Ajker Patrika

কুড়িগ্রামের ধরলা: কাজ শেষ হওয়ার আগেই বাঁধে ধস, আতঙ্কে মানুষ

  • দর উপজেলার সারডোব গ্রামে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ধস নেমেছে
  • গত শুক্রবার রাত থেকে ধস শুরু হয়, ভাঙন-আতঙ্কে স্থানীয়রা
  • ধস ঠেকাতে জিও ব্যাগ ফেলে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে পাউবো
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
কুড়িগ্রামের সারডোব গ্রামে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ধস মেরামতে জিও ব্যাগ ফেলছেন শ্রমিকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
কুড়িগ্রামের সারডোব গ্রামে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ধস মেরামতে জিও ব্যাগ ফেলছেন শ্রমিকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের সারডোব গ্রামে ধরলা নদীর বাম তীরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ধস নেমেছে। এতে হুমকিতে পড়েছে হাজারো পরিবার এবং কয়েক হাজার হেক্টর কৃষিজমি। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ধস ঠেকাতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ডাম্পিং জোনে পর্যাপ্ত সিসি ব্লক ফেলা হয়নি। কাজে অনিয়ম আর ব্লকের স্বল্পতার কারণে বাঁধের ঢালের সিসি ব্লকে ধস নেমেছে। এতে করে ৩৫০ মিটার দীর্ঘ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটির ঢালের ৩০ মিটার অংশের সিসি ব্লক একের পর এক ধসে যাচ্ছে। ধস ঠেকানো না গেলে দুর্যোগ নেমে আসার আশঙ্কা করেছে এলাকাবাসী।

পাউবো বলছে, ডাম্পিং জোনে ফেলা ব্লক কোনো কারণে সরে গিয়ে ধস শুরু হয়ে থাকতে পারে। বাঁধে ধস ঠেকাতে ইতিমধ্যেই বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা চলছে।

সারডোব গ্রামের বাসিন্দারা জানান, ধস শুরু হওয়ার পর শুক্রবার রাত থেকে স্থানীয়রা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। একের পর এক সিসি ব্লক দেবে যেতে দেখে তারা ভাঙনের আশঙ্কা করছে।

সারডোব গ্রামের বাসিন্দা কৃষক সিরাজুল হক বলেন, ‘এই বাঁধ আমাদের গ্রামের হাজারো পরিবার আর কৃষিজমির রক্ষাকবচ। বাঁধ ধসে গেলে সব দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে। আগের বন্যার ক্ষতি আমরা এখনো সামলে উঠতে পারিনি। বড় ক্ষতি হওয়ার আগে জরুরি ভিত্তিতে বাঁধের স্থায়ী মেরামতের দাবি জানাই।’

স্থানীয় বাসিন্দা মমিনুল ইসলাম ও আব্দুল কাদেরের অভিযোগ, ‘বাঁধের কাজে অনিয়ম হয়েছে। পর্যাপ্ত সিসি ব্লক ডাম্পিং না করার কারণে সামান্য স্রোতের আঘাতে বাঁধে ধস নামছে। বাঁধটি যদি রক্ষা করা না হয়, গ্রামবাসী অনেকে নিঃস্ব হয়ে যাবে।’

পাউবো সূত্রে জানা গেছে, কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর তীর সংরক্ষণের জন্য ২০২০ সালে ৬২৯ কোটি টাকার ধরলা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এর আওতায় ২০ দশমিক ২৯ কিলোমিটার নদীতীর সংরক্ষণ, ১৭ দশমিক ৯ কিলোমিটার বিকল্প বাঁধ নির্মাণ এবং ১৪ দশমিক ৮৮৯ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ করা হয়েছে।

এই প্রকল্পের ফলে প্রায় ২২ হাজার ৪০০ পরিবার, ৫০টি হাট-বাজার, ৩০টি নৌঘাট এবং ১০ হাজার হেক্টর আবাদি জমি বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেয়েছে বলে জানিয়েছে পাউবো। ইতিমধ্যে প্রকল্পের ৯৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে দাবি প্রতিষ্ঠানটির। প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৬ সাল পর্যন্ত। এদিকে কাজ শেষ হওয়ার আগেই সারডোব গ্রামে ধরলার বাম তীর সংরক্ষণ বাঁধে নতুন করে ধস দেখা দেওয়ায় প্রকল্পে কাজের মান ও স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, ‘প্রায় ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে সারডোব অংশে বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্পটি এখনো হস্তান্তর করা হয়নি। বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হলে এর দায়ভার ঠিকাদারকে নিতে হবে। আমরা নজর রাখছি। আপাতত জিও ব্যাগ ফেলে ধস ঠেকিয়ে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে। পানি নেমে গেলে নিয়ম অনুযায়ী মেরামত করা হবে।’

ধসের কারণ প্রশ্নে এই পানি প্রকৌশলী বলেন, ‘সম্ভবত নিচে ডাম্পিং জোনে বড় গর্ত বা অন্য কোনো কারণে ব্লক সরে গিয়ে থাকতে পারে। এর ফলে বাঁধের ঢালেও ব্লক প্লেসিং ধসে গেছে। আমরা গুরুত্ব দিয়ে মেরামত কাজে নজর রাখছি। আশা করছি বড় কোনো বিপর্যয় হবে না।’

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এএইচ জেভির স্থানীয় প্রতিনিধি সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ধারণা করছি, পানির স্রোতের ঘূর্ণির কারণে ডাম্পিং জোনের ব্লক সরে গিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে। আমরা মেরামতকাজ করছি। কাজটি এখনো চলমান। হস্তান্তরের আগে আমরা নিজ দায়িত্বে সবকিছু মেরামত করব। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চবি শিক্ষার্থীদের ‘সন্ত্রাসী’ বলে সংঘর্ষে ‘উসকানি’ দেওয়া উদয় কুসুমকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার

নেত্রকোনায় হত্যার প্রতিশোধ নিতে পাল্টা হামলা, নিহত ২

এআই চ্যাটবটকে যে ১০ তথ্য কখনো দেবেন না

ছাত্রীকে এক থাপ্পড়ে রণক্ষেত্র চবি এলাকা

রাজধানীতে যানজট নিরসনে নতুন সিগন্যাল-ব্যবস্থার পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত