Ajker Patrika

সিলেটের ৪ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে সহজে মেলে না চিকিৎসাসেবা

শাকিলা ববি, সিলেট
সিলেটের ৪ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে সহজে মেলে না চিকিৎসাসেবা

সিলেট সদর উপজেলার মোগলগাঁও ইউনিয়নের মুদিদোকানি মুজিবুর রহমান। কিছুদিন আগে গভীর রাতে তাঁর ভাবির প্রসবব্যথা উঠলে বিপাকে পড়ে যায় পরিবার। কারণ, গ্রামে যে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র আছে সেখানে প্রসবকালীন সেবার ব্যবস্থা নেই। বাধ্য হয়েই গভীর রাতে সিলেট শহরের ওসমানী মেডিকেল কলেজে এনে ভর্তি করান ভাবিকে। 

মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের গ্রামের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মাঝেমধ্যে ডাক্তার আসেন। গ্রামের নারীরা গর্ভকালীন সেবা নিতে পারলেও ডেলিভারি হয় না। যাঁরা কেন্দ্রের দায়িত্বে আছেন, তাঁরাও ঠিক সময়ে আসেন না। দুজন আপা আছেন তাঁরা কখনো ১১টায় আসেন, আবার কখনো ১২টায়। ঘণ্টাখানেক থেকেই আবার চলে যান। এখানকার স্বাস্থ্যসেবা মানে শুধু ভবনটাই আছে। মানুষের সর্দি, জ্বর, কাশি, হাত ভাঙা, পা ভাঙা, ডেলিভারি যাই হোক না কেন শহরেই যেতে হয়।’ 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিলেট সদর উপজেলার আট ইউনিয়নের মধ্যে টুকেরবাজার, কান্দিগাঁও, মোগলগাঁও, হাটখোলা, জালালাবাদ ইউনিয়নের অবস্থান শহর থেকে বেশ দূরে। দেশের অন্য বিভাগের মতো এখানকার সদর উপজেলায় কোনো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নেই। সদর উপজেলা জেলা শহরের কাছাকাছি থাকে, সেই ভাবনা থেকে সেখানে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হয়নি। ফলে বছরের পর বছর স্বাস্থ্যসেবার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সদর উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ। 

এদিকে, সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, সুনামগঞ্জ জেলা শহরের মানুষ সরকারি-বেসরকারি—দুই ধরনের পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা পেলেও বঞ্চিত আছে জেলাগুলোর প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ। প্রাকৃতিকভাবে হাওরবেষ্টিত জনপদ বেশি এই বিভাগে। তাই এই অঞ্চলগুলো অনেক দুর্গম। এ জন্য এখানকার মানুষজনের প্রাপ্য স্বাস্থ্যসেবা পাওয়াও অনেকটাই দুর্লভ। জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোথাও হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবন থাকলেও সেবা নেই। আবার কোথাও কিছুই নেই। 

বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য (বিডিএইচএস) জরিপ ২০১৭-১৮-এর তথ্যমতে, সিলেটে প্রজনন হার বেশি, শিশুমৃত্যু বেশি। এ ছাড়া সিলেটে খর্বকায় শিশু বেশি, পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণ সবচেয়ে কম, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মা ও শিশুসেবা নেওয়ার প্রবণতাও কম এবং শিশুদের টিকাদানের প্রবণতাও কম। 

সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার প্রত্যন্ত যোগাযোগবিচ্ছিন্ন সীমান্তঘেঁষা বান্দ্রা গ্রামের শান্তি হাজং বলেন, মধ্যনগরের সঙ্গে যোগাযোগের সড়কটি ভাঙাচোরা হওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয়। কাছে কোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্র না থাকায় দুর্গম যোগাযোগবিচ্ছিন্ন সড়ক দিয়ে প্রসূতি মা, শিশু ও বয়স্কদের চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে হয়। যার ফলে সড়কের মধ্যেই অনেক রোগী মারা যায় এবং ডেলিভারিও হয়ে যায়। 
 
হবিগঞ্জ বানিয়াচং উপজেলার বাসিন্দারা ছয় মাস পানি ও ছয় মাস ডাঙায় থাকেন। এখানকার বাসিন্দাদের কেউ অসুস্থ হলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। উপজেলার মুরাদপুর ইউনিয়নের মোহাম্মদ আল আমিন বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নে একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবন থাকলেও ডাক্তার এবং প্রাথমিক চিকিৎসা পাওয়া দুঃসহ ব্যাপার। হঠাৎ কেউ অসুস্থ হলে তাঁকে হবিগঞ্জ নেওয়া ছাড়া প্রাথমিক চিকিৎসার আর কোনো ব্যবস্থা থাকে না। আমাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অনেক দূরে। সেখানেও পর্যাপ্ত সেবা পাওয়া যায় না। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে অনেকবার কথা বললেও তাঁরা শুধু আশ্বাস দিয়েই যাচ্ছেন।’ 

শীতকালে মুরাদপুর ইউনিয়নের মানুষকে উপজেলা সদরে আসতে তিনবার নৌকা বদল করে কয়েক কিলোমিটার সড়ক হেঁটে তারপর যানবাহনে উঠতে হয়। গ্রামের নাইম চৌধুরী বলেন, এলাকার পাশে যে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে তাতে কোনো সেবা পাওয়া যায় না। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সও অনেক দূরে। যোগাযোগব্যবস্থা এতটাই খারাপ যে অনেক প্রসূতিকে জরুরি মুহূর্তে হাসপাতালে নেওয়া যায় না। 

এ রকম নানা সংকটে জর্জরিত সিলেট বিভাগের চার জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্বাস্থ্যব্যবস্থা। স্বাস্থ্য খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিলেটের স্বাস্থ্য খাত অন্যান্য বিভাগের তুলনায় অনেক পিছিয়ে। চরম জনবলসংকটে ধুঁকছে জেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো। 

সিলেট স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, এই বিভাগে জনসংখ্যা এক কোটি আট লাখের বেশি। এখানে ৯০০ শয্যাবিশিষ্ট সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রয়েছে। এ ছাড়া ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল আছে একটি, চার জেলায় ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল আছে একটি করে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আছে ৩৪ টি, ২০ শয্যাবিশিষ্ট পল্লি স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে তিনটি, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র আছে ২৩৪ টি। 

সারা বিভাগের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১ হাজার ২৮৬টি চিকিৎসকের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র ৭৯৫ জন। স্টাফ নার্সের ৮৩টি পদের বিপরীতে কর্মরত ৩৯ জন, সহকারী নার্সের ৮৬টি পদের বিপরীতে আছেন মাত্র ছয়জন। নার্সিং সুপারভাইজার, মিডওয়াইফারি, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, ফার্মাসিস্টসহ প্রায় সব পদেই প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেকেরও কম জনবল আছে। 
বিভাগের স্বাস্থ্যসেবা-সম্পর্কিত নানা তথ্য জানতে গত নভেম্বর ও ডিসেম্বরে চার জেলার বিভিন্ন উপজেলা পরিদর্শন করেন এই প্রতিবেদক। সেসব এলাকার শতাধিক মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তাঁদের এলাকার স্বাস্থ্যব্যবস্থার চিত্র। 

জানা গেছে, বিভাগের বেশির ভাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৩১ থেকে ৫০ শয্যা করা হলেও প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, রোগ নির্ণয় যন্ত্রপাতি এবং জনবলের অভাবে রোগীরা পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন না। 

সিলেটের স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক হিমাংশু লাল রায় আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখানকার স্বাস্থ্য খাত অন্য এলাকার তুলনায় পিছিয়ে। জেলা বা উপজেলা সদরের বাসিন্দারা ভালোমানের সেবা নিতে পারলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেবা দিতে অনেক বেগ পেতে হচ্ছে। এসব এলাকায় আমরা মূলত ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের মাধ্যমে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। এই কেন্দ্রগুলোয় আমাদের জনবল বলতে কোনো জায়গায় একজন স্যাকমো আছে, সঙ্গে একজন এফডব্লিউভি, কোনো জায়গায় আয়া, ওয়ার্ডবয় আছে কোনো জায়গায় নেই। কোনো জায়গায় অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট আছে কোনো জায়গায় নাই, নৈশপ্রহরী নেই। এমতাবস্থায়ও আমরা সেবাগুলো নিশ্চিত করছি স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে। ইউনিয়ন পর্যায়ে মা-শিশুকল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে আমরা ২৪ ঘণ্টা ডেলিভারি সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।’ 

সিলেটের স্বাস্থ্য খাতকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে সিলেটের উপযোগী পরিকল্পনা করার ওপর গুরুত্ব দেন ডা. হিমাংশু লাল রায়। তিনি বলেন, জনবলসংকটের পাশাপাশি পিছিয়ে থাকার অন্যতম একটি কারণ হলো সিলেটের ভৌগোলিক অবস্থান। জাতীয় পর্যায়ে অন্যান্য জেলাকে নিয়ে যেভাবে পরিকল্পনা নেওয়া হয় সিলেটকে নিয়ে একই ধরনের পরিকল্পনা নিলে চলবে না। সিলেটের জন্য সিলেটের উপযোগী একটি পরিকল্পনা করতে হবে। যেমন সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা উপজেলাকে একটি কেন্দ্র বানাতে হবে, ধর্মপাশাকে একটি কেন্দ্র বানাতে হবে। প্রত্যন্ত সব অঞ্চলে সেবা দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করতে হবে। 

প্রসঙ্গত, প্রতিবেদনটি বিএনএনআরসির তত্ত্বাবধানে স্বাস্থ্য-সাংবাদিকতায় মিডিয়া ফেলোশিপ-এর আওতায় প্রস্তুতকৃত। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ব্যাংকার হওয়ার স্বপ্ন ছিল সাদিয়ার

মো. আকতারুজ্জামান, চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা)
সাদিয়া হক পাটোয়ারী। ছবি: সংগৃহীত
সাদিয়া হক পাটোয়ারী। ছবি: সংগৃহীত

পড়াশোনা শেষ করে ব্যাংকে চাকরি নিয়ে বিয়ে করার ইচ্ছা ছিল সাদিয়া হক পাটোয়ারীর (২৪)। কিন্তু তাঁর শেষ দুটি ইচ্ছা আর পূরণ হয়নি। তার আগেই কক্সবাজারের চকরিয়ায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় সাদিয়া, তাঁর মা-ভাবিসহ একই পরিবারের ৫ জন নিহত হন।

আজ বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) সকাল ১০টায় কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে জানাজা শেষে সাদিয়াসহ ৫ জনকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

এর আগে বুধবার বেলা ৯টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া এলাকায় সাদিয়াদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি দুর্ঘটনায় শিকার হয়ে তিনিসহ পরিবারের ৫ সদস্য ঘটনাস্থলেই মারা যান। তাঁদের মৃত্যুর সংবাদে শোকে স্তব্ধ হয়ে যায় দুটি গ্রাম।

বৃহস্পতিবার ভোর ৫টায় সাদিসহ ৫ জনের লাশ বহনকারী ৫টি অ্যাম্বুলেন্স যখন গ্রামে প্রবেশ করে, তখন এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

নিহত সাদিয়ের চাচাতো বোন সাহিদা সুলতানা ঊর্মি বলেন, ‘তাঁর (সাদিয়া) ইচ্ছা ছিল এমবিএ শেষে করে ব্যাংকে চাকরি নেবে। এরপর সে বিয়ে করবে। কিন্তু তাঁর শেষ ইচ্ছাগুলো আর পূরণ হলো না। সাদিয়া কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের দ্বিতীয় সেমিস্টারের মেধাবী ছাত্রী ছিলেন।

হাইওয়ে পুলিশ জানায়, বুধবার সকাল ৯টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালীর ঢালা এলাকায় বেপরোয়া গতিতে বিপরীত থেকে আসা একটি যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে মাইক্রোবাসের সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই কুমিল্লা চৌদ্দগ্রামের চান্দিশকরা গ্রামের উদয় পাটোয়ারীর স্ত্রী ফারজানা মজুমদার লিজা (২৮), মা রুমি বেগম (৬৫), বোন সাদিয়া হক পাটোয়ারী (২৪), শাশুড়ি রিজওয়ানা মজুমদার শিল্পী (৫৫) ও শ্যালিকা ফারহানা মজুমদার টিজা (২৫) নিহত হন। এ সময় আহত হন উদয় পাটোয়ারী (৪৩), ভাইয়ের ছেলে সামাদ পাটোয়ারী (৪) ও শ্যালক শাহেদ মজুমদার লিশান। তাঁদের মধ্যে লিশানের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

সাদিয়ার বড় ভাই মো. মনিরুল হক বলেন, ‘১৫ দিন আগে কক্সবাজারে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু সামাদের মাথায় আঘাতের কারণে পিছিয়ে মঙ্গলবার রাতে ঢাকা থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী বুধবার ভোরে সাদিয়া, আম্মা, ভাইয়ের শাশুড়ি ও শ্যালিকাকে চৌদ্দগ্রাম থেকে গাড়িতে তোলা হয়। গাড়িটি ভাই নিজেই চালিয়ে যাচ্ছিলেন। সাদিয়া ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় মেধাবী ছিল। তার স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে ব্যাংকার হবে। সেই পরিকল্পনা নিয়ে সে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দুর্নীতির মামলায় সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুরের বিচার শুরু

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার সুর (এস কে সুর)। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার সুর (এস কে সুর)। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার সুরের (এস কে সুর) বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-২-এর বিচারক আয়েশা নাসরিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এর মধ্য দিয়ে সম্পদবিবরণী দাখিল না করার এই মামলায় আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলো।

সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী দেওয়ান আশিক বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ২০ জানুয়ারি দিন ধার্য করা হয়েছে।

এস কে সুরকে কারাগার থেকে আজ আদালতে হাজির করা হয়। তাঁর উপস্থিতিতে অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি শুরু হয়। দুদকের বিশেষ পিপি শামসুদ্দিন মো. আবুল কালাম অভিযোগ গঠনের পক্ষে শুনানি করেন। তবে আসামিপক্ষে আইনজীবী না থাকায় তাঁর পক্ষে শুনানি হয়নি। অভিযোগ গঠনের পর আদালতের প্রশ্নের উত্তরে এস কে সুর নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, অবৈধ সম্পত্তির মালিক হওয়ার অভিযোগে এস কে সুরের নিজের ও তাঁর ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিবর্গের স্বনামে বা বেনামে অর্জিত যাবতীয় স্থাবর বা অস্থাবর সম্পদ বা সম্পত্তি, দায়দেনা, আয়ের উৎস ও তা অর্জনের বিস্তারিত বিবরণী দাখিলের নির্দেশ দেয় দুদক। তিনি গত বছরের ২৭ অক্টোবর নিজ স্বাক্ষরে সম্পদ বিবরণী দাখিলের আদেশসহ সম্পদ বিবরণী ফরম গ্রহণ করেন। কিন্তু আদেশ প্রাপ্তির ২১ কার্যদিবসের মধ্যে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেননি।

এ জন্য গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর দুদকের উপপরিচালক নাজমুল হুসাইন বাদী হয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৬(২) ধারায় মামলা করেন। তদন্ত শেষে চলতি বছরের ২৫ আগস্ট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক।

উল্লেখ্য, গত ১৪ জানুয়ারি দুদকের একটি দল রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক এই ডেপুটি গভর্নরকে গ্রেপ্তার করে দুদক। ওই দিন তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। এর পর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ধুনটে চাঁদাবাজির অভিযোগে সাবেক কাউন্সিলরসহ ৩ জন গ্রেপ্তার

ধুনট (বগুড়া) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ২১
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

বগুড়ার ধুনট পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলমসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বুধবার রাত ১২টার দিকে পৌরসভার চর ধুনট এলাকার নিজ বাড়ি থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁদের আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এর আগে মঙ্গলবার রাতে চর ধুনট গ্রামের নির্মাণশ্রমিক ও ঠিকাদার রিপন প্রামাণিককে চাঁদার দাবিতে মারধর করা হয়। এ ঘটনায় আহত রিপন প্রামাণিকের স্ত্রী তাহমিনা আকতার বাদী হয়ে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা করেন। গ্রেপ্তার হওয়া অন্য দুজন হলেন চর ধুনট গ্রামের সোবাহান প্রামাণিক (৪৬) ও তাঁর ছেলে মনির হোসেন (২২)।

পুলিশ ও মামলার সূত্রে জানা যায়, কয়েক দিন আগে জাহাঙ্গীর আলম ও তাঁর সহযোগীরা রিপন প্রামাণিকের কাছে ৫ লাখ টাকার চাঁদা দাবি করেন। কিন্তু রিপন প্রামাণিক টাকা দিতে অস্বীকার করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে জাহাঙ্গীর আলম ও তাঁর লোকজন মঙ্গলবার রাতে রিপন প্রামাণিকের বাড়িতে গিয়ে চাঁদার টাকা চান। তিনি রাজি না হওয়ায় তাঁকে মারধর করা হয়।

এ সময় রিপন প্রামাণিকের চিৎকারে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে জাহাঙ্গীর ও তাঁর সহযোগীরা পালিয়ে যান। পরে স্থানীয়রা আহত রিপন প্রামাণিককে উদ্ধার করে ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। এ ঘটনায় রিপনের স্ত্রী তাহমিনা আকতার বাদী হয়ে জাহাঙ্গীর আলমসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে থানায় চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা করেন। মামলার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে জাহাঙ্গীর আলমসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।

থানাহাজতে থাকা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। স্থানীয় এক ব্যক্তির সঙ্গে রিপন প্রামাণিকের মারামারির ঘটনায় আমাকে জড়িয়ে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে।’

এ বিষয়ে ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুল আলম বলেন, ‘চাঁদাবাজির অভিযোগে করা মামলায় জাহাঙ্গীর আলমসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পরকীয়ার জেরে পুলিশ সদস্য হত্যা মামলায় পুলিশ দম্পতির ফাঁসি

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিদের নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা
মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিদের নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা

সহকর্মী পুলিশ সদস্যকে পরকীয়ার জেরে হত্যার দায়ে এক পুলিশ দম্পতিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন ময়মনসিংহের অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত।

মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিদের নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা
মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিদের নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা

দীর্ঘ তদন্ত ও শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত-১-এর বিচারক হারুন-অর রশিদ। দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি হলেন কনস্টেবল মো. আলাউদ্দিন ও তাঁর স্ত্রী কনস্টেবল নাসরিন নেলী। আলাউদ্দিনের বাড়ি ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার ভবানীপুর এলাকায়।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৪ সালে কনস্টেবল আলাউদ্দিনের স্ত্রী নাসরিন নেলীর সঙ্গে সহকর্মী কনস্টেবল সাইফুল ইসলামের পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই সম্পর্কের জের ধরেই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে ময়মনসিংহের কাঁচিঝুলি এলাকায় প্রেমিকা নেলীর ভাড়া বাসাতেই পরকীয়া প্রেমিক পুলিশ সদস্য সাইফুল ইসলামকে খুন করেন নেলী ও তাঁর স্বামী আলাউদ্দিন।

হত্যাকাণ্ডের পর অভিযুক্ত পুলিশ দম্পতি সাইফুল ইসলামের মরদেহ বস্তাবন্দী করে গুম করার চেষ্টা করেন। তবে লাশ গুম করতে গিয়েই বিপত্তি বাধে। নগরীর টাউন হল মোড়ে পুলিশের তল্লাশির সময় বস্তাবন্দী লাশসহ তাঁরা হাতেনাতে আটক হন।

ঘটনার পর নিহত সাইফুলের মা মোছা. মুলেদা বেগম ২০১৪ সালের ১৩ আগস্ট ময়মনসিংহের কোতোয়ালি থানায় কনস্টেবল আলাউদ্দিন, তাঁর স্ত্রী নাসরিন নেলীসহ আরও অজ্ঞাতনামা দুজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ তদন্ত ও বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত আসামিদের উপস্থিতিতে এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত