Ajker Patrika

ট্রাম্পের নতুন ভিসানীতিতে হুমকির মুখে ভারতের ২৮৩ বিলিয়ন ডলারের আইটি শিল্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি। ছবি: সংগৃহীত
প্রতীকী ছবি। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের ২৮৩ বিলিয়ন ডলারের তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে তাদের বহু দশকের পুরোনো কৌশল বদলাতে হবে। কারণ, গতকাল রোববার থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন এইচ-১বি ভিসার জন্য ১ লাখ ডলার ফি আরোপ করেছেন। বিশ্লেষক, আইনজীবী, অর্থনীতিবিদ এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অভিজ্ঞরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্র থেকে দক্ষ হয়ে দেশে ফেরার মাধ্যমে দেশীয় তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে ঘুরিয়ে দেওয়ার ভারতীয় কৌশলকে বড় ধাক্কা দেবে।

ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের মোট আয়ের প্রায় ৫৭ শতাংশই আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। দেশটি বহুদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম ভিসা কর্মসূচি ও সফটওয়্যার ও ব্যবসায়িক সেবা আউটসোর্সিং খাত থেকে উপকৃত হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে অনেক মানুষ চাকরি হারানোর কারণে বিষয়টি সব সময় বিতর্কিত থেকেছে।

গত বছর এইচ-১বি ভিসার সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী দেশ ছিল ভারত। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, অনুমোদিত ভিসাধারীদের মধ্যে ৭১ শতাংশই ভারতীয়। দ্বিতীয় স্থানে থাকা চীনের অংশীদারত্ব ছিল মাত্র ১১ দশমিক ৭ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের এইচ-১বি কর্মসূচি নিয়ে নতুন পদক্ষেপের ফলে অ্যাপল, জেপিমর্গান চেজ, ওয়ালমার্ট, মাইক্রোসফট, মেটা ও অ্যালফাবেটের গুগলের মতো ক্লায়েন্ট থাকা ভারতীয় আইটি কোম্পানিগুলোকে অনশোর রোটেশন থামাতে হবে, অফশোর সেবা বাড়াতে হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও গ্রিন কার্ডধারীদের নিয়োগ বাড়াতে হবে।

হাতছাড়া হচ্ছে ‘আমেরিকান ড্রিম’

ভারতীয় আইটি আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠান জেনসারের সাবেক প্রধান নির্বাহী গণেশ নটরাজন বলেছেন, কর্মীদের জন্য ‘আমেরিকান ড্রিম’ বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে। তিনি আরও বলেন, এখন মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো সীমান্ত পারাপারের ভ্রমণ সীমিত করবে এবং ভারত, মেক্সিকো, ফিলিপাইনের মতো দেশ থেকেই বেশি কাজ করিয়ে নেবে।

টাটা কনসালট্যান্সি সার্ভিসেস (টিসিএস), ইনফোসিস, এইচসিএলটেক, উইপ্রো ও টেক মাহিন্দ্রা—এই প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলেও তারা কোনো মন্তব্য করেনি। শিল্প সংগঠন ন্যাসকম জানিয়েছে, এ পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের উদ্ভাবন-ব্যবস্থায় প্রভাব ফেলতে পারে এবং অনশোর প্রকল্পে ব্যবসার ধারাবাহিকতা ব্যাহত করতে পারে।

এমকেই গ্লোবালের প্রধান অর্থনীতিবিদ মাধবী অরোরা বলেছেন, ‘সেবা রপ্তানিও এখন বৈশ্বিক বাণিজ্য ও প্রযুক্তি যুদ্ধে টেনে আনা হয়েছে।’ তিনি জানান, এর ফলে আইটি খাতের অনসাইট-অফশোর মডেল ব্যাহত হতে পারে, মুনাফার ওপর চাপ তৈরি করতে পারে এবং সরবরাহ ব্যবস্থায় জটিলতা তৈরি করতে পারে।

অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, ট্রাম্পের পদক্ষেপ ক্লায়েন্টের সঙ্গে ভারতীয় কর্মীদের সামনাসামনি ভূমিকা সীমিত করবে। এতে আইটি চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার গতি কমে যাবে এবং প্রকল্প বড় আকারে নেওয়ার প্রক্রিয়াও দীর্ঘ হবে। এই বিষয়ে এইচএফএস রিসার্চের প্রধান নির্বাহী ফিল ফারশ্ট বলেছেন, ‘ক্লায়েন্টরা আইটি প্রকল্পের পুনঃ মূল্যায়ন চাইবে অথবা আইনগত স্পষ্টতা না আসা পর্যন্ত শুরুর তারিখ পিছিয়ে দেবে। কিছু প্রকল্প নতুনভাবে পরিকল্পনা করা হবে যাতে অনশোর কর্মী কম লাগে। আবার কিছু প্রকল্প শুরু থেকেই অফশোর বা নিকটবর্তী দেশে সরিয়ে নেওয়া হবে।’

ভবিষ্যতে কেবল গুরুত্বপূর্ণ পদেই এইচ-১বি ভিসা

যুক্তরাষ্ট্রের আইটি খাতকে এইচ-১বি ভিসা অপব্যবহারের অভিযোগ এনে ট্রাম্পের ঘোষণায় ব্যাপক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এতে ভিসার আবেদনকারীদের কাছ থেকে আইনজীবীরা বিপুলসংখ্যক কল পান। তারা জানান, নতুন ভিসা ফি অনেক বেশি।

মার্কিন আইনি পরামর্শক সংস্থা গোয়েল অ্যান্ড অ্যান্ডারসনের ম্যানেজিং পার্টনার ভিক গোয়েল বলেন, ‘আমরা আশা করি, প্রতিষ্ঠানগুলো ভিসা স্পনসর করার ক্ষেত্রে অনেক বেশি বাছাই করা হবে। শুধু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদেই এইচ-১বি ফাইল করা হবে।’ তিনি জানান, এতে অনেক দক্ষ বিদেশি নাগরিকের জন্য ভিসার সুযোগ কমে যাবে এবং নিয়োগদাতাদের চাহিদা নতুনভাবে গড়ে উঠবে।

অনেক অভিবাসন আইনজীবী আশা করছেন, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দ্রুত মামলা করা হবে। অ্যালকর্ন ইমিগ্রেশন ল ফার্মের প্রধান নির্বাহী সোফি অ্যালকর্ন বলেন, ‘আমরা আশা করছি, এই সপ্তাহেই বেশ কিছু মামলা করা হবে।’

ভারতের আইটি খাতের জন্য এই নতুন চ্যালেঞ্জ এসেছে এমন সময়ে যখন দেশটি আউটসোর্সিং পেমেন্টে ২৫ শতাংশ কর আরোপের প্রস্তাব নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছে। এর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে দুর্বল রাজস্ব প্রবৃদ্ধি, অপ্রয়োজনীয় প্রযুক্তি খাতে খরচ কমানো, মুদ্রাস্ফীতি ও শুল্ক অনিশ্চয়তার চাপও মোকাবিলা করতে হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত