Ajker Patrika

আমরা ভারতের সঙ্গে খুব ভালো, কিন্তু সম্পর্কটা ছিল একতরফা: ট্রাম্প

কলকাতা প্রতিনিধি  
উচ্চ শুল্কের কারণে ভারতের রপ্তানি প্রায় ৭০ শতাংশ কমে যেতে পারে। ছবি: এএফপি
উচ্চ শুল্কের কারণে ভারতের রপ্তানি প্রায় ৭০ শতাংশ কমে যেতে পারে। ছবি: এএফপি

আবারও ভারতকে খোঁচা দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, ‘আমরা ভারতের সঙ্গে খুব ভালোভাবে চলি, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সম্পর্কটা ছিল একপেশে।’ গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। এ সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ভারত বহু বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রকে কঠোর শুল্ক দিয়ে আটকে রেখেছিল, অথচ নিজেরা অবাধ প্রবেশাধিকার পাচ্ছিল।

ট্রাম্প বলেন, ‘ভারত আমাদের ওপর বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ শুল্ক বসিয়েছে। তাই আমেরিকা খুব একটা ব্যবসা করতে পারেনি, কিন্তু ভারত করেছে অবাধে।’

তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, ‘হার্লে ডেভিডসন মোটরসাইকেলের ওপর ভারতে ২০০ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়েছিল, যার ফলে কোম্পানিটি শেষ পর্যন্ত ভারতে গিয়ে কারখানা গড়ে তোলে।’

ট্রাম্প অভিযোগ করে বলেন, ‘তারা নিজেদের পণ্য ঢালাওভাবে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাত, কিন্তু আমেরিকার পণ্য ভারতীয় বাজারে ঢুকতে পারত না। এটা ছিল একেবারেই অন্যায্য, আর আমি এসে তা পরিবর্তন করেছি।’

ট্রাম্পের এমন মন্তব্য ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য উত্তেজনার আগুনে ঘি ঢালল। এমনিতেই গত কয়েক মাস ধরে ওয়াশিংটন-নয়াদিল্লি সম্পর্কের কেন্দ্রে এসেছে শুল্ক, বাজার খোলা রাখা, বিনিয়োগ এবং কৌশলগত স্বার্থ। যদিও জো বাইডেন প্রশাসন ভারতকে ‘কৌশলগত মিত্র’ হিসেবে ধরে রাখার চেষ্টা করছে, কিন্তু ট্রাম্পের সুর আবারও সেই পুরোনো চাপা ক্ষোভকে সামনে নিয়ে এলো।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্প ভোটারদের কাছে ‘আমেরিকান ইন্ডাস্ট্রি রক্ষা’র বার্তা দিচ্ছেন। একই সঙ্গে ভারতের সঙ্গে আলোচনায় চাপ তৈরি করতেও তিনি ইঙ্গিত ছুঁড়ে দিচ্ছেন। ওয়াশিংটন দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে, ভারতীয় বাজার এখনো ‘প্রটেকশনিস্ট’ নীতি চালু রেখেছে।

গম, দুগ্ধজাত, প্রযুক্তি ও অটোমোবাইলসহ নানা খাতে মার্কিন কোম্পানিগুলো প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ছে। বিশেষ করে কৃষিজ পণ্যে শুল্ক ও নন-ট্যারিফ বাধার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে।

অন্যদিকে ভারত যুক্তি দেখাচ্ছে, তাদের অভ্যন্তরীণ বাজারকে রক্ষার জন্য এসব ব্যবস্থা জরুরি, কারণ একদিকে বিপুল জনসংখ্যা, অন্যদিকে কৃষক ও ক্ষুদ্র শিল্পের স্বার্থ রক্ষা করতে হয়। কিন্তু মার্কিন প্রশাসন বলছে, একই সময়ে ভারত যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করছে ব্যাপকভাবে, যা একতরফা বাণিজ্যের প্রমাণ।

হার্লে ডেভিডসনের প্রসঙ্গ বহুদিন ধরেই দুই দেশের বাণিজ্য আলোচনায় আলোচিত। বাইডেন সরকার ক্ষমতায় এসে কিছু শুল্ক কমানোর চেষ্টা করলেও পুরোপুরি সমাধান হয়নি। এ অবস্থায় ট্রাম্প ফের ইস্যুটি সামনে টেনে এনে চাপ সৃষ্টি করলেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা ভারতকে বিনা শুল্কে বাজার দিয়েছি, অথচ আমেরিকার পণ্যের জন্য ভারতীয় দরজা ছিল বন্ধ। এটা পরিবর্তন না করলে যুক্তরাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্তই হবে।’

বিশ্লেষকদের মতে, ভারতীয় অর্থনীতি বর্তমানে দ্রুত প্রবৃদ্ধির পথে, আর যুক্তরাষ্ট্র সেখানে বিনিয়োগ ও বাজার অংশীদারত্ব বাড়াতে চায়। কিন্তু এ ধরনের প্রকাশ্য মন্তব্য কূটনৈতিক অস্বস্তি তৈরি করতে পারে।

নয়াদিল্লি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রাম্পের বক্তব্যে প্রতিক্রিয়া জানায়নি, তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যেই বলেছে, ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ভারসাম্য বজায় রাখতে আগ্রহী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত