Ajker Patrika

দিনে পাথর সংগ্রহ, রাতে চা–পাতা তোলেন পঞ্চগড়ের শ্রমিকেরা

প্রতিনিধি
আপডেট : ২২ জুন ২০২১, ১৮: ৩৪
দিনে পাথর সংগ্রহ, রাতে চা–পাতা তোলেন পঞ্চগড়ের শ্রমিকেরা

পঞ্চগড়: গভীর রাতে ছোট ছোট আলো নড়াচড়া করছে। দূর থেকে হঠাৎ কেউ দেখলে ভূত–প্রেত ভেবে ভয় পেয়ে যেতে পারেন। কল্পনায় যাদের ভূত–প্রেত ভাবছেন, এঁরা মূলত রাতের চা–শ্রমিক। রাত ২টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে মাথায় টর্চ বেঁধে চা–বাগানে নেমে পড়েন তাঁরা। আবার তাঁরাই দিনের বেলা হয়ে যান পাথর শ্রমিক।

সোমবার পঞ্চগড়ের পাথর তোলার বিভিন্ন এলাকা এবং বাগানগুলোতে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়। দিনের বেলায় পাথর তোলার কাজ এবং রাতে দল বেঁধে চা সংগ্রহ করছেন তাঁরা। প্রতিটি দলে ১০ থেকে ১৫ জন শ্রমিক দেখা যায়। 
 
চা–বাগানের একাধিক শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একসময় দিনের বেলায় সূর্যের কড়া তাপ সয়েই তাঁদের চা–পাতা তোলার কষ্টসাধ্য কাজ করতে হতো। এতে যেমন তাঁদের ভোগান্তি পোহাতে হতো, তেমনি শুকিয়ে যেত পাতা। কারখানার মালিকেরাও নিতে চাইতেন না শুকনো পাতা। বছরখানিক ধরে শ্রমিকদের মধ্যরাত থেকে পাতা তোলার কাজ শুরু হয়। দিনদিন বাড়তে থাকে রাতের শ্রমিকদের সংখ্যা। প্রতি কেজি কাঁচা চা–পাতা তোলার বিনিময়ে বাগানমালিকেরা শ্রমিকদের মজুরি দেন তিন টাকা। একজন রাতের শ্রমিক প্রতিদিন পাতা তুলতে পারেন ২০০ থেকে ২৫০ কেজি। সেই হিসাবে তাঁদের দৈনিক ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত আয় হয় বলে জানা যায়। 
 
শ্রমিকেরা আরও জানান, রাত ৯টা থেকে ১০টার মধ্যেই তাঁরা ঘুমিয়ে পড়েন। রাত ২টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে উঠে পড়েন বিছানা থেকে। তারপর হাতে চা–পাতা কাটার চাকু আর মাথায় সার্চলাইট বা মোবাইলের লাইট বেঁধে নেমে পড়েন চা–বাগানে। সকাল ১০টার মধ্যেই পাতা তুলে তা কারখানায় পাঠানোর পর বাড়ি ফেরেন তাঁরা। এ ছাড়া পরদিন দিনের বেলা আবার অন্য কাজ করেন বলে জানান তাঁরা। 

তেঁতুলিয়া উপজেলার সফল চা–বাগানের মালিক কাজী আনিছুর রহমান জানান, মূলত যাঁরা এখন চা–বাগানে কাজ করছেন, তাঁরা আগে পাথর সংগ্রহের কাজ করতেন। পাথর সংগ্রহে মজুরি বেশি। এসব শ্রমিকই এখন রাতের আঁধারে চা প্লাকিং–এর কাজ করছেন, আবার দিনে তুলছেন নদীর পাথর। এভাবে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। 

পঞ্চগড় সদর উপজেলার রাতের চা–শ্রমিক বাবুল হোসেন বলেন, `আমি বছরখানিক ধরে রাতে চা–পাতা তোলার কাজ করছি। রাত ২টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত কাজ করি আমরা। এতে জনপ্রতি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা মজুরি পাই। আবার দিনের বেলায় অন্য কাজ করতে পারি। এই দুইভাবে কাজ করে আমাদের সংসার ভালো চলছে।' 
 
ফারুক ইসলাম বলেন, আগে দিনে চা–পাতা তোলার কাজ করতাম। কিন্তু প্রচণ্ড রোদের কারণে বেশিক্ষণ তোলা যেত না। বেশি পাতা তুলতেও পারতাম না। রাতে পরিবেশ শান্ত থাকে, রোদের ভয় নাই, তাই রাতে চা–পাতা তোলা শুরু করি। মাথার মধ্যে লাইট বেঁধে নিয়ে কাজ শুরু করি। রাতে দ্রুত ও আরামে কাজ করা যায়। 
 
বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক অফিসের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন বলেন, পঞ্চগড়ের চা–শিল্পে চাষিদের পাশাপাশি ২০ থেকে ২৫ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। তাঁরা আগে অলস সময় কাটাতেন। তাঁদের কোনো কাজ ছিল না। এখন চা–বাগানে কাজ করে তাঁরা সচ্ছলতা পেয়েছেন। বিশেষ করে যাঁরা রাতে চা–পাতা তোলার কাজ করছেন, তাঁরা বেশি লাভবান হচ্ছেন। তাঁরা রাতে চা–বাগানে পাতা তোলার কাজ করছেন এবং দিনের বেলায় অন্য কাজ করছেন। এই দ্বৈত আয়ে সংসার ভালো চলছে তাঁদের। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত