Ajker Patrika

শাবির আলোচিত-সমালোচিত ভিসি ফরিদসহ ৪ জনের পদত্যাগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট
আপডেট : ১০ আগস্ট ২০২৪, ২০: ২৪
শাবির আলোচিত-সমালোচিত ভিসি ফরিদসহ ৪ জনের পদত্যাগ

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) আলোচিত-সমালোচিত উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক মো. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ পদত্যাগ করেছেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে আজ শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। আজকের পত্রিকাকে বিষয়টি বিকেলে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রো-ভিসি) অধ্যাপক ড. মো. কবির হোসেন। তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য এক বার্তাও দিয়েছেন। যেখানে তিনি লিখেছেন, শিক্ষার্থীরা চাইলে তিনিও পদত্যাগ করতে প্রস্তুত রয়েছেন।

এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক এস এম সাইফুল ইসলাম, পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন, মেডিকেল প্রশাসক অধ্যাপক আশিফ ইকবালও পদত্যাগ করেছেন। তাঁরা পৃথকভাবে আজ শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার মো. ফজলুর রহমানের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। রেজিস্ট্রার আজকের পত্রিকাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার সব আবাসিক হলের প্রভোস্ট, সহকারী প্রভোস্ট ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা পদত্যাগ করেছে। ওই দিন সকালে সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দেন। এর আগে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনরত শাবি শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পদত্যাগ চেয়ে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন।

যেভাবে আলোচনা-সমালোচনায় অধ্যাপক ফরিদ: ২০২২ সালের ১৩ জানুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তাঁর পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী। এ দাবিতে আন্দোলন চলাকালে ১৬ জানুয়ারি উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন আন্দোলনকারীরা। ওই দিন সন্ধ্যায় পুলিশ শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করলে দুই পক্ষে সংঘর্ষ বাধে। এরপর রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে উপাচার্যকে মুক্ত করে বাসায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে রাতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেন উপাচার্য। এ নির্দেশনা উপেক্ষা করে ওই রাত থেকেই শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। পরদিন থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে টানা অবস্থান নেন তাঁরা। সেখানে ২৮ শিক্ষার্থী টানা ১৩৬ ঘণ্টা অনশন করেন। ২৬ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা অনশন ভেঙে ব্যারিকেড তুলে নেন। এ ঘটনায় ব্যাপক আলোচিত-সমালোচিত হন ভিসি ফরিদ আহমদ।

এদিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে একটি চিঠি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. কবির হোসেন। তিনি লিখেন, ‘স্নেহভাজন শাবিপ্রবির ছাত্রছাত্রীবৃন্দ, আমার শুভেচ্ছা নিও। কোটা সংস্কার আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদসহ যে সকল ছাত্রছাত্রী, সাধারণ জনগণ শহীদ হয়েছেন সে সকল বীর শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে আমার স্নেহভাজন ছাত্রছাত্রীদের কিছু কথা বলতে চাই। আমি শাবির প্রথম প্রভাষক হিসেবে প্রায় ৩৪ বছর চাকরিকালে দল-মত নির্বিশেষ শাবির একাডেমিক ও প্রশাসনিক বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করে আসছি। আমার স্নেহভাজন হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী দেশে-বিদেশে প্রতিষ্ঠিত। আমি সবার জন্য অন্তর থেকে দোয়া করি। আমার শিক্ষকতা জীবনে যেসব ছাত্র-ছাত্রীর ক্লাস-পরীক্ষা নিয়েছি কিংবা নিজ বিভাগসহ অন্যান্য বিভাগের সকল ছাত্র-ছাত্রী যেসব সমস্যা নিয়ে এসেছে, তা সমাধানের চেষ্টা করেছি ও সমাধান করেছি তা ছাত্রছাত্রীরাই আমার সম্পর্কে ভালো বলতে পারবে।’

ড. কবির হোসেন আরও লিখেন, ‘এক বছর আগে রাষ্ট্রপতি আমাকে চার বছরের জন্য প্রো-ভিসি নিয়োগ দিয়েছেন। প্রো-ভিসি হিসেবে নিয়োগের পর ভাইস চ্যান্সেলরের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শুধু উন্নয়নমূলক কাজের গুণগত মান যাচাই-বাছাই ও তদারকির দায়িত্ব পালন করছি। ফলে এক বছরের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি/মোটরসাইকেল/বাইসাইকেল রাখার জন্য পার্কিং তৈরি, সমাজবিজ্ঞান ভবনের সামনের রাস্তা তৈরি এবং সম্প্রতি সমাজবিজ্ঞান ভবন থেকে প্রথম ছাত্রী হল হয়ে মেইন রোড পর্যন্ত হাঁটার এবং গাড়ি চলার রাস্তার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া শাহপরান হল থেকে মেইন গেট পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার, হ্যান্ডবল গ্রাউন্ড ও কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে মাটি ভরাট করে ব্যবহারের উপযোগী করা এবং শাবি মেডিকেল সেন্টার সংস্কার, উন্নয়নসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি।’

উপ-উপাচার্য চিঠিতে লিখেন, ‘অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, আমি সিলেট ছেড়ে পালিয়েছি এ ধরনের খবর রটানো হচ্ছে। কেউ কেউ পদত্যাগ করার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি করছেন। বিষয়টি আমি সুস্পষ্ট করতে চাই, জীবনের অর্ধেক সময়ের বেশি শাবিতে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছি এবং দীর্ঘদিন থেকেই সিলেটে বাসা তৈরি করে পরিবারসহ বসবাস করছি। আমি বর্তমানে নিজ বাসায় অবস্থান করছি।’

উপ-উপাচার্য ড. কবির হোসেন আরও লিখেন, ‘আমার প্রাণপ্রিয় ছাত্রছাত্রী, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করব বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো সমস্যা নিয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী নেতৃবৃন্দ আমার সঙ্গে যেকোনো স্থানে আলোচনা করতে চাইলে আমি তোমাদের স্বাগত জানাই। প্রো-ভিসি হিসেবে সুস্পষ্ট করে আমার সন্তানতুল্য ছাত্রছাত্রীদের বলতে চাই, প্রায় ৩৪ বছর শিক্ষকতা করার পর যদি মনে করো, আমার সেবা তোমাদের আর প্রয়োজন নাই, তাহলে বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দিক নির্দেশনায় মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে আমি পদত্যাগ করতে সর্বদা প্রস্তুত আছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সাগরে বিকল ট্রলার নিয়ে ভাসছিলেন ১৩ জেলে, উদ্ধার করল নৌবাহিনী

কক্সবাজার প্রতিনিধি
উদ্ধার করা ১৩ জেলে। ছবি: সংগৃহীত
উদ্ধার করা ১৩ জেলে। ছবি: সংগৃহীত

বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজার উপকূলে বিকল হয়ে ভাসতে থাকা একটি ট্রলারসহ ১৩ জেলেকে উদ্ধার করেছে নৌবাহিনী। আজ রোববার সকালে নৌবাহিনীর এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গতকাল শনিবার বিকেলে বঙ্গোপসাগরে টহলের সময় নৌবাহিনীর জাহাজ ‘বানৌজা শহীদ মহিবুল্লাহ’ একটি মাছ ধরার ট্রলার ভাসতে দেখে উদ্ধারে নামে। কুতুবদিয়া দ্বীপের লাইট হাউস থেকে প্রায় ২০ মাইল দূরে গভীর সমুদ্রে ট্রলারটির ইঞ্জিন বিকল হয়। ট্রলারে থাকা জেলেরা নৌবাহিনীর জাহাজ দেখতে পেয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য আলো ও হাত দিয়ে সংকেত প্রদর্শন করেন। এ সময় নৌবাহিনীর জাহাজটি সংকেত দেখে বিপদগ্রস্ত জেলে ও ট্রলারের কাছে ছুটে যায়। ঘটনাস্থলে গিয়ে নৌবাহিনীর সদস্যরা ট্রলারসহ জেলেদের উদ্ধার করেন।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, উদ্ধারের পরপরই জেলেদের প্রাথমিক চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় ওষুধ, খাবার ও বিশুদ্ধ পানি দেওয়া হয়। পরে জেলেদের ও ট্রলারটি নিরাপদে তীরে এনে পরিবার ও মালিকপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

জেলেরা জানিয়েছেন, ৬ নভেম্বর থেকে ট্রলারটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে মাঝসমুদ্রে ভাসতে থাকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নাটোরে পদ্মার চরে বিশেষ অভিযানে আটক ২০, বিপুল দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার

নাটোর প্রতিনিধি 
আটক ব্যক্তিদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
আটক ব্যক্তিদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

নাটোর জেলার লালপুর উপজেলার দুর্গম পদ্মার চরাঞ্চল—চর জাজিরা, চর লালপুর এবং চর দিয়ার বাহাদুরপুরসহ বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ সাঁড়াশি অভিযানে ২০ জনকে আটক করা হয়েছে। অভিযানে দুটি আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিপুল পরিমাণ দেশীয় ধারালো অস্ত্র ও সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।

শনিবার দিবাগত রাত থেকে আজ রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত নাটোরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তারিকুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ, র‍্যাব, ডিবি এবং এপিবিএনের চার শতাধিক সদস্য যৌথভাবে এই অভিযান পরিচালনা করেন।

আটক ২০ জনের মধ্যে দুজন হ্যাকার, একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি এবং ছয়টি ওয়ারেন্টের আসামি রয়েছেন। এ ছাড়াও আটক ব্যক্তিদের মধ্যে একজন হত্যা মামলার আসামি এবং দুজন চিহ্নিত মাদক কারবারি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম জানান, চর দিয়ার বাহাদুরপুরের বালুমহালের ছাউনি থেকে দুটি আগ্নেয়াস্ত্র (দেশীয় তৈরি ওয়ান-শুটারগান ও একটি রিভলবার) উদ্ধার করা হয়েছে।

এ ছাড়াও উদ্ধার হওয়া দেশীয় অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ছয়টি বড় ড্যাগার, ২২টি হাঁসুয়া, চারটি চাকু ও ছোরা, দুটি চাপাতি।

উদ্ধার করা অস্ত্র। ছবি: আজকের পত্রিকা
উদ্ধার করা অস্ত্র। ছবি: আজকের পত্রিকা

অভিযানস্থল থেকে একটি টিউবওয়েল এবং অনেকগুলো বালু বিক্রির রসিদ জব্দ করা হয়।

নাটোরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম বলেন, লালপুর উপজেলার চরাঞ্চলে এবং পদ্মা নদীতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য পুলিশের এই বিশেষ অভিযান ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‎বিআরটি প্রকল্পের সেতুর নিচে যুবকের মরদেহ

টঙ্গী (গাজীপুর) প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

গাজীপুরের টঙ্গীতে উড়ালসেতুর নিচে অজ্ঞাতনামা (৩০) এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ‎রোববার সকাল ৯টার দিকে বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের উড়ালসেতুর টঙ্গী স্টেশন রোড অংশের নিচে মরদেহটির সন্ধান মেলে।

‎থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ আলী মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুরের তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানোর প্রস্তুতি নিয়েছেন।

‎স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, রোববার সকালে স্থানীয় লোকজন বিআরটি প্রকল্পের উড়ালসেতুর ৬৮ নম্বর পিলারের পাশে ওই যুবকের মরদেহটি দেখতে পায়। পুলিশকে খবর পাঠালে পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। এই যুবককে দুর্বৃত্তরা অন্য কোথাও হত্যা করে মরদেহটি সেতুর নিচে ফেলে গেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ।

‎টঙ্গী পশ্চিম থানা-পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন অর রশিদের ভাষ্য, যুবকের পরিচয় শনাক্তে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সদস্যদের খবর পাঠানো হয়েছে। আঙুলের ছাপ নিয়ে পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে। মরদেহে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ভিডিও দেখিয়ে ‘ঘর পোড়ানোর’ মামলা; প্রতিবাদে মানববন্ধন

হাতিয়া (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
মিথ্যা মামলা থেকে আসামিকে অব্যাহতির দাবিতে মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী। ছবি: আজকের পত্রিকা
মিথ্যা মামলা থেকে আসামিকে অব্যাহতির দাবিতে মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী। ছবি: আজকের পত্রিকা

নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নে আগুন লাগার কোনো চিহ্ন না থাকা সত্ত্বেও প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে ‘ঘর পোড়ানোর’ মিথ্যা মামলা দায়ের করার অভিযোগ উঠেছে। জমি নিয়ে বিরোধের জেরে অন্য স্থানের আগুনের চিত্র দেখিয়ে এই মামলা করা হয় বলে দাবি করছেন এলাকাবাসী। মিথ্যা মামলায় আসামি হওয়ায় বিপাকে পড়েছে স্থানীয় ব্যবসায়ী বেলাল উদ্দিনের পরিবার। এই মিথ্যা মামলা থেকে প্রতিবেশীকে বাঁচাতে শনিবার (৮ নভেম্বর) বিকেলে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

জানা যায়, গত ১১ আগস্ট নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নে ঘর পোড়ানোর অভিযোগ এনে একটি মামলা করা হয় হাতিয়া ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মজিবুল হকের স্ত্রী শিরীন আকতার বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় ব্যবসায়ী বেলাল উদ্দিনসহ ১০ জনকে আসামি করা হয়। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত তদন্ত কর্মকর্তা কাজী ইমরান হোসেন ঘটনাস্থলে না গিয়ে শুধু বাদীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনাটি সত্য বলে প্রতিবেদন দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে সমালোচনার ঝড় ওঠে। শনিবার বিকেলে দুই শতাধিক লোক নিঝুম দ্বীপ হরিণ বাজারে মানববন্ধন করেন।

মানববন্ধনে বাজারের ব্যবসায়ী, মসজিদের ইমাম, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বক্তব্য দেন।

বক্তারা দৃঢ়ভাবে বলেন, বাজারের পাশে বাদীর বাড়ি এবং এই ঘরটি বাজার থেকে দেখা যায়। এই ঘরে আগুন দেওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। ব্যবসায়ী বেলালের সঙ্গে বাদীর জমি নিয়ে পুরোনো বিরোধ রয়েছে। সে কারণে অন্য জায়গার ছবি দেখিয়ে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে।

তাঁরা মামলার পূর্ণ তদন্ত এবং ব্যবসায়ী বেলালসহ সব আসামির অব্যাহতি দাবি করেন।

এ বিষয়ে মামলার বাদী শিরীন আক্তার জানান, ছয় মাস আগে রাতে তাঁদের ঘরের দক্ষিণ পাশের রান্নাঘরের বেড়ায় আগুন লেগেছিল। প্রতিবেশীরা এসে তা নিভিয়ে ফেলায় তেমন ক্ষতি হয়নি। তবে কে আগুন লাগিয়েছে তা তিনি দেখেননি। পরে কেন তিনি আগুনে ঘর পোড়ানোর মামলা দিলেন, সেই প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লাকী আকতার নিশ্চিত করেছেন, ঘর পোড়ানোর মামলাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্য দিয়ে করা হয়েছে এবং এখানে আগুন লাগার কোনো ঘটনা ঘটেনি।

লাকী আকতার আরও জানান, ব্যবসায়ী বেলাল উদ্দিন স্থানীয় বাসিন্দাদের উপস্থিতিতে নুরবানু থেকে জমিটি ১৪ লাখ টাকায় ক্রয় করেন। এরপর নুরবানুর ছেলে আরও ৮ লাখ টাকা নিয়েও ব্যবসায়ীকে হয়রানি করে আসছেন এবং এ পর্যন্ত চারটি মিথ্যা মামলা দিয়েছেন। এই বিরোধ নিয়ে একাধিকবার সালিস বৈঠক হলেও নুরবানুর ছেলে উপস্থিত হননি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও উপজেলা সমাজসেবা অফিসার কাজী ইমরান হোসেন বলেন, ‘মামলার বাদী ঘরে আগুন দেওয়ার ভিডিও ও ছবি এনে দিয়েছেন। তাতে আমার কাছে ঘটনাটি সত্য বলে মনে হয়েছে। সে মোতাবেক আমি প্রতিবেদন দিয়েছি। আমার সঙ্গে আসামিরা দেখা করেছে। তারা ঘটনাটি সত্য নয় বলে জানিয়েছে। আমি তাদেরকে পুনঃ তদন্তের জন্য আদালতে আবেদন করতে বলেছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত