Ajker Patrika

ত্রিমুখী চ্যালেঞ্জের মুখে দেশের অর্থনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ত্রিমুখী চ্যালেঞ্জের মুখে দেশের অর্থনীতি

বাংলাদেশের অর্থনীতি ত্রিমুখী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এগুলো হচ্ছে অনিয়ন্ত্রিত মূল্যস্ফীতি, দেশি-বিদেশি ঋণের ঝুঁকি এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধির মন্দাভাব। এ থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে আগামী বাজেটে কর্মসংস্থান, শিক্ষা, সামাজিক সুরক্ষা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়ে তোলায় নজর দিতে হবে। আর বাজেট বাস্তবায়নে অনিয়ম, দুর্নীতি বন্ধ ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। কমাতে হবে সরকারি অর্থের অপচয়। 

রাজধানীর গুলশানের এক হোটেলে গতকাল রোববার ‘নতুন সরকার, জাতীয় বাজেট ও জনমানুষের প্রত্যাশা’ শীর্ষক নীতি সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম’-এর সহযোগিতায় এ আয়োজন করে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। 

সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সংলাপে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, অর্থনীতিতে সমস্যার ত্রিযোগ ঘটেছে। যার মধ্যে বড় সমস্যা হচ্ছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি। অনিয়ন্ত্রিত মূল্যস্ফীতি মানুষের জীবনমানকে আঘাত করছে। দ্বিতীয়ত, ঋণের পরিস্থিতি। সরকার বিদেশি উৎস থেকে যে টাকা নেয়, দেশীয় উৎস থেকে তার দ্বিগুণ টাকা ঋণ নেয়। তৃতীয় সমস্যা হচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ে প্রবৃদ্ধির যে ধারা ছিল, সেই ধারায় শ্লথকরণ হয়েছে। 

ড. দেবপ্রিয় বলেন, দেশে মূল্যস্ফীতি এখনো ১০ দশমিক ১০-এর কাছাকাছি, যা মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস করছে। পিছিয়ে পড়া মানুষের ভোগ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের ওপর মূল্যস্ফীতি সরাসরি প্রভাব ফেলছে। এসব কারণে বাল্যবিবাহ বেড়ে যাচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে পৃথিবীতে যেখানে মূল্যস্ফীতি কমছে, কিন্তু সেই সুফল বাংলাদেশে দেওয়া যাচ্ছে না।

জিপিডি প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় বলেন, সব মিলিয়ে এখন জিডিপির ৪২ শতাংশ ঋণ রয়েছে। এর ফলে বিনিময় হারের ওপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। টাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছে। আর জিডিপি হার ৪ শতাংশ, কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা ৭ শতাংশের ওপরে। সেটা অর্জন করতে বাকি সময়ে জিডিপির হার হতে হবে ১০ শতাংশে ওপরে, যার বাস্তবায়ন অসম্ভব।

গবেষণার সারাংশ উল্লেখ করে আগামী বাজেটে মানুষের শোভন কর্মসংস্থান, মানসম্মত শিক্ষা এবং সামাজিক সুরক্ষায় জোর দেওয়ার পরামর্শ দেন দেবপ্রিয়।

সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা ও সাবেক মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘সুন্দর করে একটা বাজেট দিতে পারি, কিন্তু সেটার কি বাস্তবায়ন হবে? সেটাই বড় প্রশ্ন। আমাদের আর্থিক খাত দুর্বল হয়ে গেছে।’ 

অর্থনীতির এই সংকটকালীন মুহূর্তে মিতব্যয়িতার খুব প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেন, ‘যেহেতু জনগণের টাকা ব্যয় করছি। আমার বদ্ধমূল ধারণা, মিতব্যয়ী হওয়ার প্রচুর সুযোগ রয়েছে। কলমে-কাগজে, সর্বত্র আমি অনেক অপচয় দেখি।’

তবে প্রবৃদ্ধির বিষয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের বক্তব্যের বিরোধিতা করে এম এ মান্নান বলেন, ‘প্রবৃদ্ধি যে হঠাৎ করে এভাবে নিচে নেমে যাবে, তা আপনি কীভাবে অনুমান করলেন? আপনি বলতে পারেন না সামনের বছর এত নামবে বা তার পরের বছর এত নামবে। আমরা ৭ থেকে ৪ শতাংশে আসিনি। ৬ শতাংশের আশপাশে আছি। আমার সাধারণ জ্ঞান বলে, আমরা শেষ প্রান্তে নেই।’

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের কোর সদস্য রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, ‘সাধারণ মানুষ যেটা বোঝেন, পেটে ভাত জুটছে না। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া ভালো হচ্ছে না। স্বাস্থ্য ভালো নেই। সেখানে আমি বলব, বিদ্যালয়ে দুপুরের খাবার কর্মসূচি আনার বিষয়টি দেখতে হবে। অপচয় রোধ করতে হবে। দুর্নীতি রোধ করতে হবে।’

দুর্নীতি রোধ না করতে পারলে যতই বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো হোক, লাভ হবে না বলে জানান সংসদ সদস্য এ কে আজাদ। তিনি বলেন, ‘জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ ও দুর্নীতিমুক্ত করার জন্য আমাদের কাজ করতে হবে।’

সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘শ্রমিকদের জন্য রেশনিং, শিশুদের জন্য মধ্যাহ্নভোজকে ব্যয় হিসেবে না দেখে বিনিয়োগ হিসেবে দেখা উচিত। শ্রমিককে রেশন দেওয়ার ফলে তার যে উৎপাদনশীলতা বাড়ে, সেটা আমাদের দেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ায়। সামষ্টিক অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক ভূমিকা আছে।’

সংলাপে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, ‘অনেকে কর দিচ্ছেন না, কর ফাঁকি দিচ্ছেন। পাশাপাশি বিদেশে টাকা চলে যাচ্ছে। কর কাঠামোতে পরিবর্তন আনতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

মানিকগঞ্জে রাতের আঁধারে স্থানান্তর করা বিদ্যালয় ভবন পরিদর্শনে কর্মকর্তারা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত