Ajker Patrika

ডলারের সংকটে ৫৭ শতাংশ বিমা কোম্পানির মুনাফায় ধস

আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা
আপডেট : ১৩ আগস্ট ২০২৩, ১১: ১১
ডলারের সংকটে ৫৭ শতাংশ বিমা কোম্পানির মুনাফায় ধস

ডলারের সংকটে আমদানিতে কড়াকড়ি চলছে। কমে এসেছে ঋণপত্র খোলা ও জাহাজে পণ্য পরিবহন। আর এতেই ধস নেমেছে বিমা কোম্পানিগুলোর মুনাফায়। চলতি বছরের ছয় মাসে তালিকাভুক্ত সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলোর ৫৭ শতাংশেরই মুনাফা কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে।

জাহাজে পরিবহন হওয়া আমদানি-রপ্তানি পণ্য বিমার আওতায় থাকে। এ থেকে বিমা কোম্পানিগুলোর যে আয় হয়, তা ‘মেরিন ব্যবসা’ নামে পরিচিত। এই খাতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বিমা কোম্পানিগুলোর আয়ের বড় অংশ আসে মেরিন ব্যবসা থেকে। ডলারের সংকটে আমদানি কমে যাওয়ায় সেই ব্যবসায় ভাটা পড়েছে।

দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সাধারণ বিমা খাতের কোম্পানির সংখ্যা ৪২টি। সম্প্রতি চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসের (জানুয়ারি-জুন) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কোম্পানিগুলো। প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ২৪টি সাধারণ বিমা কোম্পানির মুনাফা কমেছে, যা মোট তালিকাভুক্ত কোম্পানির ৫৭ দশমিক ৭১ শতাংশ। বিপরীতে বেড়েছে কেবল ১৭টি কোম্পানির মুনাফা।

সিংহভাগ বিমা কোম্পানির মুনাফা কমার পেছনে তিনটি কারণের কথা বলেছেন সংশ্লিষ্টরা। এগুলো হলো ডলারের সংকটে আমদানি হ্রাস, পুঁজিবাজার থেকে ভালো রিটার্ন না পাওয়া এবং কোম্পানির পরিচালন ব্যয়।

এ বিষয়ে এশিয়া ইনস্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ইমাম শাহীন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আয় কমে যাওয়ার পেছনে তিনটি কারণ রয়েছে। প্রথম কারণটি হচ্ছে, মেরিন ব্যবসা। এই ব্যবসা আমাদের সুবিধাজনক। এখান থেকেই আমরা মার্জিন (মুনাফা) করে থাকি। মেরিন ব্যবসা ভালো হলে আমাদের কোম্পানির স্বাস্থ্যটা ভালো থাকে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন ঠেকাতে বিলাস পণ্যসহ আমদানিতে কৃচ্ছ্রসাধন করা হচ্ছে। ডলার-সংকটের কারণে এলসি হচ্ছে না, আমদানি হচ্ছে না। আমদানি না হলে মেরিন ব্যবসা হবে না। আমার দৃষ্টিতে এটা বিমা কোম্পানির মুনাফা কমার একটা বড় কারণ।’ 

কোম্পানিগুলোর মুনাফার চিত্র 
বিমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে মুনাফা হ্রাসের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে প্রভাতী ইনস্যুরেন্স। কোম্পানিটির আয় কমেছে ৮৯ পয়সা বা ৪৬ শতাংশের বেশি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৪ শতাংশ ইসলামী কমার্শিয়াল ইনস্যুরেন্সের এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩২ শতাংশ মুনাফা কমেছে সোনার বাংলা ইনস্যুরেন্সের।

এ ছাড়া ৩০ শতাংশের নিচে ও ২০ শতাংশের ওপরে মুনাফা কমেছে আরও ৯টি কোম্পানির। ১২ থেকে ১৬ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা কমেছে ছয়টির, আর ১০ শতাংশের নিচে মুনাফা কমেছে আরও ছয়টি বিমা কোম্পানির।

মুনাফা হ্রাসের তালিকায় সবার নিচে রয়েছে তাকাফুল ইসলামী ইনস্যুরেন্স। প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা কমেছে ১ শতাংশ। একমাত্র কোম্পানি হিসেবে ফেডারেল ইনস্যুরেন্সের মুনাফা অপরিবর্তিত ছিল।

আমদানি কমে যাওয়ার পাশাপাশি বিমা কোম্পানির মুনাফা কমার ক্ষেত্রে পুঁজিবাজারের মন্দাবস্থা ও কোম্পানির পরিচালন ব্যয় বেড়ে যাওয়াকেও কিছু ক্ষেত্রে দায়ী করছেন বিশ্লেষকেরা।

এর মধ্যে হাতেগোনা কিছু কোম্পানির মুনাফা বেড়েছে। এদের কয়েকটি ভালো মুনাফা করলেও ১০টি কোম্পানি মুনাফা করেছে মাত্র ১ থেকে ৭ শতাংশ পর্যন্ত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আল-আমিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, আয় কমে যাওয়ার মূল কারণ তো অবশ্যই আমদানি কমে যাওয়া বা বিভিন্নভাবে তাদের ইনস্যুরেন্সের যে প্রিমিয়াম হয়, আমদানি না হলে সেটা তো হবে না। অন্যদিকে পুঁজিবাজারের অধিকাংশ ভালো শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে রয়েছে। ভালো শেয়ার ছাড়া স্বল্প মূলধনি ও পচা শেয়ারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী হিসেবে বিমা কোম্পানিগুলো অবশ্যই ফান্ড দেবে না। সে ক্ষেত্রে তারা পুঁজিবাজার থেকেও খুব বেশি মুনাফা করতে পারেনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত