Ajker Patrika

ডিঙি নৌকায় আব্দুল মতিনের ভাসা জীবন

আব্দুর রহিম পায়েল, গঙ্গাচড়া
আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২১, ১০: ৪০
ডিঙি নৌকায় আব্দুল মতিনের ভাসা জীবন

ছোট্ট একটি ডিঙি নৌকা। একটি পরিবারের বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল। একসময় অনেক জমিজমা ছিল। আজ একেবারেই নিঃস্ব। তিস্তা নদী কেড়ে নিয়েছে তাঁর সবকিছু। ডিঙি নৌকাটি আঁকড়ে ধরেই গত ৩০ বছর ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন আব্দুল মতিন।

আব্দুল মতিনের (৫৫) বাড়ি রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার গজঘণ্টা ইউনিয়নের চর ছালাপাক গ্রামে। 

বর্তমানে ছালাপাক গ্রামের অধিকাংশ স্থানই তিস্তা নদীর গর্ভে রয়েছে। অবশিষ্টাংশ রয়েছে চর হিসেবে। তাই গ্রামটিকে এখন বলা হয় চর ছালাপাক গ্রাম। এই গ্রামের অধিবাসী সবাই নদীভাঙা পরিবার। এদের কেউ কেউ ১০ বার পর্যন্ত নদীভাঙনের শিকার হয়েছে। 

আব্দুল মতিনের পিতা মৃত আব্দুল আউয়াল। তিনিও জন্মেছিলেন ওই ছালাপাক গ্রামে। আব্দুল আউয়ালের ছিল চাষাবাদের ২ বিশের অধিক (প্রায় ৬ একর) জমি। তাঁর ছিল ফলের বাগান, পুকুরে মাছ, গোয়ালভরা গরু-ছাগল। ছিল দুধের গাভি, হাঁস, মুরগি, কবুতর। মাছ, মাংস, দুধ, ডিম— কোনো কিছুরই অভাব ছিল না তাঁর সংসারে। চার ছেলে, তিন মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে তাঁর ছিল সুখী-সমৃদ্ধ একটি পরিবার। প্রায় ৩০ বছর আগের কথা। সর্বনাশা তিস্তার ভয়াল থাবার শিকার হয় আব্দুল আউয়ালের পরিবার। নিঃস্ব আব্দুল আউয়াল ছালাপাক চরেই বসতি গড়েন অন্যের জমিতে। এরই মধ্যে রোগে-শোকে ভুগে অল্প দিনের মধ্যে মারা যান তিনি। পরে মতিন মিয়াসহ আব্দুল আউয়ালের অন্য ছেলেরা অন্যের জমিতে কাজ করে কিংবা বিভিন্ন জেলায় গিয়ে দিনমজুরের কাজ করে জীবিকা চালাতে থাকেন। পর্যায়ক্রমে চার ছেলেই বিয়ে করে নিজ নিজ সংসার গড়েন। 

আব্দুল মতিনের পরিচয় এখন মতিন মাঝি। ছোট্ট নৌকাটি বড় করার সাধ তাঁর ৩০ বছরের। এই সাধ আজও পূরণ হয়নি। ছোট্ট ডিঙি নৌকায় একসঙ্গে তিন-চারজনের বেশি পারাপার করা যায় না। চার ছেলের বড়টি ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ করেন। দ্বিতীয় ছেলে দিনমজুরি করেন। বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ছোট ২ ছেলে ও ১ মেয়ে গ্রামের স্কুলে লেখাপড়া করছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত