারে। এ ছাড়া খুলনা বিভাগে সবচেয়ে বেশি গাঁদা ফুল উৎপাদিত হয় এ জেলাতেই। এখানকার হলুদ ও কমলা রঙের গাঁদা ফুলের মান, আকার ও রং উন্নত হওয়ায় দেশের বড় বড় পাইকারদের নজর এ জেলার ফুলের দিকে। জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি বছরে জেলায় ২৯৪ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ফুলের আবাদ হয়েছে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, হলুদ ও কমলা রঙের গাঁদা ফুলে বাজার ছেয়ে গেছে। চলছে ব্যবসায়ী ও ফুলচাষিদের দর-কষাকষি। ভ্যান, সাইকেল এমনকি মোটরসাইকেলে করে ফুল নিয়ে আসছেন কৃষকেরা। বাজারের প্রথম দিনে রকমভেদে একগুচ্ছ গাঁদা ফুল ৮০ থেকে ১২০ টাকা বিক্রি হলেও দ্বিতীয় দিন রোববারে বাজারে কমেছে ফুলের দাম। বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৮০ টাকা করে। এ ছাড়া খেতে রয়েছে গ্লাডিওলাস, জারবেরা, চায়না গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকাসহ নানা রঙের ফুল। এসব ফুলের চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে।

গান্না ফুল বাজারের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, সারা বছরই কমবেশি ফুল বিক্রি হয়ে থাকে এ বাজারে। তবে শীত মৌসুমে ফুলের চাহিদা বেশি। প্রথম দিনে একগুচ্ছ গাঁদা ফুলের ৮০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হলেও দ্বিতীয় দিনে দাম কমে ৫০ থেকে ৮০ টাকায় নেমেছে। চন্দ্রমল্লিকা বিক্রি হচ্ছে ১ টাকা ৫০ পয়সা, জারবেরা ৬-৮ টাকা, গোলাপ ৩-৫ টাকা করে।

ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, কৃষি বিভাগ ফুল চাষে প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করছে। তবে কোল্ডস্টোরেজের অভাবে কৃষক ফুল সংরক্ষণ করতে পারছেন না, যা মূল্য নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দেশে চীনের ব্যাংক চান ব্যবসায়ীরা

  • দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ১৭ বিলিয়ন ডলার।
  • অস্থির ডলারের বাজারে স্বস্তি দিতে পারে।
  • দেশে আছে ছয় দেশের ৯টি ব্যাংক।
  • চীনা দূতাবাসে প্রস্তাবও দিয়েছেন দেশের ব্যবসায়ী নেতারা।
রোকন উদ্দীন, ঢাকা
দেশে চীনের ব্যাংক চান ব্যবসায়ীরা

বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার চীন। দেশটির সঙ্গে এখন বাংলাদেশের বার্ষিক আমদানি-রপ্তানি ১৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি। তবে ভারত, পাকিস্তান, যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংক থাকলেও চীনের কোনো ব্যাংক নেই বাংলাদেশে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ব্যবসা-বাণিজ্যে সহায়তার জন্য একটি চীনা বাণিজ্যিক ব্যাংক হওয়া জরুরি। তাঁদের যুক্তি, এতে চীনা মুদ্রা ইউয়ানে লেনদেন করা গেলে ডলার সাশ্রয় হবে। তবে অর্থনীতিবিদের মতে, চীনা ব্যাংক যদি আসেও, তারা কী সেবা দেবে, তার ওপরই মূলত এর কার্যকারিতা নির্ভর করবে। ইউয়ানের স্বল্পতাও একটা সীমাবদ্ধতা।

বাংলাদেশে একটি পূর্ণাঙ্গ চীনা বাণিজ্যিক ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য ইতিমধ্যে চীনা দূতাবাসে প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক পরাশক্তি হয়ে ওঠা চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য দ্রুত বাড়ছে। গত ১০ বছরে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বেড়ে ৩ গুণ ছাড়িয়ে গেছে। দেশের মোট আমদানির ২৬ শতাংশের বেশি আসে চীন থেকে। তবে মোট রপ্তানির মাত্র ১ শতাংশের কিছু বেশি যায় চীনে। এ ছাড়া চীনের অনেক প্রকল্প চলছে বাংলাদেশে।

ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, গত অর্থবছরে চীন থেকে পণ্য আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ১৬ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার। বিপরীতে দেশটিতে রপ্তানি হয়েছে দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য। বাংলাদেশের কিছু বড় প্রকল্প বাস্তবায়নেও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ও লেনদেন রয়েছে। মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতু ও রেল সংযোগ প্রকল্পে চীন অর্থায়ন করেছে। কর্ণফুলী নদীর তলায় নির্মিত টানেল এবং পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পেও চীনের অংশগ্রহণ রয়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে চীনের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি কিংবা কোনো সেবার অর্থ পরিশোধ করতে তিনটি স্তরে লেনদেন করতে হয়। প্রথমে দেশের ব্যবসায়ীরা টাকায় স্থানীয় ব্যাংকগুলোকে আমদানি করা পণ্য বা সেবার মূল্য পরিশোধ করেন। স্থানীয় ব্যাংক সেই টাকাকে ডলারে রূপান্তর করে চীনের রপ্তানিকারকের ব্যাংককে পরিশোধ করে। সেই ব্যাংক আবার ডলারকে চীনা মুদ্রা ইউয়ানে রূপান্তরিত করে রপ্তানিকারককে পরিশোধ করে। এই তিন স্তরের লেনদেনে মোটা বিনিময় ফি গুনতে হয় ব্যবসায়ীদের।

ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, এখানে চীনের কোনো ব্যাংক থাকলে সরাসরি ইউয়ানে লেনদেন হতে পারে। এতে মোট লেনদেন খরচের ২-৩ শতাংশ কমে যাবে।

এ ছাড়া ডলারের সংকট ও ডলারের বাড়তি দামের কারণে ব্যবসায়িক যে ক্ষতি হয় তা-ও কমে আসবে। চীনে রপ্তানি থেকে আয় এবং বিভিন্ন প্রকল্প সহযোগিতার অর্থ মিলিয়ে ২-৩ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের ইউয়ান মজুত রাখা সম্ভব। এই ২ বিলিয়ন ডলারের লেনদেনও যদি ইউয়ানে করা যায়, তবে দেশে ডলারের ওপর চাপ অনেকটাই কমবে।

ইউয়ানের মূল্য অনেকটাই স্থিতিশীল হওয়ায় আমদানি খরচও হুটহাট তেমন বাড়বে না বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। প্রায়ই ডলারের বাড়তি দামের কারণে যা হয়ে থাকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত পাঁচ বছরে ডলারের দাম বেড়েছে ৪৫ শতাংশ। বিপরীতে চীনের মুদ্রা ইউয়ানের দাম বেড়েছে মাত্র ২৭ শতাংশ। ২০২০ সালে ডলারের বিনিময় মূল্য ছিল ৮৪-৮৫ টাকা। কিন্তু ২০২২ সালের মাঝামাঝি তা ১০৭ টাকায় ওঠে। বর্তমানে ডলারের দাম ১২২ টাকার বেশি। বিপরীতে ইউয়ানের মূল্য ২০২০ সালে ছিল ১৩.৪৮ টাকা, যা ২০২৩ সালে ২ টাকা বেড়ে ১৫.৪৮ টাকা হয়। বর্তমানে ১৭.২২ টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ৬টি দেশের মোট ৯টি বিদেশি ব্যাংক কার্যক্রম পরিচালনা করছে বাংলাদেশে। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যের ২টি ও পাকিস্তানের ৩টি। অন্যগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া ও শ্রীলঙ্কার ১টি করে ব্যাংক রয়েছে।

বাংলাদেশ-চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিসিসিসিআই) সভাপতি মো. খোরশেদ আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা দেশে চীনের একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। এতে নানা দিক থেকে সুবিধা পাওয়া যাবে। তাই আমরা চীনা দূতাবাসে বিভিন্ন প্রস্তাবের সঙ্গে একটি কমার্শিয়াল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবও দিয়েছি। তারা প্রস্তাবটি পেয়ে বেশ আগ্রহ দেখিয়েছে।’

জানা গেছে, সম্প্রতি ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে ৬টি প্রস্তাব দিয়েছে বিসিসিসিআই। এর মধ্যে চীনের সঙ্গে ব্যবসায়িক লেনদেন আরও সহজ করতে বাংলাদেশে একটি পূর্ণাঙ্গ চীনা বাণিজ্যিক ব্যাংক প্রতিষ্ঠার দাবি রয়েছে।

বাংলাদেশ-চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিসিসিআই) সাবেক সাধারণ সম্পাদক আল মামুন মৃধা বলেন, ‘এটা ঠিক, আমাদের হাতে ইউয়ানের মজুত কম থাকে। কারণ চীনে আমাদের রপ্তানি কম। কিন্তু বিভিন্ন প্রকল্পে তাদের সহায়তাসহ হিসাব করলে আমাদের হাতে ২-৩ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের ইউয়ান মজুত হয়। চীনা পণ্য আমদানির জন্য ৩ বিলিয়ন ডলারও যদি আমরা ইউয়ানে পরিশোধ করতে পারি, তা-ও রিজার্ভের ওপর চাপ কমাবে।’

আল মামুন মৃধা বলেন, তারা গত চার-পাঁচ বছর বাংলাদেশে চীনের একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক প্রতিষ্ঠার কথা বলে আসছেন চীন দূতাবাসকে। তাঁদের জানা মতে, এ নিয়ে দুই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক পর্যায়ে কিছুটা আলোচনাও হয়েছে। তবে কী কারণে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই, তা তাঁরা জানেন না।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য আরও বাড়ার সুযোগ ও সম্ভাবনা—দুটোই রয়েছে। চীনের একটি ব্যাংক যদি বাংলাদেশে থাকে, তবে এই বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও সহজ হবে। ইউয়ানের মজুতে যেটুকু ঘাটতি থাকবে, তা ডলারে লেনদেন করা যেতে পারে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকও দেশে চীনের একটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবকে যৌক্তিক ও ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘চীন যেহেতু আমাদের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য সহযোগী, তাই তাদের একটা ব্যাংক থাকাটা স্বাভাবিক। তবে চীনের ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য দেশটি থেকে এখনো কেউ আবেদন বা প্রস্তাব দেয়নি। যদি কোনো প্রস্তাব আসে, তবে আমরা বিষয়টি ভেবে দেখব।’

জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন এ বিষয়ে বলেন, ‘চীনের ব্যাংক প্রতিষ্ঠা হলে আমাদের কতটুকু সুবিধা হবে, তা নির্ভর করবে তারা আমাদের কী এবং কতটুকু সেবা ও সুবিধা দেবে—তার ওপর। তা ছাড়া, আগে চীনের কোনো ব্যাংককে বাংলাদেশে অপারেট করতে আগ্রহী হতে হবে। আর ইউয়ানে লেনদেনের বিষয়টা অনেকটা অপ্রাসঙ্গিক। কারণ আমাদের অত ইউয়ান থাকে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কাস্টমস কর্মকর্তা শহিদুজ্জামান সাময়িক বরখাস্ত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় কার্যালয় রাজস্ব ভবন। ছবি: আজকে পত্রিকা
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় কার্যালয় রাজস্ব ভবন। ছবি: আজকে পত্রিকা

কাস্টমস ও আবগারি বিভাগের উপকমিশনার মো. শহিদুজ্জামান সরকারকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। গতকাল রোববার (২ নভেম্বর) অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) শুল্ক-১ শাখা থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

এতে সই করেন আইআরডি সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, মো. শহিদুজ্জামান সরকারের বিরুদ্ধে ‘অসদাচরণ’ ও ‘পলায়ন’-এর অভিযোগে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর ৩ (খ) ও ৩ (গ) অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে। তাঁকে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর বিধি ১২ (১) অনুযায়ী চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, সাময়িক বরখাস্তকালীন সময়ে তিনি বিধি অনুযায়ী খোরপোষ ভাতা প্রাপ্য হবেন। জনস্বার্থে জারিকৃত এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত