Ajker Patrika

‘দ্যাশোত কি এমন হইলে যে এক রাইতোতে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ’

শিপুল ইসলাম, রংপর 
‘দ্যাশোত কি এমন হইলে যে এক রাইতোতে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ’

‘দ্যাশোত কি এমন হইলে যে এক রাইতোতে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হয়া গেল। ১০০ টাকার পেঁয়াজ এ্যালা ২০০ টাকাতও দেওচে না। পেঁয়াজ এ্যালা সোনা হয়্যা গেইছে। এমনতো রাইতা রাইত জিনিসের দাম দ্বিগুণ হইলে হামরা বাঁচমো কেমন করি কন? এইগ্যালা দ্যাখার কি কেউ নাই।’— বাজার করতে এসে রংপুর নগরীর কামাল কাছনা বাজারে আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন শালবন শাহীপাড়ার বাসিন্দা রুমা বেগম।

রংপুর সিটি বাজারে কথা হয় মুন্সিপাড়া এলাকার বাসিন্দা উমর ফারুকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ভাই এনজিওতে চাকরি করি কোনো রকমে সংসার চালাই। কিন্তু দিন দিন জিনিসের দাম যেভাবে নাগালের বাইরে যাচ্ছে, তাতে বেঁচে থাকা কঠিন। দুই দিন আগেই ৬০ টাকায় আধা কেজি পেঁয়াজ কিনলাম, আজ সেই পেঁয়াজের কেজি ২৩০ টাকা। ভাবতেই মাথা ঘোরতেছে।’

এমন আক্ষেপ শুধু গৃহবধূ রুমা বেগমের ও উমর ফারুকেই নয়। ব্যাগ হাতে হাটে আসা প্রত্যেক ক্রেতারই। যারা দুই দিন আগে পেঁয়াজ কিনেছিলেন আর ফের আজ রোববার পেঁয়াজ কিনতে এসেছেন, পেঁয়াজের দাম শুনে তাদের চক্ষু চড়কগাছ। পেঁয়াজের দ্বিগুণ দামে কোথাও কোথাও ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে বাক্ বিতণ্ডার। হঠাৎ দাম দ্বিগুণ হওয়ায় ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে অসন্তুষ্টিতে।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বৃহস্পতিবার পাইকারিতে প্রতিকেজি পেঁয়াজ দেশি পুরান ১১০ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ ১০০ টাকা পর্যন্ত কিনে তা বিক্রি করেছিল ১২০ থেকে ১১০ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু সেই পেঁয়াজ শুক্রবারে পাইকারিতে ২০০ থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত কিনতে হয়েছে। তাও পাওয়া যাচ্ছে না। তাই দাম বেড়েছে।

রংপুরের কৃষি সম্প্রসারণ ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রংপুরে বছরে পেঁয়াজের গড় চাহিদা ৫৫-৫৮ হাজার মেট্রিক টন। এ বছরে পেঁয়াজ উৎপাদন ৪৪ হাজার মেট্রিক টন। ঘাটতি পেঁয়াজ দেশের নাটোর, পাবনা, কুষ্টিয়া জেলা থেকে সরবরাহ করা হয়। এসব জেলার মোকামে পেঁয়াজ সংকট থাকায় জেলায় পেঁয়াজের সরবরাহ বন্ধ থাকায় দাম বেড়েছে।

রংপুর কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সিনিয়র বিপণন কর্মকর্তা রবিউল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, বর্তমানে রংপুরে যে পরিমাণ পেঁয়াজের প্রয়োজন তাঁর অর্ধেকেরও কম সরবরাহ। মূলত নাটোর, পাবনা, কুষ্টিয়া এসব এলাকা রংপুরে পেঁয়াজ সরবরাহ করে থাকে। এসব মোকামে এ সময় যে পরিমাণ পেঁয়াজ থাকার কথা খোঁজ নিয়ে দেখেছি তাঁর চার ভাগের একভাগও নেই। যেহেতু পেঁয়াজের চাষ কম, তাই মজুত এখানে নেই। মূলত চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে। 

রোববার জেলার সিটি বাজার, কামাল কাছনা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিকেজি পেঁয়াজ দেশি জাতের বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা, আর ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ২১০ থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত। 

কামাল কাছনা বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী সাব্বির হোসেন বলেন, ‘কম দামে কেনা থাকলে কম দামে বেচি। বেশি দামে কেনা হলে তো আর কম দামে বিক্রি করতে পারি না। দুই দিন ধরে পেঁয়াজের দাম নিয়ে কাস্টমারের সঙ্গে অনেক ঝামেলা হচ্ছে। পেঁয়াজের সরবরাহ কম থাকায় পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। আরও বাড়তে পারে।’

সিটি বাজারে কথা হয় আরেক খুচরা বিক্রেতা কালু মিয়া সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এলসি বন্ধর হুজুগে বড় বড় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করছে। রাতারাতি দাম দ্বিগুণ করছে। তাদের কেউ ধরে না, আমরা কেনা দামের থেকে ১০-১২ টাকা লাভ করে বিক্রি করছি এতে যত দোষ। ভাবছি যা আছে তা বিক্রি হলে আর পেঁয়াজ তুলব না।’ 

জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের রংপুরের সহকারী পরিচালক বোরহান উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভারতের পেঁয়াজের এলসি বন্ধ ঘোষণার পর ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেয়। আমরা বাজার মনিটরিং করছি। আজ সিটি বাজারে ১৫০ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি করা হয়েছে। এই দামে এখন থেকে বিক্রির জন্য খুচরা বিক্রেতাদের বলা হয়েছে। এর বেশি কেউ নিলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সাবেক সিইসি নূরুল হুদার গলায় ‘জুতার মালা’ দিয়ে পুলিশে সোপর্দ

ইরানের পতন হলে, এরপরই রাশিয়া—অভিমত রুশ বিশ্লেষকদের

ইসরায়েলে ২০ লাখ রুশভাষীর বাস, রাশিয়াকে তাঁদের কথা ভাবতে হয়: পুতিন

হরমুজ প্রণালিতে প্রবেশ করে ইউটার্ন নিল দুটি জাহাজ

লাইভ-২ (২৩ জুন, ২০২৫): ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা, হরমুজ প্রণালী বন্ধের হুঁশিয়ারি, জাতিসংঘে জরুরি বৈঠক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত