Ajker Patrika

সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্পপার্ক

শিল্পাঞ্চল গড়ার স্বপ্নে ফাটল

  • ৭১৯ কোটি টাকার প্রকল্প শেষ না করেই প্লট হস্তান্তর, শিল্পোদ্যোক্তাদের ক্ষোভ।
  • অসমাপ্ত অবকাঠামো, নিম্নমানের নির্মাণ ও নানা অনিয়মে ঝুঁকির মুখে শিল্প স্থাপন।
  • আত্মগোপনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন প্রাইভেট লিমিটেডের কর্মকর্তারা।
আব্দুল্লাহ আল মারুফ, সিরাজগঞ্জ
আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০২৫, ১২: ০২
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সিরাজগঞ্জের সদর উপজেলার ছাতিয়ানতলীতে গড়ে উঠছে অন্যতম বৃহৎ বিসিক শিল্পপার্ক। উত্তরবঙ্গকে দেশের অন্যতম শিল্পাঞ্চলে রূপ দেওয়ার স্বপ্ন ছিল এ প্রকল্প ঘিরে। তবে ৭১৯ কোটি টাকার এ প্রকল্পের কাজ শেষ না করেই উদ্যোক্তাদের কাছে প্লট হস্তান্তর করায় ক্ষোভে ফুঁসছেন শিল্পোদ্যোক্তারা।

অভিযোগ রয়েছে, অসমাপ্ত অবকাঠামো, নিম্নমানের নির্মাণ ও নানা অনিয়মের কারণে শিল্প স্থাপন এখন ঝুঁকির মুখে পড়েছে। অনেক প্লটেই মাটি ভরাট হয়নি, ড্রেনেজ ও পানি-সংযোগ অকার্যকর, রাস্তা অসম্পূর্ণ। ফলে বিনিয়োগকারীরা এখন প্লট হাতে পেয়েও কাজে নামতে পারছেন না।

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিসিক শিল্পপার্ক পুরোপুরি চালু হলে প্রায় এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হতে পারে। তবে অসমাপ্ত কাজের কারণে সে সম্ভাবনা এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

উদ্যোক্তারা বলছেন, নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেলেও, এমনকি কয়েক দফা মেয়াদ বাড়ানোর পরও কাজ শেষ হয়নি। অবকাঠামোগত উন্নয়ন দ্রুত সম্পন্ন না হলে বিনিয়োগ ঝুঁকিতে পড়বে এবং সরকারের লক্ষ্য ব্যাহত হবে।

সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্পপার্ক ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও পুকুরের মতো নিচু জমি, কোথাও আবার অর্ধসমাপ্ত রাস্তা। ড্রেনের পাইপ পড়ে রয়েছে। বৃষ্টির পর পানি জমে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। সরকার আর্ট প্রেসের মালিক সিরাজুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের প্লটের বদলে পুকুর দিয়েছেন। হয়তো ভুলবশত পুকুরের জায়গায় প্লট লিখে ফেলেছেন। এখানে মাছ চাষ করা সম্ভব, ফ্যাক্টরি নয়।’

গোল্ডেন প্রিমিয়াম ওয়েল মিলসের স্বত্বাধিকারী শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘যে প্লট আমাদের দেওয়া হয়েছে, সেটা রাস্তার চেয়ে ৫-৬ ফুট নিচে। প্রায় ৫ লাখ সিএফটি বালু কম দেওয়া হয়েছে। এই অবস্থায় শিল্প স্থাপন করা কঠিন।’

আব্দুর রাজ্জাক নামের এক উদ্যোক্তা বলেন, ‘এখানে অনেক অনিয়ম হয়েছে। এখানে আমাদের মতো উদ্যোক্তারা এখন বিনিয়োগ করতেই ভয় পাচ্ছি। তবে যাঁরা এ অনিয়মের সঙ্গে জড়িত, তাঁদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি করি।’

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে অনুমোদনের পর ২০২১ সালে কাজ শুরু হয়। ২০২৩ সালের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সময় বাড়িয়েও প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি। ৭১৯ কোটি টাকায় নির্মিত এই বিশাল শিল্পপার্কে রয়েছে ৮২৯টি প্লট। এর মধ্যে ৫৫০টি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য, আর দেশীয় উদ্যোক্তাদের জন্য বরাদ্দ ২৭৯টি।

সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি সাইদুর রহমান বাচ্চু বলেন, ‘এই শিল্পপার্ক হতে পারে দেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় শিল্পাঞ্চল। নৌ, রেল ও সড়ক পথের সুবিধা থাকায় বিনিয়োগকারীদের জন্য এখানে বিশাল সুযোগ রয়েছে। কিন্তু অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগগুলো শিল্প মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’

বিসিক সিরাজগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মাহবুবুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দেশি উদ্যোক্তাদের জন্য জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৯৫ একর। এতে প্লটের সংখ্যা রয়েছে ২৭৯টি। আমরা প্রথম পর্যায়ে ১৯৬টি বরাদ্দ দিয়েছি। আর দ্বিতীয় পর্যায়ে ৮৩টি প্লট প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আর যেখানে প্লটের মাটি বা বালু কম রয়েছে, সেখানে ঠিকাদারের মাধ্যমে সে কাজগুলো করা হবে।’

স্থানীয়ভাবে অনিয়ম, দুর্নীতি বা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের প্রভাব নিয়ে অভিযোগ উঠেছে; এ বিষয়ে আপনার দপ্তরের অবস্থান কী? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি ২০২৫ সালে এখানে জয়েন করেছি। এর আগে যাঁরা দায়িত্ব ছিলেন, তাঁদের আপনি এ প্রশ্ন করেন।’

অভিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন প্রাইভেট লিমিটেডের কর্মকর্তারা আত্মগোপনে থাকায় তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে অপরাধ: ১৪ ভাগ করে মিরপুর নিয়ন্ত্রণ করছে চার শীর্ষ সন্ত্রাসী

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

উত্তরায় জুলাই রেভেলসের দুই সদস্যকে কুপিয়ে জখম

নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে: তিন দলের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...