Ajker Patrika

লালমনিরহাট

সড়কের সংস্কারকাজ দখল

খোরশেদ আলম সাগর, লালমনিরহাট
কালীগঞ্জের চন্দ্রপুর ইউনিয়নের বুড়িরহাট-চন্দ্রপুর সড়ক পাকাকরণে কাটা হচ্ছে মাটি। সম্প্রতি তোলা ছবি। 	আজকের পত্রিকা
কালীগঞ্জের চন্দ্রপুর ইউনিয়নের বুড়িরহাট-চন্দ্রপুর সড়ক পাকাকরণে কাটা হচ্ছে মাটি। সম্প্রতি তোলা ছবি। আজকের পত্রিকা

লালমনিরহাটে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে সংস্কারকাজের দরপত্র প্রক্রিয়াধীন থাকা দুটি সড়ক দখলের অভিযোগ উঠেছে। তাঁরা সেখানে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ও কার্যাদেশ ছাড়াই কাজ শুরু করেছেন। সেই সঙ্গে কাজ পাওয়া সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের তা ছেড়ে দিতে হুমকি দিচ্ছেন।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুরে ৩ কিলোমিটার ৯৩ মিটার এবং চলবলায় ৫ কিলোমিটার ২৫০ মিটার সড়ক উন্নয়ন বা পাকাকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে যথাক্রমে ৩ কোটি ৯১ লাখ ১৬ হাজার ৫১৯ টাকা এবং ৫ কোটি ৮৭ হাজার ৬০৭ টাকা। দরপত্র অনুযায়ী চন্দ্রপুরে মোহাম্মদ ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেড এবং চলবলায় বরেন্দ্র কনস্ট্রাকশন লিমিটেড কাজ পায়। তারা ইতিমধ্যে পারফরমেন্স সিকিউরিটি বা কার্যসম্পাদন জামানত জমা দিয়েছে। এখন চুক্তিপত্র তৈরি সাপেক্ষে বাস্তবায়নকারী দপ্তর কার্যাদেশ দিলে কাজ শুরুর কথা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুটির।

কিন্তু এরই মধ্যে সড়ক দুটি দখলে নিয়ে কাজ শুরু করেছেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা। এ বিষয়ে দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীকে পৃথক দুটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

চলবলা ইউনিয়নের দুহুলী-জোরগাছ সড়কের ব্যাপারে অভিযোগে বলা হয়, কাজটি না করে ছেড়ে দেওয়ার জন্য নানা হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানো হয়। তাতেও কাজ না হওয়ায় ৭ আগস্ট রাস্তাটি দখল করে মাটি কাটা শুরু করা হয়। এতে দখলদার হিসেবে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও পৌর বিএনপির সভাপতি আফজাল হোসেন, আদিতমারী উপজেলার পলাশী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হামিদুল ইসলাম এবং সাহাদাত হোসেন নামের এক ঠিকাদারের নাম উল্লেখ রয়েছে।

অপর দিকে চন্দ্রপুর ইউনিয়নের বুড়িরহাট-চন্দ্রপুর সড়কের কাজের বিষয়ে অভিযোগ করা হয়, কে বা কার নেতৃত্বে পলাশী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হামিদুল ১৫ আগস্ট থেকে জোর করে সড়কে মাটি কাটা শুরু করেছেন।

দুই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এলজিইডির কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী গত রোববার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) চিঠি দেন। চিঠি পেয়ে সোমবার দুপুরে ইউএনও মোছা. জাকিয়া সুলতানা দুটি রাস্তা পরিদর্শন শেষে কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেন। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইউএনও ঘটনাস্থল থেকে আসার পরপরই আবার কাজ শুরু করা হয়।

চন্দ্রপুরে গিয়ে ঘটনাস্থলে পাওয়া যায় বিএনপি নেতা হামিদুলের ছোট ভাই শাহীনকে। তাঁর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘হামিদুল ভাই ও আফজাল ভাইয়ের কাজ আমি তদারকি করছি মাত্র।’

সেখানকার শ্রমিক হরিকান্ত বলেন, ‘ঠিকাদার হামিদুল ভাইয়ের নির্দেশে এই সড়কের কাজ করছি। হামিদুলের ছোট ভাই কাজের দেখভাল করছেন।’

এ ছাড়া চলবলা ইউনিয়নে গিয়েও দেখা গেছে শ্রমিকেরা সড়কে কাজ করছেন।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্সের নির্বাহী পরিচালক এলাহী বকস বলেন, ‘নির্বাহী প্রকৌশলী চুক্তিপত্র শেষে কার্যাদেশ দিলে আমরা কাজ শুরু করব। কিন্তু এরই মাঝে রাস্তাটি দখল করে বক্স কাটিং (মাটি কাটা) শুরু করা হয়েছে। এর আগে জেলার একজন নেতা আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং লালমনিরহাট এলজিইডি অফিসে গেলে মারপিটসহ হত্যার হুমকিও দিয়েছেন।’

বরেন্দ্র কনস্ট্রাকশনের পক্ষে কাজ তদারকির দায়িত্ব পাওয়া মেসার্স বর্ণা ট্রেডার্সের মালিক শাহ আযম বলেন, ‘বিএনপি নেতা আফজাল, হামিদুল ও সাহাদাত কাজটি থেকে সরে যেতে হুমকি ও ভয়ভীতি দেন। কিন্তু সরে না যাওয়ায় জোরপূর্বক রাস্তাটি দখল করে তাঁরা ক্ষমতার জোরে কাজ শুরু করেছেন। এ নিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।’

জানতে চাইলে বিএনপি নেতা হামিদুল বলেন, ‘আমি কোনো কাজ করছি না।’ কিন্তু তাঁর ছোট ভাই তাঁর কথা বলেছেন জানালে তিনি আর কোনো কথা না বলে ফোন কেটে দেন।

অন্যদিকে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল বলেন, ‘কেউ আমার নাম ভাঙাতে পারে। আমি তো ওই রাস্তায় যাইনি। হামিদুল বিএনপি করলেও সে তো ঠিকাদার, তাই সে (কাজ) করতেই পারে। অনেকেই আমার নাম ব্যবহার করে থাকে। আমার নাম ভাঙানোর বিষয়টি সোমবার রাতে শুনতে পেয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীকে বিষয়টি আপস করতে বলেছি। যাঁরা অভিযোগ করেছেন তাঁরাও মূল ঠিকাদার নন। প্রকৌশলীদের কারণে আজকে এ অবস্থা।’

এ বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী হাবীবুর রহমান জানান, প্রথমে মাঠকর্মীদের পাঠিয়ে কাজ বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হলেও তাঁরা সফল হননি। অবশেষে উপজেলা প্রশাসনকে বিষয়টি লিখিতভাবে অবগত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়।

কালীগঞ্জের ইউএনও জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছি। আমাকে দেখে তারা কাজ বন্ধ করেছিল। পরে আবারও চালু করেছে শুনে অবৈধ দখলদারদের গ্রেপ্তার করতে থানা-পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছি। তারা গ্রেপ্তার করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

যোগাযোগ করা হলে এলজিইডির লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী কাওছার আলম বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত কারও সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করিনি। চুক্তি সম্পাদনের পর কার্যাদেশ দেওয়া হয়। তারপর সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আমাদের মাঠকর্মীদের উপস্থিতিতে কাজ শুরু করবে। আমাদের না জানিয়ে এবং কার্যাদেশের আগে কাজ করা অবৈধ। আমরা তা বন্ধ করতে স্থানীয় প্রশাসনকে লিখিত চিঠি দিয়েছি, তারা ব্যবস্থা নেবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত