Ajker Patrika

বোদার নৌকাডুবি: ‘নিজের জীবন দিয়ে মা আমাকে বাঁচিয়ে দিলেন’

সাদ্দাম হোসেন, ঠাকুরগাঁও
বোদার নৌকাডুবি: ‘নিজের জীবন দিয়ে মা আমাকে বাঁচিয়ে দিলেন’

‘আমি সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে চেয়েছি, কিন্তু পারিনি। মুখের ভেতর গলগল করে ঢুকে পড়ছে নদীর ঘোলা জল। আমার সর্বোচ্চ দিয়ে নদীর ঘাটে আসার চেষ্টা করছি এগিয়ে যেতে, কিন্তু পারছি না। শাড়ি আরও জড়িয়ে যাচ্ছে। অসাড় করে দিচ্ছে আমার পা। মা আমাকে টেনে নদীর কূলে আনার চেষ্টা করে। কিন্তু তীব্র স্রোতে কুলিয়ে উঠতে না পেরে আমার হাত ছেড়ে দেন তিনি। আমাকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেই তলিয়ে যায় অতলান্ত জলের গভীরে। আমি আর ভেসে থাকতে পারিনি। তবুও প্রাণপণ সাঁতরানোর চেষ্টা করছি, কিন্তু পারছি না। তারপর আর কিছু মনে থাকে না। এরপর চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি আমি নদীর ঘাটে। এরপর কয়েকজন নারী আমার পেটে চাপ দিয়ে মুখ দিয়ে পানি বের করছে।’ 

মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে ফেরার লোমহর্ষক এমন বর্ণনা দিলেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার দেবীপুর ইউনিয়নের পাঞ্জিয়াপাড়া গ্রামের স্কুলশিক্ষক শক্তি পদ রায়ের মেয়ে তনুশ্রী রায়। 

গত ২৫ সেপ্টেম্বর (রোববার) অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ুয়া এই শিক্ষার্থী পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার বদ্বেশরী মন্দিরে মহালয় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন মা ও স্বজনসহ একই পরিবারের ১১ জন। তনুশ্রীসহ ছয়জন প্রাণে বেঁচে ফিরলেও তাঁর মা ও পরিবারের অন্যরা করতোয়া নদীর আউলিয়ার ঘাটে নৌকা ডুবিতে মারা যান। তনুশ্রীর মা ঝরণা রাণী বালাসহ পরিবারের পাঁচজনের মরদেহ ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল উদ্ধার করে। 

মৃত্যুর মুখ থেকে ফেরার সেই স্মৃতি ভুলতে পারছেন না তনুশ্রী। সেদিনের ভয়াল দৃশ্য বারবার তার চোখে ভেসে উঠছে। মা ও স্বজন হারানোর বেদনায় মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি। আজ রোববার নৌকাডুবিতে নিহত তনুর মা ও তাঁর স্বজনদের শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান শেষে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। 

এ সময় তনু বলেন, ‘আমার মা আমাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখছিল। মা বলতেন, তুমি ভালো মানুষ হয়ে, বটগাছের মতো মানুষকে ছায়া দেবে, মমতা দেবে। অসহায় মানুষের সেবায় আত্ম উৎসর্গ করারও পরামর্শ দিতেন আমাকে। মায়ের সেই স্বপ্ন পূরণে হয়তো আমি বেঁচে গেছি।’ এই বলে কেঁদে ফেলেন তনু। তার কান্নায় আশপাশের প্রতিবেশীরাও কেঁদে ওঠেন। 

তনুর বড়বোন তুষ্টি রংপুর কারমাইকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। বাবা ও তাঁর বড় বোন পুণ্যতীর্থ  যাত্রা অনুষ্ঠানে যোগ দেননি। মা ও তাঁর নানির বাড়ির ৯ জন মিলে মহালয় অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। 

‘চোখের সামনে মায়ের মৃত্যু দেখলাম। আর কেউ যেন এমন ঘটনা শিকার না হয়।’ এই বলে আবারও কান্নায় ভেঙে পড়েন তনু। এ সময় তিনি বলে ওঠেন, ‘সবার মা রইল, শুধু আমার মা আকাশের তারা হয়ে রইল।’ এই দুর্ঘটনার জন্য পূজা আয়োজক, প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা ও দায়িত্ব অবহেলাকে দায়ী করেন এই শিক্ষার্থী। 

উল্লেখ্য, গত ২৫ সেপ্টেম্বর (রোববার) বেলা ৩টার দিকে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নে অবস্থিত করতোয়া নদীর আউলিয়া ঘাট থেকে শতাধিক পুণ্যার্থী নিয়ে একটি নৌকা বদেশ্বরী মন্দিরে যাচ্ছিল। নৌকাটি নদীর মাঝে গেলে মোড় নেওয়ার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডুবে যায়। এ ঘটনায় মোট ৬৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এদের মধ্যে নারী ৩০ জন, পুরুষ ১৮ জন এবং শিশু ২১ জন। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত