Ajker Patrika

সৈয়দপুরে রেললাইন সংস্কারে অনিয়মের অভিযোগ

রেজা মাহমুদ, সৈয়দপুর (নীলফামারী)
আপডেট : ২৩ মে ২০২৩, ২০: ২৯
সৈয়দপুরে রেললাইন সংস্কারে অনিয়মের অভিযোগ

ট্রেন চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ায় নীলফামারীর সৈয়দপুরে প্রায়ই মালবাহী ট্রেন লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটত। এ কারণে দীর্ঘদিন পর এখানকার লুপলাইনগুলোর সংস্কার করা হচ্ছে। কিন্তু সংস্কারকাজ দায়সারাভাবে করার অভিযোগ উঠেছে। সংস্কারকাজে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করায় এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রেলওয়ে কর্মচারী ও স্থানীয়রা।

অভিযোগের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, কাজের মানের সঙ্গে কোনো আপস করা হবে না। অভিযোগ পাওয়ার পর সংস্কারকাজ পরিদর্শন শেষে নিম্নমানের উপকরণ অপসারণ করা হয়েছে।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন সংস্কার না করা ও ভারত থেকে আমদানি করা পাথর ওয়াগন থেকে ভেকুমেশিন দিয়ে ট্রাকে লোড করায় স্টেশনের লুপলাইনগুলো বেহাল হয়ে পড়ে। এতে মালবাহী ট্রেনের প্রায়ই লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটত। এ নিয়ে আজকের পত্রিকাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। এ কারণে স্থানীয় রেলওয়ে দপ্তর ওই লাইন চলাচলের জন্য অনুপযোগী ঘোষণা করে।

এদিকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ লুপলাইন সংস্কারের জন্য দরপত্রের আহ্বান করে। দরপত্র অনুযায়ী স্টেশনের উত্তরে রেলওয়ের সংকেত ঘর ও দক্ষিণে দুই নম্বর রেলক্রসিং পর্যন্ত ১ হাজার ৪৪০ মিটার রেলপথ সংস্কারের জন্য ৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।

দরপত্রের মাধ্যমে কাজটি পায় যশোরের মেসার্স ক্যাসেল কনস্ট্রাকশন নামে রেলওয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে সংস্কারকাজ শুরু করে। আগামী জুলাই মাসে কাজটি শেষ হওয়ার কথা।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে রেলের দায়িত্বশীল দুজন কর্মকর্তা বলেন, শিডিউল অনুযায়ী প্রতিটি রেলপথের রেললাইন উত্তোলনের পর ২১ ইঞ্চি গভীর করে বক্স আকারে নিচের অংশ (সাব বেজ) তৈরি করার কথা। কিন্তু ২১ ইঞ্চির জায়গায় কোথাও কোথাও মাত্র ১০-১১ ইঞ্চি গভীরতায় সাব বেজ করা হচ্ছে। 

রেললাইনের পাশে মাটির নিচ থেকে পুরোনো ৩ নম্বর ইট তুলে খোয়া করে সংস্কার কাজের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছেতাঁরা আরও বলেন, সাব বেজ তৈরিতে খোয়া ও বালুর মিশ্রণ ৬০ অনুপাত ৪০ হওয়ার কথা। কিন্তু বালু বেশি পরিমাণে ব্যবহার করা হচ্ছে। তা ছাড়া ৩৮ মিলিমিটার পরিমাপের খোয়া ব্যবহার করার কথা থাকলেও বড় আকারের খোয়া ব্যবহার করা হয়েছে। এতে সাব বেজ ঠিকমতো কমপ্যাক্ট না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম খোয়া ব্যবহার করা হচ্ছে। আর রেলপথের পাশের মাটির নিচে পড়ে থাকা পুরোনো তিন নম্বর ইট তুলে তা খোয়া করে ব্যবহার করা হচ্ছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির মালিকের সঙ্গে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ না হওয়ায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া যায়নি। ঠিকাদারের স্থানীয় প্রতিনিধি মো. রবিনের কাছেও জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে সৈয়দপুর রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (পথ) মো. সুলতান মৃধা বলেন, সংস্কারকাজটি করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আর কাজের মান যাচাই করার দায়িত্ব স্থানীয় রেলওয়ে কার্য বিভাগের। তাই বিষয়টি কার্য বিভাগই বলতে পারবে।

সৈয়দপুর রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (কার্য) শরিফুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর সংস্কারকাজ এলাকায় যাই। সেখানে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে নিম্নমানের খোয়া অপসারণ করা হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিকে সতর্ক করা হয়েছে। 
 
এ নিয়ে কথা হয় সিনিয়র সহকারী ঊর্ধ্বতন প্রকৌশলী (ইনচার্জ) কাজী ওয়ালিউল হকের সঙ্গে। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, কাজের মানের সঙ্গে কোনো আপস করা হবে না। কাজের মান শতভাগ বুঝে নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে সংস্কারকাজ নিয়মিত পরিদর্শন করা হবে বলে জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত