Ajker Patrika

সেদিন বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল পুরো শহর 

আনিসুল হক জুয়েল, দিনাজপুর
সেদিন বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল পুরো শহর 

বিস্ফোরণে পুরো শহর কেঁপে উঠেছিল সেদিন। 
দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়সহ আশপাশের কয়েকটি জেলার আট শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা তখন ব্যস্ত ছিলেন পাকিস্তানী সেনাদের ফেলে যাওয়া মাইন, গোলাবারুদ ও অন্যান্য অস্ত্র সংগ্রহের কাজে। দিনাজপুর শহরের মহারাজা গিরিজানাথ হাই স্কুলে ছিল ট্রানজিট ক্যাম্প। সেখান থেকে কয়েকটি গ্রুপে ভাগ হয়ে মুক্তিযোদ্ধারা সকালে বেড়িয়ে পড়তেন পুঁতে রাখা ও পড়ে থাকা অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারে। সন্ধ্যার দিকে উদ্ধার করা মাইন ও অস্ত্রশস্ত্র এনে জমা করা হতো মহারাজা স্কুল মাঠের পশ্চিম দিকে মসজিদের পাশে খনন করা বাঙ্কারে।

কোনো রকম দুর্ঘটনা ছাড়াই কাজটি চলছিল। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার ২১ দিনের মাথায়, ১৯৭২ সালের ৬ জানুয়ারি ঘটে যায় এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা। উদ্ধার করা অস্ত্র বাঙ্কারে নামানোর সময় একজন মুক্তিযোদ্ধার হাত থেকে অসাবধানতাবশত একটি মাইন পড়ে গেলে বাঙ্কাকারে রাখা পুরো অস্ত্রভাণ্ডার বিস্ফোরিত হয়। সে বিস্ফোরণে ভয়ানকভাবে কেঁপে ওঠে দিনাজপুরের মাটি।

আগুনের লেলিহান শিখায় আলোকিত হয়ে ওঠে গোটা শহর। ধারণা করা হয়, এতে প্রায় ৫০০ মুক্তিযোদ্ধা মারা যান এবং বহুসংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। 

ঘটনার ৫১ বছর পরেও বিস্ফোরণের শব্দ, আগুনের শিখা আর কেঁপে ওঠা শহরের স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছেন অনেকেই। তেমনই একজন বীরমুক্তিযোদ্ধা সফিকুল হক ছুটু। ঘটনার সময় তিনি ছিলেন শহরের টেকনিক্যাল মোড়ে। সেখান থেকে তিনি প্রথমে আকাশে একটি আগুনের গোলা দেখতে পান। তারপর প্রচণ্ড শব্দে কেঁপে ওঠে পায়ের নিচের মাটি। কী ঘটেছে অনুমান করতে পেরে তিনি ছুটতে থাকেন ক্যাম্পের দিকে। ততক্ষণে শহরের মানুষ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে জীবিত ও মৃতদের উদ্ধারে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। যারা আহত ছিলেন তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। অনেকে বিল্ডিংয়ের ভেতরে ছিলেন। যারা ভেতরে ছিলেন তাদের অধিকাংশই মারা গছেন।

বিস্ফোরণের ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখতে মহারাজা স্কুল মাঠে ১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ব্যয়ে গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণের কাজ চলছে।সফিকুল হক ছুটু জানান, সে দিনের ওই মাইন বিস্ফোরণে শুধু মুক্তিযোদ্ধাই নয়, শহরের উত্তর বালুবাড়ি কুমারপাড়া মহল্লার ১৫ জন বাসিন্দাও মারা গিয়েছিলেন। ভয়াবহ সে বিস্ফোরণে দিনাজপুর শহরের অধিকাংশ পাকা ভবনে ফাটল ধরে এবং আশপাশের কয়েকটি গ্রামের মাটির ঘরবাড়ি ভেঙ্গে পড়ে। বীর মুক্তিযোদ্ধা সফিকুল হক ছুটু পরবর্তীতে দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ ছাড়া তিনি ‘৬ জানুয়ারি স্মৃতিপরিষদ’ নামের সংগঠনের সভাপতি হয়েছিলেন। সহযোদ্ধাদের মর্মান্তিক মৃত্যুর সে স্মৃতি ধরে রাখতেই তিনি এখন কাজ করছেন।

সফিকুল হক ছুটু জানান, এত বড় দুর্ঘটনা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বিরল। এ ঘটনার সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণ করতে হবে। দিনাজপুরের এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা মুক্তিযুদ্ধের ধারাবাহিক ইতিহাসের অংশ। ইতিহাস সংরক্ষণের জন্য এ ঘটনার কথা পাঠ্যসূচীতে সংযোজন করতে হবে।’

এ ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখতে মহারাজা স্কুল মাঠে ১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ব্যয়ে গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণের কাজ চলছে। এটির নির্মাণ কাজ চলতি মাসেই শেষ হবে বলে জানিয়েছেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন।

৬ জানুয়ারী স্মৃতি পরিষদ প্রতি বছরের মতো এবারও বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে দিবসটি পালন করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পাকিস্তানে কীভাবে হামলা চালাতে পারে ভারত, ইতিহাস যা বলছে

প্রবাসীর রেমিট্যান্সের অর্থ আত্মসাৎ, নারী ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে

জনবল-সরঞ্জাম বেশি হলেও সমরশক্তিতে ভারত কি পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে

ভারতের সঙ্গে সংঘাতে পাকিস্তানের ভাগ্যনিয়ন্তা সেনাপ্রধান জেনারেল মুনির

ইতিহাস গড়ে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদে আইএসআইপ্রধান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত