Ajker Patrika

বিশ্বনাথের শুঁটকি যাচ্ছে দেশের সর্বত্র

বিশ্বনাথ (সিলেট) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২: ০৯
বিশ্বনাথের শুঁটকি যাচ্ছে দেশের সর্বত্র

সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার শুঁটকি যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। উপজেলার লামাকাজি ইউনিয়নের মাহতাবপুরের শুঁটকি ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে দেশের নানা জায়গায় শুঁটকি পাঠাচ্ছেন। এতে করে একদিকে আয় বাড়ছে ব্যবসায়ীদের, অন্যদিকে চাঙা হচ্ছে বিশ্বনাথের লামাকাজি ইউনিয়নের মানুষের স্থবির জীবন। শুঁটকি ব্যবসাকে কেন্দ্র করে বেকারত্বের হারও কমেছে অনেক।

সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কের পাশে অবস্থিত লামাকাজি ইউনিয়নের মাহতাবপুর গ্রাম সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় শুঁটকি ব্যবসায়ী ও শ্রমিকেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ শুঁটকি শুকাতে ব্যস্ত, কেউবা শুকিয়ে যাওয়া শুঁটকি গাড়িতে তুলে সিলেটে পৌঁছে দেওয়ার কাজে ব্যস্ত, আবার কেউ মাছের আড়ত থেকে মাছ আনার কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। 

ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিবছর নভেম্বর মাস থেকে শুঁটকির মৌসুম শুরু হয়ে যায়। তখন ব্যবসায়ী-শ্রমিক সবার মধ্যেই শুরু হয় প্রাণচাঞ্চল্য। সব ধরনের মাছের শুঁটকি দেওয়া হলেও ট্যাংরা ও পুঁটি মাছের শুঁটকির প্রাধান্যই বেশি। এই শুঁটকি উৎপাদনের কাজ চলে বৃষ্টির মৌসুম আসার আগ পর্যন্ত। এর মধ্যেই অনেক ব্যবসায়ী নির্দিষ্ট আড়তে শুঁটকি পৌঁছে দেওয়ার কাজ সারেন। কেউ কেউ সারা বছরের জন্য শুঁটকি মজুত রাখেন।

প্রায় ৪০ জন ব্যবসায়ী এখানে শুঁটকি ব্যবসায় রয়েছেন। সব মিলিয়ে দুই শতাধিক শ্রমিক কাজ করেন এখানে। প্রতিদিন প্রত্যেক শ্রমিক গড়ে ২০০ টাকা করে মজুরি পান। সে হিসাবে ২০০ জন শ্রমিকের জন্য মাসে ব্যবসায়ীদের খরচ হয় ১২ লাখ টাকা। 

হেলাল নামের এক ব্যবসায়ী জানান, তিনি এ বছর থেকে শুঁটকি ব্যবসায় নেমেছেন। গত পাঁচ মাসে তিনি পাঁচ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে এক লাখ টাকা আয় করতে পেরেছেন।

ব্যবসায়ী আউয়াল বলেন, ‘গত কয়েক বছর যাবৎ এখানে ব্যবসা করছি। কখনো লোকসানের মুখে পড়তে হয়নি। প্রতিবছরই ব্যয় বাদ দিয়ে দুই লাখের ওপরে আয় থাকে।’

শুঁটকি কোথায় পাঠান এমন প্রশ্নের জবাবে গিয়াস, জাকির হোসেন, কালা মিয়া নামে কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমরা সিলেটের বৃহৎ শুঁটকি আড়ত ছড়ারপার এলাকায় শুঁটকি পৌঁছে দেই। সেখান থেকে শুঁটকি সারা দেশে ছড়িয়ে যায়।’

শুঁটকির ব্যবসা করে এখানকার বেশির ভাগ ব্যবসায়ীই স্বাবলম্বী হয়েছেন। তাঁদের হাত ধরে এলাকার বেকার যুবকেরাও এ কাজে জড়িত হচ্ছেন। ফলে একদিকে এলাকার অর্থনৈতিক উন্নতি হচ্ছে, অন্যদিকে বেকারত্বও কমছে। 

শ্রমিক শহিদুর রহমান জানান, এখানে গত পাঁচ বছর ধরে কাজ করছেন। এখানকার আয় দিয়েই তিনি সংসার চালাচ্ছেন। আরেক শ্রমিক মইনুল হক বলেন, ‘এই শুঁটকি ব্যবসা আমাদের এলাকার চেহারা পাল্টে দিয়েছে।’

শুঁটকি উৎপাদনের কাজে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী শ্রমিক জড়িত। তাঁদেরই একজন মনোয়ারা বেগম জানালেন, বছর দু-এক আগেও তাঁর সংসারে টানাটানি ছিল নিত্যদিনকার বিষয়। কিন্তু এই শুঁটকি ব্যবসার সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে এখন তাঁর পরিবারে সুখের হাওয়া বইছে।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেন ধলা মিয়া বলেন, কয়েক বছর আগে এই এলাকার যুবকেরা বেকারত্বের অভিশাপ বয়ে বেড়াত। তারা নানা অপকর্মেও জড়িত ছিল। কিন্তু এই শুঁটকি ব্যবসা সেই অভিশাপ থেকে যুবকদের মুক্তি দিয়েছে। পাল্টে গেছে এলাকার আর্থসামাজিক অবস্থা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশ না করার প্রস্তাব

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

পরিপাকতন্ত্রের ওষুধের পেছনেই মানুষের ব্যয় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত